Hare to Whatsapp
৪ ঠা আগস্ট পর্যন্ত রাজ্যে সম্পুর্ন লকডাউনঃ মুখ্যমন্ত্রী।
By Our Correspondent
আগরতলা, জুলাই ৩০, : লকডাউন এর সময়সীমা বৃদ্ধি করার সিদ্ধান্ত নিল রাজ্য সরকার। আজ সন্ধ্যায় এক ভিডিও বার্তায় এই ঘোষণা করেন মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব। তিনি বলেন আগামী ৪ঠা আগস্ট ভোর পাঁচটা পর্যন্ত সম্পূর্ণ লকডাউন থাকবে রাজ্যজুড়ে। গত দুইদিনের লকডাউনে যেসব ক্ষেত্রে বিধিনিষেধ ও ছাড় ছিল, সেগুলি লাগু থাকবে ৪ তারিখ ভোর ৫ টা পর্যন্ত।
তিনি বলেন 'রাজ্য সরকার সাত দিনের মধ্যে সমীক্ষার জন্য প্রত্যেকের বাড়িতে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। গত দুই দিনে ৩,৮৮,৭৮২ পরিবারের কাছে আমরা যেতে সক্ষম হয়েছি। তার মধ্যে ৯৮৫৫ জন ব্যক্তিকে আমরা চিহ্নিত করেছি। ৫৬৮৭ টি নমুনা নেওয়া হয়েছে। যার মধ্যে ১৯৬ টি রিপোর্ট পজিটিভ এসেছে।’
লকডাউনের সময়সীমা বৃদ্ধি করার প্রয়োজনীয়তা উল্লেখ করতে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব বলেন, দুই দিনেই প্রায় এক তৃতীয়াংশ বাড়িতে সমীক্ষার কাজ সম্পন্ন হয়েছে। "বাড়ি বাড়ি সার্ভে কর্মসূচি সম্পন্ন করার জন্য আমাদের লকডাউন বাড়াতে হবে। আগামী ৪ তারিখ ভোর ৫টা পর্যন্ত সম্পূর্ণ লকডাউন থাকবে। যে বিধি-নিষেধ গুলি রাজ্য সরকার ঘোষণা করেছে সে গুলি লাগু থাকবে।" তিনি বলেন, "পুরো ভারতবর্ষের মধ্যে ত্রিপুরা একমাত্র রাজ্য, যে প্রত্যেক বাড়িতে স্বাস্থ্যকর্মী পাঠাচ্ছে।"
রাজ্যে কোভিড-১৯ রোগের বর্তমান অবস্থান সম্পর্কে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, 'রাজ্যে এখনও পর্যন্ত ২১ জনের মৃত্যু হয়েছে যার মধ্যে বয়স্করা রয়েছেন এবং তাদের মধ্যে প্রায় সবাই কোন না কোন রোগে আক্রান্ত ছিলেন।'তিনি ফের বলেন ১০ বছরের নিচে শিশুদের, গর্ভবতী মহিলা এবং বয়স্কদের প্রতি লক্ষ্য রাখতে হবে, যত্ন নিতে হবে।
গত দুই দিন রাজ্যে স্বতঃস্ফূর্তভাবে লকডাউন পালন করার তার জন্য সকল অংশের মানুষকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন তিনি। মুখ্যমন্ত্রী শ্রী দেব বলেন "লকডাউনের ফলে আমাদের অনেক অসুবিধার সম্মুখীন হতে হয় আমার পরিবারের, গ্রামের, পারা প্রতিবেশী, সকলের। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী বলছেন "জান হে তো জান হে। আগে বাঁচতে হবে তারপর বাকি সবকিছু।"
ত্রিপুরা সরকার রাজ্যের জনগণের দৈনন্দিন জীবনের উন্নয়নের জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহন করেছে। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, 'দু-তিনটি বড় বড় প্রকল্প নিয়েছে সরকার। আপনারা সে প্রকল্পগুলির বিষয়ে অবগত রয়েছেন। একটা হচ্ছে স্বনির্ভর গ্রাম, স্বনির্ভর পরিবার। গ্রামীণ এলাকায় সবাই যেন স্বনির্ভর হতে পারে সে দিশা তে আমরা এই বড় প্রকল্প হাতে নিয়েছি। আরেকটি প্রকল্প হচ্ছে, ১ লক্ষের কাছাকাছি ছোট দোকানিদের ভর্তুকি সহ ঋণ দিয়ে স্বনির্ভর করার যোজনা।' তিনি আশা ব্যক্ত করে বলেন 'এর ফলে গ্রামীণ অর্থনীতি ও মধ্যবিত্ত পরিবারের কাছে নতুন দুয়ার খুলবে।'
মুখ্যমন্ত্রী জানান, এই লকডাউনের মধ্যে বাড়ি বাড়ি গিয়ে ১২ হাজার কর্মী, ৭১১ টি সেন্টারে এন্টিজেন টেষ্টের কাজ করছে। তিনি বলেন, "কিছু কিছু জায়গায় গুজব ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছে, বিশেষ করে কয়েকটি জনজাতি অঞ্চলে যে, স্বাস্থ্যকর্মীরা করোনা নিয়ে আসছে। এগুলি বিভ্রান্তিকর আপনারা সবাই মিলে তার মোকাবিলা করুন।"
আসন্ন বিভিন্ন ধর্মীয় অনুষ্ঠান প্রসঙ্গে শ্রী দেব বলেন, "আমরা লকডাউন এর কারণে ১ লা বৈশাখ, খার্চি পূজা, রথযাত্রা, ঈদ উদযাপন করতে পারিনি। কিন্তু আমরা সিম্বলিক ভাবে সেগুলি সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে পালন করেছি। আগামীদিনে আমাদের মুসলিম ভাইদের বড় উৎসব ঈদ উৎসব রয়েছে। আমি অনুরোধ করব মসজিদে যান, কিন্তু ৫ জনের বেশি যাবেন না ও সরকারের নীতি নির্দেশিকা মেনে উৎসব পালন করবেন। বিগত দিনের মত এবারও আপনারা সরকারের নিয়ম নীতি মেনে সুন্দরভাবে পালন করবেন। পাশাপাশি মনসা পূজো, রাখিবন্ধন উৎসব। এই উৎসবগুলিকে আমরা বিগত দিনে যেভাবে নিজেকে বাঁচানোর জন্য ত্যাগ করেছি সেভাবেই আজকের দিনে আমি আশাকরি সমস্ত ত্রিপুরাবাসী সেই দিশাতেই কাজ করবে।"
করোনার কারণে মৃত ২১ জনের পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানিয়েছেন তিনি। যারা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে এই মহামারীর বিরুদ্ধে লড়াই করছেন তাদের প্রতি সম্মান জানিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব বলেন, সিপাহী জলা, যেখানে পজিটিভ কেইস বেশি এসেছিলো, সেখানে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে জেলা শাসক এবং এস পি সহ প্রত্যেকে কোভিড সেন্টারে গিয়েছেন। অনেক বাধা প্রদান করা সত্ত্বেও তারা তাদের কাজ করে গেছেন। "তারা তাদের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে মানুষের সেবা করে গেছেন এবং আক্রান্ত হয়েছেন। আমি তাদের পরিবারকেও অনেক অনেক ধন্যবাদ জানাবো এবং ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করব তারা সকলে যেন অতি দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠেন।" একই সঙ্গে এই মহামারীতে যারাই সামনের সামনের সারিতে কাজ করছেন তাদের ফের প্রশংসা করেন মুখ্যমন্ত্রী।
এদিন ভিডিও বার্তায় মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব সকল রাজনৈতিক দলের কাছেও আবেদন করেন, "সরকারের যে সার্ভে হচ্ছে তাতে সহযোগীতা করুন আর আমাদের মধ্যে কোন বিভ্রান্তি যেন না হয়।এই সময়ে আমরা একে অপরকে সহযোগিতা করব।"