Hare to Whatsapp
ভিডিও কনফারেন্সে প্রধানমন্ত্রীর সাথে মুখ্যমন্ত্রীর বৈঠক, দেশে করোনার তৃতীয় ঢেউ প্রতিরোধ করতে আমাদের এখন থেকেই সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে : প্রধানমন্ত্রী
By Our Correspondent
আগরতলা, জুলাই ১৪, : উত্তর-পূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলির বর্তমান কোভিড পরিস্থিতি এবং টিকাকরণের অগ্রগতি নিয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি আজ ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে উত্তর-পূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলির মুখ্যমন্ত্রীদের সঙ্গে বৈঠক করেন। বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী করোনা মোকাবিলার ক্ষেত্রে টেস্টিং, ট্র্যাকিং এবং ট্রিটমেন্টের উপর গুরুত্ব আরোপ করেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, উত্তর-পূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলির যে সমস্ত জেলায় সংক্রমণের হার বৃদ্ধি পেয়েছে সেখানে আরোও সতর্কতা অবলম্বন করা প্রয়ােজন।ঐ সমস্ত এলাকার জনগণকে সতর্কতা অবলম্বনের পাশাপাশি সমস্ত ধরণের স্বাস্থ্যবিধি মানার জন্য নিরন্তর উৎসাহ প্রদান করার পরামর্শ দেন। তিনি। এই কাজে সমাজের বিশিষ্ট ব্যক্তিদের যুক্ত করার কথাও বলেন তিনি। পাশাপাশি করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধে মাইক্রো কনটেইনমেন্ট জোন তৈরী করার উপর উত্তর-পূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলিকে গুরুত্ব আরোপ করতে হবে। তবেই এই পরিস্থিতি থেকে দ্রুত বের হওয়া সম্ভব হবে। করোনা মোকাবিলায় গত দেড় বছর ধরে যে সমস্ত আচরণবিধি যেমন, দুই মিটার দূরত্ব, মাস্ক পরিধান, হাত ধোয়া ইত্যাদি মানা হয়েছে তাও বজায় রাখতে হবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, উত্তর-পূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলির ভৌগোলিক দিক দিয়ে বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ থাকা সত্ত্বেও রাজ্যগুলিতে টেস্টিং এবং টিকাকরণের পরিকাঠামোর উল্লেখযোগ্য উন্নয়ন হয়েছে। করোনা মোকাবিলায় টিকাকরণ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কেন্দ্রীয় সরকার সবার জন্য বিনামূল্যে টিকাকরণের যে অভিযান হতে নিয়েছে তা উত্তর-পূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলিতেও গুরুত্ব সহকারে সম্পাদন করতে তিনি অনুরোধ করেন। এরমধ্যেই উত্তর-পূর্বাঞ্চলের কিছু কিছু রাজ্য টিকাকরণে উল্লেখযোগ্য সফলতা অর্জন করেছে বলে প্রধানমন্ত্রী অভিমত ব্যক্ত করেন। এরজন্য স্বাস্থ্যক্ষেত্রের সঙ্গে যুক্ত সমস্ত কর্মীদের প্রতি ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, উত্তর-পূর্বাঞ্চলের যে সমস্ত রাজ্য টিকাকরণে পিছিয়ে রয়েছে সেখানে বিশেষ উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। তবেই কম সময়ের মধ্যে সেখানে টিকাকরণে সফলতা আসবে। পাশাপাশি জনগণের মধ্যে টিকাকরণে উৎসাহ বৃদ্ধির লক্ষ্যে সামাজিক, রাজনৈতিক, ধর্মীয় কাজকর্মের সঙ্গে যুক্ত সেলিব্রেটিদের মাধ্যমে প্রচার অভিযান করার কথাও তিনি ব্যক্ত করেন ।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, করোনা মোকাবিলায় টেস্টিং এবং ট্রিটমেন্ট পরিকাঠামোর উন্নয়নের উপর গুরুত্ব দিয়ে উত্তর-পূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলিকে এগুতে হবে। কেন্দ্রীয় সরকারের সম্প্রতি অনুষ্ঠিত কেবিনেট বৈঠকে দেশের বিভিন্ন রাজ্যের টেস্টিং এবং ট্রিটমেন্ট পরিকাঠামোর উন্নয়নের জন্য ২৩ হাজার কোটি টাকার একটি নতুন প্যাকেজের ঘোষণা করা হয়েছে। উত্তর-পূর্বাঞ্চলের প্রতিটি রাজ্য এই প্যাকেজের মাধ্যমে নিজেদের স্বাস্থ্য পরিকাঠামাে শক্তিশালী করার সহযােগিতা পাবে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, কোভিড মোকাবিলায় অক্সিজেন একটি অন্যতম বিষয়। উত্তর-পূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলিতে অক্সিজেনের চাহিদা পূরণের লক্ষ্যে ১৫০টি অক্সিজেন প্ল্যান্ট স্থাপনের অনুমোদন দিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার। সেগুলি দ্রুত সম্পন্ন করার জন্য উত্তর-পূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলির প্রতি আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী। প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশে করোনার তৃতীয় ঢেউ প্রতিরোধ করতে আমাদের এখন থেকেই সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। এক্ষেত্রে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা, টিকাকরণ প্রভৃতি বিষয়ের সঙ্গে কোনো ধরণের আপোষ করা চলবে না।
বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব কোভি মোকাবিলায় রাজ্য সরকারের গৃহীত পদক্ষেপগুলি তুলে ধরেন। তিনি জানান, কোভিড মোকাবিলায় টিকাকরগ অভিযান রাজ্যে দ্রুত গতিতে চলছে। রাজ্যে ইতিমধ্যে ৪৫ বছর ঊর্ধ্বদের প্রথম ডোজের টিকাকরণ ১০০ শতাংশ করা হয়েছে। দ্বিতীয় ডোজের টিকাকরণ হয়েছে ৫৪, ৫৬ শতাংশ। ১৮ বছর উর্দ্ধদের প্রথম ডোজের টিকাকরগ হয়েছে ৫৩, ৫০ শতাংশএবং দ্বিতীয় ডোজের টিকাকরণ হয়েছে ১.৫৫ শতাংশ। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, রাজ্যে ১,১৭৮টি গ্রাম পঞ্চায়েত ও ভিলেজ রয়েছে। এরমধ্যে ১৮/১৯টি গ্রামে ইতিমধ্যেই সম্পূর্ণ টিকাকরণ করা হয়েছে। ১০টি নগর সংস্থার মধ্যে ৭টিতে সম্পূর্ণ টিকাকরণ হয়েছে এবং রাজ্যের ২টি ব্লকে সম্পূর্ণ টিকাকরণ সম্পন্ন হয়েছে। রাজ্যে বর্তমানে ২ লক্ষ ২৫ হাজার টিকার মজুত রয়েছে। আরো ৬ লক্ষ ২৫ হাজার টিকা পাওয়া গেলে ৭ দিনের মধ্যে গোটা রাজ্যেই টিকাকরণ করানোর উদ্যোগ নেওয়া হবে।
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, করোনাকালীন পরিস্থিতিতেও রাজ্যের আর্থিক স্থিতিকে বজায় রাখা সম্ভব হয়েছে। এরজন্য কৃষিসহ প্রাইমারী সেক্টরগুলির উন্নয়নে বিভিন্ন পরিকল্পনা গ্রহণ করে কাজ করছে রাজ্য সরকার। করোনা পরিস্থিতি মোকাবিলায় রাজ্য সরকার কার্ফু জারি করায় যে সমস্ত গরিব এবং প্রয়োজন রয়েছে এমন পরিবারগুলিকে খাদ্যসামগ্রীর প্যাকেট পৌছে দেওয়া হয়েছে। এরকম ৭ লক্ষ পরিবারে স্বেচ্ছাসেবীদের মাধ্যমে বাড়ি বাড়ি খাদ্যের প্যাকেট পৌছানো হয়েছে।
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, রাজ্যে বর্তমানে স্বাস্থ্য পরিকাঠামো ৩ গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। পাশাপাশি করোনা মোকাবিলায় ডেডিকেটেড কোভিড হাসপাতাল, ডেডিকেটেড কোভিড় কেয়ার সেন্টার, আই সি ইউ বেড, অক্সিজেন যুক্ত বেড ইত্যাদি বৃদ্ধি করা হয়েছে। কোভিড মোকাবিলায় রাজ্যে বর্তমানে ২৯টি ডেডিকেটেড কোভিড কেয়ার সেন্টার বেড ৩,৫২ ৯টি, অক্সিজেনযুক্ত বেড ১,০২৮টি, ভেন্টিলেটর ১৫৭টি, অক্সিজেন প্ল্যান্ট ৩টি এবং অক্সিজেন কনসেনট্রেটর রয়েছে ১,৭০০টি। রাজ্যে আরােও ২২টি অক্সিজেন প্ল্যান্ট স্থাপনের কাজ চলছে বলে মুখ্যমন্ত্রী বৈঠকে জানান।
বৈঠকে উত্তর-পূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলির মুখ্যমন্ত্রীগণ নিজ নিজ রাজ্যে কোভিড মোকাবিলায় কি কি পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে তা প্রধানমন্ত্রীকে অবহিত করেন। আজকের এই ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে অনুষ্ঠিত বৈঠকে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ, প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং,কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী মনসুখ মানদেভিয়া উপস্থিত ছিলেন। রাজ্যের পক্ষে মুখ্যসচিব কুমার অলক, স্বাস্থ্য দপ্তরের প্রধান সচিব জে কে সিনহা সহ স্বাস্থ্য দপ্তরের আধিকারিকগণ উপস্থিত ছিলেন।