Hare to Whatsapp
করোনার দ্বিতীয় ঢেউ–এর শুরুতেই বিশৃঙ্খলার মুখে প্রশাসন, চাকুরী ছাড়লেন তিন চিকিৎসক
By Our Correspondent
আগরতলা, এপ্রিল ১৯, : প্রশাসন নিজেদের দেওয়া করোনার নিয়মবিধি নিজেরাই একের পর এক অমান্য করে চলেছেন। করোনার বিধি নিষেধ অনুযায়ী কোথাও কুড়ি জনের বেশী জমায়েত নিষিদ্ধ। কিন্তু ত্রিপুরা পুলিশ টিএস আর -এর নিয়োগ ও জয়েন্ট রিক্রুটমেন্ট বোর্ড চার হাজার শূন্য পদে লোক নিয়োগে পরীক্ষা নিচ্ছে করোনা বিধি নিষেধকে অগ্রাহ্য করে। উদ্ভত অবস্থার প্রেক্ষিতে ত্রিপুরা জুড়ে করোনা মোকাবেলার প্রস্তুতিতে বড় রকমের সমস্যায় পড়ে গেছেন সাধারন প্রশাসন। স্বাস্থ্য দপ্তর কর্তৃপক্ষ হাসপাতাল গুলিতে করোনা চিকিৎসা সরঞ্জাম পর্যাপ্ত হারে দিতে পারছেনা। চিকিৎসা সামগ্রীর অভাবের পাশাপাশি চিকিৎসক, নার্স ও স্বাস্থ্য কর্মীদেরও স্বল্পতা রয়েছে। এতে সাধারন মানুষের নাজেহাল অবস্থা।
অভিযোগ উঠেছে, সচিবালয় ও স্বাস্থ্য দপ্তর থেকে করোনা মোকাবেলায় প্রতিদিন যেসব সার্কুলার ও মেমোরেন্ডাম বের করা হচ্ছে বহু ক্ষেত্রে প্রশাসনের লোকরাই তা অমান্য করে চলেছেন।
প্রাপ্ত অভিযোগে প্রকাশ, ধলাই জেলার লংতরাইভ্যালী ও রইস্যাবাড়ী সাব ডিভিশনের তিন চিকিৎসক ইতিমধ্যেই চাকুরী ছেড়ে দিয়ে বাড়ী চলে এসেছেন। গন্ডাছড়ার পূর্নমোহন ত্রিপুরা স্মৃতি প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্রের চিকিৎসক ডাঃ অর্গ আর মারাক, লালছড়া পি এইচ সি-র ডাঃ সুকুমল সেন ও রইস্যাবাড়ী পি এইচ সি-র ডাঃ ভূপেশ দেববর্মা হঠাৎ করে চাকুরী ছেড়ে দিয়ে বাড়ী চলে গেছেন। অভিযোগ, পরিকাঠামোহীন এসব স্বাস্থ্য কেন্দ্র গুলিতে করোনা সহ অন্যান্য রোগীদের দিন দিন এত ভীড় বাড়ছে স্বাভাবিক চিকিৎসা পরিষেবা দেওয়াই কঠিন হয়ে পড়েছে। জেলা ও রাজ্য স্বাস্থ্য প্রশাসনকে জানিয়েও কোন কাজ হচ্ছে না। উপরন্তু কখনো স্বাস্থ্য প্রশাসন, কখনো জেলা প্রশাসন থেকে কঠোর নিয়মবিধি চালু করছেন। এত সার্কুলার জারী হচ্ছে আট ঘন্টার জায়গায় ষোল ঘন্টা ডিউটি করেও চিকিৎসক, নার্স ও অন্যান্য স্বাস্হ্য কর্মীদের পরিস্হিতি সামাল দেওয়া কঠিন হচ্ছে। এই অবস্থায় করোনার দ্বিতীয় ধাপে পরিস্থিতি যখন আরও জটিলতর হওয়ার মুখে তখন ঢাল তরোয়ালহীন এসব গ্রামীন স্বাস্থ্য কেন্দ্র গুলির চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীরা সাধারন মানুষের হুমকীর মুখে পড়তে পাড়েন বলে অনেকেই দুশ্চিন্তায় পড়ে গেছেন। তাই বহু চিকিৎসক ও স্বাস্থ্য কর্মীরা চাকুরী ছাড়ার চিন্তা করছেন।
জানা গেছে, এডিসি-র সাম্প্রতিক শাসন ক্ষমতা তিপ্রা মথার হাতে যাওয়ার পর পাহাড়ী এলাকার স্বাস্থ্য কেন্দ্রগুলিতে খবরদারীর ক্ষেত্রে একটা নয়া দুষ্কৃতিকারীদের বাহিনী আমদানী হয়েছে। ভিলেজ কাউন্সিল অফিস থেকে স্বাস্থ্য কেন্দ্র সর্বত্রই এই তিপ্রা দুষ্কৃতি বাহিনী খবরদারী চালাচ্ছে। উদ্ভূত অবস্থার প্রেক্ষিতে এডিসি এলাকার এসব সরকারী প্রতিষ্ঠানের অফিসার কর্মচারী ও স্বাস্থ্য কর্মীরা ভয়ে আছেন। স্থানীয় পুলিশ প্রশাসনকে জানিয়েও কাজ হচ্ছেনা। তাই বহু ক্ষেত্রে একারনেও প্রশাসনিক কাজকর্মে সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে।
পক্ষান্তরে, রাজধানীতে বসে স্বাস্থ্য ও সাধারন প্রশাসন থেকে প্রতিদিন করোনা মোকাবেলায় যেসব সার্কুলার বের হচ্ছে বহু ক্ষেত্রে শাসক দল এমনকি প্রশাসনের লোকরাই তা অমান্য করে চলেছেন। গত ১০ এপ্রিল মুখ্যসচিবের এক সার্কুলারে বলা হয়েছিল কোথাও ২০ জনের বেশী জমায়েত করা যাবেনা। কিন্তু দেখাগেছে, তিপ্রা মথার লোকরা বহু জায়গায় শত শত লোককে জড়ো করে স্থানীয়ভাবে বিজয় মিছিল করেছে। একই রকমভাবে সমতলে এমনকি রাজধানী শহরেও বিজেপি-র লোকরা মাস্কহীন শত শত লোকদের জড়ো করে দল বদলের সভা করছেন। গতকাল রাজধানীর অদূরে বেলাবরে স্হানীয় বিধায়কের উপস্হিতিতেই দলবদলের একটি সভা হয়েছে। পুলিশ সভার জন্য নিরাপত্তাও দিয়েছে। কিন্তু মাস্কহীনদের একজনকেও জরিমানা করার সাহশ দেখাতে পারেনি।
পক্ষান্তরে সভার একটু দূরে রাস্তায় মাস্কহীন লোকদের ২০০ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। একই রকমভাবে কেন্দ্রীয় সরকার ছাত্রছাত্রীদের সব বোর্ড পরীক্ষা, চাকুরী পরীক্ষা বাতিল ঘোষণা করলেও ত্রিপুরা পুলিশের টিএসআর-এ নিয়োগ, জে আর বি টি-র ৪০০০ শূন্যপদে চাকুরী পরীক্ষা বহাল রেখেছেন। টি এস আর-এর নিয়োগ পরীক্ষায় বেশ কয়েক হাজার চাকুরী পরীক্ষার্থী বহিঃরাজ্য থেকেও রাজ্যে আসবেন। এর ফলে যে রাজ্যে করোনার দ্বিতীয় ঢেউকে সরকারী মদতেই বাড়ানোর প্রক্রিয়া চলছে তা বলাই বাহুল্য। কেননা, মুখ্যসচিবের সার্কুলার শুধু শিক্ষা দপ্তর বা পুলিশ দপ্তরই অমান্য করছে তাই নয়, সরকারী সার্কুলার সরকারী অন্যান্য বহু দপ্তর মানছে না বলে সাধারন মানুষও বহুক্ষেত্রে এসব প্রশাসনিক সার্কুলারকে গুরুত্ব দিচ্ছেনা। ফলে বাসন্তী পূজো থেকে শুরু করে কসবা মন্দির, লক্ষ্মীনারায়ন বাড়ী, দূর্গাবাড়ী, উদয়পুরে ত্রিপুরেশ্বরী মন্দিরের পূজা অর্চনা এখনো বহাল তবিয়তে চলছে।
শুধু তাই নয়, বহিঃরাজ্য থেকে যেসব প্লেন, ট্রেন, বাস আসছে সেগুলিতেও কোন নজরধারী কিংবা যাত্রীদের করোনা টেস্ট ছাড়াই রাজ্যের অভ্যন্তরে ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে। উদ্ভত অবস্থার প্রেক্ষিতে বলা হচ্ছে, রাজ্যে প্রশাসনিক মদতেই করোনার দ্বিতীয় ঢেউ উদ্বেগের মাত্রা ছাড়াচ্ছে।