Share Whatsapp

কৃষি পন্যের ন্যুনতম সহায়ক মূল্য প্রদান নিয়ে কেন্দ্রীয় সরকার জালিয়াতি করছে, 27 সেপ্টেম্বর ভারত বন্ধ ত্রিপুরাতেও হবে: পবিত্র কর

By Our Correspondent

আগরতলা, সেপ্টেম্বর ১২, : সারা ভারত ব্যাপী নব্য কালো কৃষি আইন বাতিলের দাবিতে কৃষকদের আন্দোলন যখন শাসকের ঘুম কেড়ে নিয়েছে তখন কেন্দ্রীয় সরকার রবি শস্যের সহায়ক মূল্যের পরিবর্তন ঘটিয়ে আবার কৃষকদের ধোঁকা দেবার চেষ্টা করছে। গত ৮ই সেপ্টেম্বর কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার বৈঠকে প্রতি কেজি গমের সহায়ক মূল্য চল্লিশ পয়সা বাড়ানো হয়েছে ।সংযুক্ত কিষান মোর্চার কেন্দ্রীয় কমিটি মনে করে কেন্দ্রের বিজেপি সরকার সরাসরি কৃষকদের ফাঁদে ফেলার অপচেষ্টা শুরু করেছে।



কিষান মোর্চার অভিযোগ, রবি শস্যের যেদাম ধার্য করা হয়েছে তা সংযুক্ত কৃষক মোর্চার C2+50% ফর্মুলার ধারে কাছেও নেই। ভারত ব্যাপী সাধারণ নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্য বৃদ্ধির পাশাপাশি কৃষি উৎপাদন খরচের ব্যাপক বৃদ্ধি ঘটেছে। তাকে সামনে রেখেই এই ফর্মুলাতে ন্যুনতম সহায়ক মূল্য ধার্য করার দাবি তোলা হয়েছে। সেটার ধারে কাছে না গিয়ে কেন্দ্রীয় সরকার এক সামঞ্জস্যহীন ন্যুনতম সহায়ক মূল্য হিসেবে ঘোষণা করে বাজার গরম করার চেষ্টা করেছে। বিজেপি সরকার ও তার তলপিবাহকরা একেই এ যাবতকালের মধ্যে সর্বোচ্চ বৃদ্ধি বলে দাবি করছে। যা পুরোপরি মিথ্যা।



কৃষক সংগঠন গুলির মতে, বাস্তব দিক হচ্ছে, বর্তমান ঘোষিত ন্যুনতম সহায়ক মূল্যটি গত ১২ বছরের মধ্যে সবচেয়ে কম।

এবার গমের যে ন্যুনতম সহায়ক মূল্য বৃদ্ধির কথা বলা হয়েছে প্রতি কুইন্টালে ২.০৩% মাত্র। এবার ব্যাপক কৃষক আন্দোলনের মাঝে রবি মরশুমের গমের ন্যুনতম সহায়ক মূল্য বৃদ্ধি হয় কিনা সেদিকে সকলের নজর ছিল।



সংযুক্ত কিষান মোর্চার ত্রিপুরা রাজ্য কমিটির অভিযোগ, গত ৮ই সেপ্টেম্বর কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার সিদ্ধান্ত নিয়ে মোদী সরকারের তিন মন্ত্রী ঐদিন বিকেলে সাংবাদিক বৈঠক করলেও চালাকি করে সেকথা উল্লেখ করেন নি। পরে তা সরকারি বিবৃতিতে জানানো হয়। একেও সংযুক্ত কিষান মোর্চার ত্রিপুরা রাজ্য কমিটি একটি বিরাট ধোঁকা বলে মনে করে।



মোর্চা মনে করে অনেক তালবাহানার পর গমের ন্যুনতম সহায়ক মূল্য প্রতি কুইন্টালে ১৯৭৫ টাকা থেকে বাড়িয়ে ২০১৫ টাকা করা হয়েছে যা গত মরসুমের তুলনায় মাত্র ২.০৩% বেশী। মোর্চার অভিযোগ, ২০১০-১১সাল থেকে এই হার সর্ব নিম্ন। কারন C2+50% ফর্মুলাতে এই সহায়ক মূল্য হবার কথা ২১৯৫.৫০ টাকা সেখানে যা দেওয়া হয়েছে তার মূল্য ১৮০টাকা কম। একে কৃষকদের সাথে প্রতারণা বলে অভিযোগ করেছে সংযুক্ত কিষান মোর্চার ত্রিপুরা রাজ্য কমিটি । কারন ডিজেল, সার, কিটনাশকের দাম ট্রাক্টরে জি এস টি চাপিয়ে প্রতি হেক্টরে চাষের খরচ ২৫ হাজার টাকা বেড়েছে, অথচ ন্যুনতম সহায়ক মূল্য বৃদ্ধি হয়েছে মাত্র সর্ব নিম্ন ২.১৪%, সর্বোচ্চ ৮.৬০%, যা কৃষকদের থেকে সব কিছু শুষে নেওয়া ছাড়া আর কিছুই নয়।এতে দেশের সব অংশের কৃষকরা বিরাট ক্ষতির মুখে পড়তে চলেছে বলে সংযুক্ত কিষান মোর্চা মনে করে।



সংযুক্ত কিষান মোর্চা বিভিন্ন তথ্য দিয়ে প্রমাণের চেস্টা করেছে কি ভাবে ন্যুনতম সহায়ক মূল্য না দিয়ে কৃষকদের ঠকানো হয়েছে। উদাহরণ হিসেবে বলা হয়েছে, বার্লির জন্য গত বছরের হিসেবে C2+50% ফর্মুলাতে ন্যুনতম সহায়ক মূল্য ছিল প্রতি কুইন্টালে ২১০৬ টাকা অথচ এবার ঘোষণা করা হয়েছে ১৬৩৫ টাকা প্রতি কুইন্টালে। অর্থাৎ কৃষকরা প্রতি কুইন্টালে ৪৭১ টাকা কম পাবেন। মোর্চার মতে ছোলার ক্ষেত্রে ২২-২৩ সালের জন্য ন্যূনতম সহায়ক মূল্য ধরা হয়েছে ৫২৩০ টাকা কিন্তু ২১-২২ সালের হিসেবে (C2+50% ফর্মুলাতে) ছোলার ন্যুনতম সহায়ক মূল্য ছিল ৬০১৮ টাকা প্রতি কুইন্টালে। এখন বর্তমান কেন্দ্রীয় সরকারের ঘোষণা অনুযায়ী কৃষকরা ৭৮৮ টাকা কম পাবেন। একই রকম ভাবে মুসুর ডালে যেদাম ধার্য করা হয়েছে তা হল ৫৫০০ টাকা প্রতি কুইন্টালে। অথচ ২০২১ - ২০২২ সালে এর ন্যুনতম সহায়ক মূল্য ফর্মুলা C2+50% তে ছিল ৬৩০৬ টাকা প্রতি কুইন্টালে। কৃষকরা এতে কম পাবেন প্রতি কুইন্টালে ৮০৬টাকা। একই রকম ভাবে রেপসিড ও সরিষার ক্ষেত্রে ১৫৫ টাকা, সূর্যমুখী তেলের ক্ষেত্রে ১৯২১টাকা ন্যুনতম সহায়ক মূল্য কম পাচ্ছেন দেশের কৃষকরা। এর সাথে বর্তমান উৎপাদন খরচ ধরলে কৃষকদের ক্ষতির পরিমাণ আরও বাড়বে। আশ্চর্য জনক ব্যাপার হল কেন্দ্রীয় সরকারের কৃষি মন্ত্রকের অংশ CACP(Commission for Agriculture Costs Of Price) এখনও তাদের মরশুমী দাম ঘোষণা করেনি। অথচ ১৯৬৫ সাল থেকে এই সংস্থা ২৩টি পন্যের ন্যুনতম সহায়ক মূল্য ঘোষণা করে আসছে। আর এবারই তার ব্যতিক্রম বলে মোর্চা মনে করে। সংযুক্ত কিষান মোর্চা এই জন্যই একে ধোঁকা বলে অভিহিত করেছেন।



আরও ভয়ঙ্কর ব্যাপার হল অল্প কিছু সংখ্যক কৃষকদের ন্যুনতম সহায়ক মূল্যে যে শস্য কেনার ব্যবস্থা করেছে যেখানে ২০২০-২১ সালের সুবিধা প্রাপক কৃষকদের যে সংখ্যা ছিল এবারের তালিকায় সে সংখ্যাও কমে গিয়েছে। আরও আশ্চর্যের ব্যাপার হল কোন কৃষককেই সরকারের তরফে শস্য কেনার কোনও নিশ্চয়তা দেয়া হয় নি। এর ফলে বিশেষ করে কলাই এর ডাল ও সরষের মত অলাভজনক কৃষির ক্ষেত্রে কোনও ন্যুনতম সহায়ক মূল্য না থাকায় সেই সমস্ত কৃষকদের ক্ষতির মুখে পড়তে হবে। মূলত সেজন্যই সমস্ত কৃষির জন্য C2+50% ফর্মুলা দাবি করে আইনত মান্যতা দিতে সংযুক্ত কৃষক মোর্চা গত নয় মাসের বেশি সময় ধরে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে।এছাড়া খাদ্য শস্য, ডাল শস্য, তৈলবীজ, পেঁয়াজ, আলুর মত পন্যকে অত্যাবশ্যকীয় পন্য তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে এই আইনে। যা কৃষকদের বিরুদ্ধে এক প্রকার সরকারি জেহাদ বলে সংযুক্ত কিষান মোর্চা মনে করে।



সংযুক্ত কিষান মোর্চার ত্রিপুরা রাজ্য কমিটিও মনে করে সরকার যখন নিজেই ন্যুনতম সহায়ক মূল্য পরিবর্তন করেছে সুতরাং তিন কালো আইন বাতিল করে ও C2+50% ফর্মুলাতে ন্যুনতম সহায়ক মূল্য নিয়ে আইন এনে কৃষকদের দাবিকেও মান্যতা ইচ্ছে করলেই দিতে পারে। আপাতত সরকারের সেরকম কোন ইচ্ছে দেখা যাচ্ছে না। একই সাথে বিজেপি ও তার তলপিবাহকরা কৃষকদের ন্যুনতম সহায়ক মূল্য রেকর্ড পরিমাণ বৃদ্ধি হয়েছে বলে যে অপপ্রচার চালাচ্ছে তাদেরও মুখোশ খুলে দেবার জন্য এই তথ্য সংযুক্ত কিষান মোর্চা প্রকাশ করেছে। সকল অংশের মানুষকে এই সরকার ও বিজেপি দলের এই সর্বৈব মিথ্যাচারের বিরুদ্ধে আন্দোলনে ও ভারত বনধে সামিল হতে সংযুক্ত কিষান মোর্চা আহ্বান জানিয়ে বলা হয়েছে, মূলত এই ভারত বনধের প্রস্তাব গত ২৬ ও ২৭ আগষ্ট দিল্লির সিংঘু সীমান্তে সংযুক্ত কিষান মোর্চার যে কৃষক কনভেনশন হয় সেখানে গৃহীত হয়েছিল। এই বনধকে বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠন ও বাম রাজনৈতিক দল গুলো প্রকাশ্যেই সমর্থন করেছে। ইতিমধ্যে সংযুক্ত বিরোধী দলগুলোও এই বনধর সমর্থনে এগিয়ে এসেছে। এরপর সম্প্রতি উত্তর প্রদেশের মুজফফরনগরের ঐতিহাসিক কিষান মহা পঞ্চায়েত থেকে এই ভারত বনধের আহ্বান জানানো হয়। ঐ বিশাল মহা পঞ্চায়েত ভারতের আগামী কৃষান আন্দোলনকে নতুন দিশা দেখাবে বলে সংযুক্ত কিষান মোর্চার ত্রিপুরা রাজ্য কমিটি মনে করে। এই বনধকে সামনে রেখে সারা ভারত ব্যাপী মিছিল সমাবেশ, সাইকেল মোটর বাইক রেলি, ট্রাক্টর ও জিপের মিছিল সংগঠিত করা হচ্ছে। ঐদিন সমস্ত অংশের মানুষের সহযোগিতায় এই ভারত বনধ চুড়ান্ত সাফল্য পাবে বলে সংযুক্ত কিষান মোর্চার ত্রিপুরা রাজ্য কমিটি আশা প্রকাশ করেছে। একই সাথে মুজফফরনগরের কিষান পঞ্চায়েত আগামী উত্তর প্রদেশের ও উত্তরাখনডের নির্বাচনে ক্ষমতাসীন বিজেপিকে হারানোর যে অঙ্গীকার গ্রহন করেছে তাকে আরও এগিয়ে নিয়ে যাবে এই ভারত বনধের সাফল্য। সেই সঙ্গে কৃষকদের আন্দোলন যে শাসক বিজেপি ও তার বন্ধুদের মধ্যে শংকা তৈরি করেছে তার প্রমান হরিয়ানা। হরিয়ানার কারনালে পুলিশের লাঠি চালানোর ঘটনায় কৃষকনেতা সুশীল কাজলের মৃত্যুতে সংযুক্ত কিষান মোর্চার নেতৃত্বে যে অবরোধ শুরু হয়েছিল তাতে কৃষকদের সমস্ত দাবি মেনে হরিয়ানা সরকার কৃষকদের সাথে সমঝোতার পথে এসেছে। কৃষক মোর্চার এই বিশাল জয় কৃষকদের আন্দোলনকে নতুন দিশা দেখাবে বলে সংযুক্ত কিষান মোর্চার ত্রিপুরা রাজ্য কমিটি মনে করে। সেই সাথে আগামী ২৭শে সেপ্টেম্বর ভারত বনধের সমর্থনে সমস্ত অংশের মানুষকে এগিয়ে আসতে আহ্বান জানিয়েছেন - সারা ভারত কৃষক সভা ত্রিপুরা রাজ্য কমিটির পক্ষে পবিত্র কর।


You can post your comments below  
নিচে আপনি আপনার মন্তব্য বাংলাতেও লিখতে পারেন।  
বিঃ দ্রঃ
আপনার মন্তব্য বা কমেন্ট ইংরেজি ও বাংলা উভয় ভাষাতেই লিখতে পারেন। বাংলায় কোন মন্তব্য লিখতে হলে কোন ইউনিকোড বাংলা ফন্টেই লিখতে হবে যেমন আমার বাংলা কিংবা অভ্রো কী-বোর্ড (Avro Keyboard)। আমার বাংলা কিংবা অভ্রো কী-বোর্ডের সাহায্যে মাক্রোসফট্ ওয়ার্ডে (Microsoft Word) টাইপ করে সেখান থেকে কপি করে কমেন্ট বা মন্তব্য বক্সে পেস্ট করতে পারেন। আপনার কম্পিউটারে আমার বাংলা কিংবা অভ্রো কী-বোর্ড বাংলা সফ্টওয়ার না থাকলে নিম্নে দেয়া লিঙ্কে (Link) ক্লিক করে ফ্রিতে ডাওনলোড করে নিতে পারেন।
 
Free Download Avro Keyboard  
Name *  
Email *  
Address  
Comments *  
 
 
Posted comments
Till now no approved comments is available.