মালেগড়ঃ উত্তর পূর্বাঞ্চলে মহাবিদ্রোহের প্রভাব নিয়ে আলোচনা,স্মৃতি তর্পণ
নিজস্ব প্রতিবেদন
আগরতলা, ডিসেম্বর ২৩, : শ্রীভূমি।। অন্যান্য বছরের মতো এ বছরও ১৮ ডিসেম্বর শ্রীভূমি(করিমগঞ্জ)জেলার মালেগড়ে শহীদ স্মৃতি তর্পণ অনুষ্ঠিত হয়।উল্লেখ করা যায় যে,১৮৫৭ সালের মহাবিদ্রোহকালে ১৮ ডিসেম্বর লাতুর নিকটবর্তী এই মালেগড় টিলায় বিদ্রোহী ভারতীয় সিপাহিদের সঙ্গে যুদ্ধ হয়েছিল ইংরেজ বাহিনীর। এই যুদ্ধে ২৬ জন বিদ্রোহী ভারতীয় সিপাহি শহীদ হয়েছিলেন এবং ইংরেজ বাহিনীর একজন মেজর সহ পাঁচ জন সৈন্য নিহত হয়েছিল।মহাবিদ্রোহে উত্তর পূর্বাঞ্চলে প্রথম রক্ত ঝরেছিল এখানেই। প্রতি বছর এ দিনটিতে মালেগড়ে হয় শহীদ স্মৃতি তর্পণ। এবারেও জেলা প্রশাসনের পৃষ্ঠপোষকতা এবং পাটকই ট্রেকার্স ও বরাক উপত্যকা বঙ্গ সাহিত্য ও সংস্কৃতি সম্মেলনের অংশ গ্রহণে শ্রদ্ধাঞ্জলি অনুষ্ঠান হয়।
এদিন সকাল ১০টায় মালেগড়ে শহীদের সমাধি বেদীতে পুষ্প স্তবক অর্পণের মাধ্যমে শহীদ স্মৃতি তর্পণ শুরু হয়।প্রাক্তন সাংসদ মিশন রঞ্জন দাস সহ স্হানীয় নেতৃবৃন্দ,বিএসএফ ও জেলা প্রশাসনের পক্ষে মহাবিদ্রোহের শহীদদের স্মৃতির উদ্দেশ্যে শ্রদ্ধা জানানো হয়।তারপর অনুষ্ঠিত হয় সর্ব ধর্ম প্রার্থনা সভা।১৮৫৭ সালের মহাবিদ্রোহের পরিপ্রেক্ষিতে লাতুর মালেগড় সহ উত্তর পূর্বাঞ্চল প্রসঙ্গে আলোচনা করেন প্রাক্তন সাংসদ মিশন রঞ্জন দাস,ত্রিপুরা থেকে আগত বিশিষ্ট লেখক পান্নালাল রায়,জেলা পরিষদের সভানেত্রী স্নিগ্ধা দাস,সহ:ডেপুটি কমিশনার রঙ বামন টেরন,পাটকই ট্রেকার্স'র সম্পাদক অরূপ রায়,বিশিষ্ট আইনজীবী দাইয়ান হুসেন প্রমুখ। প্রাক্তন সাংসদ শ্রীদাস ভাষণ প্রসঙ্গে বলেন,মহাবিদ্রোহের সময় ভারতীয় সিপাহিদের আত্মবলিদানের ঘটনা দেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের ইতিহাসে উজ্জ্বল হয়ে আছে।তাই মালেগড় টিলাভূমি শুধুমাত্র একটি স্মৃতি সৌধ নয়,দেশবাসীর কাছে এক পুণ্যভূমি।মালেগড়কে কেন্দ্র করে বিভিন্ন উদ্যোগের কথা উল্লেখ করেন তিনি।দেশের পর্যটন মানচিত্রে মালেগড়কে স্হান করে দেয়ার প্রচেষ্টার কথাও জানান শ্রীদাস।এই শহীদ স্মৃতিতর্পণ অনুষ্ঠানে বিশেষ বক্তার ভাষণে পান্নালাল রায় উত্তর পূর্বাঞ্চলে মহাবিদ্রোহের প্রভাবের কথা উল্লেখ করে বলেন,চট্টগ্রামের বিদ্রোহী ভারতীয় সিপাহিদের সঙ্গে এই মালেগড়েই প্রথম ইংরেজ বাহিনীর যুদ্ধ হয়েছিল। মালেগড়ের শহীদ স্মারক রক্ষণাবেক্ষণ সহ দেশের প্রথম স্বাধীনতা যুদ্ধ তথা স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসকে ভবিষ্যত প্রজন্মের কাছে আরও স্পষ্ট ভাবে তুলে ধরার আহ্বান জানান তিনি।লাতু-জিপি সভানেত্রী স্নিগ্ধা দাস বলেন, মালেগড় টিলা শুধু লাতু এলাকার জন্য নয়,গোটা অসমের মধ্যেই একটি ঐতিহ্যপূর্ণ স্হান। মালেগড়কে কেন্দ্র করে বিভিন্ন উদ্যোগের জন্য তিনি অসম সরকারের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।বরাক উপত্যকা বঙ্গ সাহিত্য ও সংস্কৃতি সম্মেলনের শ্রীভূমি জেলা সভাপতি নন্দকিশোর বণিক বলেন,মালেগড়ের ইতিহাস সকলের কাছে পৌঁছে দিতে হবে।পাটকাই ট্রেকার্সের জেলা সংযোজক অরূপ রায় বলেন,ইতিহাস বিজড়িত মালেগড়কে শুধুমাত্র শহীদ স্মৃতিতর্পণের মাধ্যমে সীমাবদ্ধ না রেখে দেশাত্মবোধে সবাইকে উদ্বুদ্ধ করতে হবে।এলাকার বিশিষ্ট সমাজসেবী সাহিদুল ইসলাম চৌধুরী শহীদদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে মালেগড়কে দেশের পর্যটন মানচিত্রে গুরুত্বপূর্ণ স্হান করে দিতে প্রয়োজনীয় উদ্যোগের জন্য সংশ্লিষ্ট সকলের প্রতি আহ্বান জানান।আলোচনার পর বঙ্গ সাহিত্য ও সংস্কৃতি সম্মেলন,খুশি সাংস্কৃতিক সংস্থা,লাতু স্কুলের ছাত্রছাত্রীরা দেশাত্মবোধক সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে অংশ নেয়।সবাইকে ধন্যবাদ জানিয়ে বক্তব্য রাখেন জেলার সহঃ ডেপুটি কমিশনার। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন সদর সার্কেল অফিসার জাগৃতি কালোয়ার।
আরও পড়ুন...