Hare to Whatsapp
শিক্ষামন্ত্রীর বিকল্প কর্মসংস্থানের ফর্মূলা খারিজ করলেন ১০৩২৩ শিক্ষক সংগঠনের নেতারা, দুর্বার আন্দোলনে নামার হুমকী
By Our Correspondent
আগরতলা, ফেব্রুয়ারি ১৭, : সর্বশিক্ষাই হোক আর ১০৩২৩ এর সুপ্রিম কোর্টের নির্দ্দেশে ছাঁটাই শিক্ষক সমাজ কারোকেই আর আগামী দিনে রেগুলার শিক্ষক পদে চাকুরী দেওয়া যাবেনা। খোদ শিক্ষামন্ত্রী শ্রী রতনলাল নাথ গত ১৫ই ডিসেম্বর রাজধানীর একটি ক্যাবল টিভি চ্যানেলে এক সাক্ষাৎকারে এ কথা বলেছেন। শিক্ষামন্ত্রীর মতে, শিক্ষক পদে নিয়োগের ক্ষেত্রে টেট পরীক্ষা আবশ্যক। আর টেট পরীক্ষায় বসতে গেলে বি এড, এম এড বা ডিপ্লোমা ইন এলিমেন্টারী এডুকেশন-এর সার্টিফিকেট আবষ্যক। এই অবস্থায় টেট পরীক্ষা ছাড়া তিনি কাউকে শিক্ষক পদে চাকুরী দিয়ে নিজে জেলে যেতে চাননা বলে শিক্ষামন্ত্রী শ্রী নাথ পরিষ্কার ভাবে জানিয়ে দিয়েছেন। তবে ১০৩২৩ শিক্ষকদের জন্য রাজ্য সরকার বিকল্প কিছু একটা ভাবছেন বলে তিনি জানান। এবং সেটা খুব শীঘ্রই ঘোষণা হতে পারে। তবে বিকল্প কর্মসংস্থানের বিষয়টি কি হতে পারে সে ব্যাপারে তিনি স্পষ্ট করে কিছু বলতে চাননি।
প্রসঙ্গত, আগামী মাসেই সুপ্রিম কোর্টের আদেশে ছাঁটাই হতে চলেছে ১০৩২৩ জন শিক্ষক কর্মচারী। বাম জামানায় চালু সরকারী নিয়োগনীতিটি অসাংবিধানিক ছিল, এবং ওই নিয়োগনীতির মাধ্যমে ২০১০ সালের পরে যত জন শিক্ষক পদে নিযুক্তি পেয়েছেন তাদের চাকুরী প্রথমে ত্রিপুরা হাইকোর্টে অবৈধ ঘোষণা করেন এবং পরে সুপ্রিম কোর্টেও সেই হাইকোর্টের নির্দেশ বহাল থাকে। কিন্তু প্রথম থেকেই সুপ্রিম কোর্ট ও হাইকোর্টের নির্দেশ বা রায় নিয়ে বিতর্কের সৃষ্টি হয়। একটি অংশের আইন বিশেষজ্ঞদের অভিমত হাইকোর্ট কখনোই সব শিক্ষকদের চাকুরীচ্যুাতির রায় দেয়নি। হাইকোর্টে যেসব শিক্ষকদের চাকুরি চ্যালেঞ্জ হয়েছিল এমন ৪৬১ জন শিক্ষকের চাকুরীচ্যুাতির আদেশ ছিল। কিন্তু তৎকালীন সরকারী প্রশাসনের যেসব আমলা ও শিক্ষাকর্মকর্তা ও আইন বিশেষজ্ঞরা এ সম্পর্কে সরকারকে পরামর্শ দিতেন তাদের ভুল পরামর্শের কারণেই ৪৬১ জনের বদলে ১০৩২৩ জনের চাকুরীচ্যুতির বিষয়টি সামনে চলে এসেছে।
২০১৮ সালের বিধানসভা ভোটের আগে হাইকোর্টের নির্দেশে এসব শিক্ষকদের চাকুরীচ্যুাতির সিদ্ধান্ত হয়ে যায়। কিন্তু তখন ভোটের মুখে বর্তমান শিক্ষামন্ত্রী সহ মুখ্যমন্ত্রী ও বিজেপি দলের অন্যান্য নেতারা চাকুরীচ্যুত এসব শিক্ষকদের এমর্মে আশ্বস্থ্য করেছিলেন যে দল ক্ষমতায় এলে ১০৩২৩ জন শিক্ষকদের সাথে তারা ‘ন্যায়’ করবেন। এবং আইন মেনে তাদের চাকুরীতে পুনবহালের যাবতীয় উদ্দ্যোগ গ্রহন করবেন। কিন্তু এক্ষেত্রে ক্ষমতায় আসার পর বিজেপি সরকারের প্রশাসনের সংশ্লিষ্ট কর্তাব্যক্তিরা উল্টো সুর গাইছেন। এই অভি্যোগ তুলে ১০৩২৩ শিক্ষক কর্মচারীদের সংগঠন গুলি গত ক’মাস ধরে বিভিন্ন পর্যায়ে এমর্মে হুমকি দিচ্ছেন মার্চ মাসের আগে তাদের চাকুরীতে পুনবহালের সিদ্ধান্ত ঘোষণা না হলে রাজ্যে আগুন জ্বলবে। এই অবস্থায় ১৫ ফেব্রুয়ারী ক্যাবল টিভি চ্যানেলে খোদ শিক্ষামন্ত্রীর বিরূপ মন্তব্যের খবর ছড়িয়ে পড়তেই ১০৩২৩ শিক্ষক কর্মচারীদের দুটি সংগঠনই গত ১৬ই ফেব্রুয়ারী (রবিবার) ফের মাঠে নেমে পড়েন। এবং রাজধানীর দুই জায়গায় দুটি পৃথক সভা করে এমর্মে হুমকি দেওয়া হয়েছে যদি মার্চ মাসের আগেই তাদের চাকুরীতে পুন বহালের আইনী উদ্দ্যোগ গৃহীত না হয় তাহলে তারা তীব্র আন্দোলন গড়ে তুলবে। বিকল্প কর্মসংস্থানের উদ্যোগেরও বিরোধীতা করেছে ১০৩২৩ কর্মচারী সংগঠনের নেতৃবৃন্দ।
সম্প্রতি অবসরপ্রাপ্ত হাইকোর্টের এক বিচারপতি এ বি পাল ত্রিপুরাইনফো ডটকম এবং দৈনিক সংবাদ পত্রিকায় ১০৩২৩ শিক্ষকদের বিষয়ে একটি প্রতিবেদন লিখেছেন। তাতে তিনি স্পষ্ট করেই বলেছেন যে, হাইকোর্টের রায় এর কোথাও বলা হয়নি ১০৩২৩ জনের সবার চাকুরী যাবে। হাইকোর্টের রায়-এ স্পষ্ট করেই বলা আছে যাদের চাকুরি কোর্টে চ্যালেঞ্জ হয়েছে শুধু এমন ৪৬১ জন শিক্ষকেরই চাকুরী যাবে। কিন্তু এখন পর্যন্ত রাজ্য শিক্ষা দপ্তর জাস্টিস (অবসরপ্রাপ্ত) শ্রী পাল এর এই প্রতিবেদন সম্পর্কে কোন প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেনি। শিক্ষামন্ত্রীও চুপ। আর অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতির এই প্রতিবেদনটিকে সামনে রেখে ফের মাঠে নেমে পড়েছে ১০৩২৩ শিক্ষক সংগঠন গুলি। তারা চাকুরী ফিরে পেতে দুর্বার আন্দোলনে নামার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।