Hare to Whatsapp
যদি কোন মিডিয়া হাউস স্বভাব সিদ্ধ গতিপথ পাল্টে অন্য পথে যেতে শুরু করে, তবে তার বিনাশ অবশ্যম্ভাবী: মুখ্যমন্ত্রী
By Our Correspondent
আগরতলা, জুলাই ১৯, : আগরতলা, ১৯ জুলাই : একবার যদি কোন পত্রিকা বিশ্বাস হারিয়ে ফেলে, তাহলে তার মানুষের কাছ থেকে প্রয়োজনীয়তাও নষ্ট হয়ে যায় । মানুষের কাছে সংবাদমাধ্যম বিশ্বাস হারায় ফেক নিউজ, ব্যক্তিস্বার্থ চিন্তা করে খবর করতে গিয়ে । রবিবার আগরতলা প্রেসক্লাবে ত্রিপুরা ইলেকট্রনিক মিডিয়া সোসাইটির কনফারেন্সে বক্তব্য রাখতে গিয়ে একথা বলেন মুখ্যমন্ত্রী শ্রী বিপ্লব কুমার দেব । তিনি বলেন, তাঁর নিজের ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা থেকেই অনেক চ্যানেলকে জনপ্রিয়তা হারাতে দেখেছেন।
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, "রাজনীতি আর মিডিয়ার মধ্যে একটা মিল আছে, রাজনীতিতে কেউ এসে যদি ভাবে, আমি দেশের প্রধান ব্যক্তি হয়ে যাব। তা সম্ভব নয়। মিডিয়ার কেউ যদি ভাবে আমি একদিনে সব পাল্টে দেবো তাও সম্ভব নয়।" মিডিয়ার কর্মীদের মধ্যে আরও বেশি ধৈর্য তৈরি করার ওপর গুরুত্বারোপ করেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, "যদি কোন মিডিয়া হাউস স্বভাব সিদ্ধ গতিপথ পাল্টে অন্য পথে যেতে শুরু করে, তবে তার বিনাশ অবশ্যম্ভাবী । " এ প্রসঙ্গে তিনি রাজ্যের একটি দলীয় মুখপত্রের প্রসঙ্গ টেনে বলেন, এই পত্রিকা চট করেই তার টেস্ট বদল করেনি । স্বভাবসিদ্ধভাবেই চলছে। আর এই কারনেই তার প্রতি পাঠকের অনুভূতিও একই রকম আছে। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, সবাই জানে এই পত্রিকার স্বাদ টক । হঠাৎ করে কেউ চিনি ঠেলে দিলে তার পাঠকদের কাছে বিশ্বাসযোগ্যতা হারিয়ে যাবে। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, কারা হলুদ সাংবাদিকতা করছেন তা সবাই জানে। তিনি বলেন, "রাজনীতিবিদ দিয়ে চ্যানেল হয়না । আবার চ্যানেল দিয়েও রাজনীতিবিদ তৈরি করা যায় না ।" রাজনীতিবিদকে পাবলিক তৈরি করে , আবার মিডিয়া হাউজকেও জনগণই তৈরি করে বলে মুখ্যমন্ত্রী উল্লেখ করেন। এ প্রসঙ্গে তিনি ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় বাস্তববাদী চিন্তাধারা নিয়ে খবর পরিবেশন করার আহ্বান রাখেন।
রাজ্যে সদর্থক চিন্তা ভাবনা নিয়ে মিডিয়া হাউজের পাশাপাশি প্রধান বিরোধী দলকেও কাজ করার আহ্বান রাখেন মুখ্যমন্ত্রী । তিনি এ প্রসঙ্গে বিরোধীদলের নেতিবাচক চিন্তাধারার কটাক্ষ করে বলেন, যখন শ্রী দেব বিরোধী দলের প্রদেশ সভাপতি ছিলেন, তখনও তিনি জাতীয় সড়কের সংস্কার সহ নানান বিষয়ে সদর্থক ভূমিকা রেখেছিলেন । অথচ বর্তমান সময়ে বিরোধী দলের কাছ থেকে এমন উদাহরণ পাওয়া যাচ্ছে না বলে আক্ষেপ করেন মুখ্যমন্ত্রী।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত সাংবাদিক এবং বিভিন্ন সংবাদ প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের উদ্দেশ্যে মুখ্যমন্ত্রী কথা বলতে গিয়ে সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপের মধ্যে নতুন অ্যাক্রিডিটেশন কার্ড, প্রেস জ্যাকেট এবং বিজ্ঞাপনের রেট বৃদ্ধির কথা উল্লেখ করেন।
এদিনের অনুষ্ঠানে রাজ্যে কোভিড ১৯ মোকাবেলায় সরকারের পদক্ষেপ সম্পর্কে বলতে গিয়ে তিনি জানান, সরকার ট্রিপল 'টি' তে কাজ করছে। এই তিনটির 'টি' এর মধ্যে ট্রেসিং, টেস্টিং এবং ট্রিটমেন্ট রয়েছে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
মুখ্যমন্ত্রী বর্তমান সরকারের বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কর্মসূচির কথা উল্লেখ করতে গিয়ে, ত্রিপুরা সুন্দরী এক্সপ্রেস নাম রাখা, ঘরে ঘরে উজ্জ্বলা যোজনা পৌঁছে দেয়া, জাতীয় সড়কের সংস্কার, ই ট্রি, এসব বিষয় উল্লেখ করেন । এদিনও তিনি সবাইকে আশ্বস্ত করে বলেন, সোনামুড়াতে জাহাজ আসছে এবং উত্তর ভারতের সঙ্গে তার সংযোগও স্থাপিত হবে।
রাজ্যের বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কর্মসূচির মধ্যে স্মৃতিবন প্রকল্পের কথা বলতে গিয়ে তিনি আবেগতাড়িত হয়ে বলেন, "ত্রিপুরার ৩৭ লক্ষ মানুষ আমাকে যা দিয়েছে ফেরত দিতে হবে। মৃত্যুর পরেও আমি স্মৃতিবনে থাকবো গাছ হয়ে, সবাইকে অক্সিজেন দেব।"
আবারো তিনি ত্রিপুরার মিডিয়াকে সদর্থক চিন্তাভাবনা নিয়ে কাজ করার আহ্বান রেখে বলেন, খবরে টক-ঝাল মেশাতে গিয়ে যেন টি আর পি নষ্ট না হয়ে যায়, সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে।
এদিনের অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন ত্রিপুরা ইলেকট্রনিক মিডিয়া সোসাইটির চেয়ারম্যান প্রণব সরকার, সম্পাদক সৌরজিৎ পাল, সভাপতি দেবাশীষ ভট্টাচার্য সহ অন্যান্যরা।