স্বচ্ছ ও সুন্দর পরিবেশ গড়ে তুলতে প্রতিটি নাগরিককে দায়বদ্ধ হতে হবে : মুখ্যমন্ত্রী
নিজস্ব প্রতিবেদন
আগরতলা, সেপ্টেম্বর ১৮, : স্বচ্ছতা অভিযান শুধুমাত্র একটা কর্মসূচি নয়, এটা গণআন্দোলন। এই আন্দোলনের ফলেই বর্তমানে স্বচ্ছতার প্রতি মানুষের সচেতনতা বেড়েছে। নিজের বাড়ির চারপাশ, রাস্তাঘাট সহ আশেপাশের বিভিন্ন স্থান পরিস্কার পরিচ্ছন্ন থাকলে তা মানুষের মনেও ইতিবাচক প্রভাব ফেলে। মানুষের মধ্যে স্বচ্ছ মানসিকতা গড়ে উঠে। সবাই মিলে স্বচ্ছতার এই আন্দোলনকে সাফল্যমন্ডিত করতে হবে। ১৭ সেপ্টেম্বর রবীন্দ্র শতবার্ষিকী ভবনে রাজ্যভিত্তিক স্বচ্ছতা ই সেবা ২০২৫ কর্মসূচির সূচনা করে মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর (ডা.) মানিক সাহা একথা বলেন।
অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, শুধুমাত্র রাজ্য সরকারের একার পক্ষে সমাজ ও পরিবেশ স্বচ্ছ রাখা সম্ভব নয়। এজন্য প্রতিটি নাগরিককে সচেতন হতে হবে এবং রাজ্য সরকারকে সহযোগিতা করতে হবে। স্বচ্ছ ও সুন্দর পরিবেশ গড়ে তুলতে প্রতিটি নাগরিককে দায়বদ্ধ হতে হবে। প্রতিটি মানুষের সহযোগিতার মধ্য দিয়েই রাজ্য সরকার আগামী প্রজন্মকে স্বচ্ছ, সুন্দর, নির্মল গ্রাম, শহর, রাজ্য এবং দেশ উপহার দিতে চায়। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির দূরদর্শী উদ্যোগের ফলেই ২০১৪ সাল থেকে সারা দেশে স্বচ্ছতা হি সেবা কর্মসূচি চালু করা হয়। প্রধানমন্ত্রী মনে করেন শিশু মহিলা সহ প্রত্যেক নাগরিকের চারপাশ স্বচ্ছ, পরিচ্ছন্ন ও স্বাস্থ্যকর হওয়া প্রয়োজন। প্রধানমন্ত্রীর দেখানো পথে রাজ্য সরকারও চেষ্টা করছে সারা রাজ্যকে স্বচ্ছ সুন্দর করে গড়ে তুলতে। এজন্য সারা রাজ্যে বিভিন্ন কর্মসূচি রূপায়ণ করা হচ্ছে। তথ্য দিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, রাজ্যের ৩৩৪টি আরবান ওয়ার্ডে বাড়ি বাড়ি বর্জ্য সংগ্রহ ব্যবস্থা চালু করা হয়েছে। সারা রাজ্যে ৮৫টি বর্জ্য ব্যবস্থাপনা পৃথকীকরণ এবং ২০টি নগর এলাকার ৬৩৫টি কমিউনিটি টয়লেট, ১২৭৭টি পাবলিক টয়লেট নির্মাণ করা হয়েছে। ২২ হাজারের বেশি পরিবারকে স্বাস্থ্যসম্মত শৌচাগার নির্মাণ করে দেওয়া হয়েছে। শহরের পাশাপাশি গ্রামীণ স্বচ্ছ ভারত মিশন প্রকল্পে ৭৬৫টি গ্রাম ওডিএফ প্লাস স্টেটাস অর্জন করেছে। স্বচ্ছ ভারত মিশনে ৫ লক্ষ ১ হাজার ২৩২টি বাড়িতে শৌচাগার ও ৫৯০টি কমিউনিটি শৌচাগার নির্মাণ করা হয়েছে। পরিবেশ স্বচ্ছ ও স্বাস্থ্যসম্মত রাখতে এবং প্লাস্টিক দূষণের হাত থেকে মুক্ত রাখতে ৫টি প্লাস্টিক ওয়েস্ট ম্যানেজমেন্ট ইউনিট নির্মাণ করা হয়েছে। আরও ১৩টি ইউনিট নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। সাফাই কর্মীদের কাজের প্রশংসা করে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, সাফাই কর্মীরা হলেন সমাজ ও পরিবেশ স্বচ্ছ রাখার কারিগর। তাদের প্রতি যথাযথ সম্মান প্রদর্শন করতে হবে। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, পরিবেশ ও সমাজ স্বচ্ছ ও সুন্দর রাখতে বিদ্যালয়, মহাবিদ্যালয় স্তরে আরও বেশি করে সচেতনতা কর্মসূচির আয়োজন করতে হবে। তিনি এই অভিযানের সার্বিক সাফল্য কামনা করেন।
অনুষ্ঠানের বিশেষ অতিথি উচ্চশিক্ষা মন্ত্রী কিশোর বর্মণ বলেন, স্বচ্ছতা হল উন্নয়নের অন্যতম ভিত্তি। প্রতিটি গ্রামীণ এলাকায় স্বচ্ছতার উপর বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। পরিচ্ছন্ন, রোগমুক্ত, নেশামুক্ত সমাজ গঠনে প্রতিটি নাগরিককে এগিয়ে আসার জন্য উচ্চশিক্ষামন্ত্রী আহ্বান জানান।
অনুষ্ঠানে পরিবেশ স্বচ্ছ রাখার ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য কাজের জন্য আগরতলা পুরনিগম সহ বিভিন্ন মহকুমায় কর্মরত সাফাই কর্মীদের সংবর্ধনা দেওয়া হয়। মুখ্যমন্ত্রী তাদের সংবর্ধনা দেন। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন আগরতলা পুর নিগমের মেয়র তথা বিধায়ক দীপক মজুমদার, নগরোন্নয়ন দপ্তরের সচিব অভিষেক সিং, গ্রামোন্নয়ন দপ্তরের অতিরিক্ত সচিব কুন্তল দাস, পশ্চিম ত্রিপুরা জেলার জেলাশাসক ডা. বিশাল কুমার, নগরোন্নয়ন দপ্তরের অধিকর্তা মেঘা জৈন, স্বচ্ছভারত মিশনের অ্যাম্বাসেডর পদ্মশ্রী দীপা কর্মকার প্রমুখ। স্বাগত বক্তব্য রাখেন পূর্ত দপ্তরের সচিব ব্রিজেশ পান্ডে। অনুষ্ঠানে উপস্থিত সবাই স্বচ্ছতা বিষয়ে শপথবাক্য পাঠ করেন।
আরও পড়ুন...