Hare to Whatsapp
আর্থিক প্যাকেজ না দিয়ে লকডাউনের মধ্যে সংবাদপত্র অফিসে হানাদারীর প্রতিবাদ ত্রিপুরা নিউজ পেপারস সোসাইটি-র
By Our Correspondent
আগরতলা, জুন ৩০, : লকডাউন চলাকালেই ত্রিপুরার সংবাদপত্রের উপর হামলে পড়েছে ত্রিপুরা সরকার। এই অভিযোগ, ত্রিপুরার নিউজ পেপার সোসাইটি-র।
সোসাইটি-র অভিযোগ অনুযায়ী, ভারতের প্রেস এন্ড বুক এক্টকে অগ্রাহ্য করে রাজ্য থেকে প্রকাশিত সংবাদ পত্রগুলোর দপ্তরে এবং ছাপাখানায় হানা দিচ্ছে তথ্য দপ্তরের আধিকারিকরা। কার নির্দেশে এবং কোন আইনে এই হানাদারী তার জবাব মিলছে না। মৌখিক নির্দেশে সরকারি দপ্তরে পত্রিকা ক্রয় বন্ধ করে দিয়েছে তথ্য দপ্তর।
সোসাইটি-র মতে, রাজ্য সরকার এখনো জনপরিবহনই চালু করতে পারেনি। ফলে তথ্য দপ্তরের দেওয়া গাড়িতে করে রাজ্যের সামান্য কিছু অংশে সংবাদপত্র সরবরাহ করছে প্রকাশকরা। গন পরিবহন চালু না থাকায় রাজ্যের অধিকাংশ এলাকায় সংবাদপত্র সরবরাহ করা যাচ্ছে না। গ্রাহকদের করোনা ভাইরাস সংক্রমন ভীতিও মুদ্রিত সংবাদপত্রের সার্কুলেশন কমেছে। এটা শুধু ত্রিপুরা নয়। সারা ভারতের চিত্র। কেন্দ্রীয় সরকারের সংস্থা আর এন আই যারা একমাত্র সংবাদপত্রের সার্কুলেশন পরীক্ষা করার অধিকারী। তারাই কোভিড-১৯ জনিত কারণে প্রচার সংখ্যা যাচাই স্থগিত রেখেছে এবং অনলাইন সাবমিশনও পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত স্থগিত রেখেছে। আন্তর্জাতিক স্বীকৃত সংস্থা অডিট ব্যুরো সার্কুলেশনও আগামী ডিসেম্বর ২০২০ পর্যন্ত সার্কুলেশন অডিট বন্ধ করে রেখেছে।
কোভিড-১৯ এর যাতাকলে সারা বিশ্বের সাথে ভারতও বহু বিখ্যাত সংবাদপত্র ঝাপ বন্ধ করে দিয়েছে। বহু সংবাদপত্র অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে সাংবাদিক ছাটাই বা অর্ধেক বেতন নীতি চালু করে রেখেছে। দীর্ঘ লকডাউন জনিত কারণে সমস্ত বানিজ্যিক সংস্থা তাদের বিজ্ঞাপন প্রচার বন্ধ করে রেখেছে। সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে এ দেশে সংবাদপত্র ও সংবাদমাধ্যম শিল্প।
ইতিমধ্যেই গনতন্ত্রের চতুর্থ স্তম্ভটি যাতে বাচতে পারে সেজন্য সেজন্য গুজরাট, কর্ণাটক, পাঞ্জাব, অন্ধ্রপ্রদেশ, তেলেঙ্গানা সরকার বিভিন্ন আর্থিক প্যাকেজ ঘোষনা করে সংবাদ মাধ্যমের পাশে দাড়িয়েছে। সবদিক দিয়ে পিছিয়ে থাকা ত্রিপুরা এমন একটি রাজ্য আলপিনও বাইরে থেকে আমদানি করতে হয়। সংবাদপত্র প্রকাশনায় যে সামগ্রীর প্রয়োজন তার একটিও রাজ্যে তৈরী হয়না। ফলে এ রাজ্যের সংবাদপত্রের প্রকাশনা খরচ ভারতের যে কোন রাজ্যের চেয়ে বেশী। এই অতি দুরবস্থার মধ্যেও কিছু সাহসী লোক এই রাজ্যের সংবাদপত্র এবং সংবাদমাধ্যম পরিচালনা করছে। ভবিষ্যত অনিশ্চিত জেনেও হাজার ছয়েক লোক এই শিল্পের সাথে সরাসরি যুক্ত। হাজার চারেক পত্রিকা বিক্রেতা রয়েছেন। যাদের উপর তাদের পরিবার নির্ভরশীল।
এই অবস্থায় এরাজ্যে সবচেয়ে পিছিয়ে থাকা সংবাদপত্র শিল্পকে আর্থিক প্যাকেজ দিয়ে চতুর্থ স্তম্ভের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার আর্জি জানিয়ে ত্রিপুরা নিউজ পেপারস সোসাইটির একটি প্রতিনিধি দল গত ২৭ মে ২০২০ তারিখে মুখ্যমন্ত্রী শ্রী বিপ্লব কুমার দেবের সাথে সাক্ষাত করে এ রাজ্যে সংবাদ মাধ্যমের আর্থিক দুরবস্থার কথা তুলে ধরে প্রতিটি সংবাদপত্র ও সংবাদমাধ্যমকে বিশেষ বিজ্ঞাপন দিয়ে পাশে দাড়াবার আর্জি জানিয়েছিলেন।
সংবাদপত্র তথা সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতায় বিশ্বাসী বলে দাবিদার মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছিলেন তিনি বিষয়টি সহানুভূতির সাথে বিবেচনা করবেন। কিন্তু একমাস পেরিয়ে গেলেও মুখমন্ত্রীর কাছ থেকে সাড়া না পেয়ে গত রবিবার ত্রিপুরা নিউজ পেপারস সোসাইটি এক সাধারণ সভায় উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়, এবং আশা প্রকাশ করা হয় মুখ্যমন্ত্রীর সহানুভূতি মিলবে বলে।
একই সভাতে সদস্যরা অভিযোগ করেন যে চরম সংকট কালে রাজ্য সরকার সংবাদপত্রের পাশে দাড়াবার পরিবর্তে দেশের প্রচলিত আইন কানুন উপেক্ষা করে সাপ্তাহিক ও দৈনিক পত্রিকার অফিস সমূহে হানাদারি চালাচ্ছে সার্কুলেশন এবং কর্মী সংখ্যা যাচাই এর জন্য। তথ্য ও সংস্কৃতি দপ্তর বেআইনী ভাবে এ হানাদারি চালানোর ঘটনার তীব্র ধিক্কার জানিয়েছেন উপস্থিত বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের সম্পাদকরা। কোভিড-১৯ জনিত কারণে ভারত সরকার, আর এন আই, ডি এ ভি পি, অডিট ব্যুরো অফ সার্কুলেশন সহ সমস্ত সংস্থা যখন ছাড় দিয়ে চলেছে তখন দেখা গেলো দেশের মধ্যে একমাত্র ত্রিপুরা সরকারই সংবাদ পত্র ও সংবাদমাধ্যমের উপর হামলে পড়েছে।
ত্রিপুরা নিউজ পেপারস সোসাইটি ত্রিপুরা সরকারের কাছে দাবি জানিয়েছে অভিলম্বে এই রসিকতা বন্ধ করে বাস্তবের মাটিতে নেমে আসার জন্য। অবিলম্বে ত্রিপুরার সংবাদ পত্র ও সংবাদ মাধ্যমকে বাচিয়ে রাখার জন্য আর্থিক প্যাকেজ ঘোষনা করার দাবি জানিয়েছে ত্রিপুরা নিউজ পেপারস সোসাইটি।
সভায় সাংবাদিক ও সংবাদপত্র সম্পাদকের কণ্ঠ স্তব্দ করে দেওয়ার জন্য সোস্যাল মিডিয়ায় কুৎসা ও অপপ্রচার চালানোর ঘটনায় সরকারি নীরবতায় গভীর বিস্ময় প্রকাশ করেন সোসাইটির যুগ্ম আহবায়ক শানিত দেবরায় ও অরুন নাথ। উক্ত সভায় সভাপতিত্ব সোসাইটির চেয়ারম্যান তথা রাজ্যের বরিষ্ঠ সাংবাদিক শ্রী সুবল কুমার দে ।