Hare to Whatsapp
"মানুষের মানসিকতা উন্নত হচ্ছে।"অপরাধীদের শাস্তি বিধানে প্রশাসন ও আইনজীবীদের মধ্যে সমন্বয়ে জোর মুখ্যমন্ত্রীর।"
By Our Correspondent
আগরতলা, ডিসেম্বর ১৫, : আগরতলা, ১৫ ডিসেম্বরঃ ২০ মাসে রাজ্যবাসীর মানসিকতার যে উন্নয়ন হয়েছে, তাতে কোনদিনও এ মাটিতে আর কমিউনিস্ট হবে না। লিখে রাখুন। এখন ইউনিয়ন করলে পয়সা দিতে হয় না। আমি গোটা ব্যবস্থাকেই পরিবর্তন করে দিয়েছি। এরা বুঝতেই পারে নি।" রবিবার রাজধানীর রবীন্দ্র শতবার্ষিকী ভবনে আয়োজিত, ত্রিপুরা স্টেট বিজেপি ল এন্ড লিগেল অ্যাফেয়ার্স ডিপার্টমেন্ট আয়োজিত আইনজীবিদের সম্মেলনে এই কথা বলেন মুখ্যমন্ত্রী শ্রী বিপ্লব কুমার দেব। তিনি বলেন রাজ্যে উন্নয়ন ও সুশাসনের এমন বটবৃক্ষ তৈরি হয়েছে, যার নিচে অন্যরা ছায়া পাবে কিন্তু বীজ বপন করতে পারবেনা।
এদিন মুখ্যমন্ত্রী শ্রী বিপ্লব কুমার দেব বিভিন্ন ইস্যুতে বাম আমলের সঙ্গে তুলনামূলক আলোচনা করে রাজ্য সরকারের কাজ-কর্মের বিভিন্ন দিক তুলে ধরে বলেন, রাজ্যে পরিবর্তন এসেছে। শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কৃষি, কর্মসংস্থান, রাজস্ব, আইন শৃঙ্খলা সবকটি দিকেই এগিয়ে যাচ্ছে রাজ্য। এই সময়ের মধ্যে উন্নয়ন চোখে পড়ার মতো।
সর্বপ্রথমেই তিনি আইন-শৃংখলার কথা উল্লেখ করেন। বলেন কোনও রাজ্যে সুশাসনের মাপকাঠি হচ্ছে সে রাজ্যের আইন-শৃঙ্খলা। আর এই আইনশৃঙ্খলার মাপকাঠি হচ্ছে কনভিকশন রেট। বলেন সার্বিক অপরাধের ক্ষেত্রে বাম আমলে যেখানে কনভেকশন রেট ছিল ২৯%, সেখানে বর্তমানে তা এসে দাঁড়িয়েছে ৪৭ শতাংশে। এর মধ্যে ফৌজদারি মামলার ক্ষেত্রেও কনভিকশন রেট অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে বলে দাবি করেন তিনি। বলেন বাম আমলে ছিল মাত্র ৪.৬ শতাংশ। বর্তমানে জেলাভিত্তিক তথ্য দিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেন ফৌজদারি মামলায় ঊনকোটি জেলায় কনভিকশন রেট ২৬.৫৪ শতাংশ। গোমতী জেলায় ২২ শতাংশ, খোয়াই জেলায় ১২ শতাংশ। এটা প্রমাণ করে যে রাজ্যে সুশাসন রয়েছে।
এনডিপিস মামলার ক্ষেত্রে এখন জেল-জরিমানা হচ্ছে। কিছু ক্ষেত্রে পলাতক আসামিদের জায়গা জমি বাজেয়াপ্ত করা হচ্ছে। ড্রাগসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে সরকার সততার সঙ্গে কাজ করছে বলে উল্লেখ করেন মুখ্যমন্ত্রী।
এদিন তিনি আক্ষেপের সুরে বলেন যে কোনো একজন আইনজীবীর কারণে সাত হাজার মানুষ শুদ্ধ পানীয় জল থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। কারণ নির্দিষ্ট সময় আদালতে তিনি উপস্থিত না থাকায় এ সংক্রান্ত একটি মামলায দীর্ঘায়িত হচ্ছে। ফলে কেন্দ্রীয় অনুদান খরচের নির্দিষ্ট সময় পার হয়ে যাচ্ছে। এক্ষেত্রে আইনজীবীদের প্রতি জনমুখী ভূমিকার আহ্বান রাখেন মুখ্যমন্ত্রী।
এদিন তিনি বলেন যে রাজ্যে মহিলাদের বিরুদ্ধে অপরাধের পরিমাণ ১০ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে। ছিনতাই সংক্রান্ত আইন শক্ত করা হয়েছে। পুনরায় চালু করা হয়েছে বিট কনস্টেবল ব্যবস্থা। সবকটি ক্ষেত্রেই প্রশাসন ও সরকারি আইনজীবীদের মধ্যে সমন্বয় স্থাপনের কথা বলেন মুখ্যমন্ত্রী। যাতে করে প্রকৃত অপরাধীরা আইনের হাত থেকে কিছুতেই রেহাই না পায়।
এদিন তিনি ফের বলেন যে রেগায় সাফল্য রাজ্যের উন্নয়নের মাপকাঠি হতে পারে না। এক্ষেত্রে তিনি বলেন বর্তমান সময়ে সিডি রেশিও ৩৯ শতাংশ থেকে বেড়ে ৫৬ শতাংশ হয়েছে। এটা প্রমাণ করে যে মানুষ একদিকে যেমন ব্যাংক লোন নিচ্ছেন, তেমনি তৈরি হচ্ছে জব ক্রিয়েটর।বাড়ছে ব্যবসা-বাণিজ্য। নিজের পায়ে দাঁড়াচ্ছেন অনেকেই। এর প্রমান হল ৮.৯ শতাংশ থেকে বেড়ে রাজস্ব আয় এখন ২৬% হয়ে দাঁড়িয়েছে।
মুখ্যমন্ত্রী শ্রী বিপ্লব কুমার দেব বলেন বর্তমান সরকার গোঁজামিলের অঙ্কে বিশ্বাস করে না। আগে যেখানে বলা হতো যে ৮৮ শতাংশ এরাজ্যে স্বাক্ষর, সে জায়গায় অষ্টম শ্রেণী পাস করা ছাত্রছাত্রীরা ঠিকমতো যোগ ভাগ করতে পারেনা। বাম আমলে শিক্ষার গুণগত মান নিয়ে তিনি প্রশ্ন তোলেন। তিনি বলেন চাকরি দেবার জন্য পদ রয়েছে, কিন্তু যোগ্য লোক পাওয়া যাচ্ছে না। মহাকরণে স্টেনোগ্রাফার নিয়োগ হোক অথবা শিক্ষক নিয়োগ, উভয় ক্ষেত্রেই এই সমস্যার কথা উল্লেখ করেন তিনি। বলেন এই জন্যই রাজ্য সরকার শিক্ষার গুণগত মান বৃদ্ধি ও আধুনিকীকরণে জোর দিয়েছে। তিনি বলেন আগে শিক্ষা দপ্তর তৈরিই করা হয়েছিল পার্টির মিছিল করার জন্য। এখন শিক্ষাকে জাতির মেরুদণ্ড হিসেবে প্রতিষ্ঠা করার জন্য কাজ করছে সরকার। এক্ষেত্রে গুনগত তফাৎ লক্ষ্য করা যাচ্ছে।
বিভিন্ন পদে নিয়োগের বিষয়ে এদিন মুখ্যমন্ত্রী বলেন যে ৮৬৪৪ জনের চাকরি হবে শীঘ্রই। অর্থ দপ্তরের অনুমোদন ইতিমধ্যেই পাওয়া গেছে। সবকটি চাকরি হবে মেধার ভিত্তিতে। তিনি বলেন যে, প্রকৃত মেধা পেলেই, সুশাসন প্রতিষ্ঠা করার ক্ষেত্রে তারা যোগ্য অবদান রাখতে পারবে।
গণবণ্টন ব্যবস্থার কথা উল্লেখ করেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন গোটা প্রক্রিয়াকে দুর্নীতি মুক্ত করা হয়েছে। এখন এফসিআই'র মাধ্যমে কৃষকরা তাদের উৎপাদিত ফসল সরাসরি বিক্রি করতে পারছেন। যার ফলে গ্রামীণ অর্থনীতির বিকাশ লক্ষ্য করা গেছে। রাজ্যের কৃষকদের উৎপাদিত ধান গণবণ্টন ব্যবস্থার মাধ্যমে রাজ্যেই থাকছে। যার ফলে রাজ্যের অর্থনীতিতে এর সুপ্রভাব লক্ষ্য করা যাচ্ছে।
আন্তর্জাতিক সীমান্ত লাগোয়া হওয়ার কারণে রাজ্যের অর্থনৈতিক সম্ভাবনার কথাও উল্লেখ করেন মুখ্যমন্ত্রী। বলেন স্পেশাল ইকোনমিক জোন তৈরি করা হচ্ছে সাব্রুমে। গোমতী নদীর উপর তৈরি করা হচ্ছে আন্তর্জাতিক প্রটোকল রুট। এছাড়া সড়ক নির্মাণ ও সংস্কারের জন্য ৪৯৪৫ কোটি টাকা বরাদ্দ করেছে কেন্দ্র। স্থানীয় ঠিকাদার এবং ইঞ্জিনিয়াররা যাতে এর সুবিধা পায়, এজন্য দেড় হাজার কোটি টাকার কাজ পিডাব্লিউডিকে দিয়ে করানোর জন্য বলা হয়েছে।
এছাড়া মৎস, পশুপালন ইত্যাদি ক্ষেত্রেও রাজ্য সরকারের লক্ষ্যমাত্রার কথা উল্লেখ করেন তিনি। বলেন উৎপাদন বৃদ্ধির মাধ্যমে এ সমস্ত ক্ষেত্রে রাজ্যের অর্থনৈতিক বিকাশে আন্তরিকভাবে উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। যার ফলশ্রুতিতে মাথাপিছু গড় আয় বৃদ্ধি পেয়েছে। ২০১৯-২০ সালে তা ১ লক্ষ্য ৫১ হাজারে গিয়ে দাঁড়াবে বলে আশা ব্যক্ত করেন মুখ্যমন্ত্রী।
এই সময়ের মধ্যে এম জি এন রেগা প্রকল্পে তিন কোটি থেকে ৪ কোটি শ্রম দিবসের মঞ্জুরি পাওয়া গেছে।১২ টি ব্লককে আদর্শ ব্লক তৈরি, স্মার্ট সিটি প্রকল্পের বাস্তবায়ন, পরিকাঠামোগত ব্যাপক উন্নয়নের কথা উল্লেখ করেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন হাওড়া নদীর দুই পাড়ের সৌন্দর্যায়নের জন্য ৯৯ কোটি টাকা ইতিমধ্যেই মঞ্জুর করে দেয়া হয়েছে।
এদিন মুখ্যমন্ত্রী শ্রী বিপ্লব কুমার দেব দাবি করেন, মানুষের মানসিকতার পরিবর্তন হচ্ছে। বলেন উন্নয়নের স্বার্থে সবাই সরকারকে সহযোগিতা করছে। যার ফলে খুব সহজেই সরকারি অধিগৃহীত জায়গা মানুষ ছেড়ে দিচ্ছেন। যা এই সময়ের মধ্যে বড় পরিবর্তন বলে দাবি করেন মুখ্যমন্ত্রী।
এদিন আইনজীবিদের এই সম্মেলনে এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন আইনমন্ত্রী রতন লাল নাথ, এডভোকেট জেনারেল অরুন কান্তি ভৌমিক, মুখ্য সচেতক কল্যাণী রায়, বিধায়ক অরুন চন্দ্র ভৌমিক সহ রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা আইনজীবীরা।