Hare to Whatsapp
১৬ ডিসেম্বর অ্যাসেম্বলি অব জার্নালিস্টস-এর রাজ্যভিত্তিক কনভেনশন সফল করতে ত্রিপুরায় কর্মরত সাংবাদিক বন্ধুদের প্রতি আবেদন
By Our Correspondent
আগরতলা, ডিসেম্বর ৮, : ত্রিপুরায় স্বাধীন মত প্রকাশের গণতান্ত্রিক ও সাংবিধানিক অধিকার গুরুতরভাবে বিপন্ন । সংবাদ মাধ্যম ও সাংবাদিকদের স্বাধীনভাবে কর্তব্য পালনের পরিবেশ সরকারের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ হস্তক্ষেপে আজ সংকুচিত। ত্রিপুরার ইতিহাসে সত্যিই এ এক অভূতপূর্ব পরিস্থিতি যা ১৯৭৫-এর জরুরি অবস্থার কালো দিনগুলোকেও ছাপিয়ে গেছে। সংবাদপত্র এবং বৈদ্যুতিন মাধ্যমকে শাসকের পদলেহী স্তাবকে পরিণত করার সর্বাত্মক অপপ্রয়াস ক্রিয়াশীল। মুখ্যমন্ত্রীর প্রকাশ্য হুমকির পর থেকে সাংবাদিক এবং সংবাদ মাধ্যমের উপর আক্রমণ এবং কন্ঠরোধের ঘটনা ক্রমবর্ধমান। এর বিরুদ্ধে রাজ্যের প্রায় সমস্ত সংবাদপত্রের সম্মানিত সম্পাদকগণ ও অভিজ্ঞতায় সমৃদ্ধ প্রবীণ সাংবাদিকরা -সহ রাজ্য জুড়ে সর্বস্তরের সংবাদ-কর্মীরা যখন কালো ব্যাজ ধারণ করে, আগরতলায় গণঅবস্থানে অংশ নিয়ে ঐক্যবদ্ধ প্রতিবাদে গর্জে উঠেছিলেন, তখন সেই ঐক্য ভাঙার জন্য নির্লজ্জ প্রলোভন আর কুৎসার ঝুলি হাতে মাঠে নামানো হয়েছিল সাংবাদিক নামধারী আত্মবিক্রয় করা কিছু 'শিকারী মোরগ'-কে।এসেম্বলী অব জার্নালিস্টের তরফে এক সাংবাদিক সন্মেলনে আজ এই অভিযোগ করে বলা হয়েছে, সংগঠন দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করে, এতে শুধু 'দুধ কা দুধ, পানি কা পানি' স্পষ্ট হয়েছে, সাংবাদিক-ঐক্যে ফাটল ধরানো যায়নি। কিন্তু রাজ্যের সাংবাদিকদের সর্ববৃহৎ ঐক্যমঞ্চ অ্যাসেম্বলি অব জার্নালিস্টস এই দমবন্ধকর পরিস্থিতিতে চুপ করে থাকতে পারে না। ত্রিপুরার সংবাদ মাধ্যমের দীর্ঘলালিত নির্ভীক সাংবাদিকতার ঐতিহ্য আমরা কারও রক্তচক্ষুর ভয়ে আর টাকার থলির কাছে পদদলিত হতে দেওয়া যায়না। তাই, অ্যাসেম্বলি অব জার্নালিস্টস রাজ্যে সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা ও সাংবাদিকদের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করতে আগামী ১৬ ডিসেম্বর আগরতলা প্রেস ক্লাবে রাজ্যের সমস্ত অংশের সাংবাদিক ও সংবাদমাধ্যম কর্মীদের নিয়ে রাজ্যভিত্তিক কনভেনশন আহ্বান করেছে। এই কনভেনশনের মাধ্যমে আগামী দিনের বৃহত্তর সংগ্রাম এবং পথ চলার রূপরেখা নির্ধারণ করা হবে।
প্রসংগত, গত তিন মাসে রাজ্যের বিভিন্ন জায়গায় সংবাদ মাধ্যমের কর্মীদের উপর শাসক দলের আশ্রিত দুস্কৃতীদের শারীরিক আক্রমণের ঘটনা উদ্বেগজনক ভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। নিরপেক্ষ সংবাদ পরিবেশন এবং সরকারের জনবিরোধী পদক্ষেপ , প্রশাসনিক গাফিলতি, সরকারি পদমর্যাদার অপব্যবহার এবং দুর্নীতি ইত্যাদি বিষয়ে খবর পরিবেশন করলেই ছোট বড় নির্বিশেষে সব ধরনের সংবাদ মাধ্যমকে নানান কায়দায় হুমকি দেওয়া হচ্ছে। নানাভাবে হেনস্থা করা হচ্ছে। প্রশাসনকে কাজে লাগিয়ে সম্পূর্ণ অন্যায় ও অনৈতিকভাবে গণমাধ্যমের স্বাধীনতার উপর বেনজির হস্তক্ষেপ করা হচ্ছে। একাধিক বৈদ্যুতিন চ্যানেল-এর সম্প্রচার অন্যায়ভাবে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে, প্রথম সারির সংবাদপত্রের প্রকাশনা প্রশাসনিক নির্দেশে বন্ধ করার চেষ্টা হয়েছে। এমনকি, বেআইনি ভাবে বিভিন্ন সংবাদপত্র এবং বৈদ্যুতিন চ্যানেলের বিজ্ঞাপন বন্ধ করে বা নির্লজ্জভাবে কমিয়ে দিয়ে আর্থিক অবরোধ তৈরি করা হচ্ছে যাতে সংশ্লিষ্ট সংবাদ মাধ্যম গুলিতে জনগণের দুর্দশা ও প্রকৃত সংবাদ ছেড়ে শুধুমাত্র সরকারের ও শাসকের গুণগান করা হয়! সরকারের পক্ষে অস্বস্তিকর সংবাদ প্রকাশিত হলে, সাংবাদদাতাকে চিহ্নিত করে সরকারি মদতে প্রকাশ্যে হুমকির ঘটনা ঘটছে। সচিবালয়কে ব্যবহার করে সংবাদ মাধ্যম এবং সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে নানা ষড়যন্ত্র এবং কুৎসা রটানো হচ্ছে সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায়। সংবাদের উৎস বন্ধ করার জন্য বিশেষ সার্কুলার জারি করা হয়েছে। এ ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট উচ্চপদস্থ কিছু আধিকারিক ছাড়া বৃহৎ অংশের আধিকারিকদের সংবাদ মাধ্যমের কাছে মুখ না খোলার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সুকৌশলে প্রশাসনকে সংবাদ মাধ্যমের বিরুদ্ধে লেলিয়ে দেওয়ার চেষ্টা হচ্ছে যাতে সরকারের জনবিরোধী কাজকর্ম ও দুর্নীতির তথ্য জনগণ জানতে না পারেন। সরকারি অনুষ্ঠান ও সাংবাদিক সম্মেলনেও সংবাদ মাধ্যমকে অপমান করার কৌশল অনুসরণ করা হচ্ছে । হুমকি, ধমকি, প্রলোভন, মিথ্যাচারের পথে সাংবাদিকদের মধ্যে বিভাজন সৃষ্টি করে ঐক্য নষ্ট করার হীন প্রয়াস ও সামগ্রিকভাবে গণতন্ত্রের ভিত দুর্বল করার ঘৃণ্য ষড়যন্ত্র চলছে প্রত্যক্ষ সরকারি প্রশ্রয়ে। পাশাপাশি , নীতিহীনতার কুৎসিত নিদর্শন রেখে সাংবাদিকের পরিবারের সদস্যদেরও এখন আক্রমণের লক্ষ্য বানানো হচ্ছে।
অ্যাসেম্বলি অব জার্নালিস্টস এর নেতৃবৃন্দ আজ তাদের সাংবাদিক সন্মেলনে সরকারের এ জাতীয় ঘৃণ্য মনোভাব ও গণতন্ত্র-বিরোধী কাজকর্মের তীব্র নিন্দা করেছে এবং এইসব ন্যক্কারজনক ভূমিকা থেকে সরকারকে এখনই সরে আসার আহবান জানিয়েছেন।
এসেম্বলী অব জার্নালিস্টের নেতৃবৃন্দ বলেছেন, সংবাদমাধ্যমের প্রতি সরকারের এই মনোভাব এবং কাজকর্ম সংবিধান অবমাননার সামিল। গত ১১ সেপ্টেম্বর মুখ্যমন্ত্রীর হুমকির পর আজ পর্যন্ত কম করে ১৪ জন সাংবাদিক রাজ্যের বিভিন্ন জায়গায় আক্রান্ত হয়েছেন। ভাঙচুর করা হয়েছে একাধিক সংবাদ মাধ্যমের দপ্তর। প্রতিটি ঘটনাতে লিখিত অভিযোগ জানানোর পরও অদৃশ্য ইংগিতে পুলিশের তেমন কোনও তৎপরতা দেখা যাচ্ছে না। কিছু ক্ষেত্রে অভিযুক্তদের গ্রেপ্তার করা হলেও লঘু ধারা দিয়ে এদের জামিনে ছাড়া পাওয়ার সুযোগ করে দেওয়া হচ্ছে।
অ্যাসেম্বলি অব জার্নালিস্টস রাজ্যের এই অগণতান্ত্রিক পরিবেশে গভীরভাবে উদ্বিগ্ন এবং উদ্ভুত পরিস্থিতির অবসানকল্পে সরকারের বোধোদয় ও দ্রুত ইতিবাচক পদক্ষেপ আশা করে। আশ্চর্যের বিষয়, সাংবাদিকদের উপর দুস্কৃতীদের আক্রমণের একটি ঘটনায়ও মুখ্যমন্ত্রী বা তাঁর মন্ত্রিসভার কোনও সদস্য অথবা সরকারি তরফে কেউ একটা নিন্দাবাক্য পর্যন্ত খরচ করেননি। বরং, এ জাতীয় কার্যকলাপকে পরোক্ষ সমর্থন জানানো হচ্ছে। অথচ, এই সরকারের মান্যবর কুশীলবরাই এক সময় সংবাদ মাধ্যমের স্বাধীনতার গালভরা প্রতিশ্রুতি শুনিয়েছিলেন ! তাই এসেম্বলী অব জার্নালিস্ট মনে করে, মুখ্যমন্ত্রীর হুমকি, সাংবাদিকদের উপর আক্রমণের ঘটনায় সরকারের রহস্যজনক নীরবতা এবং প্রশাসনিক নিস্ক্রিয়তা এ জাতীয় অবাঞ্ছিত ঘটনা ক্রমবৃদ্ধির অন্যতম প্রধান কারণ।
এই অবস্থায় নীচের দাবিগুলো সামনে রেখে অ্যাসেম্বলি অব জার্নালিস্টস-এর রাজ্য কনভেনশন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছেঃ
১) মুখ্যমন্ত্রীকে হুমকি প্রত্যাহার করে তাঁর অবাঞ্চিত মন্তব্যের জন্য ক্ষমা চাইতে হবে। অবিলম্বে মিডিয়ার উপর সরকারি আক্রমণ বন্ধের নিশ্চয়তা দিতে হবে।
২) সারা রাজ্যে সাংবাদিকদের উপর দুষ্কৃতী-হামলা বন্ধ করতে হবে এবং প্রতিটি ক্ষেত্রে আক্রমণকারী দুষ্কৃতীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি সুনিশ্চিত করতে হবে।
৩) আক্রান্ত সাংবাদিক ও সংবাদ মাধ্যমকে সরকারিভাবে উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ দিতে হবে।
৪) ব্লক, মহকুমা, জেলা ও রাজ্য স্তরের সাংবাদিকরা যাতে স্বাধীনভাবে বস্তুনিষ্ঠ ও সত্যনিষ্ঠ সংবাদ পরিবেশন করতে পারেন, এজন্য ভয়মুক্ত গণতান্ত্রিক পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে।
৫) সংবাদের সরকারি উৎস বন্ধ করার লক্ষ্যে যে বিশেষ সার্কুলার জারি হয়েছে তা এক্ষুনি প্রত্যাহার করতে হবে।
৬) সাংবাদিকদের সরকারি পেনশন প্রকল্প নিয়ে ঢাক ঢোল পেটানো হলেও বর্তমান সরকার নতুন করে একজন সাংবাদিককেও পেনশন দেয়নি। একজনকে আদালতে মামলা করে পেনশন পেতে হয়েছে। অবিলম্বে পেনশনের জন্য পেশ করা সমস্ত আবেদনের সুষ্ঠু নিষ্পত্তি করতে হবে।
৭) জেলা ও মহকুমা স্তরের প্রকৃত সাংবাদিকদের সরকারি এক্রেডিটেশন কার্ড দিতে হবে এবং তাঁদের সরকারি পেনশন প্রকল্পের আওতায় আনতে হবে।
৮) সংবাদপত্র ও বৈদ্যুতিন সংবাদমাধ্যমে সরকারি বিজ্ঞাপন প্রদানের ক্ষেত্রে প্রশ্নহীন স্তাবকতার অলিখিত মাপকাঠি পরিত্যাগ করতে হবে। এ ক্ষেত্রে যে কুৎসিত বৈষম্য চলছে, অবিলম্বে তা শেষ করতে হবে।
১৬ ডিসেম্বর ২০২০, বুধবার সকাল ১১টায় আগরতলা প্রেস ক্লাবে আয়োজিত
অ্যাসেম্বলি অব জার্নালিস্টস-এর আসন্ন কনভেনশনে উপস্থিত থেকে উপরোক্ত দাবিগুলো আদায়ে ঐক্যবদ্ধ সংগ্রামের রূপরেখা গড়ে তুলতে সংবাদ মাধ্যমের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করা, গণমাধ্যমের স্বাধীনতা পুনরূদ্ধার, নির্ভীক সাংবাদিকতা-সহ সংবাদমাধ্যমের সার্বিক উন্নয়নে ভবিষ্যৎ কর্মসূচি গ্রহণ করতে রাজ্যের সমস্ত অংশের সাংবাদিক প্রতিনিধিদের এই কনভেনশনে উপস্থিত থেকে গণমাধ্যমের ঐক্য সুসংহত করতে বলিষ্ঠ পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য অ্যাসেম্বলি অব জার্নালিস্টস আহবান জানিয়েছে। এসেম্বলী অব জার্নালিস্টের সাংবাদিক সন্মেলনে উপস্থিত ছিলেন
সুবলকুমার দে (স্যন্দন পত্রিকা) , শেখর দত্ত( দি টেলিগ্রাফ), পারমিতা লিভিংস্টোন (দৈনিক সংবাদ) অরুণ নাথ (দি ত্রিপুরা অবজারভার), শানিত দেবরায় (আজকের ফরিয়াদ), সমীর পাল (ডেইলি দেশের কথা), জয়ন্ত দেবনাথ (ত্রিপুরা ইনফো ডট কম), অনল রায়চৌধুরি ( প্রতিবাদী কলম), রাজীব দত্ত ( মৃণালিনী টিভি) , মনীষা পালচৌধুরি (বি টিভি), প্রশান্ত ভট্টাচার্য (হল্লা বোল) সমীর পাল, নারায়ন পাটারী, স্রোতরন্জন খিসা ও মনীষা পাল চৌধুরী।এবং সমীর ধর (চ্যানেল দিনরাত ও আজকাল)