Hare to Whatsapp
বনজ সম্পদকে ভিত্তি করে কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করার উপর সরকার অগ্রাধিকার দিয়েছে : মুখ্যমন্ত্রী
By Our Correspondent
আগরতলা, সেপ্টেম্বর ১০, : রাজ্যের বনজ সম্পদকে ভিত্তি করে মানুষের জীবিকা নির্বাহের পাশাপাশি কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করার উপর সরকার অগ্রাধিকার দিয়েছে। এই কাজে বন দপ্তরকে সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে। আজ সচিবালয়ের ২ নং সভাকক্ষে ত্রিপুরা কম্পেনসেটরি অ্যাফরেস্টেশন ফান্ড ম্যানেজমেন্ট অ্যান্ড প্ল্যানিং অথোরিটির (ক্যাম্পা) গভর্ণিং বডির সভায় মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব একথা বলেন। সভায় তিনি বলেন, জনগণের দ্রুত রোজগারের সুযোগ সৃষ্টিতে এমনভাবে পরিকল্পনা নিতে হবে যাতে বনের উপর নির্ভরশীল পরিবারগুলি বনকে নির্ভর করে আর্থিকভাবে স্বনির্ভর হয়ে উঠতে পারে। সভায় মুখ্যমন্ত্রী আসন্ন দুর্গাপূজার আগে আরও প্রায় ১১০০ থেকে ১২০০জন ‘বন মিত্র’ নিয়োগ করার জন্য বন দপ্তরকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বলেন। বন মিত্রদের প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ দিয়ে বন দপ্তরের বিভিন্ন কর্মসূচিতে যুক্ত করে তাদের রোজগার বাড়ানোর উপর তিনি গুরুত্ব আরোপ করেন। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, বনায়নের পাশাপাশি বনজ সম্পদের উপর নির্ভরশীল কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করতে হবে। বনজ সম্পদের উৎপাদনশীলতা বাড়াতে স্ব-সহায়ক দলগুলিকেও যুক্ত করা যায় কিনা সেই বিষয়ে দপ্তরকে উদ্যোগ নিতে তিনি পরামর্শ দেন। তিনি বলেন, বন দপ্তরের জাইকা, ক্যাম্পা ইত্যাদি কর্মসূচিতে যে সমস্ত জলাশয় খনন করা হয়েছে সেইসব জলাশয়গুলিতে আরও বেশি পরিমানে মাছ চাষ এবং মাছের উৎপাদন বাড়াতে পেশাদারী বা মৎস্য বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ নিয়ে কাজ করা আবশ্যক। বন দপ্তরকে মৎস্য দপ্তরের সাথে সমন্বয় রেখে কাজ করতেও এদিনের সভায় আলোচনা হয়।
সভায় মাশকলাই ডাল চাষের গুরুত্ব উল্লেখ করে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, মাশকলাই ডাল চাষ করে চাষিরা খুব অল্প সময়েই লাভবান হতে পারেন। বনাধিকার আইনে পাট্টা প্রাপক এবং জুম চাষিদের তাদের অব্যবহৃত জমিতে মাশকলাই চাষে উৎসাহিত করতে বন ,কৃষি এবং রাজস্ব দপ্তরের মধ্যে সমন্বয় রেখে কাজ করার উপরও মুখ্যমন্ত্রী গুরুত্ব আরোপ করেন। মুখ্যমন্ত্রী আগরতলা থেকে সাব্রুম পর্যন্ত জাতীয় সড়কের পাশে পাম ট্রি লাগানোর উপর গুরুত্ব আরোপ করেন। তিনি বলেন, এর ফলে সৌন্দর্যায়নেরন পাশাপাশি রাজ্যে পাম ওয়েলের উৎপাদন বাড়ানো যাবে। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, দুর্গাপূজার আগেই রাজ্যে নির্মীয়মান অক্সিজেন পার্কটি যাতে রাজ্যবাসীর উদ্দেশ্যে উন্মুক্ত করা যায় তার জন্য বন দপ্তরকে উদ্যোগ নিতে হবে।
সভায় ত্রিপুরা কম্পেনসেটরি অ্যাফরেস্টেশন ফান্ড ম্যানেজমেন্ট অ্যান্ড প্ল্যানিং অথোরিটির (ক্যাম্পা)-র মুখ্য কার্যনির্বাহী আধিকারিক ভি জি জেনার ক্যাম্পার মাধ্যমে ত্রিপুরার জন্য বরাদ্দকৃত অর্থে সৃষ্ট বনায়ন সহ বনজ সম্পদ তৈরী এবং বার্ষিক পরিকল্পনা কর্মসূচি ইত্যাদি বিষয়ে বিশদভাবে আলোচনা করেন। তিনি জানান, ত্রিপুরায় ক্যাম্পার গভর্নিং বডির চেয়ারম্যান হচ্ছেন মুখ্যমন্ত্রী। এছাড়া স্টিয়ারিং কমিটি এবং এক্সিকিউটিভ কমিটির চেয়ারম্যান যথাক্রমে হচ্ছেন মুখ্যসচিব এবং প্রধান মুখ্য বন সংরক্ষক। তিনি জানান, ত্রিপুরায় ক্যাম্পার প্রদত্ত অর্থে ২০২০-২১ অর্থবছরে ৫৮২.৮০ হেক্টর জমিতে বনায়ন এবং ৯৩ টি স্কুলে নার্সারি করা হয়েছে।
৪২ কিলোমিটার চেইন লিংক ফেন্সিং করা হয়। এছাড়া ২০টি চেক ড্যাম, ৩টি রেঞ্জ অফিস, ২টি ইন্সপেকশন হাট, ৩টি চেক পোষ্ট ইত্যাদি পরিকাঠামো নির্মান করা হয়েছে। ত্রিপুরার কম্পেনসেটরি অ্যাফরেস্টেশন ফান্ড ম্যানেজমেন্ট অ্যান্ড প্ল্যানিং অথোরিটির (ক্যাম্পা)-র মুখ্য কার্যনির্বাহী আধিকারিক আরও জানান,ক্যাম্পার প্রদত্ত অর্থে ২০২১-২২ অর্থবছরে রাজ্যের ৬টি মহকুমায় ৩০০ হেক্টর জমিতে সেগুন গাছ প্ল্যান্টেশনের পাশাপাশি মনু, করবুক এবং কাঞ্চনপুরে ১০০ হেক্টর জমিতে সিডবল প্ল্যান্টেশনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ২০২১-২২ অর্থবছরে ৪২,৭৬৯টি আগর গাছের চারা রোপন করা হয়েছে। এছাড়াও অক্সিজেন পার্ক নির্মানের কাজ চলছে। সভায় বনমন্ত্রী নরেন্দ্র চন্দ্র দেববর্মা, মুখ্যসচিব কুমার অলক, প্রধান মুখ্য বন সংরক্ষক ড. ডি কে শর্মা, সচিব পি কে গোয়েল, বিভিন্ন দপ্তরের প্রধান সচিব, সচিবগণ সহ সংশ্লিষ্ট আধিকারিকরা উপস্থিত ছিলেন এবং সভায় বিভিন্ন বিষয়ে মতামত ব্যক্ত করেন।