খেলার ছলে শিশুদের শিক্ষার ব্যবস্থা গ্রহণ করলে তাদের শিক্ষা গ্রহণে আকর্ষণ এবং মনে রাখার প্রবণতা অনেকটাই বেড়ে যায় : মুখ্যমন্ত্রী
নিজস্ব প্রতিবেদন
আগরতলা, ডিসেম্বর ১২, : গুণগত শিক্ষা প্রদানের মাধ্যমে ছোট ছোট শিশুদের আগামীদিনের সম্পদ হিসেবে গড়ে তোলা সম্ভব। যারা দেশ ও সমাজের কল্যাণে নিজেদের আত্মনিয়োগ করতে সক্ষম হয়ে উঠবে। শিশুদের উপর কোনও কিছু চাপিয়ে না দিয়ে তাদের নিজস্বতাকে মেলে ধরার সুযোগ করে দিলে তারাই ভবিষ্যতে সফল মানব সম্পদে পরিণত হতে পারবে। ১১ ডিসেম্বর রবীন্দ্র শতবার্ষিকী ভবনে পশ্চিম ত্রিপুরা জেলা শিক্ষা আধিকারিক কার্যালয়ের উদ্যোগে আয়োজিত নিপুণ ফেস্ট ২০২৫-এর উদ্বোধন করে মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর (ডা.) মানিক সাহা একথা বলেন। অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী সহ অন্যান্য অতিথিগণ ‘ফ্রম বাডস টু ব্রিলিয়ান্স' নিপুণ ত্রিপুরা পুস্তিকার আবরণ উন্মোচন করেন। মুখ্যমন্ত্রী সহ অন্যান্য অতিথিগণ এদিন এই অনুষ্ঠানে নিপুণ ত্রিপুরা মিশনে বিভিন্ন বিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীদের ৩ মাসে ভাষাগত এবং গাণিতিক ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতির জন্য পুরস্কৃত করেন। তাছাড়া প্রত্যেকটি জেলা শিক্ষা আধিকারিক, তেলিয়ামুড়া, জিরানীয়া, বিশালগড়, কমলপুর, জোলাইবাড়ি, চড়িলাম, কুমারঘাট, করবুক, কদমতলার বিদ্যালয় পরিদর্শকদের এবং জেলার নিপুণ কো-অর্ডিনেটরদেরও এদিনের অনুষ্ঠানে পুরস্কার তুলে দেন মুখ্যমন্ত্রী। এছাড়াও ৬ জন ব্লক রিসোর্স পার্সন ও ক্লাস্টার রিসোর্স পার্সনকে পুরস্কৃত করা হয়।
অনুষ্ঠানে আলোচনা করতে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী আরও বলেন, ছোট ছোট চারাগাছকে প্রাকলগ্ন থেকেই যদি যত্ন নেওয়া যায় তা মানুষ এবং প্রকৃতির উপকারে আসে। ঠিক তেমনি শিশুকাল থেকেই ছাত্রছাত্রীদের সঠিক এবং গুণগত শিক্ষা প্রদানের মাধ্যমে প্রকৃত মানসিক বিকাশ ঘটানো সম্ভব। এই ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির নিপুণ মিশন অত্যন্ত কার্যকরি পদক্ষেপ।
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, এই ক্ষেত্রে নিপুণ কথাটির অর্থই হলো নিপুণতার সহিত শিক্ষা গ্রহণ। খেলার ছলে শিশুদের শিক্ষার ব্যবস্থা করলে তাদের শিক্ষা গ্রহণে আকর্ষণ এবং মনে রাখার প্রবণতা অনেকটাই বেড়ে যায়। এই ধরনের শিক্ষা প্রদান কর্মসূচিকে বাস্তবায়ন এবং ফলপ্রসূ করতে হলে শিক্ষক সমাজকেও নিজেদের আপডেট রাখতে হবে। তিনি বলেন, শিক্ষকের পেশা অন্য যে কোনও পেশার চাইতে সম্পূর্ণ আলাদা। কারণ তাদের মাধ্যমেই গড়ে উঠে ভবিষ্যতের মানব সম্পদ। যা আমাদের দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে অনবদ্য ভূমিকা রাখে। তাই শিক্ষকরা হলেন মানব সেবা এবং সমাজ গঠনের কারিগর।
আলোচনায় মুখ্যমন্ত্রী আরও বলেন, গত তিন বছর পূর্বে এই নিপুণ ত্রিপুরা মিশন চালু হয়েছিল। এখন পর্যন্ত রাজ্যে ৪ হাজার ২০০টি বিদ্যালয়ে এই কর্মসূচি চালু রয়েছে। রাজ্যে শিক্ষার মানোন্নয়নে ইতিমধ্যেই রাজ্য সরকার অনেক সদর্থক পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। এরমধ্যে বিভিন্ন মহকুমায় নতুন মহাবিদ্যালয় স্থাপন, রাজ্যে একমাত্র মহিলা মহাবিদ্যালয়কে বিশ্ববিদ্যালয়ে উন্নীত করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে। রাজ্যে উচ্চশিক্ষাকে একেবারে মহকুমাস্তরে নিয়ে যাওয়ার জন্য প্রচেষ্টা জারি রেখেছে এই সরকার। কারণ বর্তমান সরকার হলো মানুষের সরকার। ছাত্রছাত্রীদের গুণগত শিক্ষা প্রদানে এই সরকার বদ্ধপরিকর। তাছাড়াও অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী রাজ্যের শিক্ষা ব্যবস্থার উন্নয়নে গৃহীত বিভিন্ন কর্মসূচি যেমন সি.এম. সাথ প্রকল্প, মুখ্যমন্ত্রী কন্যা সন্তান প্রকল্প, দিব্যাঙ্গ ছাত্রছাত্রীদের জন্য বিশেষ স্কলারশিপ এবং নবম শ্রেণিতে পাঠরত ছাত্রীদের বাইসাইকেল প্রদান নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেন। রাজ্যের শিক্ষা ব্যবস্থাকে সুচারুরূপে পরিচালন করার জন্য গত ৫ বছরে রাজ্যে ৫ হাজার ২১৫ জন শিক্ষক শিক্ষিকা, ২১৫ জন গ্রন্থাগারিক এবং ৫৬৭ জন এম.টি.এস. নিয়োগ করা হয়েছে বলে মুখ্যমন্ত্রী তাঁর বক্তব্যে জানান।
অনুষ্ঠানে এছাড়াও বক্তব্য রাখেন শিক্ষা দপ্তরের বিশেষ সচিব রাভেল হেমেন্দ্ৰ কুমার। এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন বিদ্যালয় শিক্ষা দপ্তরের অধিকর্তা এন.সি. শর্মা, প্রাথমিক শিক্ষা দপ্তরের অধিকর্তা রাজীব দত্ত প্রমুখ। অনুষ্ঠান উপলক্ষ্যে মুখ্যমন্ত্রী সহ অন্যান্য অতিথিগণ রবীন্দ্র ভবন প্রাঙ্গণে আয়োজিত শিক্ষক শিক্ষিকা কর্তৃক খোলা স্টলগুলি ঘুরে দেখেন এবং তাদের বিভিন্ন পরামর্শ দেন।
আরও পড়ুন...