Hare to Whatsapp
চাকরিহারা '১০,৩২৩' শিক্ষকদের সঙ্গে সরকারের অবিলম্বে আলোচনায় বসে সমস্যার স্থায়ী সমাধানের প্রতিশ্রুতি রক্ষা-র আবেদন জানালো বুদ্ধিজীবীরা
By Our Correspondent
আগরতলা, জানুয়ারি ২৪, : রাজধানী আগরতলার বেশ কজন সাংবাদিক, লেখক, শিল্পী, সাহিত্যিক ও সংবেদী সমাজের কিছু মানুষ অবিলম্বে ছাঁটাই শিক্ষকদের সাথে আলোচনার দাবী তুলেছেন। মুখ্যমন্ত্রীর কাছে গন স্বাক্ষর সম্বলিত এক পত্রে এব্যাপারে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেছেন, আদালতের রায়ের জেরে চাকরিচ্যুত ১০,৩২৩-এর শিক্ষক-শিক্ষিকারা গত ৭ ডিসেম্বর, ২০২০ থেকে সরকারের কাছে চাকরি ফিরে পাওয়ার দাবি নিয়ে আগরতলা সিটি সেন্টারের সামনে রাস্তার উপর একটানা অবস্থান করছেন। প্রবল শীতের রাতে তাঁদের বৃদ্ধ বাবা-মা ও পরিজনরা, এমনকি দুধের শিশু বুকে আঁকড়ে শিক্ষিকা মায়েরাও রাস্তায় পড়ে থাকছেন। এই
দৃশ্য চোখে দেখে সহ্য করা কঠিন।
ইতিমধ্যে অভাবে, হতাশায়, তীব্র মানসিক গ্লানিতে এই শিক্ষকদের অন্তত ৫ জন আত্মঘাতী হয়েছেন। চাকরিচ্যুতির পর থেকে অবসাদ-জনিত অসুস্থতায় এ পর্যন্ত অন্তত ৮৩ জন শিক্ষক-শিক্ষিকা প্রাণ হারিয়েছেন।
কিন্তু, বড়ই পরিতাপের বিষয় যে, সরকার এ ব্যাপারে এখনও সম্পূর্ণ নীরব। তারা এক আশ্চর্য উদাসীনতা অবলম্বন করে চলেছেন। এই শিক্ষকদের অবর্ণনীয় দুঃখ কষ্টে কোনও রকম মানবিক প্রতিক্রিয়াই দেখাচ্ছেন না। আজ অবধি, 8৮ দিনের মধ্যে কোনও সরকারি প্রতিনিধি তাঁদের কাছে যাননি, তাঁদের কথা শুনতে আগ্রহ প্রকাশ করেননি ! সরকারের এই আচরণে বুদ্ধিজীবীরা মর্মাহত বলে জানিয়ে তাদের পত্রে বলেছেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বর্ণপদকপ্রাপ্ত এক শিক্ষিকাও এই গন অবস্থান থেকে বাড়ি ফিরে নিদারুণ হতাশার শিকার হয়ে অ্যাসিড পানে আত্মহত্যা করেছেন। অথচ এই শিক্ষক- শিক্ষিকারা আমাদের রাজ্যেরই সন্তান, আমাদেরই ছেলেমেয়ে, ভাই-বোন,আত্মীয়-পরিজন। ৭ থেকে ১০ বছর তাঁরা এই রাজ্যেরই বিদ্যালয়গুলিতে নিষ্ঠা ও সম্মানের সঙ্গে শিক্ষাদান করেছেন। যার বা যাদেরই ভুলে তাঁরা চাকরিচ্যুত হয়ে থাকুন না কেন, তার জন্য তাঁরা নিজেরা কোনওভাবেই দায়ী নন। সরকারই এজন্য দায়ী, সরকারকেই তাঁদের দায়িত্ব নিতে হবে। কোনও দায়িত্বশীল নির্বাচিত সরকারই নাগরিকদের প্রতি এই রকম উদাসীনতা প্রদর্শন করতে পারে না বলে বুদ্ধিজীবীরা মনে করেন।
প্রসঙ্গত, ত্রিপুরাবাসী মাত্রই জানেন, এই ১০,৩২৩ শিক্ষক গত বিধানসভা নির্বাচনের আগে চাকরি রক্ষার প্রতিশ্রুতি পেয়েছিলেন, মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে সমস্যার স্থায়ী সমাধান করা হবে বলে আশ্বস্ত হয়েছিলেন।মহাকরণ অভিযানের সময় এই শিক্ষকরা পুলিশের লাঠি জলকামান পেলেও, গত ৩ অক্টোবর মুখ্যমন্ত্রী স্বয়ং শিক্ষক প্রতিনিধিদের ডেকে দুই মাসের মধ্যে স্থায়ী সমাধানের কথা শুনিয়েছিলেন। দুই মাসের অপেক্ষায় সরকারের ইতিবাচক সাড়া না পেয়েই তাঁরা অনির্দিষ্ট কালের জন্য অবস্থানে বসেছেন।
মুখ্যমন্ত্রীকে বুদ্ধিজীবীরা তাদের পত্রে বিনীত অনুরোধ করেছেন যাতে, এই পরিস্থিতির অবসানে তিনি এবং তার সরকার দ্রুত কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করেন। আর একদিনও দেরি না করে অবস্থানরত শিক্ষকদের সঙ্গে কথা বলার অনুরোধ জানিয়ে এড়িয়ে থাকা বা উপেক্ষা করার ভুল এবং অবাঞ্ছিত পথ ছেড়ে এই শিক্ষকদের সমস্যার স্থায়ী সমাধানে এখুনি আন্তরিক উদ্যোগ গ্রহণ করার অনুরোধ জানানো হয়েছে।