সমাজ পরিবর্তনে বিচার ব্যবস্থা এবং সংবাদমাধ্যম মানুষের সাথে যোগসূত্র বজায় রাখার ক্ষেত্রে অনন্য ভূমিকা পালন করে : মুখ্যমন্ত্রী
নিজস্ব প্রতিবেদন
আগরতলা, নভেম্বর ৫, : গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় বিচার ব্যবস্থা এবং সংবাদমাধ্যমের ভূমিকা অপরিসীম। ক্ষমতার যাতে অপব্যবহার না হয় সেদিকে এই দুই স্তম্ভ নির্ণায়ক ভূমিকা নিয়ে থাকে। ৪ নভেম্বর সকালে আগরতলা প্রেস ক্লাবে ৩ দিনব্যাপী মিডিয়া ওয়ার্কশপের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করে মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর (ডা.) মানিক সাহা একথা বলেন। তিনি বলেন, গণতন্ত্রের চতুর্থ স্তম্ভ হচ্ছে সংবাদমাধ্যম। ভারতীয় সংবিধানের ১৯ এর ১নং ধারায় সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতার কথা সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ করা রয়েছে। সংবাদপত্রের স্বাধীনতা না থাকলে সমগ্র সমাজব্যবস্থার উপর এর প্রভাব পড়ে থাকে। সমাজ পরিবর্তনে বিচারব্যবস্থা এবং সংবাদমাধ্যম মানুষের সাথে যোগসূত্র বজায় রাখার ক্ষেত্রে অনন্য ভূমিকা পালন করে।
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় সংবাদমাধ্যম ওয়াচ ডগের ভূমিকা পালন করে থাকে। সমাজে দুর্নীতি, অন্যায় অবিচার কিছু হয়ে থাকলে সংবাদমাধ্যম তা বলিষ্ঠভাবে তুলে ধরে। সরকার তার উপর থাকা ন্যস্ত দায়িত্ব থেকে বিচ্যুত হলে সংবাদমাধ্যম তা জনসমক্ষে প্রকাশ করে। তিনি বলেন, বর্তমান যুগে সংবাদিকদের দায়িত্ব অনেক বেড়ে গেছে। সমাজ সাংবাদিকদের কাছ থেকে অনেক কিছু আশা করে। যদি দেখা যায় কোন সরকার তার দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করছে না সেক্ষেত্রে সংবাদমাধ্যমের ভূমিকা হচ্ছে চোখে আঙ্গুল দিয়ে তা দেখিয়ে দেওয়া। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, রাজ্যের বর্তমান সরকার সংবাদপত্রের স্বাধীনতার উপর দারুণভাবে বিশ্বাসী। বর্তমান সরকার স্বচ্ছতার সঙ্গে সমস্ত কাজ করে যাচ্ছে। সংবাদপত্রে প্রকাশিত সংবাদের ভিত্তিতে নিয়মিতভাবে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। তিনি বলেন, সংবাদমাধ্যমে যেসব বিষয় প্রকাশিত হচ্ছে সেবিষয়ে প্রতি পক্ষকালে উচ্চপর্যায়ের বৈঠকে বসে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য জেলাশাসক থেকে শুরু করে সংশ্লিষ্ট আধিকারিকদের নির্দেশ দেওয়া হচ্ছে। স্বচ্ছতার সঙ্গে এবিষয়টি নিয়মিত পর্যালোচনা করায় অনেক সমস্যা সহজেই সমাধান হয়ে যাচ্ছে। রাজ্যের জনগণের স্বার্থে রাজ্য সরকার এই টাস্ক মনিটরিং সিস্টেম বজায় রাখবে বলে মুখ্যমন্ত্রী উল্লেখ করেছেন। অতীতে রাজ্যের দুইজন সাংবাদিক খুন হওয়া প্রসঙ্গের উল্লেখ করে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, এই হত্যাকান্ডের সঙ্গে যুক্ত দোষীদের বিচার ব্যবস্থা যাতে ত্বরান্বিত হয় সেদিকে রাজ্য সরকারের নজর সব সময় রয়েছে।
আইনীব্যবস্থার মধ্যে থেকে এবিষয়ে যে ভূমিকা নেওয়া যায় তা করা হচ্ছে। আগামীদিনে এবিষয়ের দোষীরা ছাড় পাবেনা বলে মুখ্যমন্ত্রী আশা প্রকাশ করেন।
অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখতে গিয়ে তথ্য ও সংস্কৃতি দপ্তরের ভারপ্রাপ্ত সচিব অপূর্ব রায় বলেন, গণতন্ত্রে সংবাদমাধ্যমের ভূমিকা অপরিসীম। সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা বজায় রাখার ক্ষেত্রে সরকার প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। এরাজ্যে সাংবাদিকদের কল্যাণে বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে বলে উল্লেখ করে তিনি বলেন, সাংবাদিকদের পেশাগত মানোন্নয়নের দিকেও রাজ্য সরকার ইতিবাচক ভূমিকা নিয়ে থাকে। এধরণের ওয়ার্কশপের আয়োজন করা এই ভূমিকার অঙ্গ।
আগরতলা প্রেস ক্লাবের সভাপতি প্রণব সরকার বলেন, প্রত্যেক বছর নিয়মিতভাবে মিডিয়া ওয়ার্কশপের আয়োজন করা হচ্ছে। এটা খুব ভাল দিক। তিনি বলেন, সোশাল মিডিয়ার নাম করে কেউ কেউ বিশিষ্ট ব্যক্তিদের কালিমালিপ্ত করার চেষ্টা করে থাকেন। এবিষয়টির দিকে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সতর্ক নজর থাকা প্রয়োজন৷
স্বাগত ভাষণে তথ্য ও সংস্কৃতি দপ্তরের অধিকর্তা বিম্বিসার ভট্টাচার্য জানান, ৩ দিনব্যাপী এই ওয়ার্কশপে ৭ জন রিসোর্সপার্সন বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা করবেন। বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের সাথে যুক্ত ৩৫০ এরও বেশি সাংবাদিক ও আলোকচিত্রী এই ওয়ার্কশপে অংশ নিয়েছেন। ধন্যবাদসূচক বক্তব্য রাখেন আগরতলা প্রেস ক্লাবের সম্পাদক রমাকান্ত দে। অনুষ্ঠানে এই ওয়ার্কশপে ক্লাস নিতে আসা দেশের বিশিষ্ট সাংবাদিক অনামিত্র চ্যটার্জি ও সৌমিত্র বিজয় ভট্টাচার্যকে সম্বর্ধনা দেওয়া হয়। উল্লেখ্য, আগরতলা প্রেস ক্লাবের সহযোগিতায় তথ্য ও সংস্কৃতি দপ্তর এই ওয়ার্কশপের আয়োজন করেছে।
আরও পড়ুন...