Hare to Whatsapp
এ ডি সি-র প্রাক্তন মুখ্য নির্বাহী সদস্য অমিয় কুমার দেববর্মা জীবনাবসান
By Our Correspondent
আগরতলা, ২৫ , : কোন একসময়ের পাহাড় দাপিয়ে বেড়ানো তরুন তুর্কি নেতা এবং ত্রিপুরা উপজাতি এলাকা স্বশাসিত জেলা পরিষদের মুখ্য নির্বাহী সদস্য অমিয় কুমার দেববর্মা শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছেন আজ। তাঁর মৃত্যুতে উপজাতিয় রাজনীতির অপূরনীয় ক্ষতি হল।এই অপূরণীয় ক্ষতিতে আইএনপিটি দল যেমন হারিয়েছে এক বলিষ্ঠ ও তাত্বিক নেতাকে তেমনি রাজ্য হারিয়েছে সম্প্রীতির সেতুকে।দীর্ঘ দিন ধরে অসুস্থ ছিলেন অমিয় দেববর্মা। গত তিন বছরে সম্ভবত ৪ বার হায়দ্রাবাদে অপারেশন হয়েছে তাঁর।সেই অপারেশনের পর থেকেই তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন। কখনো একটু সুস্থ বোধ করলে পার্টি অফিসে যেতেন।অন্যথায় বাড়ীতে ই থাকতেন। তিন কন্যা ও এক পুত্রের পিতা অমিয় দেববর্মা দীর্ঘ দিন দারিদ্র্যতার সাথে লড়াই করেছেন। পুত্র,কন্যাদের পড়াশোনা করাতে গিয়ে হিমশিম খেয়েছেন।যদিও উনার স্ত্রী সব দায়িত্ব সামলেছেন।দল করতে করতেই তার সংসারের দিকে নজর দেয়ার ফুরসৎ হয়নি।খুব কাছে থেকে দেখেছি অমিয়কে।খোয়াইর চেবরী বাজারের পূর্বাংশের গ্রাম বিদ্যামোহন পাড়ার অমিয় দেববর্মা খোয়াই একাদশ শ্রেণীতে পড়াশোনা করেছেন ও পড়ে এমবিবিতে স্নাতক হয়েছেন।কলেজে থাকতেই রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েন।তখন যুব সমিতির অফিস ছিল অভয়নগরে প্রয়াত বুদ্ধ দেববর্মণের বাড়ীতে। সেখানে থাকতেন ও তিনি। প্রথমেই অমিয় দেববর্মা,ভীষ্ম দেববর্মা টিএস এফে জড়িয়ে পড়েন।টিএস এফ করতে করতেই শুরু হয় পার্বত্য অঞ্চলে পথচলা। অমিয়, ভীষ্ম, রবীন্দ্র দেববর্মণ পার্বত্য অঞ্চলে জনজাতিয়দের সমস্যা নিয়ে যেমন আন্দোলন করতেন তেমনি প্রশাসনিক স্তরে দরবার চালাতেন।একসময় অমিয় দেববর্মা ট্রাইবেল স্টুডেন্ট ফেডারেশন(টিএস এফ) র সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন।এরপর যুব সমিতির নুতন প্রান সন্চার হয়।নানা ইস্যুতে দূর্বার আন্দোলন গড়ে তুলেন অমিয় দেববর্মা র নেতৃত্বাধীন টিএস এফ।অমিয় যেমন একজন সংগঠক ছিলেন, তেমনি ছিলেন সুবক্তা।এক সময় পাহাড়ে গেলে চান্চল্য হত। সুদর্শন অমিয় দেববর্মা যেখানেই গেছেন জনজাতিয়দের ঢল নামে।বিশেষ করে উপজাতিয় যুবতীরা।এ আমার দেখা। একসাথে বহু গ্রাম আমরা সফর করেছি, দেখেছি তার সাংগঠনিক দক্ষতা। ১৯৮০ র জুন দাঙ্গা র সময় যুব সমিতির প্রায় সব নেতা জেলে ছিলেন। তাদের জামিনের জন্য আইনী তদ্বির তদারক করেছেন তিনি। এছাড়াও বেশ কজন আইনজীবী অমিয়দের কাছে ছুটে যেতেন। ওদের কেও তিনি নানাভাবে সহায়তা করেছেন।অমিয়দের ছুটাছুটি ও তদ্বির তদারকি যুব সমিতির নেতারা জেল থেকে জামিনে ছাড়া পান। একসময়ে মান্দাইর গনহত্যা কান্ডের নায়ক বলে বলা হত জয়চন্দ্র দেববর্মাকে।বাড়ী তাঁর মান্দাই বাজার থেকে পুরানো মান্দাই যাওয়ার পথের বাঁ দিকে।আমি ব্যক্তিগত ভাবে চিনতাম তাঁকে।এত ভালো লোককে গনহত্যার নায়ক বলে কাগুজে প্রচার করা হয়।অমিয় দেববর্মা র সাথেও তার সুসম্পর্ক ছিল।ছিল নীলমনি দেববর্মণের সাথে।পার্বত্য অঞ্চলে অমিয় দেববর্মা খুব জনপ্রিয় ছিলেন।বিশেষ করে পুরানো বা অবিভক্ত সদরের উপজাতিয় অন্চলে।শুধু তাই নয় অমিয় দেববর্মা অউপজাতিয়দের কাছে ও প্রিয় ছিলেন। তাঁর গ্রহনযোগ্যতা ছিল অস্বাভাবিক।শ্যামাচরন, নগেন্দ্র জমাতিয়া রা বহু সময় কথাপ্রসঙ্গে এই কথা বলেছেন। তাঁর সাংগঠনিক দক্ষতার জন্য বুদ্ধদা অমিয়কে স্নেহ করতেন,ও নানাভাবে সহায়তা করেছেন।
ত্রিপুরা স্বশাসিত জেলা পরিষদ গঠনের আন্দোলনে অমিয় দেববর্মা প্রথম সারির নেতা ছিলেন।তিনি দুবার সপ্তম তপশীল মোতাবেক গঠিত জেলা পরিষদের সদস্য ছিলেন। পরবর্তী সময়ে যুব সমিতি কংগ্রেস জোট এডিসির ক্ষমতায় এলে প্রথমে তিনি শিক্ষা দপ্তরের নির্বাহী এবং পরে মুখ্য নির্বাহী সদস্য হয়েছিলেন।
উদারপন্হী হিসেবে পরিচিত অমিয় বরাবর কংগ্রেসের সাথে আঁতাত বা জোটের সমর্থক ছিলেন। কট্টর পন্হীদের তীব্র বিরোধিতা করেছেন। আইএনপিটি গঠিত হলে তিনি সহকারী সাধারণ সম্পাদক হন এবং চিনিকলের সম্পাদনার দায়িত্ব নেন। বর্তমানে তিনি প্রধান সম্পাদক।
রাজ্য রাজনীতিতে বিশেষ করে পার্বত্য অঞ্চলে র উন্নয়নে অমিয় দেববর্মা র ভূমিকা ইতিহাসের উজ্জ্বল অধ্যায় হয়ে থাকবে।