Hare to Whatsapp
রাজ্যের জনজাতিদের জীবন জীবিকার মান উন্নয়নে ১,৩০০ কোটি টাকার প্যাকেজের ঘোষণা দিলেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী
By Our Correspondent
আগরতলা, আগষ্ট ২৮, : কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন আজ দু’দিনের রাজ্য সফরে এসে জনজাতিদের জীবন জীবিকার মান উন্নয়নে ১,৩০০ কোটি টাকার প্যাকেজ ঘোষণা করেছেন। রাজ্যের জনজাতিদের কল্যাণে এই ঘোষণা একটি ঐতিহাসিক মুহূর্ত হিসেবে বিবেচিত হবে। কারণ রাজ্যের জনজাতিদের কল্যাণে এযাবৎকালের মধ্যে ঘোষিত প্যাকেজের মধ্যে এটিই সর্ববৃহৎ প্যাকেজ। এই ঐতিহাসিক দিনে তিনি রাজ্যের মোহনপুর মহকুমা সফরে গিয়ে আরও ১৮৯ কোটি টাকার ১২টি প্রকল্পের উদ্বোধন করেন। আজ দু’দিনের রাজ্যে সফরে এসে কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী রাজ্য অতিথিশালায় মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব, উপমুখ্যমন্ত্রী যীষ্ণু দেববর্মা ও রাজ্য সরকারের উচ্চপদস্থ আধিকারিকদের সাথে এক উচ্চপর্যায়ের পর্যালোচনা সভায় মিলিত হন। পর্যালোচনা সভায় বক্তব্য রাখতে গিয়ে তিনি পরিকাঠামো উন্নয়নের ক্ষেত্রে রাজ্য সরকারের কাজের প্রশংসা করেন। সভায় কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন বলেন, সকলকে নিয়ে এগিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে উন্নয়নের যে নিদর্শন ত্রিপুরা দেখিয়েছে তা আদশ উন্নয়নের নজির। স্মার্টসিটি ও জনজাতি অধ্যুষিত গ্রামের উন্নয়নকে যেভাবে সমান গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে তা এক উল্লেখযোগ্য সাফল্য। সচিবালয়ের আধিকারিকদের সাথে কথা বলার সময়ও তিনি রাজ্য সরকারের প্রচেষ্টায় যেভাবে কেন্দ্রীয় প্রকল্পের দ্রুত রূপায়ণ হচ্ছে তাতে সন্তোষ প্রকাশ করেন। পর্যালোচনা সভায় কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী ইএপি প্রকল্পে প্রায় ৮ হাজার কোটি টাকার প্রকল্প নিয়ে পর্যালোচনা করেন। রাজ্য সরকারের অনুরোধে প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনায় (গ্রামীণ) প্রকল্পের প্রত্যেক সুবিধাভোগীদের জন্য পাঞ্জাব ন্যাশনাল ব্যাঙ্ক ৭০ হাজার টাকা টপআপ ঋণ হিসেবে মঞ্জুরি দেবে। প্রত্যেক পিএমএওয়াই (গ্রামীণ) প্রকল্পের যোগ্য সুবিধাভোগীরা এই প্রকল্পের আওতায় আসবেন। এসএলবিসি সমস্ত সদস্য ব্যাঙ্কগুলির কাছে প্রকল্পের বিস্তারিত তথ্য পাঠিয়েছে প্রকল্পটিকে বাস্তবায়নের জন্য। চলতি অর্থবছরে ১.০৭ লক্ষ সুবিধাভোগীকে পিএমএওয়াই (গ্রামীণ)-এর আওতায় নিয়ে আসার লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে। আজকের পর্যালোচনা সভায় এই বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়।
জনজাতিদের জীবনের মানোন্নয়নের বিষয়ে বক্তব্য রাখতে গিয়ে কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী বলেন, ত্রিপুরায় জনসংখ্যার এক তৃতীয়াংশ হচ্ছে জনজাতি সম্প্রদায়ের মানুষ যাদের মধ্যে অনেকেই জুম চাষ করে জীবিকা নির্বাহ করে, আদিম জাতিভুক্ত এবং সামাজিক ও বাস্তবিক পরিকাঠামোর অভাবে উন্নয়নের ধারা থেকে বাইরে রয়ে গেছেন। তাদের অনেকেই বনের কাছাকাছি বা বনের মধ্যেই বসবাস করেন। এখনও অনেকেই বনজ সম্পদ ও জুম চাষের উপর নির্ভরশীল। জনজাতি সম্প্রদায়ের মানুষরা হচ্ছেন সবচেয়ে দরিদ্র, অসহায় এবং উন্নয়নের প্রক্রিয়া থেকে বিচ্ছিন্ন। ভারতের প্রধানমন্ত্রীর অন্ত্যোদয় অর্থাৎ সমাজের সকল অংশের মানুষের উন্নয়ন সাধনের এক স্বপ্ন ও লক্ষ্য রয়েছে। তাদের একটি সম্মানের জীবন নির্বাহ করতে দেওয়ার কথা বলেন তিনি। তাই জনজাতি উন্নয়নের জন্য দরকার একটি ইতিবাচক কর্মসূচির।
রাজ্যের জনজাতিদের জীবন জীবিকার মানোন্নয়নের জন্য ১,৩০০ কোটি টাকার যে প্যাকেজ ঘোষণা করা হয়েছে তাতে থাকবে বিদ্যালয়ের পরিকাঠামো উন্নয়ন, জনজাতি অংশের ছেলেমেয়েদের গুণগত শিক্ষালাভের সুযোগ বৃদ্ধি ও প্রতিটি জনজাতি অধ্যুষিত এলাকার পরিবারের বাড়ির সামনে পর্যন্ত রাস্তা তৈরি। এই প্যাকেজে রাজ্যের ৩২০টি জনজাতি বসতিকে সর্বঋতুপোযোগী সড়ক দিয়ে যুক্ত করার প্রস্তাবও রয়েছে। সেই সঙ্গে এই প্যাকেজে প্রান্তিক জনজাতি মানুষদের শূকর পালন, হাঁস পালন, মৎস্য চাষ, পোল্ট্রি, পশুখাদ্য চাষ, কৃষি ও উদ্যান চাষ সংক্রান্ত উপার্জনশীল কাজের সাথে যুক্ত করা হবে। তাছাড়াও কৃষি সংশ্লিষ্ট কাজ যেমন সেচ, কৃষিকাজ, মেশিনের ব্যবহার, মূল্য শৃঙ্খল করা, বিপণনের ব্যবস্থা ও বাজার তৈরি ইত্যাদি উদ্যোগ নেওয়া হবে। তাছাড়া, অতিরিক্ত আয়ের জন্য পরম্পরাগত তাঁত শিল্পে দক্ষতা উন্নয়নের ব্যবস্থা করা হবে। এই প্রকল্পের আওতায় প্রায় ৪৬০টি সামাজিক প্রকল্পে প্রায় ৮০ হাজার সুবিধাভোগী উপকৃত হবেন বলে আশা করা হচ্ছে।।
পর্যালোচনা সভায় স্বাস্থ্যক্ষেত্রে পরিষেবা নিয়ে বক্তব্য রাখতে গিয়ে কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী কোভিড টিকাকরণের ব্যাপারে রাজ্য সরকারের ভূমিকার প্রশংসা করেন। তাছাড়া কোভিড মোকাবিলা সম্পর্কিত কাজে বিশেষ করে অক্সিজেন সরবরাহ, শিশু চিকিৎসা ও আইসিইউ পরিকাঠামো উন্নয়নের কাজে গতি আনার পরামর্শ দেন তিনি। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বে কেন্দ্রীয় সরকার এই অঞ্চলের আর্থসামাজিক উন্নয়নে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। তাই কেন্দ্রীয় অর্থ মন্ত্রক ত্রিপুরা সরকার ও এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাঙ্কের মধ্যে প্রকৌশলগত অংশীদারিত্ব গড়ে তোলার অনুমোদন দিয়েছে। সাব্রুমের ফেণী নদীর সেতুর মাধ্যমে চট্টগ্রাম বন্দরকে ব্যবহার করে ত্রিপুরাকে উত্তর-পূর্বাঞ্চলের একটি লজিস্টিক হাব হিসেবে গড়ে তুলতে মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেবের প্রচেষ্টার প্রশংসা করেন তিনি। রাজ্যে জিএসটি চালু করার ব্যাপারে রাজ্যের অর্থমন্ত্রী যীষু দেববর্মণের সহযোগিতা ও নেতৃত্বেরও প্রশংসা করেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী। অর্থমন্ত্রী যীষ্ণু দেববর্মার নেতৃত্বে রাজ্যে নাগরিক কেন্দ্রিক পরিষেবায় দায়বদ্ধতা ও স্বচ্ছতা আনতে যেসব ই-গভর্ন্যান্সের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে সে ব্যাপারে অবহিত করা হয় কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রীকে।
কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন আজ জাতীয় সড়ক প্রশস্তকরণে ১৪, ১৫ কোটি ও স্মার্টসিটির ভাবনায় উন্নত নগরায়ন ও রাজধানী আগরতলার বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা সম্প্রসারণের লক্ষ্যে ৭.৪ কোটি টাকার প্রকল্পের অনুমোদন দেন। এই প্রকল্পে ডিপিআর তৈরি করার জন্য প্রয়োজনীয় সহায়তা দেওয়া হবে। প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে শহর এলাকায় পরিবহণ ব্যবস্থা উন্নত হবে এবং স্থানীয় অর্থনীতিও বিকশিত হবে। আজ কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী। মোহনপুর সফরকালে যে ১২টি প্রকল্পের উদ্বোধন করেন তারমধ্যে রয়েছে ১৩২ কেভি মোহনপুর সাবস্টেশন এবং জল জীবন মিশনের অন্তর্গত ৮০ হাজার বাড়িতে জলের সংযোগ দেওয়া।
কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন আজ মোহনপুর দ্বাদশ শ্রেণী বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে এক অনুষ্ঠানে বলেন, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী দেশের সবচেয়ে প্রান্তিক স্থান পর্যন্ত পানীয়জল, বিদ্যুৎ পরিষেবার মতো মৌলিক সুবিধা পৌঁছে দিতে বদ্ধপরিকর। কেননা সরকারের লক্ষ্যই হচ্ছে সবকা সাথ সবকা বিকাশ এবং সবকা বিশ্বাস। তিনি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্ক এবং নাবার্ডকে রাজ্যের দরিদ্র জনগণকে সক্রিয়ভাবে ঋণের সুবিধা দিতে নির্দেশ দেন। জীবিকা অর্জন ও কারখানাজাত উৎপাদনের ক্ষেত্রে ভারত সরকারের ওয়ান ডিস্ট্রিক্ট ওয়ান প্রোডাক্ট প্রকল্পের মাধ্যমে সহযোগিতা দেওয়ার কথাও ঘোষণা করেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী। তিনি বলেন, প্রোডাক্ট ডিজাইন, প্রযুক্তি সংক্রান্ত সাহায্য ও বিপণনের ক্ষেত্রে সিডবি, নাবার্ড ইত্যাদি কেন্দ্রীয় এজেন্সি ও স্টেট এজেন্সির মধ্যে সহযোগিতা ও সমন্বয়ের মাধ্যমে কাজ করা যেতে পারে।
কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী এদিন গান্ধীগ্রাম প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রের টিকাকরণ কর্মসূচি পরিদর্শন করে বিভিন্ন পরিষেবা সম্পর্কে খোঁজ নেন। এরপর গান্ধীগ্রাম হাতিপাড়া ফরেস্ট কমপ্লেক্সে আগর প্ল্যান্টেশন পরিদর্শন করেন ও কিভাবে এই আগর প্রক্রিয়াজাত করা হয় সে সম্পর্কে বন আধিকারিকরা কেন্দ্রীয় মন্ত্রীকে অবগত করেন। এখানে মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব আগর গাছ থেকে প্রস্তুত তেল, আগরের চিপস এবং রাজ্যে তৈরি বাঁশের বোতল কেন্দ্রীয় মন্ত্রীকে উপহার হিসেবে তুলে দেন। এদিন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী গান্ধীগ্রাম হাতিপাড়া ফরেস্ট কমপ্লেক্সে আগর গাছের চারা রোপণ করেন। রাজ্যে আগর নির্ভর যে অর্থনীতির লক্ষ্যমাত্রা নেওয়া হয়েছে তার প্রশংসা করেন তিনি।