Hare to Whatsapp
বন্ধের বিরোধিতা করে সিপিএম বললো- ত্রিপুরার এই অধপতনের জন্যে আই পি এফ টিও সমান ভাবে দায়ি
By Our Correspondent
আগরতলা, অক্টোম্বর ১১, : রাজোর বর্তমান শাসক জোটের ছোট শরিক দল আই পি এফ টি আগামি ১৫ অক্টোবর ত্রিপুরা উপজাতি স্বশাসিত জেলা পরিষদ এলাকায় তথাকথিত তিপরা ল্যান্ড গঠনের দাবিতে ২৪ ঘণ্টা বন্ধ আহ্বান করেছে বলে সংবাদ মাধ্যমে খবর প্রকাশিত হয়েছে। সি পি আই (এম) প্রথম থেকে এ দাবির বিরোধিতা করে আসছে। কারণ
ত্রিপুরাকে ভাগ করে পৃথক রাজ্য গঠনের দাবি পুরাপুরি বিভেদমূলক। এটি ত্রিপুরাকে লন্ডভন্ড করবে, রাজ্যটিকে ধ্বংস করবে। ত্রিপুরা উপজাতি-অনুপজাতি জনগণের সম্প্রীতির সুমহান ঐতিহাকে ধংস করবে। এই উভয় অংশের জনগণের অর্থনৈতিক ও সামাজিক অগ্রগতিকে বিঘ্নিত করবে।
১০ অক্টোবর, ২০১৩ সি পি আই (এম) ত্রিপুরা রাজ্য সম্পাদকমন্ডলীর পক্ষ থেকে এক বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে যে, ত্রিপুরায় বামফ্রন্ট সরকার থাকার সময় আই পি এফ টি এ দাবি তুলে উগ্রজাত্যাভিমানী আবেগ সৃষ্টি করে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করার চেষ্টা করেছে। বি জে পি এবং তাদের কেন্দ্রীয় সরকারের মদতে বামফ্রন্ট সরকারকে অগণতান্ত্রিক ভাবে হটানানোর ষড়যন্ত্রে বিধানসভা নির্বাচনের আগে অনির্দিষ্টকাল ব্যাপি জাতীয় সড়ক এবং রেলপথ অবরোধ করে ত্রিপুরার জনজীবন অচল করার চেষ্টা করেছে। জন সংঘাত সৃষ্টির চেষ্টা করেছে। এই মিলিত ষড়যন্ত্রের ফসল বি জে পি-আই পি এফ টি জোট সরকারের গত ৩১ মাসের অপশাসনে ত্রিপুরার উপজাতি-অনুপজাতি সব অংশের মানুষের অর্থনৈতিক জীবনযাত্রা বিপর্যস্ত। রাজনৈতিক বিরোধীদের ওপর একটানা আক্রমণে রাজ্যে আইনের শাসন অস্তিত্বহীন।
সি পি আই (এম) ত্রিপুরা রাজ্য সম্পাদকমন্ডলীর মতে, ত্রিপুরা রাজ্যের উপজাতি জনগোষ্ঠির মানুষের কাছে এখন জরুরী মূল দাবি খাদ্যের ব্যাবস্থা ও গণতান্ত্রিক পরিবেশ পুনরুদ্ধার। গত ৩১ মাসের বি জে পি-আই পি এফ টি জোট রাজত্বে উপজাতি জনগোষ্ঠীর মানুষ সবচাইতে বেশি আক্রান্ত। তাদের জীবন-জীবিকা
বিপন্ন। তারা রেগার কাজও ঠিকমত পান না। সামান্য রেগার কাজেও শাসক জোটের দুবৃত্তরা মজুরীতে ভাগ বসায়। লাইন ডিপার্টমেন্ট গুলির কোন কাজ সরকার থেকে দেওয়া হয় না। উপজাতি এলাকার মানুষের ঘরে ঘরে অনাহার, অর্ধাহার চলছে। বেশ কয়েকটি অনাহার মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। অনেকে রেশন কার্ড বন্ধক দিতে বাধ্য হয়েছে। অভাবের তাড়নায় সন্তান বিক্রির ঘটনা ঘটেছে। এখন অনেককে সামাজিক ভাতা, পাওয়া থেকেও বঞ্চিত করা হচ্ছে। উপজাতি অধ্যুষিত এলাকার রাস্তা ভেঙ্গে চুরমার, মেরামত হয় না। বিধানসভায় জনগণের সমস্যা নিয়ে কথা বলার অধিকার নেই।
সি পি আই (এম) ত্রিপুরা রাজ্য সম্পাদকমন্ডলীর মতে, এ চরম দুর্ভোগ সৃষ্টির জন্য সমানভাবে দায়ী আই পি এফ টিও। কারণ, তারা এই সরকারের সমস্ত জন বিরোধী কার্যকলাপের শরিক। আই পি এফ টি নেতৃত্ব ক্ষমতার লোভে বি জে পি'র শরিক হয়েছে। অথচ বিজেপি কী ত্রিপুরায়, কী সমগ্র দেশে উপজাতি স্বার্থবিরোধী কার্যকলাপ চালাচ্ছে। উপজাতিদের বনাধিকার আইন নষ্ট করে দেবার ষড়যন্ত্র করছে। কর্পোরেটদের স্বার্থে উপজাতিদের জমি-বাসস্থান থেকে জবরদস্তি উৎখাত করছে। নির্মম অত্যাচার চালাচ্ছে। বি জে পি শাসনে গত ক'বছরে যারা জেলে আটক রয়েছে তাদের একটি বড় অংশ উপজাতি জনগোষ্ঠীর মানুষ।
ত্রিপুরায় বি জে পি-আই পি এফ টি জোটের শাসনে সব অংশের শ্রমজীবি মানুষের, বিশেষ করে উপজাতিদের কাজ ও খাদ্যের যেমন চরম অভাব, এ জন গোষ্ঠীর ছাত্র-ছাত্রীরা ষ্টাইপেন্ড থেকেও বঞ্চিত। এখন নূতন করে খাস জায়গা থেকে উচ্ছেদের চেষ্টা চলছে। উপজাতি জনগোষ্ঠীর মানুষের মূল সমস্যা গুলি থেকে দৃষ্টি সরানোর
অপচেষ্টায় ত্রিপুরা উপজাতি এলাকা স্ব-শাসিত জেলা পরিষদ নির্বাচনের প্রাক্কালে আবার "তিপরা ল্যান্ড' এর দাবি তুলে বন্ধ আহ্বান করেছে। ত্রিপুরাকে ভাগ করে লন্ডভন্ড করার এ বিভেদকামী দাবি রাজ্যের শুভবুদ্ধি সম্পন্ন কোন অংশের মানুষ সমর্থন করেন না। শান্তি ও সম্প্রীতির পরিবেশ বজায় রাখার জন্য সব অংশের জনগণের প্রতি আবেদন জানিয়েছে সি পি আই (এম) ত্রিপুরা রাজ্য সম্পাদকমন্ডলী।