ত্রিপুরার এডিসি ভোট ২০২১-গড়ে ভোট পড়লো ৮৫.৭৪%, ৬৫ বুথে পুনঃ ভোটের দাবী সিপিএম-এর
নিজস্ব প্রতিবেদন
আগরতলা, এপ্রিল ৭, : প্রধান বিরোধী দল সিপিএম-এর মতে এডিসি ভোট ২০২১ ছিল মানুষের প্রতিরোধের ভোট। ভোট প্রদানের অদম্য ইচ্ছা শক্তির প্রতিফলন দেখা গিয়েছে এবারের এডিসি ভোটে। আর অন্য বিরোধী দল কংগ্রেসের মতে, গুলী, ছাপ্পা ভোট, পুলিশ ও প্রশাসনিক নিষ্ক্রিয়তার মধ্যে এমন ধরনের ভোট ত্রিপুরা কখনো দেখেনি। কংগ্রেসের হয়ে এমন কথা বলেছেন, প্রদেশ কংগ্রেস প্রধান পীযূষ বিশ্বাস। তার মতে ত্রিপল ইঞ্জিনের সরকার গড়ার স্বপ্ন পূরন দূরের কথা বিজেপি এডিসি ভোটে ডবল ডিজিটও ক্রস করতে পারবে না।
পক্ষান্তরে বিজেপি-র মতে এই প্রথম রাজ্যে মানুষ শান্তিপূর্ন ভোট দেখেছে। সব আসনেই বিজেপি জিতবে। সামগ্রিকভাবে রাজ্যে ২০২১ সালের এডিসি ভোট কোথায় কেমন ছিল নিচের কয়েকটি প্রধান প্রধান ঘটনার দিকে আলোকপাত করলেই এসম্পর্কে একটা ধারনা পাওয়া যেতে পারে।
৬৫টি বুথে পুনঃ ভোটের দাবী সিপিএম-এর
সিপিএম ১১টি আসনের ৬৫টি বুথে পুনঃ ভোটের দাবী করেছে। এই সংখ্যাটা আরও বাড়তে পারে বলে সাংবাদিক সন্মেলনে জানান সিপিএম রাজ্য সম্পাদক গৌতম দাস। এই আসনগুলি হল- গন্ডাছড়া-গঙ্গানগর(৪), সিমনা-তমাকারী(১), বুধজংনগর-ওয়াকিনগর (৭), জিরানীয়া(১০), মান্দাই-পুলিনপুর(২), পেকুয়ারজলা- জন্মেজয়নগর(৪), আমতলী- গোলাঘাটি(৩), কাঁঠালিয়া-মির্জা(১৭), রাইমাভ্যালি(৩), নতুনবাজার-মালবাসা(৯) ও পূর্ব মুহুরীপুর-ভোরাতলী (১)।
বহু আসনে ভোট শান্তিপূর্ন
কিল্লা-বাগমা, হালাহালি-আশারামবাড়ী, রামচন্দ্রঘাট, অম্পিনগর, গন্ডাছড়া, মাছমারা, করমছড়া, দামছড়া, জম্পুই, আমবাসা,কুলাই- চাম্পাহাউর প্রভৃতি আসনে গড় পরতায় ভোট ছিল শান্তিপূর্ন। নির্বাচন কমিশনে এসব জায়গা থেকে বড়সড় কোন গোলযোগের অভিযোগ জমা পড়েনি।
ইভিএম-এ অস্পস্ট আনারস চিহ্ন
খোয়াই-র রামচন্দ্রঘাট ২৪নং বুথে আনারস চিহ্ন কে বা কারা ঢেকে দেয় কাগজ লাগিয়ে। এতে করে অনেক আনারস সমর্থক ভোটার তাদের পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিতে পারেনি। এনিয়ে উত্তেজনা দেখা দেয়। বন্ধ হয়ে পরে ভোট গ্রহন।
তিপ্রা মথার প্রার্থী আক্রান্ত
শিলাছড়ি-মনুবনকুল কেন্দ্রে তিপ্রামথার প্রার্থী ধনসেন ত্রিপুরার উপর বিজেপি দুষ্কৃতীরা হামলা করেছে বলে অভিযোগ। পুলিশকে জানিয়েও কোন কাজ হয়নি। উত্তর বিজয়পুর বুথে তিপ্রামথার এজেন্টকে বের করে দেওয়ার অভিযোগ পেয়ে তিনি সেখানে গেলে তার উপর এই হামলা হয় বলে তিনি অভিযোগ করেন।
বহিরাগতদের নিয়ে বুথ জ্যাম
কাঞ্চনপুর ইংরেজী মাধ্যম স্কুল, কর্নজয় চৌধুরীপাড়া হাইস্কুল, রামচরন চৌধুরী পাড়া হাইস্কুল বিজেপি দুষ্কৃতীরা হামলা ভয়ভীতি দেখায় ভোটারদের। বহিরাগতদের নিয়ে বুথ জ্যাম ও বুথ দখলের চেষ্টা হয় । বিরোধীদের অভিযোগ, ভিকি প্রসাদ, রাজীব ভট্টাচার্য সেখানে ভোটের আগেরদিনও অবস্থান করে ভোটকে প্রভাবিত করার চেষ্টা করেন।
পোলিং ষ্টেশনের দরজা বন্ধ
ভোট শুরুর কিছুক্ষন পরেই পূর্ব সিমনার ভিলেজ কমিটির অফিসের দরজা বন্ধ করে রাখা হয়েছিল বেশ কিছুক্ষন। অভিযোগ ব্যাপক ছাপ্পা ভোট দিয়েছে আইপিএফটি দুষ্কৃতীরা। একই রকমভাবে লেফুঙ্গাতে পুলিশের উপস্থিতিতে ভোটারদের তাড়িয়ে দেওয়া হয়। সাত সকালে ভোট শুরুর কিছুক্ষনের মধ্যেই ভোটদান বন্ধ রেখে বুথের ভিতরে চলে ছাপা ভোট। অভিযোগ সিপি এম এর। মানুষ দৌড়ে পালায়।
২৫, নতুন বাজার-মালবাসা
চারটি বুথে পুলিশের সামনে বহিরাগতরা ভোটারদের লাইন থেকে বের করে দিয়েছে। এতে উত্তেজিত ভোটাররা প্রতিরোধ গড়ে পরে ভোট দিয়ে এসেছেন। বিরোধী শিবিরের ভোটারদের ভোট গ্রহন কেন্দ্রে জেতেও বহু জায়গায় বাধার অভিযোগ এসেছে।
২১, মহারানী- চেলাগাং
সকালের দিকে বহিরাগতদের নিয়ে দাতারাম সহ বেশ কিছু বুথে বিজেপি-র কিছু দুষ্কৃতি বিরোধীদের ভোটদানে বাধা দিতে থাকে। অনেকেই ভোট দিতে পারেনি। এই অনাচার সহ্যের মাত্রা ছাড়ালে দুপুরের পরে গ্রামের মহিলারা এক জোট হয়ে ভোট লুটেরাদের তাড়া করেন। এতে আহত হয়েছেন বেশ কয়েকজন। এখানকার ৩৬ নং বুথে বিজেপি-র দুষ্কৃতীরা ভোটারদের ভোট কেন্দ্রে যেতে বাধা দেয়। প্রতিবাদে এলাকার লোক ভোট বয়কট করে।
পুনঃ ভোট চাইলেন গ্রামবাসী
এসপি ও ডি এম বুথ দখলের খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গেলেন। কিন্তু যারা ভোট দিতে পারলেননা তাদের ভোট দেওয়ার ব্যবস্থা করলেন না। তাই কাঁঠালিয়া মির্জার ৫৪ ও ৫৫ নং বুথে পুনঃ ভোট চেয়ে গন সাক্ষর দিয়ে আবেদন করলেন গ্রামের মানুষ। এছাড়া এই কেন্দ্রের তিন নং, ২২নং ও ৬১নং বুথে রিগিং এর অভিযোগ তুলেছে সিপিএম।
বুথে ঢুকে প্রার্থী নিজে এজেন্টকে বের করে দিলেন
বিজেপি প্রার্থী নিজে বেশ কিছু বুথে ঢুকে সিপিএম ও কংগ্রেস এজেন্টকে বের করে দেয়। বহু ভোট গ্রহন কেন্দ্রের বাইরে বহিরাগতদের দিয়ে বিরোধী শিবিরের ভোটারদের ভোট গ্রহন কেন্দ্রে যেতে বাধা স্রিস্টির অভিযোগ এসেছে।
মানুষ প্রতিরোধ গড়ে ভোট লুট বন্ধ করলেন
বিরোধী দলের এজেন্ট বের করে দেওয়া থেকে শুরু করে বহিরাগতদের নিয়ে গিয়ে বুথ জ্যাম সবকিছু করার পরও পূর্ব মুহুরীপুর ভোরাতলীতে মানুষের অদম্য ইচ্ছা শক্তির কারনে ভোট লুট করতে ব্যর্থ হয়েছে দুষ্কৃতিরা। রতনপুরে এক বিজেপি কর্মকর্তাকে রক্তাক্ত অবস্থায় পাওয়া গেছে। পোয়াংবাড়ীতে একজনকে ধরে এলাকাবাসী উত্তম মধ্যম দিয়ে পুলিশে দিয়েছেন। লুধুয়া, সোনাই, জোলাইবাড়ী, শ্রীনগর, গরিফা এলাকায় মানুষ প্রতিরোধ গড়ে ভোট লুট বন্ধ করেছে।
নবাদুল আক্রান্ত ?
বিজেপি যুব মোর্চার রাজ্য সভাপতি নবাদুল গোলাঘাটি এলাকায় গিয়েছিলেন ভোট তদারকি করতে। এডিসি এলাকার ভোটে নন এডিসি-র মানুষ কেন এসেছে এই প্রশ্ন তুলে স্থানীয় জনতা তার গাড়ী ও সমর্থকদের উপর আক্রমন করে বসে। এতে বেশ কয়েকজন আহত হন। অভিযোগ প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতির।
বিজেপি-র অভিযোগ
বিজেপি মুখপাত্ররা সাংবাদিক সন্মেলন করে গতকাল অভিযোগ করেছেন ভোট শান্তিপূর্ন হলেও বেশ কিছু জায়গায় সিপিএম ও তিপ্রামথা বিজেপি-র ভোটার ও প্রার্থীদের উপর আক্রমনের চেষ্টা করেছে। কিছু কেন্দ্রে সরকারী অফিসাররা যারা ভোটের কাজে যুক্ত ছিলেন তারাও তিপ্রা ও সিপিএম-এর হয়ে কাজ করেছে। এসব চিহ্নিত করনের কাজ চলছে। দল খুব শীঘ্রই নির্বাচন কমিশনে এসব অফিসারদের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ জানাবে।
গাড়ি ভর্তি অস্ত্র আটক
পুলিশের উপস্থিতিতে গতকাল পূর্ব মুহুরীপুর ভোরাতলী এডিসি আসনে সন্দেহজনক ভাবে ঘুরে বেড়ানো একটি মারুতীগাড়ি আটক করে স্থানীয় জনতা। এবং উদ্ধার হওয়া অস্ত্র সহ তিন দুষ্কৃতিকে পুলিশের হাতে তুলে দেন।
প্রয়োজন পড়লে বোবাগ্রা আইপিএফটি-র সমর্থন নেবেন
যদি ১০ এপ্রিল গণনার পর দেখা যায় প্রদ্যোত- এর তিপ্রা মথা দল সংখ্যাগরিষ্ঠ আসনে জয়ী হতে পারেনি তাহলে এডিসিতে সরকার গঠন করতে বোবাগ্রা প্রয়োজন আইপিএফটি-র সমর্থন নেবে। গতকাল ভোট পর্ব শেষ হতেই এমনটা বলে দিলেন বোবাগ্রা।