Hare to Whatsapp
৫ ছাত্রকে একসাথে করে খোলা আকাশের নীচে ক্লাশ শুরুর বিরোধীতা করলো বামপন্থী শিক্ষক সংগঠন টি জি টি এ
By Our Correspondent
আগরতলা, আগষ্ট ১২, : আগামী ২০শে আগষ্ট থেকে শিক্ষকদের পাড়ায় পাড়ায় গিয়ে ক্লাশ (নেইবারহুড ক্লাশ) নেবার যে কথা রাজ্য শিক্ষা দপ্তর থেকে বলা হয়েছে ত্রিপুরা সরকারী শিক্ষক (এইচ বি রোড) সমিতি মনে করে প্রকৃত অবস্থা বিবেচনায় না রেখে অপরিকল্পিত এবং অবাস্তব নির্দেশ জারি করা হয়েছে শিক্ষক ও ছাত্রদের উপর।
সরকারী নির্দেশিকায় বলা হয়েছে, ৫ জন ছাত্রের গ্রুপ করে ছাত্রদের বাড়ির কাছে খোলা জায়গায় কোভিড-১৯ প্রোটোকল মেনে ক্লাশ করতে হবে। প্রতিটি গ্রুপের ছাত্রদের গড়ে প্রতিদিন দুটি করে ক্লাশ হবে দেড় থেকে দুই ঘন্টার। ফলে প্রতিটি ছাত্রকে এই ভাদ্রের কাঠফাটা রৌদ্রে খোলা আকাশের নিচে প্রতিদিন গড়ে নূন্যতম তিন থেকে চার ঘন্টা কাটাতে হবে। স্বাস্থ্য বিজ্ঞান কি এই ব্যাপারটাকে অনুমোদন দিয়েছে কিনা সরকারী শিক্ষক সমিতি এই প্রশ্ন তোলেছেন।
আদেশে বলা হয়েছে, প্রথম সাময়িক এবং ষান্মাসিক পরীক্ষা হবে না তাই প্রতিটি ক্লাশে প্রতিটি বিষয়ে ১০ নম্বরের পরীক্ষাও নিতে হবে।
এসম্পর্কে শিক্ষক সমিতি বলেছে, গতকালই রাজ্যের মুখ্যসচিব আনলক সম্পর্কিত নির্দেশনামায় বলেছেন ১০ বছরের কম বয়সী শিশুদের ঘরের বাইরে না আসাটাই বাঞ্ছনীয়। কিন্তু শিক্ষা দপ্তরের আদেশ নামায় ৯-১০ বছর বয়সী তৃতীয়-চতুর্থ শ্রেনীর ছাত্র-ছাত্রীদেরও এই ধরনের ক্লাশে যুক্ত করার কথা বলা হয়েছে। এটা কি সরকারের পরস্পর বিরোধী সিদ্ধান্ত নয়?
খোলা জায়গায় ক্লাশ নেবার কথা বলা হয়েছে। সমিতি প্রশ্ন তোলেছে, খোলা জায়গায় গণিত, বিজ্ঞান, ভূগোল, একাউন্টেসির মত বিষয় গুলি ব্ল্যাকবোর্ড ছাড়া শারীরিক দুরত্ব বজায় রেখে কিভাবে শ্রেনীকক্ষ - এর বাইরে পঠন পাঠন করা যাবে তারও কোনো সুস্পষ্ট নির্দেশিকা দেওয়া হয় নি।
সমিতি মনে করে, যেভাবে এই নেইবারহুড ক্লাশ করার কথা বলা হয়েছে তাতে বিভিন্ন বিদ্যালয় কুর্তৃপক্ষ অসুবিধায় পড়ে যাবে। একেবারে কম সংখ্যক ছাত্র-ছাত্রী আছে এমন বিদ্যালয়ে কোনো রকমে ক্লাশ চালাতে পারলেও বেশি ছাত্রছাত্রী সম্বলিত বিদ্যালয়ে এটা প্রায় অসম্ভব। কেননা নবম থেকে দ্বাদশ শ্রেণিতে ৫০ জন ছাত্র থাকলে আদেশ অনুসারে ক্লাশ করতে গেলে নূন্যতম ৮ থেকে ৯ জন শিক্ষকের প্রয়োজন হবে একজন শিক্ষক সবকটি বিষয় পড়াতে পারবেন ধরে নিয়ে। কয়টি স্কুলে প্রয়োজনীয় শিক্ষক আছে?
১০৩২৩ জন শিক্ষকদের চাকুরিচ্যুতির পর এই সংকট আরো তীব্র হয়েছে।
সমিতির প্রশ্ন অনলাইন ক্লাশ গুলি যেভাবে ধনী-দরিদ্র ছাত্র-ছাত্রীদের মধ্যে একধরণের বৈষম্য সৃষ্টি করেছে এই নেইবারহুড ক্লাশ অন্য ধরণের বৈষম্য সৃষ্টি করবে নাতো ছাত্র-ছাত্রীদের মধ্যে?
এছাড়াও বাস্তবতার কারনে একটা বিরাট অংশের শিক্ষক-শিক্ষিকারা ডেইলি প্যাসেঞ্জারি করে কর্মস্থলে যেতে বাধ্য হয়। তাদের পক্ষে এই কঠিন পরিস্থিতিতে এই ধরনে নেইবারহুড ক্লাশ নেওয়াটা অসুবিধা জনক হয়ে দাঁড়াবে।
আমেরিকা থেকে শুরু করে বিভিন্ন দেশে দেখা গেছে ছাত্র-ছাত্রীদের পঠনপাঠন শুরু করতে গিয়েই কোভিড-১৯ সংক্রমনের হার অত্যধিক বেড়ে যাওয়ায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে।
প্রসঙ্গত উল্লেখ করা যেতে পারে যে, বিগত ২৯শে জুলাই,২০২০ কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক "আনলক-৩" এর নিয়মাবলী ঘোষনা করতে গিয়ে ১(১) ধারায় শুধুমাত্র অনলাইন ও দূরশিক্ষা ব্যতিত বাকী সমস্ত ধরণের ছাত্রদের কর্মকান্ড ৩১শে আগষ্ট, ২০২০ পর্যন্ত নিষিদ্দ্ব করেছিল।
বিভিন্ন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরাও এই মুহূর্তে ক্লাশ শুরু না করতে পরামর্শ দিয়েছেন। কেন্দ্রীয় মানব সম্পদ উন্নয়ন দপ্তর কখন বিদ্যালয় খোলা হবে সে বিষয়ে অভিভাবকদের মতামত জানতে চেয়েছিলেন। অধিকাংশ অভিভাবকরা স্কুল না খোলার মতামত দিয়ে বলেছেন কোনো এলাকায় পরস্পর ২১ দিন কোনো সংক্রমন না ঘটলে এই এলাকায় ধীরে ধীরে স্কুল খোলা যেতে পারে। তাই শিক্ষক সমিতি প্রশ্ন তোলেছে, সারা দেশে কোনো রাজ্যই ছাত্র-ছাত্রীদের মুখোমুখি (ফেস টু ফেস) পড়াশুনা না করলেও ত্রিপুরাতে শুরু করতে যাওয়াটা কি অতিরিক্ত ঝুকিপূর্ণ হয়ে যাচ্ছে না?
তাই ত্রিপুরা সরকারী শিক্ষক সমিতি রাজ্য সরকারের কাছে এই আদেশ প্রত্যাহার করে নিতে দাবী জানিয়েছে। উচ্চ পর্যায়ের কমিটি এবং স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের সাথে পরামর্শক্রমেই কেবলমাত্র এই ধরণের সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত বলে বামপন্থী শিক্ষক সমিতি মনে করে।