Hare to Whatsapp
জাতীয় প্রেস ডে-তে সাংবাদিকরা ব্রাত্য ত্রিপুরায়, উদয়পুর-এ ক্যাবল নিউজ চ্যানেল অফিসের সামনে মদমত্ত দুষ্কৃতিকারীদের জমায়েত, সাংবাদিকদের অশ্লীল ভাষায় গালিগালাজ
By Our Correspondent
আগরতলা, নভেম্বর ১৬, : ত্রিপুরায় সংবাদমাধ্যম ও সাংবাদিকদের উপর আক্রমণ থেমে নেই। জাতীয় প্রেস দিবসের প্রাকলগ্নে রবিবার রাত ১০টা নাগাদ উদয়পুর সেন্ট্রাল রোডস্থিত স্থানীয় ক্যাবল নিউজ চ্যানেল জি ত্রিপুরার অফিসের সামনে মদমত্ত অবস্থায় ৭-৮ জন দুষ্কৃতিকারী জড়ো হয় এবং সংবাদ চ্যানেল ও তার সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে অশ্লীল ভাষায় গালিগালাজ করে। চ্যানেলের কর্ণধার সুজিৎ সাহা অফিস থেকে বেরিয়ে প্রতিবাদ করলে দুর্বৃত্তরা ক্ষিপ্ত হয়ে তাকে মারতে উদ্যত হয়। সুজিৎ সাহার পিতা পরিমল সাহা বেরিয়ে এলে তাকে ধাক্কা দেয় দুর্বেত্তরা। পরিমল সাহা গোমতী জেলা প্রেস ক্লাবের সভাপতি। সংবাদ চ্যানেলটি বন্ধ করে দেয়ার হুমকীর অভিযোগও রয়েছে। এসেম্বলি অব জার্নালিস্টস এই ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছে। অবিলম্বে দুর্বৃত্তদের গ্রেপ্তার, উপযুক্ত শাস্তির ব্যবস্থা করতে দাবি জানিয়েছে ত্রিপুরা এসেম্বলি অব জার্নালিস্টস।
ত্রিপুরা এসেম্বলি অব জার্ণালিস্ট-এর সভাপতি, সুবল কুমার দে এক বিবৃতিতে জানিয়েছেন, সম্প্রতি উদয়পুরে প্রতিবাদী কলমের পত্রিকার প্যাকেট ছিঁড়ে ফেলে দিয়েছিল দুর্বৃত্তরা। এর আগেও উদয়পুরে সাংবাদিক ও বেশকিছু মিডিয়া হাউস দুর্বৃত্তদের আক্রমণের শিকার হয়েছে। সংবাদমাধ্যমকে মুখ্যমন্ত্রীর হুমকীর পর সাংবাদিকদের উপর দুষ্কৃতী হামলার এটি একাদশতম ঘটনা।
এসেম্বলি অব জার্নালিস্টস মনে করে ত্রিপুরার সাংবাদিক ও সংবাদমাধ্যম সম্পর্কে মুখ্যমন্ত্রীর নেতিবাচক মন্তব্যের প্রেক্ষিতেই রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে ক’দিন পর পর সাংবাদিক ও মিডিয়া হাউসগুলোর উপর হামলা সন্ত্রাস হচ্ছে। এসেম্বলি অব জার্নালিস্টস অতিসত্বর মিডিয়ার উপর এসব আক্রমণ বন্ধের দাবি জানিয়েছে। অন্যথা খুব শীঘ্রই সংগঠন রাজ্যজুড়ে তীব্র আন্দোলন শুরু করতে বাধ্য হবে বলে জানানো হয়েছে।
এদিকে, আজ সোমবার জাতীয় প্রেস দিবস সারা দেশে পালিত হয়েছে। ত্রিপুরা সরকার ও আগরতলা প্রেসক্লাব প্রতি বছর আজকের দিনটিকে জাতীয় প্রেস দিবস হিসাবে পালন করে থাকে। কিন্তু ১৯৬৬ সালের পর এবছরই প্রথম ত্রিপুরায় জাতীয় প্রেস ডে-তে সাংবাদিকরা ব্রাত্য। না ত্রিপুরা সরকার, না আগরতলা প্রেসক্লাব, কোন তরফেই যথাযোগ্য মর্যাদায় দিনটি পালনে কোন অনুস্ঠানের আয়োজন করা হলো না।
সংবাদপত্র ও সাংবাদিক কল্যান সহ মিডিয়ার সার্বিক স্বাধীনতা রক্ষায় ১৯৬৬ সালের ১৬ নভেম্বর প্রেস কাউন্সিল অফ ইন্ডিয়া তার কাজ শুরু করে । দিনটিকে স্মরনীয় করে রাখতে প্রতি বছর তাই এই দিনটিকে জাতীয় প্রেস-ডে হিসাবে উদযাপন করা হয়। ত্রিপুরা সহ দেশের বিভিন্ন রাজ্যে জাতীয় প্রেস দিবসে সেমিনার, ওয়ার্কশপ সহ বিভিন্ন ইস্যুতে অলোচনাসভা-র আয়োজন করা হয় । কৃতি সাংবাদিক অথবা বরিষ্ঠদের পুরস্কৃত কিংবা সংবর্ধনা দেওয়া হতো। কিন্তু অন্যসব সরকারী অনুষ্ঠান যথারীতি আয়োজন করা হলেও, করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের অজুহাত দেখিয়ে এবছর ত্রিপুরা সরকার বা আগরতলা প্রেস ক্লাব মর্যাদাপূর্ণ এই দিনটি পালন করেনি। এসেম্বলি অব জার্ণালিস্ট-এর সভাপতি, সুবল কুমার দে বিবৃতিতে জানিয়েছেন, এ ঘটনা ত্রিপুরার সংবাদ জগতের প্রতি সরকারের অবজ্ঞা ও অবহেলার বহির্প্রকাশ । সরকারের এহেন আচরণ বেদনাদায়ক ও সমালোচনার যোগ্য বলেও তিনি অভিমত দেন।
এসেম্বলি অব জার্ণালিস্ট-এর সভাপতি, সুবল কুমার দে বিবৃতিতে আরও জানিয়েছেন, জাতীয় প্রেস দিবসেই আজ দৈনিক সংবাদ পত্রিকার তিন প্রবীন সাংবাদিক- দিবাকর দেবনাথ, সুজিত দে ও অলক ঘোষের সরকারি স্বীকৃতিপত্রে মর্যাদার অবনম্ন করা হয় সম্পূর্ন বে-আইনীভাবে। প্রেস এক্রিডিটেশন কমিটিকে না জানিয়ে এই অন্যায় কাজটি করেছে তথ্য ও সংস্কৃতি দপ্তর যা সংবাদমাধ্যমের স্বাভিমান ও মর্যাদার উপর আঘাত বলে তিনি জানান। এসেম্বলি অব জার্নালিস্টস পুনরায় এই সাংবাদিকদের মর্যাদা ফিরিয়ে দেওয়ার পাশাপাশি এ জাতীয় জঘন্য ষড়যন্ত্রে লিপ্তদের বিরুদ্বে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছে।