বর্তমান রাজ্য সরকার জনজাতিদের সার্বিক উন্নয়নে সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়েছে : মুখ্যমন্ত্রী
নিজস্ব প্রতিবেদন
আগরতলা, সেপ্টেম্বর ১৭, : সাধারণ জনগণের সামগ্রিক অংশগ্রহণের মাধ্যমেই বিভিন্ন সরকারি কর্মসূচির শতভাগ সাফল্য অর্জন করা সম্ভব। তাই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী যেকোন সরকারি কর্মসূচি রূপায়ণে জনগণের অংশীদারিত্বের উপর সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, দেশের প্রান্তিক মানুষের সামগ্রিক উন্নতি না হলে রাজ্য ও দেশকে উন্নতির পথে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া সম্ভব নয়। ১৬ সেপ্টেম্বর প্রজ্ঞাভবনে আদি কর্মযোগী অভিযানের অন্তর্গত রাজ্যস্তরীয় ওরিয়েন্টেশন প্রোগ্রাম এবং স্টেট প্রসেস ল্যাবস-এর উদ্বোধন করে একথা বলেন মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর ডা. মানিক সাহা।
অনুষ্ঠানে আলোচনায় মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ১০ জুলাই ২০২৫-এ বিকশিত ভারত অভিযানে আদি কর্মযোগী অভিযান শুরু করা হয়েছে। জনজাতি অধ্যুষিত প্রান্তিক এলাকায় বসবাসকারি মানুষের কাছে সরকারের বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্য নিয়েই এই অভিযান শুরু হয়। দেশে জনজাতি অধ্যুষিত ৫৫০টির বেশি জেলা এবং ৩ হাজার ব্লকের ১ লক্ষ গ্রামের জনজাতিদের ক্ষমতায়ন, দক্ষতা বৃদ্ধি এবং সামাজিক অংশগ্রহণের মাধ্যমে ২০ লক্ষ জনজাতি চেঞ্জ মেকার তৈরি করাই আদি কর্মযোগী অভিযানের মূল লক্ষ্য। এই অভিযানকে বাস্তবায়িত করতে আদি কর্মযোগী, আদি সহযোগী এবং আদি সাথী নামে ৩টি বিভাগে প্রশিক্ষিত ক্যাডার তৈরি করা হবে। মুখ্যমন্ত্রী জানান, আদি কর্মযোগী বিভাগে সরকারি কর্মচারিগণ, আদি সহযোগী বিভাগে শিক্ষক, ডাক্তার, সমাজসেবী এবং আদি সাথী বিভাগে স্বসহায়ক দলের সদস্য, প্রবীন নাগরিক এবং সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্বগণ থাকবেন। জনজাতি অধ্যুষিত প্রতি গ্রামে আদি সেবাকেন্দ্র স্থাপন করা হবে। আদি সেবাকেন্দ্রটি নাগরিকদের জন্য সিঙ্গেল উইন্ডো পরিষেবা কেন্দ্র হিসেবে কাজ করবে। তাছাড়া আদি কর্মযোগী অভিযানে সংশ্লিষ্ট সকলের দক্ষতা বৃদ্ধিতে এবং অভিযানের কার্যকরী বাস্তবায়নকে নিশ্চিত করতে রাজ্য, জেলা এবং ব্লক পর্যায়ে প্রশিক্ষণের জন্য রাজ্যস্তরে প্রসেস ল্যাব গঠন করে মাস্টার ট্রেনার, ফ্রন্ট লাইনকর্মী এবং স্বেচ্ছাসেবকদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। এই অভিযানে রাজ্যস্তরে ৮ জন স্টেট মাস্টার ট্রেনার, ৪০ জন জেলা মাস্টার ট্রেনার এবং ২৬০ জন ব্লক মাস্টার ট্রেনারকে যুক্ত করার লক্ষ্য নেওয়া হয়েছে। ১৬ থেকে ১৯ সেপ্টেম্বর, স্টেট প্রসেস ল্যাবে জেলা মাস্টার ট্রেনারদের ৪ দিনের আবাসিক প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। ২৩ থেকে ২৫ সেপ্টেম্বর জেলা প্রসেস ল্যাব আয়োজন করা হবে। আজ থেকে ২ অক্টোবর পর্যন্ত ধরতি আবা জনজাতীয় গ্রাম উৎকর্ষ অভিযানে অন্তর্ভূক্ত ভিলেজগুলিতে সেবা পর্ব অনুষ্ঠিত হবে। এর মাধ্যমে বিভিন্ন ধরণের শিবিরের আয়োজন করা হবে। মুখ্যমন্ত্রী আরও বলেন, ধরতি আবা জনভাগীদারি অভিযানে রাজ্যে ৪০৩৬টি শিবির আয়োজিত হয়েছে। শিবিরে অংশগ্রহণকারী ১২ লক্ষ ৭০ হাজার-এর বেশি সুবিধাভোগী উপকৃত হয়েছেন। এরফলে ত্রিপুরা জাতীয়স্তরে অন্যতম টপ পারফর্মার রাজ্য হিসাবে পরিগনিত হয়েছে। ধরতি আবা জনজাতীয় গ্রাম উৎকর্ষ অভিযানে জনজাতি কল্যাণ দপ্তরের অধীনে ৫ বছরের জন্য এই কর্মসূচিতে ৮১ কোটি ৬৯ লক্ষ টাকার ব্যয় করা হবে। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, বর্তমান রাজ্য সরকার জনজাতিদের সার্বিক উন্নয়নে সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়েছে। জনজাতি সমাজপতিদের মাসিক ভাতা ২ হাজার টাকা থেকে বাড়িয়ে ৫ হাজার টাকা করা হয়েছে। জনজাতিদের মধ্যে শিক্ষার উন্নয়নকে প্রাধান্য দিয়ে সমস্ত যোগ্য জনজাতি ছাত্রছাত্রীদের স্টাইপেন্ড, স্কলারশিপ, বিনামূল্যে পাঠ্যবই, কোচিং, মেধা পুরস্কার, উচ্চ শিক্ষার জন্য এককালীন আর্থিক সহায়তা করা হচ্ছে। জনজাতি এলাকায় ইতিমধ্যেই ৬টি একলব্য রেসিডেন্সিয়াল স্কুল চালু করা হয়েছে এবং আরও ৬টি অল্প কিছুদিনের মধ্যে চালু করা হবে। মুখ্যমন্ত্রী রাবার মিশনে রাবার চাষ এলাকা বৃদ্ধি করে ৬৯ হাজার হেক্টর করার পরিকল্পনা রয়েছে। ইতিমধ্যে ৫৮,৪৯৮ জন সুবিধাভোগীর ৪৭,৯৬২ হেক্টর এলাকায় রাবার বাগান করা হয়েছে। রাজ্যে ৫০টি স্মোক হাউস এবং ২৫টি সুসংহত রাবার প্রক্রিয়াকরণ কেন্দ্র (স্মোক হাউস সহ) স্থাপন করা হচ্ছে। এর ফলে রাবার শিটের গুণমান বৃদ্ধি পাবে। মুখ্যমন্ত্রী জনজাতি বিকাশ যোজনায় ৭,৬৭০ জন সুবিধাভোগী উপকৃত হয়েছেন। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, আগামীদিনে ৫০০ জন বেকার জনজাতি যুবকদের ইলেক্ট্রিক অটোরিক্সা দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে। এবারের বাজেটে রাজ্যের সবকটি জনজাতি গোষ্ঠীর সংস্কৃতিকে সংরক্ষণ করার জন্য জনজাতিদের বিভিন্ন বাদ্যযন্ত্রাদির কর্মশালা আয়োজন করার আর্থিক সংস্থান রাখা হয়েছে। মেধাবী জনজাতি শিক্ষার্থীদের মানসম্মত প্রশিক্ষণ দেওয়ার জন্য সুপার-১০০ প্রোগ্রাম চালু করা হবে। অনুষ্ঠানের শুরুতে মুখ্যমন্ত্রী সহ অন্যান্য অতিথিগণ ভগবান বিরসা মুন্ডার প্রতিকৃতিতে মাল্যদান করে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। অনুষ্ঠানে আদি কর্মযোগী অভিযান ও রাজ্যে জনজাতি কল্যাণ দপ্তরের বিভিন্ন কার্যকলাপ নিয়ে দু'টি তথ্যচিত্র প্রদর্শিত হয়।
অনুষ্ঠানে আলোচনায় জনজাতি কল্যাণমন্ত্রী বিকাশ দেববর্মা বলেন, দক্ষ, দায়িত্বশীল, স্বচ্ছ এবং প্রশিক্ষিত প্রশাসনিক আধিকারিকগণই জনগণের কাছে দ্রুত পরিষেবা পৌঁছে দিতে সক্ষম। সরকারি আধিকারিকদের আরও বেশি মানবিক দৃষ্টিভঙ্গি ও জবাবদিহিতার সঙ্গে তৃণমূলস্তরে সরকারের বিভিন্ন কাজকর্ম বাস্তবায়নে সচেষ্ট হতে হবে। অনুষ্ঠানে এছাড়াও বক্তব্য রাখেন জনজাতি কল্যাণ দপ্তরের সচিব ড. কে শশী কুমার, কেন্দ্রীয় জনজাতি কল্যাণ মন্ত্রকের যুগ্ম সচিব টি. রৌমান পাইতে এবং দপ্তরের অধিকর্তা শুভাশিষ দাস। অনুষ্ঠানে জেলাশাসক, মহকুমা শাসক সহ বিভিন্ন স্তরের আধিকারিকগণ উপস্থিত ছিলেন।
আরও পড়ুন...