Hare to Whatsapp
সরকারপন্থী বনাম সংস্কারপন্থীদের বিরোধ নিরসনে ৬ জানুয়ারি ফের রাজ্য সফরে আসছেন বিনোদ সোনকর
By Our Correspondent
আগরতলা, জানুয়ারি ৩, : বিজেপি-র আভ্যন্তরীণ কোন্দল ও গোষ্ঠী বিরোধ নিরসনে খুব শীঘ্রই ফের রাজ্য সফরে আসছেন দলের রাজ্য পর্যবেক্ষক বিনোদ সোনকর। সম্প্রতি তার প্রথম রাজ্য সফরে দলের কিছু সংস্কারপন্থী নেতা কর্মী “দল ও সরকারের কাজকর্ম ভালো চলছেনা” বুঝাতে গিয়ে স্টেট গেস্ট হাউজে ধুন্ধুমার কান্ড ঘটিয়েছেন। সংস্কারপন্থীরা পাছে না ফের এইসব কান্ডকারখানা ফের ঘটায় সম্ভবত তাই বিনোদ সোনকর-এর রাজ্য সফরের দিন তারিখ চূড়ান্ত হয়ে থাকলেও রাজ্যস্তরের নেতারা তা প্রকাশ্যে বলতে চাইছেননা। তবে যতদূর জানাগেছে, আগামী ৬ই জানুয়ারি ফের রাজ্য সফরে আসতে চলেছেন বিনোদ সোনকর।
বিজেপি-র আভ্যন্তরীণ সূত্রে প্রাপ্ত খবর অনুযায়ী, এযাত্রায় তিনি দলের শীর্ষ রাজ্য নেতৃত্ব ছাড়াও নির্বাচিত দলীয় এম এল এ-দের সাথে বেশী সময় নিয়ে কথা বলবেন। পাশাপাশি পৃথক পৃথক ভাবে কথা বলবেন দলের বিভিন্ন মোর্চা নেতৃত্বের সাথেও। দল ও সরকার পরিচালনায় কোথায় কি সব সমস্যা ও দুর্বলতা রয়েছে তিনি আরও স্পষ্ট করে বুঝতে চেষ্টা করবেন।
বিজেপি-র আভ্যন্তরীন বিভিন্ন সূত্রে প্রাপ্ত খবর অনুযায়ী দলের শীর্ষ নেতৃত্ব চাইছেন রাজ্য বিজেপিতে পুরাতন ও নতুনদের মধ্যে যে বিরোধ নানা কারনে সৃষ্টি হয়েছে তা যেন সর্বাগ্রে সমাপ্ত করা হয়। দলের মুখ্যমন্ত্রী বিভিন্ন সময় বিভিন্ন জায়গায় দলের দীর্ঘদিনের নেতা কর্মীদের অবজ্ঞা করে চলেছেন বলে দল ক্ষমতায় আসার পর থেকেই এসব অভিযোগ উঠতে থাকে। পাশাপাশি এম এল এ-রা গুরুত্ব পাচ্ছেনা। মুখ্যমন্ত্রীর সাথে সব এম এল এ-রা দেখা করতে সময় পান না। আবার কিছু কিছু এম এল এ যখন খুশী দেখা করতে পারছেন। এসব বিষয়গুলি সংস্কারপন্থীরা দিল্লীর শীর্ষ নেতৃত্বকেও জানিয়েছেন।
তাছাড়া মুখ্যমন্ত্রীর হাতে ২৭ খানা গুরুত্বপূর্ণ দপ্তর রয়েছে। সময়ের অভাবে তিনি সব দপ্তরের কাজকর্ম সঠিকভাবে দেখাশোনা করতে পারছেন না। পাশাপাশি রাজ্য মন্ত্রীসভায় চারটি আসন শূন্য। নতুন করে মন্ত্রীসভা সম্প্রসারণের কথা বার বার বলা হলেও তা করা হচ্ছেনা। একই সাথে বহু কর্পোরেশন ও বোর্ড-এর চেয়ারম্যান নেই। প্রথা অনুযায়ী এম এল এ-দের তাতে বসানো হচ্ছেনা। অথচ বহু পরাজিত এম এল এ-কে বেশ কিছু কর্পোরেশনের চেয়ারম্যান পদে বসিয়ে রাখা হয়েছে। শুধু তাই নয়, সংস্কারপন্থী গোষ্ঠীর নেতাদের সাথে সংগঠনের একাধিক শীর্ষ নেতৃত্ব বোঝাপড়া করে সমস্যা সমাধানের চেষ্টার কথা বললেও মুখ্যমন্ত্রীর কঠোর মনোভাবের কারনে নাকি তা হয়ে উঠছেনা। সব মিলিয়ে দলের শীর্ষ স্তরে সবকিছুতেই একটা সমান্তরাল গোষ্ঠী বিভাজন স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে। দলের মোর্চা বা বিভিন্ন শাখা সংগঠন গুলিতেও তার প্রভাব পড়েছে। উদ্ভত অবস্থার প্রেক্ষিতে সংস্কারপন্থীরা একরকম খোলামেলা ভাবেই ধ্বনি তুলেছেন-
১) মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব দেব হটাও, ত্রিপুরায় বিজেপি সরকার বাঁচাও।
২) মানিক সাহা হটাও, ত্রিপুরার বিজেপি দল বাঁচাও।
৩) দুর্দিনের নেতা কর্মীদের সন্মান চাই, সিপিএম ও কংগ্রেসমুক্ত বিজেপি-র সংগঠন চাই।
মূলত উপরি উল্লিখিত তিনটি শ্লোগানকে সামনে রেখেই বিজেপি-র সংস্কারপন্থী গ্রুপের নেতারা এগিয়ে চলেছেন। সংস্কারপন্থী বলে কথিত গ্রুপের নেতৃত্বে রয়েছেন মূলত সুদীপ রায় বর্মণ। তিনি বিপ্লব দেব মন্ত্রিসভায় স্বাস্থ্যমন্ত্রী ছিলেন। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রীর সাথে বনিবনার অভাবে একবছর যেতে না যেতেই তাকে মন্ত্রীসভা থেকে সড়িয়ে দেওয়া হয়। সংস্কারপন্থী গ্রুপে দ্বিতীয় বড় প্রতিবাদী কণ্ঠ হলেন বিধায়ক রামপ্রসাদ পাল। তিনি মূলত সংগঠনের কাজকর্ম ভালো চলছেনা এনিয়েই বেশী প্রতিবাদী। একসময় তিনি দলের রাজ্য সভাপতিরও দাবীদার ছিলেন। সংস্কারপন্থী গ্রুপের তৃতীয় বড় শক্তি হলেন বিধায়ক আশিষ সাহা। শহর এলাকায় বিজেপি-র অভিজ্ঞ সংগঠক ও পুরানো কংগ্রেসি ও পুরসভার চেয়ারম্যান ছিলেন। তাছাড়া বিজেপি-র তরুণ তুর্কি বিধায়ক সুশান্ত চৌধুরী, আশিষ দাস, বোর্বোমোহন ত্রিপুরা, ভগবান দাস সহ অন্তত আঠারো জনের মতো বিজেপি বিধায়ক সংস্কারপন্থীদের দলে রয়েছেন। অন্তত এমনই দাবী গোপনে করে এসেছেন সংস্কারপন্থীরা। এই অবস্থায় মুখ্যমন্ত্রী ও বিজেপি সভাপতি হটাও-এর মতো তাঁদের দাবী পূরণ না করা হলে তারা “প্লান-বি” হিসাবে বেশ কিছু রন কৌশল নিয়ে রেখেছেন। আগামী ৬ই জানুয়ারি দলের রাজ্য প্রভারীর সফরকালেও সংস্কারপন্থী বিধায়ক ও নেতৃত্ব ফের একবার দল ও প্রশাসনের কাজকর্মে যে অচলাবস্থা চলছে তা বুঝিয়ে বলার চেষ্টা করবেন। এরপর তারা কিছুদিন অপেক্ষায় থাকবেন দিল্লীতে গিয়ে তিনি কি রিপোর্ট পেশ করেন এবং দলের শীর্ষ নেতৃত্ব কি চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। দলের শীর্ষ নেতৃত্বের সিদ্ধান্ত ইতিবাচক হলে ভালো, অন্যথায় সংস্কারপন্থীরা যে “চূড়ান্ত সার্জিক্যাল স্ট্রাইক” এ যাবে তা বলাই বাহুল্য।