Hare to Whatsapp
আউটসোর্স এজেন্সির মাধ্যমে সরকারী দপ্তরে ৪০০০ লোক নিয়োগের সিদ্ধান্ত বাতিল ঘোষণা করলো ত্রিপুরা সরকার!
By Our Correspondent
আগরতলা, মে ৪, : আউট সোর্স এজেন্সির মাধ্যমে বিজেপি শাসিত ত্রিপুরায় সরকারী দপ্তরে লোক নিয়োগের যে সিদ্ধান্ত সম্প্রতি নেওয়া হয়েছিল আপাতত তা বাতিল বলে ঘোষণা করা হয়েছে। গত ২৬শে ফেব্রুয়ারী এক সার্কুলারে রাজ্য সরকারের বিভিন্ন দপ্তরে প্রায় ৪০০০ শূন্যপদে এই লোক নিয়োগের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল। গ্রুপ সি ও গ্রুপ ডি ছাড়াও বেশ কিছু এমন পদেও আউটসোর্স এজেন্সির মাধ্যমে লোক নিয়োগের কথা বলা হয়েছিল যেসব পদে একমাত্র ত্রিপুরা লোকসভা আয়োগের লিখিত পরীক্ষার মাধ্যমেই লোক নিয়োগ করা যেতে পারে।
জানাগেছে, ২৬ ফেব্রুয়ারীর সরকার ঘোষিত এই সিদ্ধান্ত নিয়ে রাজ্যের কর্মহীন বেকারদের মধ্যে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়। কেননা, এত কম টাকা বেতন প্রদানের সিদ্ধান্ত হয়, যে টাকায় কোন বেসরকারী কোম্পানীও লোক নিয়োগ করে না। একজন স্নাতক স্তরের বেকারের গ্রুপ সি পদে বেতন ধার্য করা হয়েছিল নয় হাজার টাকারও কম। আর গ্রুপ ডি কর্মচারীর বেতন ধার্য করা হয় সাড়ে সাত হাজার টাকার মতো। একজন বেকার ইঞ্জিনিয়ার ও এমবিএ পাশ বেকারের বেতন ধার্য করা হয়েছিল ১৭ হাজার টাকারও কম।
তাছাড়া ই-টেন্ডারের নামে রাজ্য ও বহিঃরাজ্যের পাঁচটি এমন সব কিছু এজেন্সির হাতে এই লোক নিয়োগের দায়িত্ব অর্পন করা হয় তাদের অনেকেরই এত বিশাল সংখ্যায় ‘ম্যান পাওয়ার’ হেন্ডেল করার অভিজ্ঞতা কিংবা পেশাগত ক্ষমতা কোনটাই নেই। এর মধ্যে প্রথম দফায় এক হাজার লোক নিয়োগের জন্যে স্থানীয় যে একটি এজেন্সিকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল মূলত সেটি একটি 'সিকিউরিটি গার্ড' ও ‘ফুড ক্যাটারিং’ ফার্ম। বিয়ে বাড়ীতে খাবার ও সিকিউরিটির লোক সরবরাহ করাই মূলত তাদের কাজ। বাম আমলে বাঁকা পথে সরকারী দপ্তরে নাইটগার্ড মোতায়েন করে তারা ‘ম্যানপাওয়ার সাপ্লাই’ এজেন্সী হিসাবে স্বীকৃতি আদায় করে নেয়। এবং যখনই কোন সরকারী দপ্তর ‘ম্যানপাওয়ার সাপ্লাই’-র টেন্ডার আহ্বান করে এমন কম দামে এরা লোক সরবরাহের প্রতিশ্রুতি দিয়ে দরপত্র নিজেদের অনুকূলে নিয়ে নেয় পরবর্তীকালে দেখা যায় তারা বেকার কর্মহীন চাকুরী প্রার্থীদের কাছ থেকে বেতনের তিন মাসের টাকা কখনো আরও বেশী টাকা আগাম আদায় করে নেয়। সরকারী দপ্তরে চাকুরী প্রদানের নাম করে খুবই কম বেতনে মোতায়েন করা ওই ম্যানপাওয়ারে যখন সেই সরকারী দপ্তরের কাজ হাসিল হয়না স্বাভাবিক কারনেই ওই কর্মচারীকে ছাঁটাই করে দেওয়া হয়। কিন্তু ছাটাই হওয়া বেকারটি আগাম জমা দেওয়া টাকা আর ফেরত পাননা। এভাবে সরকারী দপ্তরে লোক সরবরাহের মাধ্যমে ওই ‘ক্যাটারিং’ ফার্মটি রাজ্য সরকার ও রাজ্যে অবস্থিত কিছু কেন্দ্রীয় সরকারের অফিসে লোক মোতায়েন করে লাখ লাখ টাকা বেকারদের থেকে বাঁকা পথে আদায় করে নিয়েছে।
অভিযোগ উঠেছে, রাজ্য সরকারের কর্ম বিনিয়োগ দপ্তরের কাছে ওই ক্যাটারিং এজেন্সির ব্যাপারে এই সব অনিয়মের অভিযোগ গুলি বিভিন্ন মহল থেকে সুস্পষ্টভাবে জানানোর পরও দপ্তরের অধিকর্তা এক আই এফ এস অফিসার নরেশ বাবু এই ক্যাটারিং এজেন্সিকেই এক হাজার লোক নিয়োগের বরাত দিয়ে দেন। অবশ্য রাজ্য সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায়ে বিষয়টি জানাজানি হলে শেষ পর্যন্ত ওই আই এফ এস অফিসারকে সম্প্রতি কর্ম বিনিয়োগ দপ্তরের অধিকর্তার পদ থেকে সরানো হয়। এরপর অদিতি মজুমদার নামে যাকে কর্ম বিনিয়োগ দপ্তরের অধিকর্তা পদে বসানো হয় তিনি দায়িত্বভার গ্রহনের পর গোটা বিষয়টি নিয়ে পু়ঙ্খানুপুঙ্খ তদন্তের পর গত ২৯শে এপ্রিল সরকারী দপ্তরে আউটসোর্স এজেন্সির মাধ্যমে লোক নিয়োগের গোটা প্রক্রিয়াটিই বাতিল বলে ঘোষণা করে দেন।