Hare to Whatsapp
রাজ্যে আগর চাষ সম্প্রসারণ ও আগরজাত সামগ্রীর বাজারজাতকরণে ভারত সরকার সম্ভাব্য সবরকম সহায়তা করবে : প্রধানমন্ত্রী
By Our Correspondent
আগরতলা, জুলাই ১৮, : রাজ্যের স্বার্থে উত্থাপিত চারটি দাবি পূরণের জন্য নয়াদিল্লিতে গতকাল এক বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন। এই বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী আগর চাষের মাধ্যমে রাজ্যের আর্থিক উন্নয়নের উদ্যোগ নেওয়ার জন্য মুখ্যমন্ত্রী ও রাজ্য সরকারের প্রশংসা করেন। প্রধানমন্ত্রী আশা ব্যক্ত করেন যে এই উদ্যোগের ফলে রাজ্য আর্থিক ভাবে লাভবান হবে। রাজ্যে আগর চাষ ও আগরজাত সামগ্রীর বাজারজাতকরণের ক্ষেত্রে ভারত সরকার সম্ভাব্য সমস্ত রকমের সহায়তা করবে বলে আশ্বাস দেন মুখ্যমন্ত্রীকে।
প্রধানমন্ত্রীর বাসবভনে অনুষ্ঠিত এই বৈঠকে দীর্ঘ ৪০ মিনিট ধরে রাজ্যের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট অন্যান্য বিষয় নিয়েও দুজনের মধ্যে আলোচনা হয়। বৈঠকে সাব্রুমে লজিস্টিক হাব স্থাপনের লক্ষ্যেডিপিআর তৈরীর ব্যাপারে এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক-র সহায়তা, উত্তর পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলির মধ্যে উন্নততর যোগাযোগ ব্যবস্থা স্থাপনের লক্ষ্যে ‘উড়ান’ প্রকল্পে কম খরচের ফ্লাইট চালু করা, ত্রিপুরার সড়ক যোগাযোগের ক্ষেত্রে আরও একটি বাহ্যিক সহায়তা প্রকল্প গ্রহণের জন্য ও নাবার্ডএর আওতায় ২৫০ কোটি টাকা মঞ্জুরী দেওয়ার জন্যে মুখ্যমন্ত্রী প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানান।
প্রধানমন্ত্রীর সাথে বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী অন্যান্য যেসব দাবি নিয়ে আলোচনা করেন তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে পঞ্চদশ অর্থ কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী ৮৭৫ কোটি টাকার রাজ্যভিত্তিক প্রকল্প অনুমোদন, যার মধ্যে রয়েছে চম্পকনগর ও চাম্পিয়াছড়াতে ৪০০ কোটি টাকার চেকড্যাম নির্মাণ ও আগরতলার জল সরবরাহ প্রকল্প। তাছাড়া রয়েছে ৭টি জেলা সদর কার্যালয়ের উন্নয়নের জন্য ২০০ কোটি টাকা, নীরমহল ও মাতা ত্রিপুরাসুন্দরী মন্দিরের উন্নয়নকল্পে ১৭৫ কোটি টাকা এবং রাজ্যস্তরীয় অফিসগুলির কেন্দ্রীয় ভবন নির্মাণের জন্য ১০০ কোটি টাকা। বৈঠকে রাজ্যের জনজাতি অধ্যুষিত এলাকাগুলির ইতিবাচক উন্নয়নের লক্ষ্যে একটি প্যাকেজ অনুমোদন করার বিষয়টিও মুখ্যমন্ত্রী উত্থাপন করেন। এই প্যাকেজে জনজাতিদের আর্থ-সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও ভাষাগত উন্নয়নের উদ্দেশ্যে বিভিন্ন উদ্যোগ নেওয়ার জন্য ১৭টি প্রকল্পে ১০৫৯.৮৯ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব রয়েছে। তাছাড়াও বৈঠকে রাজ্যের জনজাতিদের সার্বিক উন্নয়নে ১,২৫০ কোটি টাকার বাহ্যিক সহায়তা রূপায়ণের একটি প্রকল্পের প্রস্তাব রাখেন মুখ্যমন্ত্রী।
বৈঠকে আগর কাঠ ও আগরজাত দ্রব্যের ক্ষেত্রে সিআইটিইএস রুলস-এ রপ্তানীর পরিমাণ নির্দিষ্ট করে দেওয়ার জন্য অনুরোধ জানান মুখ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, ত্রিপুরার বর্তমানে ৫০ লক্ষএরও বেশি আগর গাছ রয়েছে রাজ্যের আর্থিক বিকাশে আগর ক্ষেত্রের সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে রাজ্য সরকার ‘ত্রিপুরা আগর উড পলিসি-২০২১' চালু করেছে।
এই পলিসিতে ২০২৫-এর মধ্যে রাজ্যে আগর চাষ দ্বিগুণ করার প্রস্তাব রয়েছে। পরীক্ষাগার, বাণিজ্য কেন স্থাপন, কৃত্রিমভাবে কলম করার জন্য নতুন প্রযুক্তি ব্যবহারের উল্লেখ রয়েছে এই পলিসিতে। সেই অনুযায়ী বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী রাজ্যের উদ্যোগীদের আশা পূরণে রাজ্যের জন্য কোটা বৃদ্ধির অনুরোধ জানান। এই সহায়তা পেলে ত্রিপুরা ২০২১-২২ অর্থবছরে ৭৫,০০০ কেজি আগর চিপস ও ১,৫০০ কেজি আগর তেল রপ্তানী করতে পারবে বলে আশা করছে।
চট্টগ্রাম বন্দর এর মাধ্যমে পণ্য পরিবহণ চালু এবং বি বি আই এন নেটওয়ার্ক নিয়েও বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী প্রধানমন্ত্রীর সাথে আলোচনা করেন। এক্ষেত্রে বাংলাদেশ দ্বারা ফী-এর কাঠামো এমনভাবে তৈরী করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে যাতে রাজ্য লাভবান হয়। তাছাড়াও বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী রাজ্যে এইমস স্থাপনের প্রস্তাব, সবকা সাথ সবকা বিকাশ’ নীতিকে সামনে রেখে আর্থসামাজিক কাস্ট সমীক্ষায় অযোগ্য সুবিধাভোগীদের আবাস প্লাস প্রকল্পে যোগ্য সুবিধাভোগীদের অন্তর্ভুক্ত করার বিষয় নিয়েও আলোচনা করেন। বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী আশ্বাস দেন ভারত সরকার ত্রিপুরার এই বিষয়গুলি বিবেচনা করবে ও রাজ্যের আর্থ সামাজিক উন্নয়নের জন্য সমস্তরকম সহায়তা করবে।