Hare to Whatsapp
মুখ্যমন্ত্রীর হুমকি প্রত্যাহার ও সাংবাদিকদের সার্বিক নিরাপত্তার দাবিতে ত্রিপুরা এসেম্বলি অফ জার্নালিস্টস রাজ্যপালের হস্তক্ষেপ চাইবে
By Our Correspondent
আগরতলা, সেপ্টেম্বর ১৮, : সাব্রুমে মুখ্যমন্ত্রী গত ১১ সেপ্টেম্বর ২০২০ সংবাদ মাধ্যমকে যে হুমকি দিয়েছিলেন, এর পরিপ্রেক্ষিতে এসেম্বলি অফ জার্নালিস্টস' গত ১৩ সেপ্টেম্বর সাধারণ সভা থেকে দাবি করা হয়েছিল- " মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব যেন তিন দিনের মধ্যে তার হুমকি প্রত্যাহার করেন "। কিন্তু গতকাল ত্রিপুরা এসেম্বলি অফ জার্নালিস্টস' এর কার্যকরী কমিটির এক বৈঠকে ব লা হয়েছে যে, মুখ্যমন্ত্রী হুমকি প্রত্যাহার করা তো দুরের কথা, এরপর থেকে সংবাদ মাধ্যমের বিরুদ্ধে আক্রমণ ও ষড়যন্ত্র আরও তীব্র হয়েছে। ত্রিপুরা এসেম্বলি অফ জার্নালিস্টস' এর কার্যকরী কমিটির বৈঠকে পারিপার্শ্বিক ঘটনাবলীতে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্য প্রত্যাহারের দাবীতে প্রতিবাদ অব্যাহত রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
গত ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২০ ইং অনুষ্ঠিত, ত্রিপুরা এসেম্বলি অফ জার্নালিস্টস'এর কার্যকরী কমিটির বৈঠকে সর্বসম্মতভাবে নিম্নলিখিত সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়ঃ
১) সভা উদ্বেগের সাথে লক্ষ্য করছে যে, মুখ্যমন্ত্রীর হুমকির পর পর আক্রান্ত রাজ্যের দুই সাংবাদিকের সম্পর্কে সরকার নিশ্চুপ। মুখ্যমন্ত্রী বা সরকার এই জাতীয় ঘটনার নিন্দা পর্যন্ত জানায় নি এবং দোষীদের গ্রেপ্তারের কোন উদ্যোগ নেই। এতে, এই ঘটনা গুলিতে সরকারের ভুমিকা ও বর্তমান অবস্থান নিয়ে সন্দেহ আরও স্পষ্ট হয়েছে।
২) এই সভা উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ্য করছে যে, সংবাদসূত্র বন্ধ করার জন্য সুপরিকল্পিত ভাবে প্রশাসনে নানা রকম সার্কুলার জারি করা হচ্ছে। সরকারি অফিসার -কর্মচারীদের নানা কৌশলে সংবাদ মাধ্যমের বিরুদ্ধে ক্ষ্যাপানোর চেষ্টা হচ্ছে। এছাড়া, সংবাদের বেসরকসরী সূত্র বন্ধ করার জন্য তাদের উপর ক্রমাগত চাপ সৃষ্টি করা হচ্ছে। সংবাদ মাধ্যমের সাথে যারাই কথা বলছেন তারাই আক্রান্ত কিংবা হুমকির শিকার হচ্ছেন। এমন কি, কোভিডের মতো সাংঘাতিক পরিস্থিতিতেও সরকার সংবাদ সুত্র রূদ্ধ করে রেখেছে। এক্ষেত্রে, তথ্য গোপনেরও চেষ্টা হচ্ছে। ফলে, যথাসময়ে সঠিক তথ্য জনগণের কাছে পৌঁছানো যাচ্ছে না যাতে, জনসাধারনের মধ্যে উৎকন্ঠা আরও বাড়ছে।
৩) গত ৩০ মাসে রাজ্যের বিভিন্ন জায়গায় কমপক্ষে ১৭ জন সাংবাদিক আক্রান্ত হয়েছেন। কিন্তু, কোন ক্ষেত্রেই অপরাধীদের বিচার হয় নি। অন্যদিকে, অপছন্দের সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে মুখ্যমন্ত্রীর কার্যালয়ের প্রত্যক্ষ মদতে কুৎসামুলক ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল করা হয়েছে এবং জনসমক্ষে গণমাধ্যমকে হেয় প্রতিপন্ন করার চেষ্টা চলছে।
৪) মুখ্যমন্ত্রীর প্রকাশ্য হুমকির চারদিন আগে, রাজ্যের বিরোধী দলনেতা ও প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীকে একটি বহুল প্রচারিত পত্রিকা সম্পর্কে অপ্রত্যাশিত ও অসহিষ্ণু মন্তব্য করতে দেখা গেছে। আজকের সভা এই ঘটনাতেও উদ্বেগ প্রকাশ করছে এবং সংবাদ মাধ্যম সম্পর্কে দায়িত্বশীল সমস্ত রাজনৈতিক ব্যাক্তিদের কাছে সৌজন্য ও শিষ্ঠাচার প্রত্যাশা করে।
৫) এই সভা লক্ষ্য করছে যে, সরকার কোভিড সংক্রান্ত কোনও সংবাদ প্রকাশের দায়ে সংবাদ মাধ্যমকে ১২ ঘন্টার নোটিশ জারি করেছে, যা দেশের জরুরি অবস্থার সময়ও দেখা যায় নি। সরকারের নোটিশ জারি করা সম্পর্কে কোন বক্তব্য না থাকলেও সংবাদ মাধ্যমকে জবাব দেওয়ার জন্য ১৫ দিন বা তদোর্ধ সময় দেওয়ার দাবি জানানো হচ্ছে।
৬) দেখা গেছে, এসেম্বলি অফ জার্নালিস্টস'র প্রথম সভা অনুষ্ঠিত হওয়ার কয়েক ঘন্টার মধ্যে দৈনিক সংবাদ পত্রিকাকে পশ্চিম ত্রিপুরা জেলার জেলা শাসক একটি অবান্তর নোটিশ জারি করেন। যেখানে, জবাব চাওয়ার পাশাপাশি পত্রিকা কর্তৃপক্ষকে দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছে যা অগনতান্ত্রিক ও অবাঞ্চিত এবং সংবাদপত্রের স্বাধীনতা হরনের চেষ্টা বলে সভা মনে করছে। এজাতীয় দমনমূলক পদক্ষেপের উদ্দেশ্য সংবাদমাধ্যম যাতে সরকারের পক্ষে অসুবিধাজনক কোন খবর প্রকাশ না করে। এসেম্বলি অব্ জার্নালিস্ট সরকারকে এসব অগণতান্ত্রিক ও অসহিষ্ণু উদ্যোগ থেকে বিরত থাকতে আহ্বান জানিয়েছে।
৭) উদ্ভুত পরিস্থিতিতে, সভা সিদ্ধান্ত নিয়েছে, মুখ্যমন্ত্রীর অসাংবিধানিক হুমকি প্রত্যাহারের দাবিতে এবং সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা ও সাংবাদিকদের সার্বিক নিরাপত্তা সহ সংশ্লিষ্ট বিষয়ে ত্রিপুরার রাজ্যপালের হস্তক্ষেপ চাওয়া হবে। প্রয়োজনে, বিষয়টি প্রধানমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সহ সংশ্লিষ্ট সকলের গোচরে নেওয়া হবে।
৮) ইতিমধ্যে, রাজ্যের বিভিন্ন গনসংগঠন ও পেশাজীবীদের সংগঠন, মুখ্যমন্ত্রীর এই হুমকির পরিপ্রেক্ষিতে এসেম্বলি অফ জার্নালিস্টস'র প্রতি সহমর্মিতা ও সমর্থন জানিয়েছে। আজকের সভা এদের প্রত্যেককে ধন্যবাদ জানাচ্ছে এবং সমাজের সকল অংশের জনগণের সহযোগিতা কামনা করছে।