রাজ্যের মানুষ যাতে আধুনিক, দ্রুত ও সুলভ চিকিৎসা পেতে পারেন সেই লক্ষ্য পূরণে রাজ্য সরকার আধুনিক পরিকাঠামো গড়ে তুলছে : মুখ্যমন্ত্রী
নিজস্ব প্রতিবেদন
আগরতলা, নভেম্বর ৪, : ত্রিপুরার স্বাস্থ্য ব্যবস্থা এখন নতুন উচ্চতায় পৌঁছে গেছে। নাগরিকগণ যেন সর্বোচ্চ মানের চিকিৎসা পরিষেবা পান সেই লক্ষ্যেই বর্তমান রাজ্য সরকার তথা স্বাস্থ্য দপ্তর নিরলস প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। রাজ্যের মানুষ যাতে আধুনিক, দ্রুত ও সুলভ চিকিৎসা পরিষেবা পেতে পারেন সেই লক্ষ্য পূরণে রাজ্য সরকার আধুনিক পরিকাঠামো গড়ে তুলছে। ৩ নভেম্বর জিবিপি হাসপাতালের নতুন ক্রিটিক্যাল কেয়ার ব্লক (সিসিবি), সংক্রামক রোগ কেন্দ্র (সিডিসি) এবং ২০ শয্যা বিশিষ্ট স্পেশাল ওয়ার্ডের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করে কার্ল ল্যান্ডস্টেনার অডিটোরিয়ামে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর (ডা.) মানিক সাহা একথা বলেন। অনুষ্ঠানমঞ্চে এছাড়াও মুখ্যমন্ত্রী এজিএমসি এবং জিবিপি হাসপাতালের সাথে দিল্লীর এইমস এবং লক্ষ্মৌ-এর এজিপিজিআই হসপিটালের মধ্যে ডিজিট্যাল টেলিমেডিসিন পরিষেবার সূচনা করেন। পাশাপাশি জিবিপি হাসপাতালে রোগী ব্যবস্থাপনা উন্নয়নের লক্ষ্যে ইন্টারডিপার্টমেন্টাল রেফারেল সিস্টেমেরও সূচনা করেন।
অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, জিবিপি হাসপাতাল বিগত দিনেও ছিল, এখনো রয়েছে। রাজ্যের মানুষ জিবিপি হাসপাতালের বর্তমান চিকিৎসা পরিষেবার সঙ্গে অতীতের পার্থক্য প্রত্যক্ষ করতে পারছেন। প্রতিনিয়ত স্বাস্থ্য ব্যবস্থার উন্নয়নে রাজ্য সরকার পরিকাঠামো সহ আধুনিক চিকিৎসা পদ্ধতি এবং পরিষেবা সংযোজন করে চলছে। রোগী পরিষেবার কথা মাথায় রেখে দেশের স্বনামধন্য হাসপাতাল এবং চিকিৎসকদের কাছ থেকে সাহায্য নেওয়া হচ্ছে। রাজ্যের মহকুমা হাসপাতালগুলির উন্নয়নেও বিভিন্ন প্রকল্প চালু করা হচ্ছে। নাগরিক স্বাস্থ্য এবং স্বাচ্ছন্দ্যের বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়ে জিবিপি হাসপাতাল তথা রাজ্যের হাসপাতালগুলির সৌন্দর্য্যায়নের উপরও গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। বর্তমানে রাজ্যের মানুষের মধ্যে চিকিৎসার জন্য বাইরে যাওয়ার প্রবণতাও অনেক হ্রাস পেয়েছে। আজকের এই টেলিমেডিসিন পরিষেবা রাজ্যে স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে ইতিবাচক পরিবর্তন আনবে বলে মুখ্যমন্ত্রী আশা ব্যক্ত করেন। তিনি বলেন, টেলিমেডিসিন পরিষেবার ক্ষেত্রে রোগীদের যদি সরাসরি ভার্চুয়ালি ডাক্তারের সঙ্গে কথা বলানো যায় তবে চিকিৎসা প্রদান আরও ফলপ্রসূ হবে। তিনি ডাক্তারি পেশাকে প্রতিনিয়ত পঠনপাঠনের মাধ্যমে আপডেট রাখার উপর গুরুত্বারোপ করেন। এতে চিকিৎসা পরিষেবা যেমন ভালো দেওয়া সম্ভব পাশাপাশি রোগীর পরিজনদের থেকে আস্থা অর্জন করা সম্ভবপর হয়। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, রাজ্যের সবকটা মেডিক্যাল কলেজ মিলিয়ে মোট ৪০০ এমবিবিএস-এর সিট রয়েছে। যা রাজ্যের জন্য গর্বের বিষয়। কিন্তু এবছর এজিএমসি ছাড়া বাকী কলেজগুলির এমবিবিএসের ফলাফল আশানুরূপ হয়নি। এর কারণ খোঁজা হবে, সরকার এই বিষয়ে সচেতন রয়েছে।
অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর (ডা.) মানিক সাহা রাজ্যে স্বাস্থ্য ব্যবস্থার বিভিন্ন পরিকল্পনা এবং সাফল্যের কথা তুলে ধরেন। তিনি বলেন, রাজ্যের চিকিৎসক এবং কর্মীদের দক্ষতা ও মেধা কোন অংশই কম নয়। জটিল রোগের চিকিৎসা ও গুরুত্বপূর্ণ অস্ত্রোপচার এখন রাজ্যের চিকিৎসকরাই করছেন। গ্যাস্ট্রো, হাঁটু প্রতিস্থাপন, হিপ রিপ্লেসমেন্ট, কার্ডিও, ব্রঙ্কোস্কোপি সার্জারি, রেনাল সার্জারির ন্যায় বিভিন্ন জটিল অস্ত্রোপচার এবং চিকিৎসা রাজ্যেই সম্পন্ন হচ্ছে। জিবিপি-তে সুপার স্পেশালিটি ব্লক চালু করা হয়েছে। এজিএমসি-জিবিপি হাসপাতালে মা ও শিশু স্বাস্থ্য বিভাগ স্থাপনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। টার্শিয়ারি আই কেয়ার হাসপাতাল স্থাপনের পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। ২০২৫-২৬ সালের বাজেটে ভারতমাতা ক্যান্টিন ও রোগী পরিবার পরিজনদের জন্য নাইট শেল্টার স্থাপনের সংস্থান রাখা হয়েছে। আগরতলা গর্ভমেন্ট মেডিক্যাল কলেজ ও জিবিপি হাসপাতালের রোগীর সহকারীদের ১০ টাকার বিনিময়ে দুপুরের খাবার প্রদান চালু করা হয়েছে। এছাড়াও মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর (ডা.) মানিক সাহা মুখ্যমন্ত্রী জন আরোগ্য যোজনা, বিশ্রামগঞ্জে নেশামুক্তি কেন্দ্র গড়ার পরিকল্পনা ইত্যাদি কথা তুলে ধরেন।
অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ দপ্তরের সচিব কিরণ গিত্যে। তিনি বলেন, রাজ্যের চিকিৎসা পরিষেবায় আজ একটি মাইলফলক। স্বাস্থ্য ব্যবস্থা এবং জিবিপি হাসপাতালের উন্নয়নে স্বাস্থ্য দপ্তর আন্তরিক প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। অনুষ্ঠানে এছাড়াও বক্তব্য রাখেন ত্রিপুরা ওএনজিসির অ্যাসেট ম্যানেজার সঞ্জীব কুমার জানজুয়া, পিপিজিএস-এর সিইও এবং মেম্বার সেক্রেটারি প্রসাদা রাও। ধন্যবাদসূচক বক্তব্য রাখেন প্রফেসর (ডা.) সঞ্জিব দেববর্মা। উপস্থিত ছিলেন মেডিক্যাল এডুকেশন দপ্তরের অধিকর্তা প্রফেসর (ডা.) এইচ পি শর্মা, জিবিপি হাসপাতালের মেডিক্যাল সুপার (ডা.) শঙ্কর চক্রবর্তী, এজিএমসি'র অধক্ষ্য প্রফেসর (ডা.) অনুপ কুমার সাহা প্রমুখ।
আরও পড়ুন...