Hare to Whatsapp
প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনা সহ বিভিন্ন প্রকল্প রূপায়ণে রাজ্য সরকার প্রশংসনীয় কাজ করছে : কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রী
By Our Correspondent
আগরতলা, আগষ্ট ৩১, : কেন্দ্রীয় সরকার প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনায় (গ্রামীণ) ত্রিপুরার জন্য যে ১ লক্ষ ৫৯ হাজার ঘরের মঞ্জুরী দিয়েছে তা রাজ্যের জন্য মাইলস্টোন হয়ে থাকবে। ২০২২ সালের মধ্যে সবার জন্য ঘর প্রদানের প্রধানমন্ত্রীর যে স্বপ্ন তা পূরণের লক্ষ্যে মঞ্জুরীকৃত এই ১ লক্ষ ৫৯ হাজার ঘরের জন্য কেন্দ্রীয় বাজেটেও অর্থের সংস্থান রাখা হয়েছে। কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রী গিরিরাজ সিং তার তিনদিনের সফরে রাজ্যে রূপায়িত কেন্দ্রীয় সরকারের বিভিন্ন প্রকল্পের পর্যালোচনা ও পরিদর্শন করে আজ সরকারি অতিথিশালায় সাংবাদিক সম্মেলনে একথাগুলি বলেন। কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনায় (গ্রামীণ) রাজ্য সরকার প্রশংসনীয় কাজ করেছে। বিগত সরকারের আমলে প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনায় (গ্রামীণ) যেখানে মাত্র ১২ হাজার ৬৫৯টি ঘর তৈরি হয়েছিল সেখানে ২০১৮-১৯ অর্থবছর থেকে এখন পর্যন্ত ৪২ হাজার ৯৪৪টি ঘর তৈরি হয়েছে। এটা নিশ্চয়ই রাজ্য সরকারের বড় সাফল্য। তিনি জানান, রাজ্যের অধিকাংশ গরিব লোকের ঘরই টিনের। এক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনায় (গ্রামীণ) রাজ্যের গরিবদের ঘর পাওয়া বাধা হয়ে দাড়িয়েছিল। রাজ্য সরকারের আগ্রহে কেন্দ্রীয় সরকার ঘর প্রদানের গাইডলাইনকে কিছুটা পরিবর্তন করে রাজ্যের গরিবদের জন্য ১ লক্ষ ৫৯ হাজার ঘরের মঞ্জুরী প্রদান করেছে। এই মঞ্জুরীকৃত ঘর প্রদানের কাজ রাজ্য সরকার নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে সম্পন্ন করবে বলে কেন্দ্রীয় গ্রমোন্নয়ন মন্ত্রী আশা প্রকাশ করেন।
সাংবাদিক সম্মেলনে কেন্দ্রীয়মন্ত্রী আরও বলেন, রাজ্যের মহিলা পরিচালিত স্বসহায়ক দলগুলিকে আর্থিকভাবে শক্তিশালী ও স্বনির্ভর করার ক্ষেত্রেও রাজ্য সরকার প্রশংসনীয় কাজ করছে। রাজ্যে ২০১৪-১৫ থেকে ২০১৭-১৮ অর্থবর্ষ পর্যন্ত রাজ্যে মহিলা পরিচালিত স্বসহায়ক দল ছিল মাত্র ৪ হাজার ৬১টি এবং সদস্যা ছিল ৪০ হাজার ১৩৫ জন। ২০১৮-১৯ থেকে ২০২১-২২ অর্থবর্ষ অর্থাৎ বিগত সাড়ে তিন বছরে রাজ্যে মহিলা পরিচালিত স্বসহায়ক দলের সংখ্যা ৬ গুণ বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে ২৩ হাজার ৭০৭টি এবং সদস্যার সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে ২ লক্ষ ২০ হাজার ৮৮৫ জন। এই সদস্যাদের মধ্যে ১ লক্ষ মহিলার মাসিক আয় আগামী ২০২২ সালের মধ্যে অন্তত ৮ থেকে ১২ হাজার টাকা করার লক্ষ্যমাত্রা নেওয়া হয়েছে। শুধু তাই নয় ২০২৫ সালের মধ্যে আরও ৬ লক্ষ গ্রামীণ এলাকায় বসবাসকারী মহিলাকে স্বসহায়ক দলের সঙ্গে যুক্ত করে তাদের বার্ষিক আয় অন্তত ১ লক্ষ টাকা করার লক্ষ্যমাত্রাও নেওয়া হয়েছে। তাতে ত্রিপুরার জিডিপি যেমন বাড়বে তেমনি মহিলারাও আর্থিকভাবে শক্তিশালী হবেন যা দেশের প্রধানমন্ত্রীর লক্ষ্য। তিনি বলেন, ত্রিপুরা ছোট রাজ্য হলেও প্রধানমন্ত্রী চান রাজ্যের ডিজিপি বৃদ্ধিতে মহিলাদের বড় অবদান থাকুক। এজন্য তাদের ব্যাঙ্ক ঋণ প্রদান, রিভলভিং ফান্ড সহ বিভিন্ন প্রকল্পে আর্থিকভাবে সহযোগিতা করা প্রয়োজন।
সাংবাদিক সম্মেলনে কেন্দ্রীয় গ্রামাোন্নয়ন মন্ত্রী আরও জানান, ডিজিটাল ইন্ডিয়া ল্যান্ড রেকর্ডস মর্ডানাইজেশন প্রোগ্রামে রাজ্যে ৮৯৭টি রাজস্ব গ্রামে কম্পিউটারাইজেশন করা হয়েছে। তাতে মোট ১২ লক্ষ ৩৫ হাজার ৬৮৭টি কম্পিউটারাইজড জমির তথ্যকে ওয়েবসাইটে আপলোড করা হয়েছে। ৫ হাজার ৩১২টি ম্যাপসিটকে ডিজিটাইজড করে ওয়েবসাইটে আপলোড করা হয়েছে। এছাড়াও রাজ্যের মোট ২৩টি সাব রেজিস্ট্রি অফিসের সবগুলিকে ডিজিটাইজেশন করা হয়ে গেছে।
কেন্দ্রীয়মন্ত্রী সাংবাদিক সম্মেলনে আরও জানান, ওয়াটার শেড প্রকল্পে রাজ্যে ৬৫টি প্রকল্পে ২ লক্ষ ১৩ হাজার হেক্টর জমিকে সেচের আওতায় আনার লক্ষ্যে কাজ চলছে। এরমধ্যে ২০২০-২১ পর্যন্ত মোট ৩১টি প্রকল্পে ১ লক্ষ ৬২ হাজার হেক্টর জমিকে সেচের আওতায় আনা সম্ভব হয়েছে। বাকি জমিগুলিকে ২০২১ সালের মধ্যেই সেচের আওতায় আনার লক্ষ্যে রাজ্য সরকার কাজ করছে বলে তিনি জানান। কেন্দ্রীয়মন্ত্রী শ্রীসিং আরও জানান, জল জীবন মিশন প্রকল্পে রাজ্যের প্রতিটি পরিবারে টেপের মাধ্যমে পানীয়জল প্রদানের ক্ষেত্রে রাজ্য সরকার প্রশংসনীয় কাজ করছে। ২০১৭-১৮ পর্যন্ত রাজ্যে যেখানে ১২,৭৯৬টি পরিবারে টেপের মাধ্যমে পানীয়জল প্রদানের ব্যবস্থা করা হয়েছিল সেখানে ২০২০-২১ অর্থবছর পর্যন্ত ১ লক্ষ ৯৩ হাজার ২ ১৮টি পরিবারে টেপের মাধ্যমে পানীয়জলের সংযোগ প্রদান করা হয়েছে। বাকি পরিবারগুলিতে আগামী ২০২২ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে পানীয়জলের সংযোগ প্রদানের লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে রাজ্য সরকার কাজ করছে। তিনি আরও জানান, রেগা প্রকল্প রূপায়ণেও বর্তমান রাজ্য সরকার ভালো কাজ করছে। বিগত সরকারের সময়ে যেখানে রাজ্যে মাত্র গড়ে ৩৪ শ্রমদিবসের কাজ হত সেখানে বর্তমানে গড়ে ৭৫ শ্রমদিবসের কাজ হচ্ছে। শুধু তাই নয় শ্রমদিবসের টাকা ৯৯ শতাংশ ডিবিটির মাধ্যমে শ্রমিকদের অ্যাকাউন্টে সরাসরি প্রদান করা হচ্ছে। বিগত সরকারের সময়ে ডিবিটি ব্যবস্থা ছিলনা বলা চলে। বর্তমান রাজ্য সরকার শুধু ডিবিটির মাধ্যমে পেমেন্ট করছে না, রেগায় প্রতিটি কাজের জিও ট্যাগিংও করা হচ্ছে। তিনি জানান, করোনা অতিমারীর সময়ে কেন্দ্রীয় সরকার খাদ্য সুরক্ষা আইনে গরিব পরিবারগুলিকে মাথাপিছু ৫ কেজি করে চাল দিচ্ছে। ২০২০ সালের মে মাস থেকে শুরু করে ২০২১ সালের মাঝের কিছু মাস বাদ দিয়ে আগামী নভেম্বর, ২০২১ পর্যন্ত এই চাল প্রদান করা হবে। সাংবাদিক সম্মেলনে এছাড়াও তিনি প্রধানমন্ত্রী গ্রাম সড়ক যোজনায় রাজ্যের অগ্রগতির বিষয় তুলে ধরেন।
সাংবাদিক সম্মেলনে এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন উপমুখ্যমন্ত্রী যীষ্ণু দেববর্মা, রাজ্য সরকারের গ্রামোন্নয়ন দপ্তরের সচিব সৌমা গুপ্তা, বন দপ্তরের প্রধান মুখ্য বন সংরক্ষক ডি কে শর্মা প্রমুখ।