Hare to Whatsapp
শিলংয়ে নর্থ ইস্ট স্পেস অ্যাপ্লিকেশন সেন্টারের সভায় মুখ্যমন্ত্রী রাজ্য সরকার নর্থ ইস্ট স্পেস অ্যাপ্লিকেশন সেন্টারের পরামর্শে ২১টি প্রকল্প চিহ্নিত করেছে
By Our Correspondent
আগরতলা, ২৫ , : উত্তর-পূর্বাঞ্চল প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, বিভিন্ন প্রজাতির গাছপালা, পশুপাখি ও ঐতিহ্যময় সংস্কৃতিতে সমৃদ্ধ। এসব সম্পদের কারণে এই অঞ্চলে পর্যটন শিল্পের বিশেষ করে ইকো ট্যুরিজম বিকাশের বিপুল সম্ভাবনা রয়েছে। আজ শিলংয়ে নর্থ-ইস্ট স্পেস অ্যাপ্লিকেশন সেন্টারের এক সভায় মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব একথা বলেন। শিলংয়ের উমিয়ামে নর্থ-ইস্ট স্পেস অ্যাপ্লিকেশন সেন্টারের প্রধান কার্যালয়ে এই সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ উপস্থিত ছিলেন। সভায় মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব উত্তর-পূর্বাঞ্চলের উন্নয়নে মহাকাশ প্রযুক্তিকে কাজে লাগানোর উদ্যোগ নেওয়ায় কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহকে ধন্যবাদ জানান। মুখ্যমন্ত্ৰী উত্তরপূর্বাঞ্চলের পরিকাঠামো উন্নয়নে ‘অ্যাক্ট ইস্ট পলিসি গ্রহণের জন্য প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকেও ধন্যবাদ জানান। সভায় কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন ডোনার মন্ত্রী জি কিষাণ রেড্ডি, ডোনার দপ্তরের প্রতিমন্ত্রী বি এল ডার্লং এবং উত্তর-পূর্বাঞ্চলের বিভিন্ন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী ও মুখ্য সচিবগণ |
সভায় মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ২০১৮ সালে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী আগরতলায় ত্রিপুরার জনগণকে ‘হীরা’ মডেল উপহার দেওয়ার কথা বলেছিলেন এবং তিনি তার কথা রেখেছেন। ত্রিপুরার সর্বত্র এখন উন্নয়নের ছাপ। শিলংও এখন ত্রিপুরার সাথে সরাসরি বিমান পরিষেবা দ্বারা যুক্ত হয়েছে। তিনি বলেন, জিও স্পেসিয়াল প্রযুক্তি ও পর্যটনের মধ্যে একটা সম্পর্ক রয়েছে। পরিবেশ বান্ধব পর্যটনের স্থায়ী উন্নয়নের ক্ষেত্রে জিও স্প্যাশিয়াল প্রযুক্তিকে একটি পদ্ধতি ও প্রযুক্তির ভান্ডার বলা যেতে পারে। যার প্রযোজ্যতা এই ক্ষেত্রে রয়েছে। উত্তর পূর্বাঞ্চলের সমস্ত রাজ্যগুলির পর্যটন সম্ভাবনাকে বিশ্বের দরবারে তুলে ধরতে জিও স্পেসিয়াল প্রযুক্তিকে কাজে লাগানো খুবই জরুরি বলে মন্তব্য করেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি আরও বলেন, উত্তর পূর্বাঞ্চল মূলত: পাহাড়ি অঞ্চল হওয়াতে এখানে জলের বেগ নিয়ন্ত্রণ করতে, ভূমি সংরক্ষণ ও জমির গুণমান উন্নয়নে চেকড্যাম ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়। বন্যার সময় জল ছাড়া, পলি পরিবহণ, গ্রাউন্ড ওয়াটার রিচার্জ ইত্যাদির জন্য চেকড্যামের প্রচলন রয়েছে এই অঞ্চলে। ভূগর্ভে জল সঞ্চয় ও সংরক্ষণ বৃদ্ধির জন্য সঠিক জায়গায় ওয়াটার হার্ভেস্টিং খুবই দরকার। তাই ওয়াটার হার্ভেস্টিং কাঠামো তৈরির সময় জিআইএস এবং রিমোট সেন্সিং প্রযুক্তি খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ইন্টেগ্রেটেড ওয়াটারশেড ম্যানেজমেন্ট প্রকল্পে ত্রিপুরায় ১৮২৫টি চেকড্যাম নির্মাণ করা হয়েছে বলে জানান মুখ্যমন্ত্রী। তাছাড়া বিভিন্ন জায়গার স্যাটেলাইট চিত্রের উপর ভিত্তি করে ত্রিপুরা স্পেস অ্যাপ্লিকেশন সেন্টার একটি তুলনামূলক গবেষণা করে দেখেছে সরকারি উদ্যোগ নেওয়ার আগে এবং পরে কতটুকু ব্যবধান হয়েছে এক্ষেত্রে। এই গবেষণার ফলাফল ভূবন জিওআইসিটি পোর্টালে রয়েছে। এই প্রযুক্তি সমূহ আরও বেশি পরিমাণে ব্যবহার করলে এই অঞ্চলের রাজ্যগুলি আরও বেশি লাভবান হবে বলে মনে করেন তিনি।
সভায় মুখ্যমগ্রী আরও বলেন, ন্যাশনাল গ্রিন ট্রাইবুনালের নির্দেশ অনুসারে ত্রিপুরা স্পেস আলিকেশন সেন্টার রাজ্যে ৩ ১,৬৯৪টি জলাশয় চিহ্নিত করেছে যার মধ্যে ১৯১০টি ২ একরের বেশি এলাকা নিয়ে গঠিত। এখন এ ধরনের জলাশয়ের জিও ট্যাগিং ও ভ্যারিফিকেশন চলছে। জলের গুণমানের উপর ভিত্তি করে এসব জলাশয় সংস্কার করা হবে। নগর এলাকার ৩০টি এই শ্রেণীর দূষিত জলাশয়ের সংস্কার করা হয়েছে।
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, উত্তর-পূর্বাঞ্চলে মূলত জুম চাষ ও সমতল জমিতে স্থায়ী কৃষি চাষ দেখা যায় এবং প্রায় চার ভাগের তিনভাগ জনসংখ্যা কৃষিকাজ ও সংশ্লিষ্ট কাজ করে জীবনধারণ করে। এই অঞ্চলের বিচিত্র ভূমিগত চরিত্রকে সামনে রেখে কৃষিক্ষেত্রের উন্নয়নে জিও স্পেসিয়াল প্রযুক্তি ব্যবহার করা যেতে পারে। রিমোট সেন্সিং-এর মাধ্যমে উপযুক্ত শস্য নির্বাচন করে ভালো ফসল পাওয়া যেতে পারে। উৎপাদনশীলতা বাড়াতে বর্তমান ক্রপিং-এর ধরণকেও বিশ্লেষণ করার পরামর্শ দেন তিনি। এই অঞ্চলে ফসল কাটার ব্যাপারে অধিক পরিকল্পনা ও নজরদারির লক্ষ্যে একটি মোবাইল অ্যাপ এবং ড্যাশবোর্ডও তৈরি করা যেতে পারে। বিগত তিন বছরে জিআইএস এবং রিমোট সেন্সিং-এর ক্ষেত্রে ত্রিপুরায় প্রভূত অগ্রগতি হয়েছে। মহাকাশ প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে সারা রাজ্যে ভূগর্ভস্থ জলের সম্ভাবনার ম্যাপিং করা হয়েছে যাতে সাব-সারফেসে কতটুকু জল পাওয়া যাবে জানা যায়। পূর্ত দপ্তর এসব কাজের দেখাশোনা করছে। তার উপর ভিত্তি করেই গভীর নলকূপ, ছোট নলকূপ ইত্যাদি জলের উৎস তৈরি করা হচ্ছে। তাছাড়া রাজ্যে জিআইএস ভিত্তিক ইন্ডাস্ট্রিয়াল ল্যান্ড ব্যাঙ্কও তৈরি করা হয়েছে বলে জানান মুখ্যমন্ত্রী। এই ব্যবস্থা শিল্প স্থাপনে জমির সহজলভ্যতা দেখিয়ে ব্যবসায়িক প্রক্রিয়াকে সহজ করে দেয়। আগরতলা পুর এলাকায় ত্রিপুরা ন্যাচারাল গ্যাস কোম্পানি লিমিটেডের গ্যাস পাইপলাইনের নেটওয়ার্ক তৈরি সম্পূর্ণ হয়েছে। ফলে যে কোনও খােদাই কার্য করার সময় নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা নেওয়া যাবে।
নর্থ ইস্ট স্পেস অ্যাপ্লিকেশন সেন্টারের (এনইএসএসি) গত জানুয়ারির সভায় কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজের জন্য মহাকাশ প্রযুক্তি ব্যবহারের একটি কর্ম পরিকল্পনা তৈরির উপর গুরুত্ব আরোপ করেছিলেন। মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব আনন্দের সাথে জানান যে, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর পরামর্শ অনুযায়ী ত্রিপুরা সরকার ইতিমধ্যে একটি কর্ম পরিকল্পনা তৈরি করেছে ও নর্থ ইস্ট স্পেস অ্যাপ্লিকেশন সেন্টারের পরামর্শে ২ ১টি প্রকল্প চিহ্নিত করা হয়েছে। তারমধ্যে দুটি প্রকল্প ইতিমধ্যে চূড়ান্ত করা হয়েছে। প্রকল্পগুলির একটি হচ্ছে রাজ্যের নিজস্ব অর্থে বাস্তবায়ন যোগ্য কৃষি ও সংশ্লিষ্ট ক্ষেত্রে জিও স্পেসিয়াল প্রযুক্তি ব্যবহার এবং অপরটি হচ্ছে উত্তর পূর্বাঞ্চল পরিষদের আর্থিক সহায়তায় বাস্তবায়নযোগ্য পর্যটন ক্ষেত্রে এই প্রযুক্তি ব্যবহার। এই কর্ম পরিকল্পনাতে আগর চাষের আওতাধীন এবং সম্ভাব্য এলাকার ম্যাপিং করারও পরিকল্পনা রয়েছে, কেননা আগর চাষের পরিমাণ বাড়াতে পারলে অর্থনীতিতেও ভালো প্রভাব পড়বে।
মুখ্যমন্ত্রী আরও বলেন, রাজ্য সরকারের বিভিন্ন দপ্তর কেন্দ্রীয় প্রকল্পের সুবিধাভোগীদের সংক্রান্ত তথ্য সংশ্লিষ্ট কেন্দ্রীয় মন্ত্রকের পোর্টালে আপলোড করছে। উন্নয়নমূলক পরিকল্পনা তৈরি ও কোথায় কি ঘাটতি রয়েছে তা নিরূপণের জন্য এই তথ্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু কেন্দ্রীয় মন্ত্রকগুলি এসব তথ্য রাজ্যকে সরবরাহ করছে না। তাই তিনি এসব তথ্য রাজ্যগুলির কাছে পাঠানোর অনুরোধ জানান। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর দক্ষ পরামর্শ ও চিন্তাধারা অনুযায়ী উত্তর পূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলি ভিশন ডকুমেন্ট ২০৩০-এ লক্ষ্য পূরণে সক্ষম হবে বলে আশা প্রকাশ করেন মুখ্যমন্ত্রী।