Hare to Whatsapp
ত্রিপুরায় প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইন সেন্টারগুলি নানা অব্যবস্হায় ধুঁকছে
By Our Correspondent
আগরতলা, জুলাই ২১, : গত কিছুদিন ধরে চর্চা হচ্ছে গোষ্ঠী সংক্রমন নিয়ে। বলা হচ্ছে দেশের বিভিন্ন স্থানে গোষ্ঠী সংক্রমন শুরু হয়েছে। চিকিৎসা বিজ্ঞানের পরিভাষায় গোষ্ঠী সংক্রমন বিপজ্জনক। কেননা সংক্রমনের কোন লক্ষণ নেই এমন লোকজন গোষ্ঠী সংক্রমনের ফলে করোনায় আক্রান্ত হচ্ছেন। এতো ভয়াবহ ব্যাপার।
এই কদিন আগে কেরলের মুখ্যমন্ত্রী সাংবাদিকদের জানিয়েছেন রাজ্যের উপকূলীয় এলাকায় কিছু কিছু অংশে করোনার গোষ্ঠী সংক্রমন শুরু হয়েছে। তাৎক্ষণিকভাবে তা মোকাবেলায় ওইসব অঞ্চলে লকডাউন দেওয়া হয়,পাঠানো হয় চিকিৎসক দলকে। অর্থাৎ ওখানে প্রশাসনিক তরফে তাৎক্ষণিক ব্যবস্হা নেয়া হচ্ছে।
গত ক'দিন ধরে পশ্চিমবঙ্গে গোষ্ঠী সংক্রমন নিয়ে শুরু হয়েছে তরজা। একপক্ষ বলছেন বাংলায় গোষ্ঠী সংক্রমন শুরু হয়ে গেছে কদিন আগে।আরেকপক্ষ এটা অস্বীকার করছে। হাঁ, নার যাতাকলে মূল সমস্যা করোনার চিকিৎসা ব্যাহত হচ্ছে।
আমাদের রাজ্যে গত ৩/৪ দিন ধরে করোনার পারদ উদ্বেগজনক ভাবে বেড়েই চলেছে। ইতিমধ্যেই ৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। স্বাস্থ্য দপ্তরের সাথে যুক্ত এক সূত্র বলছে এন্টিজেন টেষ্ট শুরু হওয়াতেই করোনা সনাক্ত হচ্ছে বেশী করে।এর ফলে পজিটিভদের স্বেচ্ছাবন্দী, প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইন পাঠানো হচ্ছে।
কিন্তু প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেনটাইন সেন্টার ইতিমধ্যেই আতংক, উদ্বেগ সষ্টি করছে। কেননা, অভিযোগ অনুযায়ী প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইন সেন্টারগুলি নানা অব্যবস্হায় ধুঁকছে। সকালের খাবার দেওয়া হচ্ছে দশটায়, দুপুরে্র খাবার বিকাল ৩ টায়, বিকালের চা দেওয়া হচ্ছে রাত ৮ টা নাগাদ। রাতের খাবারের উল্লেখ উহ্য রাখা হল। আরো সমস্যা রয়েছে। খুবই দুঃখজনক যে প্রতিটি কোয়ারেনটাইন সেন্টার - এর একেবারে প্রবেশ পথে বড় টেবিল রয়েছে। এটি আবার ত্রিপাল দিয়ে ঘেরা। টেবিলের উপরেই খাবারের ডিসগুলি সরবরাহকারীরা রেখে দিচ্ছে। জলের বোতলও এভাবেই রাখা হচ্ছে।
অভিযোগ, যে পরিমাণ ভাত, সব্জী , দেওয়া হয়ে থাকে তা অনেকটাই না খেয়ে থাকার সামিল অবস্থা। ইদানিং কালে অবশ্য বাড়ীঘরের লোকজন নিজেদের সুরক্ষিত করে খাবার, জল রেখে আসছেন। কিন্তু এই সব কোয়ারেনটাইন সেন্টারে যাদের রাখা হয়েছে সবাই তো আর আগরতলার নয়। তাই তাদের বাধ্য হয়ে সরকারের সরবরাহ করা নিম্নমানের খাবার গলাধঃকরণ করতে হচ্ছে। এমনটাই অভিযোগ।
সবচেয়ে গুরুতর বিষয় যাদের খাবার সরবরাহের বরাত দেয়া হয়েছে তা নিয়ম মেনে দেয়া হয়নি। টেন্ডার কোটেশন দূর অস্ত। আসলে তদারকি যেমন নেই, নেই নজরদারি। শৌচাগারগুলির অবস্থা পূতিগন্ধময়। অপরিস্কার, অপরিচ্ছন্ন অবস্থা। টয়লেটের অবস্থা আরো দূরহ। বহুমূত্র রোগীদের তো নাকি হাতেই নিয়ে ছুটতে হয়। বেশ কয়েকজন তো প্রতিদিন ফ্লোরে গড়াগড়ি দিয়ে থাকে।
করোনা যে এমন অবস্থা সৃষ্টি করছে তা অভাবনীয়। এইতো দিন তিনেক আগের কথা। জোলাইবাড়ী্র কোয়ারেনটাইন সেন্টারে রাখা রোগীরা বাধ্য হয়ে বিক্ষোভ করেছেন। এখন আবার তাদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের হয়েছে।বলি যাবেন কোথায়?
এখন প্রশ্ন গোষ্ঠী সংক্রমন নিয়ে। চিকিৎসক ও চিকিৎসা বিজ্ঞানের সাথে যুক্তদের বক্তব্য তখন কোন রোগী তার অজান্তেই সংক্রমিত ব্যক্তিদের মাধ্যমে বা সংস্পর্শে বা হাঁচি, কাশির মাধ্যমে সংক্রামিত হচ্ছেন। এই ব্যক্তি জানতে বা বুঝতে ও পারছেন না যে তিনি সংক্রমিত। এটাই সবচেয়ে বিপজ্জনক। মশা, মাছি কিংবা অন্যান্য পতঙ্গদের মাধ্যমে ও ভাইরাস ছড়িয়ে পড়তে পারে বা ছড়িয়ে পড়ছে।
আবার ভাইরোলজিষ্টরা বলছেন চূড়ান্ত সতর্কতা অবশ্যই অবলম্বন করতেই হবে।এমনকি পরিবারের মধ্যে ও সতর্কতা অবলম্বন জরুরী। জরুরী দূরত্ব বজায় রাখা, মাক্স সবসময়ের জন্য পড়ে রাখা, ঘন ঘন হাত সাবানের মাধ্যমে ধোঁয়া, সেনিটাইজ করা। দিনে অন্তত ১৫/২০ বার সেনিটাইজ করতেই হবে। তাঁরা এটা করছেন না তাঁরাই নিজের অজান্তে গোষ্ঠী সংক্রমনের শিকার হচ্ছেন এবং অন্যদের ঝুঁকিতে ফেলে দিচ্ছেন।
আরো বড় কথা কমিউনিটি ট্রান্সমিশন কিন্তু প্রমান করা কষ্ট সাধ্য। আইসিএম আর এর বিজ্ঞানী কিংবা অন্য ভাইরোলজিষ্টরা আজ বলেছেন ভারতে গোষ্ঠী সংক্রমন নেই। বিভিন্ন সরকারি পদে যারা আছেন তাঁরাই এই দাবী করছেন। কিন্তু যারা খ্যাতনামা বিশ্লেষক বা ভাইরোলজিষ্ট বলছেন দেশের কোন কোন অঞ্চলে গোষ্ঠী সংক্রমন শুরু হয়ে গেছে। এখন সচেতনতা,প্রতিরোধাত্মক ব্যবস্হা গ্রহনের মাধ্যমে হয়তোবা করোনার কবল থেকে রক্ষা পাওয়ার একমাত্র উপায়। এন্টিজেন টেষ্ট যত বেগবান হবে এ রাজ্যে ততই করোনা ভাইরাস সংক্রমিত রোগী সনাক্ত হতে পারে বলে আশঙ্কা।