Hare to Whatsapp
রাজ্যে ১১ হাজার পদে নিয়োগের বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে, ত্রিপুরা নীতি আয়োগের রিপোর্টে দ্রুত উন্নত রাজ্য হিসাবে উঠে এসেছে : মুখ্যমন্ত্রী
By Our Correspondent
আগরতলা, জুলাই ২, : রাজ্যের নাগরিকদের উন্নত স্বাস্থ্য পরিষেবা দেওয়ার লক্ষ্যে স্বাস্থ্য পরিকাঠামো আধুনিকীকরণের কাজে সরকার অগ্রাধিকার দিয়েছে। স্বাস্থ্য পরিষেবা সরকারের সর্বাধিক অগ্রাধিকারের ক্ষেত্র। স্বাস্থ্য পরিষেবাকে গুরুত্ব দিয়েই সরকার সম্প্রতি টিপিএসসি’র মাধ্যমে স্বচ্ছতার সাথে রাজ্যে ১৫৬ জন চিকিৎসক নিয়োগ করেছে। স্বল্প সময়ের মধ্যে এত সংখ্যায় চিকিৎসক নিয়োগ রাজ্যে রেকর্ড। আজ রবীন্দ্র শতবার্ষিকীভবনে প্রখ্যাত চিকিৎসক বিধানচন্দ্র রায়ের জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে আয়ােজিত চিকিৎসক দিবসের অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করে একথা বলেন মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব। অনুষ্ঠানের সূচনায় ডা. বিধানচন্দ্র রায়ের প্রতিকৃতিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন মুখ্যমন্ত্রী সহ অন্যান্য অতিথিগণ। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, বর্তমান রাজ্য সরকার ব্যতিক্রমী সরকার। রাজ্যের বিকাশে স্বাস্থ্য পরিকাঠামো উন্নয়নের পাশাপাশি সর্বক্ষেত্রেই গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। রাজ্যে ১১ হাজার পদে লোক নিয়োগের বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। তিনি বলেন, নীতি আয়োগের রিপোর্ট অনুসারে দ্বিতীয় ক্যাটাগরির রাজ্য হিসাবে ত্রিপুরা দ্রুত উন্নত রাজ্যের তালিকায় উঠে এসেছে। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘নিজে সুস্থ থাকতে চিকিৎসকদের সুরক্ষিত রাখুন’ চিকিৎসক দিবসে এই হোক শ্লোগান।
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির মার্গ দর্শনে কোভিড নিয়ন্ত্রণে সময় বেঁধে দিয়ে মিশন মুডে কাজ করছে রাজ্য সরকার। ৪৫ উৰ্দ্ধ টিকাকরণে গোটা দেশে শীর্ষস্থান দখল করার পর এবার ১৮ উৰ্দ্ধ টিকাকরণে প্রথম সারির রাজ্যগুলির মধ্যে রয়েছে ত্রিপুরা। কোভিড মোকাবিলার পাশাপাশি সমান্তরালভাবে অন্যান্য স্বাস্থ্য পরিষেবা দিয়ে যাচ্ছে স্বাস্থ্যদপ্তর। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে রাজ্য বাজেটে স্বাস্থ্য ক্ষেত্রের জন্য বরাদ্দ ছিল ৬২৮.০৫ কোটি টাকা। কিন্তু বর্তমানে স্বাস্থ্য ক্ষেত্রের মানোন্নয়নে গুরুত্বারোপ করে স্বাস্থ্য ক্ষেত্রের বাজেট বাড়িয়ে করা হচ্ছে ১৪৪৩.৪৭ কোটি টাকা। উন্নত পরিকাঠামোর পাশাপাশি রাজ্যে জটিল অস্ত্রপচার সহ বিভিন্ন জটিল রোগের চিকিৎসা হচ্ছে। ফলে কমেছে বহি:রাজ্যে রেফারের সংখ্যা। উপরন্তু বিভিন্ন রাজ্য থেকে চিকিৎসার সুযোগ নিতে মানুষ ত্রিপুরামুখী হচ্ছেন। কোভিড পরিস্থিতিতে উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সর্ববৃহৎ অক্সিজেন প্ল্যান্ট স্থাপনের কাজ চলেছে আই জি এম হাসপাতাল চত্বরে। পাশাপাশি রাজ্য সরকারের অর্থানুকূল্যে খুমুলুঙে গড়ে উঠছে আরও একটি অক্সিজেন প্ল্যান্ট।
অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, দীর্ঘদিন পদোন্নতি প্রক্রিয়া বন্ধ থাকার ফলে অনেক কর্মচারিরা অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। তবে বর্তমান রাজ্য সরকার বিষয়টিকে গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করে পদোন্নতির উদ্যোগ নিয়েছে। এতেও একটা অংশ সমালোচনায় সরব হচ্ছে। তা দুর্ভাগ্যজনক। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, মেডিকেল সার্ভিস রুলস সংশোধন করার জন্য চিকিৎসকদের তরফে দাবি জানানো হয়েছে। রাজ্য সরকার বিষয়টিকে সদর্থক দৃষ্টিভঙ্গিতে দেখছে। চিকিৎসকরা এই দাবি না করলেও বিষয়টি রাজ্য সরকারের বিবেচনায় ছিল। বর্তমানে চিকিৎসা পরিষেবায় মহিলাদের অংশগ্রহণ নিয়েও সরব হন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, আরও বেশি করে এই পেশায় মহিলাদের আংশগ্রহণ করা প্রয়োজন। রোগীরা হাসপাতালে এলে তাদের আরও ভাল পরিষেবা দেওয়ার জন্য পরামর্শ দেন মুখ্যমন্ত্রী।
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, রাজ্যে এখন তৈরি হয়েছে ইতিবাচক মানসিকতা। রাজ্যের বেকার যুবক যুবতীদের অনেকেই এখন রাজ্যের উন্নয়নে অংশগ্রহণ করছে। হয়ে উঠছেন আত্মনির্ভর। রাজ্যের মানুষের এই মানসিকতা স্থান করে নিয়েছে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যেও। এখন আর বঞ্চনার শ্লোগান নেই। সর্বত্রই উন্নয়নের কাজ চলছে।
অনুষ্ঠানে সাংসদ প্রতিমা ভৌমিক বলেন, রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর উদ্যোগে রাজ্যে স্বাস্থ্য পরিষেবা অনেক উন্নত হয়েছে। ত্রিপুরাকে মেডিক্যাল হাব করে হেলথ ট্যুরিজম করার যে লক্ষ্যমাত্রা নেওয়া হয়েছে, সেই লক্ষ্যে কাজ করতে রাজ্যের স্বাস্থ্য দপ্তরের প্রতি আহ্বান রাখেন তিনি। সাংসদ প্রতিমা ভৌমিক বলেন, স্বচ্ছতার সাথে এত কম সময়ে ১৫৬ জন চিকিৎসক নিয়োগ ও সরকারি কর্মচারিদের পদোন্নতির বিষয়টি যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত। কোভিড সংক্রমণ থেকে সাধারণ মানুষকে মুক্ত করতে যেসব চিকিৎসক ও স্বাস্থ্য কর্মীরা প্রয়াত হয়েছেন তাঁদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।
অনুষ্ঠানে স্বাস্থ্য দপ্তরের প্রধান সচিব জে কে সিনহা বলেন, হেলথ ট্যুরিজমের যে স্বপ্ন মুখ্যমন্ত্রী দেখেছেন সেই লক্ষ্যে কাজ করছে স্বাস্থ্য দপ্তর। আগে যেখানে রাজ্যের রোগীদের উন্নত চিকিৎসার জন্য বহিরাজ্যমুখী হতে হতো, এখন উল্টো বহিরাজ্য থেকে চিকিৎসা পরিষেবা নিতে মানুষ রাজ্যমুখী হচ্ছেন। রাজ্য স্বাস্থ্য পরিষেবার উন্নয়নের স্বার্থে সমস্ত রকমের সহযোগিতার আশ্বাস দেন শ্রী সিনহা। অনুষ্ঠানে বিভিন্ন জেলার স্বাস্থ্য আধিকারিক ও তাদের দল এবং জাতীয় স্বাস্থ্য মিশন সহ রাজ্য স্বাস্থ্য দপ্তরের বিভিন্ন শাখার প্রতিনিধিদের মুখ্যমন্ত্রী এবং স্বাস্থ্য দপ্তরের প্রধান সচিব সংবর্ধিত করেন। অনুষ্ঠানে অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বিধায়ক ডা. দিলীপ দাস, স্বাস্থ্য দপ্তরের প্রধান সচিব জে কে সিনহা, প্রফেসর ডা. মানিক সাহা, প্রবীণ চিকিৎসক এস আর দেব, স্বাস্থ্য দপ্তরের অধিকর্তা ডা. শুভাশিষ দেববর্মা, পরিবার কল্যাণ ও রোগ প্রতিরোধক দপ্তরের তাধিকর্তা ডা. রাধা দেববর্মা ও মেডিক্যাল এডুকেশনের অধিকর্তা ডা. চিন্ময় বিশ্বাস।