Hare to Whatsapp
নয়া সরকারের সময়ে 30% কমেছে বহি:রাজ্যে রোগী রেফারের সংখ্যা: মুখ্যমন্ত্রী।
By Our Correspondent
আগরতলা, জুলাই ১, : আগরতলা,০১ জুলাই: উন্নত চিকিৎসার জন্য ত্রিপুরার রোগীদের বহি:রাজ্যে যাওয়ার প্রবণতা ৩০ শতাংশ কমেছে । বুধবার নজরুল কলাক্ষেত্রে ডক্টরস্ ডে উপলক্ষ্যে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখতে গিয়ে একথা বলেন মুখ্যমন্ত্রী শ্রী বিপ্লব কুমার দেব। বর্তমান সরকার প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর স্বাস্থ্য ক্ষেত্রের উপর বিশেষ গুরুত্ব দেয়ায় এই সাফল্য এসেছে বলে মন্তব্য করেন তিনি। বিগত সরকারের সময়ের সমালোচনা করতে গিয়ে বলেন, "আগে যেটা বলা হত রাজ্যের চিকিৎসকদের যোগ্যতা ছিল না, কিন্তু এখন বলতে হয় বিগত সরকারের উপযুক্ত সিদ্ধান্ত নেয়ার যোগ্যতা ছিল না।" রাজ্য সরকারের সময়োপযোগী সিদ্ধান্তের ফলেই ২৩ জন ডাক্তারকে এসোসিয়েট প্রফেসর থেকে প্রফেসর পদে উন্নীত করা সম্ভব হয়েছে। যা বিগত ১৫ বছরেও লক্ষ্য করা যায়নি ।এতে ত্রিপুরার মানুষের ৪৮ কোটি টাকা সাশ্রয় হয়েছে বলেও উল্লেখ করেন মুখ্যমন্ত্রী।
এদিনের অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী বলেন "সর্বশ্রেষ্ঠ সমাজব্যবস্থা তখনই হতে পারে, যখন সমাজের সকল ক্ষেত্রের ব্যক্তি চিন্তা নিয়ে কাজ করি, আমাদের সর্বশ্রেষ্ঠ প্রদর্শন করি, আর সরকারের কাজ সমাজের প্রত্যেক ব্যক্তিকে যাতে স্বাধীনভাবে সর্বশ্রেষ্ঠ কাজ করতে পারে তার প্রফেশনে, তাকে সহযোগিতা করা। তার পরিবেশ তৈরি করা।" বর্তমান সরকার এই দিশাতে কাজ করছে বলেই স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে দারুন পরিবর্তন এসেছে । রাজ্যে শিশু মৃত্যুর হার ২৯ শতাংশ কমেছে বলেও উল্লেখ করেন মুখ্যমন্ত্রী। একই সাথে মেটার্নাল ডেথও কম হয়েছে বলে জানান তিনি । এক্ষেত্রে তিনি তথ্য দিয়ে বলেন ২০১৯-২০ সালে রাজ্যে ম্যাটারনাল ডেথ হয়েছিল ৪৬ জনের আর ২০২০-২১ সালে কমে ১১ জনের মৃত্যু হয়।
একই রকম ভাবে যক্ষা রোগ নির্মূলের ক্ষেত্রে ত্রিপুরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করায় কেন্দ্রীয় সরকার থেকে পুরস্কৃত হয়েছে বলেও অভিমত ব্যক্ত করেন মুখ্যমন্ত্রী । তিনি বলেন ২০১৯ সালের ত্রিপুরার যক্ষ্মা রোগী শনাক্ত হয় ৩০২৭ জন। এদের মধ্যে মৃত্যু হয় ১৩৪ জনের। আবার ২০২০ সালে ১১১৩ জনের যক্ষা রোগ শনাক্ত হয় । এই বছর মৃত্যুর সংখ্যা কমে হয় ৩৩।
একই রকমভাবে রাজ্যে ম্যালেরিয়া রোগ নির্মূলের ক্ষেত্রে ও দারুণ সাফল্য এসেছে বলে মন্তব্য করেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি পরিসংখ্যান দিয়ে বলেন ২০১৮ সালে ম্যালেরিয়া রোগীর সংখ্যা যেখানে ছিল ১৩০৭৯ । তাদের মধ্যে মৃত্যু হয় ১৩ জনের। ২০১৯ সালে ম্যালেরিয়া রোগীর সংখ্যা দেখা দেয় ১২০৩৭ জনের । মৃত্যু হয় একজনের। ২০২০ সালের ৫৩৫ জনের মধ্যে ম্যালেরিয়া লক্ষ্য করা যায়। এর মধ্যে মৃত্যু হয় একজনের।
মুখ্যমন্ত্রী এদিন তার বক্তব্য প্রধানমন্ত্রী জন আরোগ্য যোজনায় ৩ লক্ষ ৫১ হাজার ২২ টি কার্ড ইস্যু হয়েছে বলে জানান। মুখ্যমন্ত্রী বলেন বর্তমান সরকারের সময়ে জিবি হাসপাতালে ট্রমা সেন্টারে ১৩০০ রোগীর চিকিৎসা হয়েছে। এদের মধ্যে ৩০০ জনের নিউরোসার্জারি হয়েছে। এতে রাজ্যের সাশ্রয় হয়েছে ১৭ কোটি টাকা।একইসঙ্গে করোনা প্রতিরোধে রাজ্যবাসীর মধ্যে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর জন্য সরকারের পদক্ষেপ, কোভিড ১৯ মোকাবেলায় যারা কাজ করছেন তাদের ইনটেনসিভ দেওয়ার কথাও উল্লেখ করেন।
মুখ্যমন্ত্রী তাঁর বক্তব্যে রাজ্যের বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজের বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরেন । তিনি বলেন আগামী দুমাসের মধ্যেই গোমতী নদীতে ছোট জাহাজে চলে আসবে। দুই বছরের মধ্যে আগরতলা বনমালী পুরের মানুষ জল কষ্ট থেকে বেরিয়ে আসতে পেরেছে। তিন বছরের মধ্যে রাজ্যকে মডেল রাজ্যে পরিণত করার প্রতিশ্রুতিতে তিনি এ অটল বলে জানান । আগামী তিন মাস পরেই সাংবাদিক সম্মেলন করবেন এবং তুলে ধরবেন ত্রিপুরার কি কি উন্নয়নমূলক কাজ হয়েছে। এদিনের অনুষ্ঠানে চিকিৎসকদের দ্বারা পরিবেষ্টিত একটি নাটকের ভূয়সী প্রশংসা করেন মুখ্যমন্ত্রী । তিনি বলেন, "এই নাটকের মধ্য দিয়ে ত্রিপুরার বর্তমান অবস্থার চিত্র তুলে ধরা হয়েছে।"
অনুষ্ঠানের শুরুতে ডাক্তার বিধানচন্দ্র রায়ের প্রতিকৃতিতে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ করেন মুখ্যমন্ত্রী ।এদিনের অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন সাংসদ প্রতিমা ভৌমিক, ডাক্তার মানিক সাহা ডাক্তার অশোক সিনহা সহ অন্যান্যরা।