Hare to Whatsapp
রাজ্যে বন্যা মোকাবিলায় আগাম প্রস্তুতি
By Our Correspondent
আগরতলা, জুন ১৭, : ত্রিপুরায় বছরে গড়ে ২২৪১.৮ এম এম বৃষ্টি হয়ে থাকে। এবছর ত্রিপুরায় বর্ষা শুরু হয়েছে ৬ জুন থেকে। আই এম ডি পূর্বাভাস বলছে দীর্ঘদিনের গড় বৃষ্টিপাতের তুলনায় উত্তর-পূর্বাঞ্চলে সাধারণ দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমী বায়ুর প্রভাবে বৃষ্টিপাতের (জুন থেকে সেপ্টেম্বর) তুলনায় ৯৫ শতাংশ কম বৃষ্টিপাত হবে, যা নাকি স্বাভাবিক গড় বৃষ্টিপাতের তুলনায় কম। প্রাক বর্ষা সময়েও (মার্চ-মে) রাজ্যে স্বাভাবিক বৃষ্টিপাতের তুলনায় ৬১ শতাংশ কম বৃষ্টিপাত হয়েছে। এবছর এপ্রিলে রাজ্যে স্বাভাবিকের তুলনায় ৮৫ শতাংশ কম এবং মেতে স্বাভাবিকের তুলনায় ৫০ শতাংশ কম বৃষ্টিপাত হয়েছে। তবে জুন মাসে স্বাভাবিকের তুলনায় বেশি বৃষ্টিপাত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
আগরতলা শহর সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ১৫ মিটার উচুতে অবস্থিত। রাজ্যের সমস্ত জেলা স্বাভাবিক ও আকস্মিক বন্যা প্রবণ বলে চিহ্নিত। মোট ভৌগলিক এলাকার ৪০ শতাংশ এলাকায় বন্যার সম্ভাবনা রয়েছে এবং এগুলির অধিকাংশই নীচু জায়গায় অবস্থিত।
বন্যা নিয়ন্ত্রণে দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমী বর্ষা এবং কালবৈশাখীর আগাম প্রস্তুতি হিসেবে গত ৯ মার্চ রাজ্যস্তরীয় বৈঠক হয় সংশ্লিষ্ট সমস্ত দপ্তর, এজেন্সী ও জেলা প্রশাসনকে নিয়ে। তেমনি সমস্ত জেলায় জেলাস্তরীয় কালবৈশাখী ও বর্ষা মোকাবিলায় প্রস্তুতি নেওয়া হয়। বন্যা সম্পর্কে পূর্বাভাস দেওয়ার জন্য সমস্ত মুখ্য নদীগুলিতে পূর্ত দপ্তর (জল সম্পদ) এবং সেন্ট্রাল ওয়াটার কমিশনের গেজ স্টেশনে রয়েছে (হাওড়া, কাটাখাল, গোমতী, খোয়াই, মনু, ধলাই, মুহুরী, জুরি, কাকরি এবং দেও)। বর্ষার সময়ে আগাম সতকর্তা জারি করার জন্য নর্থইস্ট স্পেস এপ্লিকেশনে সেন্টার (NESAC) ও ধলাই, গোমতী, মনু, হাওড়া এবং খোয়াই নদীর জন্য ফ্লাড আরলি ওয়ার্নিং সিস্টেম তৈরি করেছে।
আই এম ডি আগরতলা স্টেশন নিয়মিতভাবে আবহাওয়ার পূর্বাভাস বর্তমান অবস্থা ও বৃষ্টিপাত সম্পর্কে তথ্য দিয়ে থাকে। রাজ্য এবং জেলাস্তরীয় ইমারজেন্সী আপারেশন সেন্টারগুলির দিনরাত সক্রিয় রয়েছে। তাছাড়া যেকোন আপতকালীন পরিস্থিতি মোকাবিলা ও সমন্বয় বজায় রাখার জন্য ই আর এস এস কন্ট্রোল রুম (১১২) সক্রিয় রয়েছে। আগরতলা শহরের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় এখন কতটুকু জল উঠল এবং কতটুকু জল নিষ্কাষিত হল সে সম্পর্কে তাৎক্ষনিক প্রকৃত তথ্য দেওয়ার জন্য আই টি ভবনে ইনসিডেন্ট কমান্ড এন্ড কন্ট্রোল সেন্টার (ICCC) কাজ করছে। জেলাস্তরে বন্যা প্রস্তুতি সুনিশ্চিত করতে সমস্ত জেলাকে একটি মানদন্ড স্বরূপ চেকলিস্ট দেওয়া হয়েছে। প্রতিদিন রাজ্য, জেলা এবং মহকুমাস্তরে অনলাইন পরিস্থিতি রিপোর্টিং জারি রয়েছে।
তাছাড়াও বন্যা পরিস্থিতি মোকাবিলায় ১২০টি মোটর বোট সহ রাজ্যে মোট ১৭৫টি নৌকা রয়েছে। এগুলি জেলা, মহকুমা প্রশাসন, টি এ, আর, ফায়ার সার্ভিস, ট্রেনিং সেন্টার ও বিভিন্ন মুখ্য এজেন্সীর কাছে রয়েছে। তাছাড়া এন ডি আর এফ টিমগুলির কাছেও নৌকা রয়েছে।
বিভিন্ন বন্যা প্রবণ এলাকায় তাৎক্ষনিক ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য কাঠের নৌকা তৈরি রাখার জন্যও জেলাশাসকগণকে অনুরোধ করা হয়ছে। নৌকা ছাড়াও বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানে। আরও ৪০ রকমের প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম রাখা হয়েছে। এসব সরঞ্জাম ব্যবহারের জন্য প্রশিক্ষিত ভলান্টিয়ার ও আধিকারিক চিহ্নিত করা হয়েছে। যেকোন বন্যা পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য আগরতলা এবং কুমারঘাটে দু’টি এন ডি আর এফ টিম রয়েছে। তাৎক্ষনিকভাবে উদ্ধার ও ত্রাণ কাজে ব্যবহারের ন্য জেলা প্রশাসনের কাছে প্রয়োজনীয় এস ডি আর এফ ফান্ড দেওয়া রয়েছে।
প্রতিটি জেলার নিজস্ব বিপর্যয় ব্যবস্থাপনা পরিকল্পনা রয়েছে। এই পরিকল্পনায় গুরুত্বপূর্ণ এলাকা, সম্পদ, কর্মী, বিভিন্ন এজেন্সীর ভূমিকা ও দায়িত্ব, বন্যার সময় ব্যবহৃত আশ্রয়স্থল, বিপর্যয় মোকাবিলার নির্দেশিকা ও করনীয় সম্পর্কে সবকিছু চিহ্নিত করা আছে। বর্তমান কোভিড পরিস্থিতির নিরীখে জেলা প্রশাসনকে আরও বেশি বন্যার আশ্রয়স্থল চিহ্নিত করার জন্য এবং বন্যা পরিস্থিতিতে কোভিড নিয়ম মেনে চলার জন্য উপযুক্ত ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে। প্রয়োজনের সময় সরঞ্জামও কর্মী ব্যবহারের জন্য জেলাস্তরে ইন্ডিয়া ডিজাস্টার রিসোর্স নেটওয়ার্ক (IDRN) প্রতি মাসে আপডেট করা হচ্ছে।
বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে এমন নদীর পাড় ইত্যাদি চিহ্নিত করে শীঘ্রই নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা নিতে পূর্ত দপ্তরকে জল সম্পদকে বলা হয়েছে। তাৎক্ষনিক মেরামতের জন্য প্রয়োজনীয় স্থানে উপযুক্ত পরিমাণে বালির বস্তা, সিমেন্টের বোল্ডার, বন্যা নিয়ন্ত্রণের সরঞ্জাম ইত্যাদির ব্যবস্থাও রাখতে বলা হয়েছে পূর্ত দপ্তরকে। স্বাস্থ্য, পূর্ত (রোড এন্ড বিল্ডিং),বিদ্যুৎ, পানীয়জল, নগরোন্নয়ন, খাদ্য ও জনসংভরণ, ফায়ার সার্ভিস, টেলি যোগাযোগ ইত্যাদি দপ্তরকে নিজেদের পক্ষ থেকে বন্যা প্রস্তুতি নিতে বলে হয়েছে। প্রিন্ট, সোশ্যাল ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ার মাধ্যমে নিয়মিত ভাবে বন্যা, সাইক্লোন, বজ্রপাত, ল্যান্ডস্লাইড ইত্যাদি সম্পর্কে জনগণের মধ্যে নিরাপত্তামূলক স'চতনতা সৃষ্টি করা হচ্ছে।