Hare to Whatsapp
শুরু হল ৩৮তম আগরতলা বইমেলা, বই মানুষের প্রকৃত বন্ধুঃ মুখ্যমন্ত্রী।
By Our Correspondent
আগরতলা, ফেব্রুয়ারি ২৬, : আগরতলা, ২৬ ফেব্রুয়ারিঃ
বই হচ্ছে প্রকৃত বন্ধু। বই মেলা যেখানেই হোক, বইপ্রেমীরা সেখানেই ছুটে যাবেন। হাপানিয়া আন্তর্জাতিক মেলা প্রাঙ্গণে আগরতলা বইমেলার উদ্বোধন করে একথা বলেন মুখ্যমন্ত্রী শ্রী বিপ্লব কুমার দেব। 'আমার ত্রিপুরা আমার সংস্কৃতি', এই ভাবনাকে মাথায় রেখে উদ্বোধন হলো ৩৮তম আগরতলা বইমেলা।
হাপানিয়া আন্তর্জাতিক মেলা প্রাঙ্গণে আগরতলা বইমেলা করা নিয়ে নানা বিতর্ক সৃষ্টি করা হয়েছিল। এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে মানুষের ব্যাপক উপস্থিতি বিতর্ককে পেছনে ফেলে দিয়েছে বলে উল্লেখ করেন মুখ্যমন্ত্রী। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, মডেল রাজ্য মানে গতানুগতিক নয়, নতুনত্বের শুরু করা। এই ভাবনাতে শিশু উদ্যান থেকে আগরতলা বইমেলা সরিয়ে আনা হয়েছে হাপানিয়া আন্তর্জাতিক মেলা প্রাঙ্গণে। এ উপলক্ষে মানুষের উপস্থিতি ইতিহাস তৈরি করেছে।
তিনি বলেন, বই হচ্ছে মানুষের প্রকৃত বন্ধু। কোনও দিন এর সঙ্গে বিচ্ছেদ হয় না। এর সঙ্গে মানুষের আত্মা জড়িয়ে থাকে। এই মেলাকে সাধারণ মানুষের মাঝে নিয়ে যাওয়ার জন্য এর আয়োজনের জায়গা বদলানো হয়েছে। কারণ সাধারণ মানুষকেও বইয়ের সাথে নিয়ে আসা উচিত বলে উল্লেখ করেন তিনি।
রাজ্যে উন্নয়নের বিভিন্ন দিক তুলে ধরে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, রাজ্যবাসী কখনো চিন্তাও করতে পারত না যে টুরিস্ট গাইড এর মাধ্যমে উপার্জন সম্ভব। ডেমু ট্রেন, চট্টগ্রাম বন্দর ত্রিপুরার জন্য খুলে দেওয়া, প্রটোকল রুট এর মঞ্জুরি, ১৮ টি বিমান উঠানামা করা, রাজধানী সহ ৬টি এক্সপ্রেস ট্রেন চালু হওয়াই তো পরিবর্তন। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, তাঁর সঙ্গে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর আলোচনা হয়েছে যে, সে দেশ নতুন বিমান কেনার পর আগরতলা - ঢাকা রুটে বিমান চলাচল শুরু হবে।
মুখ্যমন্ত্রী বলেন ২০১৮ সালের আগে, তিন বছরে জাতীয় সড়ক বাবদ বরাদ্দ হয়েছে ১২০০ কোটি টাকা। আর ২০১৮-১৯ অর্থ বছরে, একবছরেই বরাদ্দ হয়েছে ১২০০ কোটি টাকা। আইটি হাব করার পরিকল্পনা চলছে। এ বিষয়ে তিনি উল্লেখ করেন যে সিস্কোর মত কোম্পানি রাজ্যে বিপিও কল সেন্টার ইত্যাদি স্থাপন করার জন্য উৎসাহ প্রকাশ করেছে। এর মাধ্যমে রাজ্যে কমপক্ষে ১০ হাজারের মতো যুবক-যুবতী বাইরে কাজ করছেন, তারা এ রাজ্যেই আই টি সেক্টরে কাজের সুযোগে পাবেন।
আগরতলা বই মেলার উদ্বোধন করে মুখ্যমন্ত্রী শ্রী বিপ্লব কুমার দেব বলেন, ত্রিপুরার রাজা-মহারাজারা প্রজাহিতৈষী এবং অতিথিপরায়ন ছিলেন। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, জগদীশচন্দ্র বোসকে সবার আগে চিনেছিল ত্রিপুরার রাজা মহারাজারাই।ফলে ত্রিপুরার নাম গোটা বিশ্বে উজ্জ্বল হয়েছে।
মুখ্যমন্ত্রী বলেন নির্দিষ্ট চিন্তাধারার বাইরে গেলেই নতুন কিছু হয়। সাধারণ মানুষ এখন এই নতুনত্বের ছোঁয়া পাচ্ছেন। তিনি বলেন এই সরকার মানুষের অংশীদারিত্বের মাধ্যমে উন্নয়নে বিশ্বাসী। এই সময়ে শিক্ষাব্যবস্থার আমূল পরিবর্তন হয়েছে। এনসিআরটি পাঠ্যক্রম চালুসহ ২২ টি বড় সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
এছাড়া বিল্ডিং আইন সংশোধন করে বহুতল বাড়ি নির্মাণ করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। রামনগরের মত জায়গায় তৈরি করা হবে লাইট হাউজ। গোটা দেশে ৬ টি রাজ্যে লাইট হাউস নির্মাণের মঞ্জুরী দেয়া হয়েছে। এর মধ্যে উত্তর-পূর্বাঞ্চলের মধ্যে রয়েছে শুধু ত্রিপুরাতেই। রাজধানীর রামনগরে নির্মিত হতে যাওয়া এই লাইট হাউজে, ১০০০ টি ফ্ল্যাটের মধ্যে গরিবদের জন্য ৫০% সংরক্ষিত থাকবে। তাদের ভর্তুকি দেবে সরকার।
এছাড়া গড়ে উঠেছে অত্যাধুনিক বিমান বন্দর। অটল জলধরা মিশনের মাধ্যমে আগামী ২০২২ সালের মধ্যে প্রত্যেকের বাড়িতে বিশুদ্ধ পানীয় জল পৌঁছে দেওয়ার পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী বলেন আরো পরিবর্তন হবে। ত্রিপুরা, উন্নয়নের পথে এক নতুন উদাহরণ তৈরি করবে। সবক্ষেত্রেই নতুন ব্যবস্থা তৈরি হচ্ছে। স্থায়ী উন্নয়ন ও কর্মসংস্থানের লক্ষ্যে কাজ করছে সরকার। মুখ্যমন্ত্রী শ্রী বিপ্লব কুমার দেব বলেন রাজ্যে স্বাভিমানী মানসিকতা তৈরি হচ্ছে।
এদিন বইমেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন উপ মুখ্যমন্ত্রী শ্রী জিষ্ণু দেববর্মা, রাজস্ব মন্ত্রী শ্রী এন সি দেববর্মা, শিক্ষা মন্ত্রী শ্রী রতন লাল নাথ সহ অন্যান্যরা। মেলা চলবে আগামী ৮ ই মার্চ পর্যন্ত।