Hare to Whatsapp
প্রচুর প্রশ্ন থাকলেও মমতার চোট মিথ্যে নয় !!
By Our Correspondent
আগরতলা, মার্চ ১১, : কলকাতা, মার্চ ১০ঃ আজ তাঁর মনোনয়নপত্র দাখিল করতে নন্দীগ্রামে গিয়েছিলেন। নন্দীগ্রাম বিধানসভা কেন্দ্রে তিনি প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন এবারে। সারাদিন তিনি মন্দিরময় নন্দীগ্রামের মন্দিরে মন্দিরে পুজো দিয়েছেন। এক ফাঁকে হলদিয়ায় মনোনয়নপত্র দাখিলও করেছেন। সন্ধ্যায় রেয়াপাড়ার অস্থায়ী বাসস্থানে ফেরার পথে একটি কীর্তনের আসরেও গিয়েছিলেন। সেখান থেকে বেরিয়ে নিজের গাড়িতে ওঠার সময়--তাঁর অভিযোগ--চার-পাঁচজন তাঁকে ধাক্কা দেয় এবং তিনি গাড়ির দরজার ওপর মুখ থুবড়ে পড়ে যাওয়ার কারণে বাঁ-পায়ে প্রচণ্ড চোট পান--পা ফুলে যায়--অসহ্য যন্ত্রণা শুরু হয় পা-হাত এবং মাথায়। দৃশ্যতঃই তাঁকে রীতিমতো যন্ত্রণাকাতর দেখাচ্ছিল। স্পষ্টই বোঝা যাচ্ছিল তাঁর চোটের ব্যাপারটা মিথ্যে বা অতিরঞ্জন নয়।
প্রচণ্ড বিতর্ক শুরু হয়েছে--অজস্র প্রশ্নও উঠেছে ‘চার-পাঁচজনের চক্রান্ত করে তাঁকে ধাক্কা’ দেওয়ার অভিযোগকে কেন্দ্র করেই। তীক্ষ্ণ কটাক্ষ করেছেন অধীর চৌধুরী, আব্দুল মান্নান এবং অর্জুন সিং। কম বেশি প্রায় সমস্ত বিরোধী দলই তাঁর অভিযোগের মধ্যে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য ও প্ররোচনা দেখতে পাচ্ছেন। শুভেন্দু অধিকারী এই ঘটনার প্রতিক্রিয়ায় তাঁর নিজের ওপর হামলার আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন। এসএসকেএম হাসপাতালে তিনি পৌঁছুনো মাত্র তৃণমূল সমর্থকরা বিজেপি-বিরোধী শ্লোগান দিতে থাকে। বিভিন্ন জায়গা থেকে সমর্থকদের বিক্ষোভ প্রদর্শনের খবর আসতে শুরু করে।
মুখ্যমন্ত্রী তথা পুলিশমন্ত্রী হিসেবে মমতা জেড প্লাস নিরাপত্তা বলয়ের মধ্যে থাকেন এবং তাঁর নিরাপত্তার বিষয়টি সম্পূর্ণ দেখভাল করেন অবসরপ্রাপ্ত রাজ্য পুলিশ কর্তা সুরজিৎ করপুরকায়স্থ। মমতার নিরাপত্তা বেষ্টনী ভেদ করে একটি মশা-মাছিরও তাঁকে ছোঁয়ার সুযোগ থাকে না। জনতার ভিড়ের মধ্যে থাকলেও তিনি প্রতিটি মুহূর্ত নিরাপত্তা বেষ্টনীর মধ্যেই থাকেন। এইরকম হাই সিকিউরিটি বৃত্তের মধ্যে চার-পাঁচজনের একটি দল তাঁকে ঘিরে ফেলে মারাত্মক ধাক্কা দিয়ে হাওয়ায় মিলিয়ে গেল অথচ তাঁকে লেন্সের ফোকাসে ধরে রাখা হাজার হাজার ক্যামেরা মোবাইলে তার একটাও ছবি ধরা পড়লো না ! তাঁকে ধাক্কা দিয়ে হাজার হাজার মানুষের চোখের সামনে দিয়ে অদৃশ্য হয়ে গেল দুষ্কৃতীরা--তাঁর হাইফাই নিরাপত্তা রক্ষীদের কেউ দেখতেই পেল না--কাউকে গ্রেপ্তারও তারা করতে পারল না ! মমতা এই বিষয়টা কমিশনের নজরে আনবেন জানিয়েছেন--কিন্তু তার আগেই বিষয়টি কমিশনের নজরে এসেছে এবং কমিশন গোটা বিষয়টি সম্পর্কে রিপোর্ট তলবে করেছে। কেউ কেউ বলছেন--গতকালই রাজ্যে নতুন ডিজিকে নিয়োগ করার ফলে পুলিশ প্রশাসনেও কিছু বদল ঘটে গেছে--তাই মমতাকে যখন ‘পরিকল্পিতভাবে চার-পাঁচজন ধাক্কা মারে’ তখন তাঁর আশে-পাশে স্থানীয় পুলিশ তো বটেই--জেলা পুলিশ সুপারও ছিলেন না। মমতার অভিযোগ সত্যি হলে জেলা পুলিশ তো বটেই--তাঁর নিরাপত্তারক্ষীদের স্বীকার করতে হবে তাঁরা মুখ্যমন্ত্রীর নিরাপত্তার প্রশ্নে সজাগ ও সতর্ক ছিলেন না। পুলিশকে বলতে হবে--হয় তাঁরা কাউকে ধাক্কা দিতে দেখেন নি অথবা ধাক্কা দিতে দেখেছেন। ধাক্কা দিতে দেখেন নি বললে কমিশনের কোপে কেউ পড়বেন না। কিন্তু ধাক্কা দিতে দেখেছেন বললে--আরও অনেক প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হবে তাদের--যার সন্তোষজনক উত্তর দেওয়ার ক্ষমতা তাদের থাকবে না। সেক্ষেত্রে বরখাস্ত বা সাসপেন্সশনের খাঁড়ার কোপ পড়তে পারে তাদের ওপর। মুখ্যমন্ত্রীকে যারা জেড প্লাস নিরাপত্তা দিচ্ছে তাদের কেউ তাঁর অপরিচিত নয়--সুরজিৎ করপুরকায়স্থ’র বিশ্বস্ত পুলিশ অফিসাররাই মুখ্যমন্ত্রীকে ঘিরে থাকেন সর্বদা। এ ছাড়াও তিনি যখন যেখানে যান সেখানে তিন-চার হাজার পুলিশ তাঁর গোটা নিরাপত্তা ব্যবস্থার সঙ্গে যুক্ত থাকেন। কেন্দ্রীয় বাহিনীর নিরাপত্তা তিনি নেন নি। চাইলেই তিনি পেতে পারতেন।
মোটের ওপর মুখ্যমন্ত্রীর অভিযোগ বিপদাপন্ন করে তুলেছে নিরাপত্তারক্ষীদের। ঐ চার-পাঁচজনের একজনকেও যদি পুলিশ গ্রেপ্তার করতে না পারে এবং তার পলিটিক্যাল আইডেন্টিটি এবং মোটিভ জনসমক্ষে আনতে না পারে তাহলে বিরোধীদের অভিযোগই প্রতিষ্ঠিত হবে সাময়িক উত্তেজনা থিতিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে। যেভাবেই হোক না কেন মমতা সত্যি সত্যি প্রচণ্ড চোট পেয়েছেন। বেশ কয়েকদিন তিনি হয়তো হাঁটাচলাই করতে পারবেন না। নন্দীগ্রাম তো বটেই গোটা রাজ্যের ২৯১-টি আসনের তিনিই একমাত্র প্রার্থী--ফলে তাঁকে এক কেন্দ্র থেকে আরেক কেন্দ্রে ছুটে বেড়াতে হবে। প্রতিদিন দলছুটদের সংখ্যা যে হারে বাড়ছে তাতে পরিস্থিতি ভীষণভাবে উদ্বেগজনক হয়ে উঠছে। ফলে সমস্যা বেড়ে গেল তাঁর নিজের দলেরই। স্বভাবতঃই প্রশ্ন উঠছে তিনি কি শেষপর্যন্ত নন্দীগ্রাম থেকে নাম প্রত্যাহার করে নিয়ে টালীগঞ্জেই মনোনয়নপত্র দাখিল করবেন?
এই প্রশ্নও উঠছে যে, বিজেপি বা শুভেন্দু অধিকারী পরিকল্পিত চক্রান্তের মাধ্যমে মমতার ওপর হামলা চালিয়ে সহানুভূতির সুনামিতে মমতাকে ভাসিয়ে দিয়ে লাভবান হওয়ার কথা ভাবার মতো পাগলামি করতে পারেন? মমতাকে আহত করলে শুভেন্দুর লাভ কতটা এটা বিজেপি বা শুভেন্দু একেবারেই বুঝতে অক্ষম--এটা কারুর পক্ষে বিশ্বাস করা কি আদৌ সম্ভব? এ ধরণের নির্বোধ কুনাট্যের কুশীলব হওয়ার মতো নির্বোধ শুভেন্দুকে ভাবাটা মনে হয় ঠিক হবে না। তদন্তের ফল যদি মমতার অভিযোগকে মান্যতা না দিতে পারে তাহলে পাশার দান একেবারেই যে উল্টে যেতে পারে--এ ব্যাপারে কোনো সংশয় থাকার কথা নয়। পুলিশ এবং নিরাপত্তারক্ষী বাহিনীর পক্ষে মমতার অভিযোগ মেনে নিয়ে নিজেদের চাকরীর ভবিষ্যৎকে অনিশ্চয়তার মধ্যে ঠেলে দেওয়া সম্ভবহবে কিনা তা সময়ই বলবে। পাশাপাশি বিরোধীদের কণ্ঠে প্রায় একই সুরে এই ঘটনাটির যে ব্যাখ্যা উঠে আসছে তাতে রাজনৈতিক লাভের তুলনায় ক্ষতির অঙ্কটা বেড়ে যাবে না তো?
যে ভাবেই হোক মমতাকে দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠে দলের স্বার্থেই যথাসাধ্য রাজ্যময় ছুটে বেড়াতে হবে। কিন্তু এই অপ্রত্যাশিত চোটের কারণে তিনি যদি সেভাবে ছুটে বেড়াতে না পারেন তাহলে দলের বিপদ আরও বেড়ে যাবে। চোট পাওয়ার পর তাঁর মুখের দিকে তাকিয়ে সত্যি খুবই খারাপ লাগছিল। নির্বাচনের ঠিক মুখে এইভাবে চোট পেয়ে সাময়িকভাবে হলেও বসে যাওয়াটা দলের পক্ষে গভীর দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে উঠবেই। অন্যান্যদের সঙ্গে আমিও তাঁর দ্রুত আরোগ্য কামনা করি !!