Hare to Whatsapp
মোটর বাইক, বিট পেট্রোলিং ব্যবস্থাপনা কাজে আসছে না, শহরে চুরি ছিনতাই বেড়েই চলেছে
By Our Correspondent
আগরতলা, জানুয়ারি ২৬, : গত তিন মাসে রাজধানী আগরতলা শহরের উপর কম করেও তিন ডজনেরও বেশি চুরির ঘটনা ঘটেছে। সাধারণ মানুষের বাড়ীঘর থেকে দোকানপাঠ, এটিএম কাউন্টার এমনকি বাদ যায়নি সরকারী অফিসও। অধিকাংশ ক্ষেত্রে এসব চুরির ঘটনাগুলি সংঘটিত হয়েছে রাতের দিকে। রড চুরি, গরু চুরির মতো একাধিক ক্ষেত্রে চোরের দল গাড়ী ব্যবহার করেছে। আশ্চর্যের বিষয় হচ্ছে এক্ষেত্রে একাধিক জায়গাতে সি সি ক্যামেরার সামনে থেকেও চুরির ঘটনা সংঘটিত হয়েছে।
এক্ষেত্রে সবচেয়ে বিস্ময়ের ঘটনা হলো রাজধানী আগরতলা শহরের প্রতিটি মোরে লাখ লাখ টাকা খরচ করে স্মার্ট সিটি প্রকল্পে এবং এর আগে পুলিশের তরফে সি সি ক্যামেরা লাগানো হয়। কিন্তু দেখা গেছে রাতের আঁধারে সংঘটিত এসব চুরির ঘটনা কিনারা করতে এসব সি সি ক্যামেরা কোন কাজে আসছে না। পুলিশকে একাধিক ক্ষেত্রে সি সি ক্যামেরার ফুটেজও প্রদান করা হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী নির্বাচনী এলাকা বনমালীপুরেও ২৫শে জানুয়ারি আবারও চুরির ঘটনা ঘটে। অথচ সম্প্রতি আরক্ষা প্রশাসন চুরি ছিনতাই নারি সংক্রান্ত অপরাধের ঘটনা নিয়ন্ত্রণে বিট পুলিশিং ব্যবস্থা চালু করে এবং শহরের থানাগুলিতে প্রায় অর্ধশতাধিক মোটর বাইক দেওয়া হয়েছে দিনরাত পেট্রোলিং এর জন্যে। কিন্তু কোন ফল হয়নি। চুরি ছিনতাই নারি সংক্রান্ত অপরাধের ঘটনা বেড়েই চলেছে।
ক’মাস আগে লিচুবাগানস্থিত ত্রিপুরাইনফো অফিস চত্বর থেকে প্রায় আড়াই লক্ষাধিক টাকার রড চুরি হয়ে যায়। এক্ষেত্রেও পুলিশকে ভোর রাতে সংঘটিত এই দুঃসাহসিক চুরির ঘটনার সিসি ক্যামেরার পুরো ফুটেজ দেওয়া হয়। চুরিতে ব্যবহৃত গাড়ী ও চোরের সি সি ক্যামেরা ফুটেজ, চুরির সময়কাল সব কিছু হাতের কাছে থাকা সত্বেও পুলিশ আজ পর্যন্ত কিছুই করতে পারেনি। একটি গাড়ীতে করে আড়াই লক্ষাধিক টাকার রড ভোর রাতে লিচুবাগানের মতো একটি সেনা বাহিনীর সদর অফিস এলাকা থেকে চুরি হয়ে যাওয়ার পরও আজ পর্যন্ত পুলিশ না চোরের দল না চুরিতে ব্যবহৃত গাড়ী কোনটিরই হদিশ করতে পারেনি। লোক দেখানো ক’জন নির্মাণ শ্রমিক যারা ত্রিপুরাইনফো-র লিচুবাগান অফিসেই কাজ করছিল তাদেরকে জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ তাদের দায়িত্ব খালাস করেছে। অথচ সরকারী নথী অনুযায়ী লিচুবাগানস্থিত ওয়েলকাম গেইট, সচিবালয়ে ঢোকার মুখে গোল চক্কর, রাজভবন, সার্কিট হাউজ, উত্তর গেইট সহ শহরের প্রধান প্রধান চৌমুহনী গুলিতেই সিসি ক্যামেরা লাগানো রয়েছে। কিন্তু লিচুবাগানে ত্রিপুরাইনফো-র অফিস চত্বর থেকে রড চুরির ঘটনার তদন্তে নেমে এন সি সি থানার পুলিশ নিজেও চাক্ষুস করেছে যে এ অঞ্চলের রাস্তায় বসানো কোন সি সি ক্যামেরাই কাজ করছে না। তাই লিচুবাগান থেকে রড ভর্তি গাড়ী নিয়ে চোরের দল ভোর রাতে কোন পথে কোথায় গেছে তা পুলিশ মালুম করতে পারেনি। তাই তদন্তও আর এগুয়নি।
কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে ভোর রাতের দিকে শহরের যে পথেই চোরের দল গাড়ী ভর্তি রড নিয়ে পালানোর চেষ্টা করুন সব জায়গাতেই পুলিশের নাকার সমনা দিয়েই তো গাড়ী নিয়ে পালিয়েছে। তখন নাকাতে অবস্থানরত পুলিশ কি করছিল? এমনিতে তো সন্ধ্যা রাতে পুলিশ মাল বোঝাই গাড়ী আটকে তল্লাশির নামে ক্ষুদ্র দোকানীদের প্রতিনিয়ত নাজেহাল করে থাকে। তাহলে ভোর রাতে শহরের উপর থেকে চুরি করে গাড়ী নিয়ে এভাবে কিভাবে চোরের দল পালাতে পারে স্বভাবতই প্রশ্ন উঠে।
এক্ষেত্রে ত্রিপুরাইনফো অফিস থেকে শুধু নয়, এভাবে শহরের শহরতলীর একাধিক জায়গায় একাধিক চুরির ঘটনায় চোরের দল গাড়ী ব্যবহার করেছে। গরু চুরির ক্ষেত্রেতো চোরের দল আজ বহু বছর ধরেই গাড়ী ব্যবহার করছে। সর্বশেষ আমতলী থানাধীন উত্তম ভক্ত চৌমুহনী ও দারোগাবাড়ী এলাকা থেকে গত ১৭ জানুয়ারী চারটি গরু চুরি হয়। এক্ষেত্রেও চোরের দল গাড়ীর ব্যবহার করে। সি সি ক্যামেরার সামনে থেকেই এই গরু চুরির ঘটনাটি ঘটে। কিন্তু তার পরও পুলিশ চোর ধরতে ব্যর্থ। রাজধানী শহর, শহরতলীতে সি সি ক্যামেরার সামনে থেকে চুরির ঘটনার বিহিত করতে যেখানে পুলিশ ব্যর্থ সেক্ষেত্রে অন্যত্র, এবং অন্য অপরাধ দমনে পুলিশ কতটা পারদর্শিতা দেখাতে পারছে তা সহজেই অনুমেয়। কেননা, শুধু চুরি, ছিনতাই নয়, গত ক’মাসে রাজধানী আগরতলা শহরের উপর একাধিক ধর্ষণ ও খুনের ঘটনারও এখনো কোন ক্লু পায়নি পুলিশ। রাজ্য বিধানসভার সর্বশেষ অধিবেশনে গত ২০ জানুয়ারী রাজ্য স্বরাষ্ট্র দপ্তর রাজ্য জুড়ে চুরি ছিনতাই এর ঘটনার ব্যাপারে যে তথ্য পেশ করেছেন তা থেকে জানা গেছে, রাজ্যে গত ১ এপ্রিল ২০১৮ থেকে ১৫ নভেম্বর ২০১৯ পর্যন্ত ছিনতাই এর ঘটনা ঘটেছে ৪১টি। চুরির ঘটনা ঘটেছে ৭১৩টি। ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে ১৬টি। উক্ত সময়ে রাজ্যে মহিলা সংক্রান্ত অপরাধের ঘটনা ঘটেছে ১৬৫২টি।
দুই একটি ক্ষেত্রে পুলিশ দোষীদের গ্রেপ্তার করলেও তদন্তের নামে এমন ভরং চলে যে সহজেই আসামীরা ছাড়া পেয়ে যায়। কাগজে পত্রে রাজধানীর পুলিশ অপরাধ দমনে নানা ব্রাঞ্চের প্রচলন শুরু করলেও একমাত্র গাঁজা ব্রাঞ্চ ছাড়া অন্যান্য ব্রাঞ্চের কাজকর্ম কাগজে পত্রেই চলছে এটা বলাই বাহুল্য।