Hare to Whatsapp
শিক্ষকদের সঠিক মার্গ দর্শনেই ছাত্রছাত্রীদের স্বনির্ভর ভবিষ্যৎ নির্মিত হয়ঃ মুখ্যমন্ত্রী
By Our Correspondent
আগরতলা, সেপ্টেম্বর ৬, : আদর্শ শিক্ষকরাই আদর্শ ছাত্র তৈরীর মাধ্যমে সমৃদ্ধ ও উন্নত সমাজ গঠনে অগ্রনী ভূমিকা নিয়ে থাকেন। শিক্ষকদের সঠিক মার্গ দর্শনেই ছাত্রছাত্রীদের স্বনির্ভর ভবিষ্যৎ নির্মিত হয়। ছাত্রছাত্রীদের সুনিশ্চিত ও সমৃদ্ধ ভবিষ্যতের লক্ষ্যে শিক্ষার ভিতকে আরও মজবুত করতে গুরুত্ব দিয়ে কাজ করছে সরকার।আজ রবীন্দ্র শতবার্ষিকী ভবনে আয়োজিত ৬০তম শিক্ষক দিবসের মূল অনুষ্ঠানে এ কথা বলেন মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব। অনুষ্ঠানের শুরুতে মুখ্যমন্ত্রী সহ অন্যান্য অতিথিগণ ডা. সর্বপল্লী রাধাকৃষ্ণনের প্রতিকৃতিতে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ করে শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করেন। অনুষ্ঠানে শিক্ষাক্ষেত্রে বিশেষ অবদানের জন্য ৫ জনকে বিভিন্ন সম্মানে ভূষিত করা হয়। বাহারুল ইসলাম মজুমদার ও পিযুষ কান্তি সরকারকে পন্ডিত ঈশ্বর চন্দ্র বিদ্যাসাগর সম্মানে সম্মানিত করা হয়। মহারাজা বীরবিক্রম কিশোর মানিক্য সম্মানে ভূষিত করা হয় ডা. জয়ন্ত রায়কে। মহারানী তুলসীবতী সম্মান প্রদান করা হয় মহারাজা বীরবীক্রম কলেজের অধ্যাপিকা দীপান্বিতা চক্রবর্তী (রায়চৌধুরী) কে। শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জী মরণোত্তর সম্মান প্রদান করা হয় অম রঞ্জন গুপ্তকে। তার পক্ষে এই সম্মান গ্রহণ করেন পুত্র বাসব গুপ্তকে। এছাড়াও ৩৯ জন শিক্ষক শিক্ষিকা, ৯টি বিদ্যালয় এবং ২টি মহাবিদ্যালয়কে শিক্ষাক্ষেত্রে বিশেষ অবদানের জন্য এদিন সম্মানিত করা হয়।
অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখতে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, মহান দার্শনিক ডা. সর্বপল্লী রাধাকৃষ্ণনের ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি ও নির্দেশিত পথকে অনুসরন করতে পারলে স্বার্থকতা আসবে। সবকা সাথ সবকা বিকাশের পাশাপাশি প্রয়োজন সবকা সাথ সবকা প্রয়াস। সবার সম্মিলিত প্রয়াসের মাধ্যমে সার্বিক বিকাশ সম্ভব। প্রসঙ্গক্রমে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, সূর্যকিরণ সৃষ্টির প্রতীক। চাঁদের তুলনায় সূর্যের প্রকাশ অনেক বেশি। চাঁদ ও সূর্যের প্রকাশের তুলনা টানলে সূর্যের গুরুত্ব সহজেই অনুমান করা সম্ভব। সূর্যদেব’ নামের মধ্যে অভিভাবকত্ব নিহিত রয়েছে। সূর্য মানে পজিটিভিটি। ঠিক তেমনি ইতিবাচক মানসিকতা নিয়ে প্রধানমন্ত্রী নির্দেশিত বিকাশের ধারায় কাজ করছে রাজ্য সরকার। মুখ্যমন্ত্রী আরও বলেন, বিগত দিনে রাজ্যে একটি নেতিবাচক মানসিকতার প্রভাব পরিলক্ষিত হয়েছে। বর্তমানে আর কেন্দ্রীয় বঞ্চনার কথা না বলে ইতিবাচক দৃষ্টিকোন থেকে সবার সার্বিক বিকাশে কাজ করছে রাজ্য সরকার। সমস্ত প্রতিশ্রুতি পূরণের লক্ষ্যে কাজ করার পাশাপাশি উন্নয়নের নিরিখে এর বাইরেও দলমতের উর্ধে উঠে অনেক কাজ হচ্ছে রাজ্যে। দলীয় কার্যালয়ের নয়, মহাকরণ থেকে মানুষের কল্যাণে নীতি নির্ধারণ করে কাজ করছে রাজ্য সরকার। যার ফলশ্রুতিতে মানুষের সার্বিক জীবন মান উন্নয়নের পাশাপাশি বেড়েছে গড় আয়। মুখ্যমন্ত্রী আরও বলেন, জন্মের পরই আপনা আপনি সফলতা আসেনা। এরজন্য প্রয়োজন একটি স্বচ্ছ এবং সঠিক ব্যবস্থাপনা। আর সেই লক্ষ্যেই গুরুত্ব দিয়ে কাজ করছে রাজ্য সরকার। মুখ্যমন্ত্রী আরও বলেন, ছাত্রছাত্রীদের স্বনির্ভর ভবিষ্যৎ নির্মানের লক্ষ্যে বিশেষ ভূমিকা রয়েছে শিক্ষকদের। ইতিবাচক ব্যবস্থাপনা ও মানসিকতাই পারে সুন্দর সমাজব্যবস্থা গড়ে তুলতে। অন্ত্যোদয় পরিবারের সন্তানও যেন প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি তথা বিজ্ঞানী আব্দুল কালামের মত ব্যাক্তিত্ব হিসেবে নিজেকে তৈরী করতে পারে, শিক্ষায় সেই সুযোগ তৈরিতে গুরুত্ব দিয়ে কাজ করছে রাজ্য সরকার। বর্তমানে রাজ্যে স্বনির্ভরতার মানসিকতা গড়ে উঠেছে। উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা হাইওয়ে, এক্সপ্রেস ট্রেন, বিমান পরিষেবার উন্নয়ন রাজ্যের উন্নয়নের গতিকে আরও ত্বরান্বিত করেছে।
স্টার্ট আপ, আইটি হাব, স্পেশাল ইকোনমিক জোন রোজগারের নতুন পথ দেখাচ্ছে। সঠিক ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে মাথা তুলে দাড়াচ্ছে ভূমিকম্পন রোধক বহুতল দালান বাড়ি। মুখ্যমন্ত্রী আরও বলেন রাজ্যে বসবাসরত মিজোরাম থেকে আসা রিয়াংদের দীর্ঘ প্রতিক্ষিত সমস্যা সমাধানের বিগতদিনে আন্তরিকতার ঘাটতি থাকলেও বর্তমানে ইতিবাচক মানসিকতা নিয়ে তার স্থায়ী সমাধান করা হয়েছে। সম্প্রতি দিল্লীতে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সাথে আলোচনায় রিয়াং শরনার্থীদের স্থায়ী বাসস্থান, অন্ত্যোদয় পরিবারে অন্তভূক্ত করার মাধ্যমে বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা প্রদানসহ তাদের জীবন মান উন্নয়নে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী নির্দেশ দিয়েছেন। এর থেকেই অনুমান করা যায় বর্তমান সরকার কতটা আন্তরিক ও ইতিবাচক দৃষ্টিসম্পন্ন। মুখ্যমন্ত্রী আরও বলেন, শিক্ষাদপ্তর সহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে সরকারি বিভিন্ন পদে নিয়োগ হয়েছে। আরও প্রায় ৪,৯০০ পদে বিভিন্ন দপ্তরের জন্য নিয়োগ প্রক্রিয়া চলছে। রাজ্যের মানুষ অনুমান করতে পারছে একটা শুভদিক উন্মোচিত হচ্ছে রাজ্যে। আশার কিরণ দেখতে পারছেন তারা। এরফলে সরকারের প্রতি মানুষের প্রত্যাশা বাড়ছে। শিক্ষাক্ষেত্রে বিভিন্ন পদক্ষেপের জন্য রাজ্যের শিক্ষার মান উন্নত হয়েছে। যার ফলশ্রুতিতে অভিভাবকরাও তাদের ছেলেমেয়েদের সরকারি বিদ্যালয়ে পাঠাতে আগ্রহী হচ্ছেন। একটা অংশের ছাত্রছাত্রীদের গনিত সহ বিভিন্ন বিষয়ে দক্ষতা বাড়ানোর লক্ষ্যে নতুন দিশা প্রকল্প হাতে নেওয়া হলেও কোভিড অতিমারীর জন্য সম্পূর্ণ লক্ষ্য অর্জনে প্রতিবন্ধকতা তৈরী হয়। কিন্তু আগামী ১৪ নভেম্বরের মধ্যে ১০০ শতাংশ লক্ষ্যমাত্রা পূরণে হলে উপস্থিত শিক্ষকদের শপথ বাক্য পাঠ করান মুখ্যমন্ত্রী।
অনুষ্ঠানের বক্তব্য রাখতে গিয়ে শিক্ষামন্ত্রী রতনলাল নাথ বলেন শিক্ষাক্ষেত্রের উন্নয়নে বর্তমান সরকার একাধিক পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। যার ফলশ্রুতিতে পি জি আই অনুসারে গ্রেড ৫ থেকে ত্রিপুরা বর্তমানে গ্রেড ১ উঠে এসেছে। প্রধানমন্ত্রী মার্গ দর্শনে শিক্ষা তার মর্যাদা ফিরে পাচ্ছে। জাতীয় শিক্ষানীতি ইতিবাচক দিক পরিলক্ষিত হচ্ছে শিক্ষাক্ষেত্রে। শিক্ষকরাই হলেন ছাত্রছাত্রীদের সুনাগরিক হিসেবে তৈরী করার শিল্পী বা কারিগর। ত্রিপুরাকে শিক্ষা সহ সমগ্র ক্ষেত্রে উন্নয়নে নিরিক্ষে সর্বশ্রেষ্ঠ প্রদেশ নির্মানের ক্ষেত্রে কাজ করছে সরকার। অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখতে গিয়ে রাজস্ব মন্ত্রী এন সি দেববর্মা বর্তমান সময়ে শিক্ষাক্ষেত্রে যাদের অবদান রয়েছে। তার পাশাপাশি রাজন্য শাসিত ত্রিপুরায় বা ত্রিপুরা পূর্ণ লাভের পর যাদের শিক্ষাক্ষেত্রে বিশেষ অবদান রয়েছে। তাদেরকেও সম্মানিত করার উপর গুরুত্ব আরোপ করেন। অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখতে গিয়ে মুখ্যসচিব কুমার অলক বলেন, নিজেদের জ্ঞানের বিকাশ মেলে ধরার ক্ষেত্রে গুরুর অবদান অনস্বিকার্য। কুমুর পাড়ায় মৃত শিল্পীরা যেমন মাটিকে বিভিন্ন পাত্রে রূপদেয়, ঠিক তেমনি শিক্ষকরাও ছাত্রছাত্রীদের সঠিক দিশায় ভবিষ্যৎ নির্মাণের লক্ষ্যে কাজ করেন। অনুষ্ঠানে অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন শিক্ষাদপ্তরের সচিব সৌম্যা গুপ্তা, মধ্য শিক্ষা অধিকার ও বুনিয়াদি শিক্ষা অধিকারে অধিকর্তা চাঁদনী চন্দন, উচ্চশিক্ষা দপ্তরের অধিকর্তা শ্ৰী এন সি শর্মা, রাজ্য উচ্চ শিক্ষা কাউন্সিলের চেয়ারম্যান প্রাক্তন উপাচার্য অরুনোদয় সাহা প্রমুখ। এদিনের অনুষ্ঠানে শিক্ষা সমাচার নামক স্মরনিকার আবরন উন্মাচন করেন মুখ্যমন্ত্রী সহ অন্যান্য অতিথিরা।