বর্তমান সরকার মানুষের সমস্যার সমাধান করার জন্য প্রতিনিয়ত কর্মসূচি নিচ্ছে : মুখ্যমন্ত্রী
নিজস্ব প্রতিবেদন
আগরতলা, ডিসেম্বর ১০, : শিক্ষা ছাড়া কোনও জাতিরই অগ্রগতি হতে পারে না। অজ্ঞানতার অন্ধকার থেকে জ্ঞানের আলোয় যাওয়ার একমাত্র পথ শিক্ষা। তাই শিক্ষাকে অগ্রাধিকার দিয়ে রাজ্যের জাতি জনজাতিদের উন্নয়নে কাজ করছে সরকার। জাতি জনজাতি অংশের মানুষের মিশ্র বসতির ত্রিপুরাতে বিভিন্ন প্রকল্পের বাস্তবায়নের মাধ্যমে উন্নয়ন হচ্ছে। শিক্ষাকে এজন্য সর্বোচ্চ প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে। ৯ ডিসেম্বর সোনামুড়া মহকুমা শাসক কার্যালয়ের নবনির্মিত ভবনের উদ্বোধন করে একথা বলেন মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর (ডা.) মানিক সাহা। এই অনুষ্ঠানে সম্মানিত অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন উচ্চশিক্ষামন্ত্রী কিশোর বর্মন, সংখ্যালঘু উন্নয়ন দপ্তরের মন্ত্রী শুক্লাচরণ নোয়াতিয়া, বিধায়ক তফাজ্জল হোসেন, বিধায়ক বিন্দু দেবনাথ, ত্রিপুরা উপজাতি এলাকা স্বশাসিত জেলা পরিষদের সদস্য পদ্মলোচন ত্রিপুরা। এই অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথিরূপে উপস্থিত ছিলেন সিপাহীজলা জেলার জেলাশাসক ও সমাহর্তা ডা. সিদ্ধার্থ শিব জয়সওয়াল, সিপাহীজলা জেলার পুলিশ সুপার বিজয় দেববর্মা। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন সিপাহীজলা জিলা পরিষদের সভাধিপতি সুপ্রিয়া দাস দত্ত।
অনুষ্ঠানের উদ্বোধক ও প্রধান অতিথি মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর (ডা.) মানিক সাহা বলেন, সিপাহীজলা জেলায় বাল্য বিবাহ, কিশোরীদের অকাল গর্ভধারণ প্রভৃতি সমস্যার সমাধানে ‘মিশন সংকল্প' নামক অভিযানের মাধ্যমে জেলা প্রশাসন কাজ করছে। এই অভিযানের সদর্থক ফল ইতিমধ্যেই আসতে শুরু করেছে। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, সিপাহীজলা জেলা দীর্ঘদিন অবহেলিত থেকেছে। তাই সার্বিক উন্নয়নের মাধ্যমে এই জেলাকে অন্য জেলার সমকক্ষ করে তুলতে হবে। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, এদিন সোনামুড়া মহকুমা শাসকের নবনির্মিত কার্যালয় সহ আরও ১৪টি প্রকল্পের উদ্বোধন করা হয়েছে এবং ৩টি প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয়েছে। ১৪টি প্রকল্পে ব্যয় হয়েছে প্রায় ৫০ কোটি টাকা। এটি উন্নয়নের ক্ষেত্রে রাজ্য সরকারের সদর্থক দৃষ্টিভঙ্গির পরিচায়ক। তিনি আরও বলেন, পঞ্চায়েত দপ্তরের মাধ্যমে ‘আমার সরকার' নামে যে কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে তা রাজ্যের বাইরে অন্য রাজ্যকেও অনুপ্রাণিত করেছে। রাজ্য সরকারের লক্ষ্য সরকারকে মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়া। মানুষের মৌলিক চাহিদা পূরণে এবং সরকারি পরিষেবা মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে ‘আমার সরকার’ কর্মসূচির সাফল্য অভাবনীয়।
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, জি.এস.ডি.পি.তে উত্তর পূর্বাঞ্চলে ত্রিপুরা আজ দ্বিতীয় স্থান অধিকার করেছে। বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজ বাস্তবায়নে পঞ্চায়েত দপ্তর জাতীয় পর্যায়ে ৭টি পুরস্কার পেয়েছে। নীতি আয়োগের রিপোর্ট অনুযায়ী ত্রিপুরা প্রথম সারিতে আছে। তিনি বলেন, বর্তমান সরকার মানুষের সমস্যার সমাধান করার জন্য প্রতিনিয়ত কর্মসূচি নিচ্ছে। পূর্বতন সরকার মানুষের সমস্যা বাঁচিয়ে রাখতো। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, নারীদের ক্ষমতায়নে এবং অর্থনৈতিক অবস্থার উন্নয়নে প্রধানমন্ত্রীর অনুপ্রেরণায় ত্রিপুরাতে বর্তমানে ৫৪ হাজারের উপরে মহিলা স্বসহায়ক দল গঠন করা হয়েছে। এরসঙ্গে যুক্ত আছেন ৪ লক্ষ ৭৬ হাজার মহিলা। ইতিমধ্যে রাজ্যে লাখপতি দিদি হয়েছেন ১ লক্ষ ৮ হাজার।
অনুষ্ঠানে উচ্চশিক্ষামন্ত্রী কিশোর বর্মন বলেন, আজকের দিনে সোনামুড়া মহকুমার ইতিহাসে নতুন অধ্যায় রচিত হলো। সোনামুড়ার ইতিহাসে একই দিনে একইসঙ্গে এতগুলি উন্নয়নমূলক প্রকল্পের দ্বারোদ্ঘাটন একটি অভূতপূর্ব ঘটনা। বর্তমান সরকার এবং মুখ্যমন্ত্রীর ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গির ফলে বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজ বাস্তবায়িত হচ্ছে।
অনুষ্ঠানে সমবায়মন্ত্রী শুক্লাচরণ নোয়াতিয়া বলেন, জনজাতিদের উন্নয়নে এবং ছাত্রছাত্রীদের শিক্ষার মান উন্নয়নে অগ্রাধিকার দিয়ে কাজ করছে সরকার। এজন্য সারা রাজ্যে ছাত্রছাত্রীদের জন্য আবাস নির্মাণ করা হচ্ছে। সরকারি বাজেটে প্রি এবং পোস্ট মেট্রিক স্কলারশিপের জন্য অধিক পরিমাণ অর্থ বরাদ্দ করা হয়েছে।
এই অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী যে ১৪টি প্রকল্পের ভার্চুয়ালি উদ্বোধন করেন সেগুলি হল কমলনগর পি.এইচ.সি. ও ১০টি স্টাফ কোয়ার্টারের নতুন ভবন, মেলাঘর মহকুমা হাসপাতালের নতুন ও.পি.ডি. কমপ্লেক্স, বক্সনগরে ৫০ শয্যা বিশিষ্ট সংখ্যালঘু বালিকা ছাত্রাবাস, বক্সনগরের ইউ.এন.সি. নগর এস.বি. স্কুলের নতুন ভবন, মেলাঘর ইংরেজি মাধ্যম বিদ্যালয়ের নতুন ভবন, নবদ্বীপ চন্দ্র ইনস্টিটিউশন উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের নতুন ভবন, বক্সনগর পি.এইচ.সি.তে ব্লক পাবলিক হেলথ ইউনিট, ধনপুর পি.এইচ.সি.তে ব্লক পাবলিক হেলথ ইউনিট, পদ্মলোচন চৌধুরী পাড়া উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে অতিরিক্ত শ্রেণিকক্ষ, বক্সনগর ব্লকের নয়নজলা গ্রাম পঞ্চায়েত নতুন ভবন, খেদাবাড়ি তহশিল কাছাড়ি অফিসের নতুন ভবন, কামরাঙাতলি তহশিল কাছাড়ি অফিসের নতুন ভবন, পূর্ব নলছড়ে আয়ুষ্মান আরোগ্য মন্দিরের নতুন ভবন এবং পশ্চিম ত্রিপুরা জেলার অধীন পি.এম.-শ্রী সেকেরকোট উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের নতুন ভবন। এদিনের অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী ভার্চুয়ালি আরও ৩টি নতুন প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। এগুলি হল কাঁঠালিয়ায় নতুন কমিউনিটি হেলথ সেন্টার, কামরাঙাতলিতে গোমতী নদীর উপর আর.সি.সি. ফুট ব্রিজ, কমলনগর পি.এইচ.সি.র সম্প্রসারণ।
আরও পড়ুন...