Hare to Whatsapp
আইনশৃঙ্খলা খুব ভালো প্রমান করতে গিয়ে শিক্ষামন্ত্রীর প্রদত্ত তথ্যাবলীকে জুমলাবাজী বললো বামফ্রন্ট কমিটি
By Our Correspondent
আগরতলা, জুন ২৮, : গত ২৬ জুন রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী রতনলাল নাথ এক সাংবাদিক সম্মেলনে রাজ্যের আইন শৃঙ্খলা তলানিতে বলে বামফ্রন্টের অভিযোগ খন্ডন করতে গিয়ে তথ্যের যে ধুম্রজাল সৃষ্টি করেছেন তা এক শুভঙ্করের ফাঁকি এবং তা তাদের সহজাত জুমলাবাজি বলে আজ ফের অভিযোগ করেছে বামফ্রন্ট ।
বামফ্রন্ট আজ এক বিবৃতিতে বলেছে, রতনবাবু হয়তো ভুলে গেছেন যে তাঁর সরকারের ৫০০ দিনের আইনশৃংখলার একটি তথ্য তাঁর সরকার গত ২ সেপ্টেম্বর রাজ্য বিধানসভার অধিবেশনে পেশ করেছিলেন। এ তথ্য ছিল ১লা এপ্রিল ২০১৮ থেকে ২০১৯ এর ৩১ জুলাই পর্যন্ত। সেই তথ্যে বলা হয়েছিল- রাজ্যে অস্বাভাবিক মৃত্যু-১৮৭২, নারী সংক্রান্ত অপরাধ ৮০৯, তাঁর মধ্যে শিশু ও নাবালিকা ধর্ষন- ১৪০ এবং নথিভুক্ত ধর্ষনের ঘটনা-২৪০, পণ সংক্রান্ত মৃত্যু-৩১ এবং বধু হত্যা-২৩, খুনের ঘটনা ২২২ অর্থাৎ, সরকারের প্রথম ৫০০ দিনে গড়ে অস্বাভাবিক মৃত্যু-৪ প্রতি মাসে খুন-১০, প্রতি মাসে ধর্ষন-১৫।
তাছাড়া, বামপন্থী দল গুলোর অফিস ভাঙচুর, লুঠপাট, জবর দখলের নথিভুক্ত ঘটনা ছিল ৯৫টি। বামফ্রন্টের বিবৃতিতে প্রশ্ন তোলা হয়েছে, শিক্ষামন্ত্রীর নির্বাচন কেন্দ্রে রাঙ্গাছড়ায় একজন যুবতীকে ধর্ষনের পর পুড়িয়ে হত্যা করা হয়েছে, আজ পর্যন্ত একজন অপরাধী ধরা পড়েছে? শিক্ষামন্ত্রীর উস্কানিতে ছেলে ধরা গুজব রটিয়ে বহিরাজ্যের ফেরিওয়ালা খুন হল। কোন আসামী গ্রেপ্তার হয়েছে? বিজেপি-আই পি এফ টি’র জোট রাজত্বে এই ধারা অব্যাহত রয়েছে শুধু তা নয়, লকডাউনের সময় তা আরও বেড়েছে বলে অভিযোগ করেছে বামফ্রন্ট।
শাসক দলের ইমেজ রক্ষায় আইনশৃঙ্খলা নিয়ে বিজেপি-র বিধায়ককে বিবৃতি দিতে হয়েছে এবং খোদ উপ মুখ্যমন্ত্রীর ছেলেকে গত ২৭ শে জুন জম্পুইজলায় বিরক্তি প্রকাশ করতে হয়েছে। শিক্ষামন্ত্রীকে সাংবাদিকরা যখন জিজ্ঞেস করেন অধিকাংশ ঘটনার মামলা থানাদাররা গ্রহন করেন না, তখন রতনবাবুকে চুপ থাকতে হয়েছে। প্রশ্নোত্তরে পরোক্ষে তাঁকে স্বীকার করতে হয়েছে মামলা নিলেও বিচারে শতকরা ৮৮ জন খালাস পেয়ে যাচ্ছে। এখন অপরাধীদের শতকরা ১০০ ভাগকেই খালাসের সুযোগ করে দিতে বামফ্রন্ট সরকারের সময় শীর্ষ আদালতের নির্দেশিকা অনুযায়ী তৈরি করা প্রসিকিউশন ডাইরেক্টোরেটই বর্তমান সরকার তুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে । এর পরও রতনবাবুর কিছু বলার আছে কি? এই প্রশ্ন তোলে বামফ্রন্টের বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, যে রাজ্যে সংবাদপত্র, বৈদুতিন প্রচার মাধ্যম আক্রান্ত হয়, আক্রান্ত হয় সাংবাদিকগন ও পত্রিকার হকাররা, যে রাজ্যে সংবাদপত্রে সরকারের দুর্নীতি বা কেলেংকারির খবর প্রকাশ করায় শাসকের রক্তচক্ষুর সম্মুখীন হতে হয় সংবাদপত্রকে, তার প্রতিবাদ না করে শিক্ষামন্ত্রী অপরাধীদের উৎসাহিত করলেন না কি? শুধু কি তাই-যে রাজ্যে মানুষের করোনা মহামারীর কঠিন সময়ে বামপন্থীরা দুঃস্থদের ত্রান দিতে গিয়ে আক্রান্ত হন, ত্রান নিতে গিয়ে মানুষ আক্রমনের শিকার হন, সেই রাজ্যে আইন শৃঙ্খলা প্রশস্তি করা অপরাধের শামিল নয় কি? যে রাজ্যে রক্তের অভাবে তিয়াশা-রা মারা যায়, সেই রাজ্যে রক্তদানে যে সমাজদ্রোহীরা বাধা দিল, রক্তদাতা ছাত্র-যুবদের মেরে হাসপাতালে পাঠালো, শিক্ষামন্ত্রী কোন আদর্শের ওপর দাঁড়িয়ে সমাজদ্রোহীদের কাজের নিন্দা না করে অপরাধীদের আড়াল করলেন? এমন কি, লাধাখ সীমান্তে শহীদ ভারতীয় জওয়ানদের প্রতি শ্রদ্ধাজ্ঞাপন অনুষ্ঠানেও যখন শাসক দলের সমাজবিরোধীদের হাতে আক্রান্ত হতে হয়, শহীদদের এভাবে অপমানিত করা হয়, তখন সে রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা তলানিতে নয়তো কি? রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির যে দিন দিন ব্যাপক অবনতি ঘটছে তা প্রমান করতে গিয়ে বামফ্রন্ট কমিটি তথ্য দিতে গিয়ে বলেছেন যে শুধু এই জুন মাসেই খুন হয়েছে-৬, অস্বাভাবিক মৃত্যু-১৬, ধর্ষন-৬, শ্লিলতাহানী-৪, চুরি ৪, অন্যান্য অপরাধ-১৩, সি পি আই এম অফিসে হামলা-৩, পার্টি কর্মীর বাড়ি ঘরে আক্রমন, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ-২২, পার্টি কর্মী/ সমর্থকদের ওপর দৈহিক হামলা-২৪, রাবার বাগান ধ্বংস -১, রক্তদান শিবিরে হামলা-৬ ত্রান বিতরনে হামলা-৩।
শিক্ষামন্ত্রী জুনের ২৭ তারিখ পর্যন্ত সংঘটিত এসব ঘটনার সঙ্গে ক’জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, শিক্ষামন্ত্রী বলবেন কি? বামফ্রন্ট কমটির মতে আইনশৃঙ্খলা নিয়ে শিক্ষামন্ত্রীর গর্বিত হওয়ার কারনে অপরাধীরাই উৎসাহী হবে, যা রাজ্যের জন্য, রাজ্যের জনগনের জন্য শুভ হতে পারে না। বামফ্রন্ট কমিটির বিবৃতিতে সর্বশেষ প্যারায় বলা হয়েছে, শরিকী দ্বন্দ্ব কিংবা বিজেপি-র অন্তর্কোন্দলের হিংসা–হানাহানি নিয়ে শিক্ষামন্ত্রী উদগ্রীব না হলেও রাজ্যের জনগনের সঙ্গে বামফ্রন্টও চিন্তিত।