রাজ্য সরকার স্বচ্ছতার মাধ্যমে নাগরিকদের উন্নয়ন ও পরিষেবা প্রদানে সচেষ্ট রয়েছে : মুখ্যমন্ত্রী
নিজস্ব প্রতিবেদন
আগরতলা, সেপ্টেম্বর ৯, : ভবিষ্যত প্রজন্মের পুষ্টি, স্বাস্থ্য ও প্রাক প্রাথমিক শিক্ষার মত মৌলিক পরিষেবাগুলি প্রদানে বর্তমান সরকার অঙ্গীকারবদ্ধ। কারণ, তারাই আগামীদিনে রাজ্য ও দেশ পরিচালনায় অনুঘটকের ভূমিকা গ্রহণ করবে। ৮ আগস্ট রবীন্দ্র শতবার্ষিকী ভবনে সমাজকল্যাণ ও সমাজশিক্ষা দপ্তরের ১৪টি বিভিন্ন প্রকল্পের উদ্বোধন এবং কর্মজীবি মহিলাদের জন্য ১০০ শয্যাবিশিষ্ট ৫টি হোস্টেলের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করে একথা বলেন মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর (ডা.) মানিক সাহা। তাছাড়া এই অনুষ্ঠানে আগরতলা ডায়েটের ৫০ শয্যাবিশিষ্ট বালকদের হোস্টেলেরও উদ্বোধন করেন মুখ্যমন্ত্রী। ভার্চুয়ালি এই প্রকল্পগুলির উদ্বোধন ও ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয়।
অনুষ্ঠানে আলোচনায় মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ২০৪৭ সালের মধ্যে দেশকে সর্বক্ষেত্রে বিকশিত করার ডাক দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। এই লক্ষ্যেই রাজ্যগুলির উন্নয়নের রূপরেখা তৈরীতে সমগ্র দেশের মধ্যে ত্রিপুরা রাজ্য ৫ম স্থানে রয়েছে এবং উত্তরপূর্বের মধ্যে প্রথম স্থানে রয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, উন্নয়ন অন্তহীন। কিন্তু এই উন্নয়ন হতে হবে সামগ্রিক। তাই বর্তমান রাজ্য সরকার স্বচ্ছতার মাধ্যমে নাগরিকদের উন্নয়ন ও পরিষেবা প্রদানে সচেষ্ট রয়েছে। তিনি বলেন, আজ পশ্চিম ত্রিপুরা জেলার বিভিন্ন মহকুমায় ৯টি অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্র, নরসিংগড় ও অভয়নগরের চাইল্ড কেয়ার ইনস্টিটিউটে ২টি পার্ক, অভয়নগরে মেয়েদের জন্য আফটার কেয়ার হোম এবং চাইল্ড কেয়ার ইনস্টিটিউট ও অনাথ শিশুদের জন্য স্পেশালাইজড অ্যাডপশন এজেন্সির উদ্বোধন করা হয়েছে। তাছাড়া কর্মজীবি মহিলাদের জন্য অভয়নগর, এডিনগর, বোধজংনগর, সারুম এবং বিলোনীয়ায় হোস্টেলের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয়েছে। উদ্বোধন হওয়া ও ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা প্রকল্পগুলির জন্য ব্যয় হবে প্রায় ৬১ কোটি টাকা। তাছাড়া আগরতলা ডায়েটে বালকদের জন্য যে হোস্টেল উদ্বোধন করা হয়েছে তার জন্য ব্যয় হয়েছে ১ কোটি ৮৪ লক্ষ টাকা৷ মুখ্যমন্ত্রী আরও বলেন, এবছরের এখন পর্যন্ত প্রায় ৮০০ কোটি টাকার বিভিন্ন প্রকল্পের উদ্বোধন ও শিলান্যাস করা হয়েছে।
আজকের এই অনুষ্ঠানে পোষণ অভিযানে অঙ্গনওয়াড়ি কর্মী ও আইসিডিএস সুপারভাইজারদের মধ্যে মোট ১১,১৩০টি স্মার্টফোন দেওয়ার কর্মসূচিরও সূচনা করা হয়। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, মাঠ পর্যায়ে রিয়েল টাইম তথ্য সংগ্রহে কেন্দ্রীয় সরকারের উদ্যোগে এই কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। এর জন্য মোট ব্যয় হবে ১২ কোটি ৮৯ লক্ষ টাকা। মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর (ডা.) মানিক সাহা বলেন, কর্মজীবি মহিলাদের জন্য বর্তমানে রাজ্যে কেবলমাত্র ১টি হোস্টেল রয়েছে। রাজ্য সরকার আরও ১০টি এধরণের হোস্টেল স্থাপনের উদ্যোগ নিয়েছে। আজকের ৫টি সহ ইতিমধ্যেই আমবাসা, ধর্মনগর ও কৈলাসহরে হোস্টেলের ভিত্তিপ্রস্থর স্থাপিত হয়ে গেছে। আগামী দিনে উদয়পুর ও কুমারঘাটে হোস্টেল নির্মাণ করার উদ্যোগ নেওয়া হবে। হোস্টেলগুলিতে জিম, বিনোদন কেন্দ্র, খেলাধুলার ব্যবস্থা, শিশুদের যত্নের ব্যবস্থা সহ অত্যাধুনিক সব ব্যবস্থা থাকবে।
প্রতিটি হোস্টেল নির্মাণে ব্যয় হবে ১১ কোটি ৪০ লক্ষ টাকা। তিনি বলেন, বর্তমানে সমাজকল্যাণ ও সমাজশিক্ষা দপ্তর থেকে বিভিন্ন প্রকল্পে প্রায় ৪ লক্ষ সুবিধাভোগীকে সামাজিক ভাতা দেওয়া হচ্ছে। রাজ্যের প্রতিটি জেলায় রয়েছে ওয়ানস্টপ সেন্টার। এগুলির মাধ্যমে এখন পর্যন্ত ২৬১ জন মহিলাকে সহায়তা করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী মাত্র বন্দনা যোজনায় এখন পর্যন্ত ১ লক্ষ ৪৫ হাজার ৮০৬ জন গর্ভবতী মহিলা এবং প্রসূতি মাকে সহায়তা বাবদ প্রায় ৭৪ কোটি টাকা দেওয়া হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী মাতৃপুষ্টি উপহার প্রকল্পে ৪৩,৬৬৪ জন গর্ভবতী মহিলাকে প্রায় ৮ কোটি ৭৩ লক্ষ টাকা সহায়তা দেওয়া হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী পোষণ অভিযানে ৯,১৮৮ জন শিশুকে সহায়তা করা হয়েছে। ১ এপ্রিল, ২০২৩ থেকে এখন পর্যন্ত ১,৪০২ জন অঙ্গনওয়াড়ি কর্মী এবং ১,৬১৫ জন অঙ্গনওয়াড়ি সহায়িকা নিয়োগ করা হয়েছে।
অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী সহ অন্যান্য অতিথিগণ প্রতীকী হিসেবে কয়েকজন সুবিধাভোগীর হাতে পোষণ কিট এবং অঙ্গনওয়াড়ি কর্মীদের হাতে মোবাইল ফোন তুলে দেন। অনুষ্ঠানে আলোচনায় সমাজকল্যাণ ও সমাজশিক্ষা মন্ত্রী টিঙ্কু রায় বলেন, জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত নাগরিকদের বিভিন্ন পরিষেবা প্রদান করে থাকে সমাজকল্যাণ ও সমাজশিক্ষা দপ্তর। বর্তমানে রাজ্যে ১০,২৭৫টি অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্র রয়েছে। যার মধ্যে ০-৬ বছরের ২ লক্ষ ৮২ হাজার ২৩১ জন শিশুর নাম নথিভুক্ত রয়েছে। বিভিন্ন প্রকল্পে আগামীদিনে রাজ্যে নতুন আরও ৩৪৫টি অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্র চালু করা হবে। চিহ্নিত ১০০টি অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্র ইংরেজী মাধ্যমে পরিচালিত করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। অ্যাডহকের ভিত্তিতে ১০১ জন অঙ্গনওয়াড়ি কর্মীকে সুপারভাইজার পদে উন্নীত করা হয়েছে। তাছাড়া অঙ্গনওয়াড়ি কর্মীদের পুজা অনুদান ২১০ টাকা বাড়িয়ে ২,৩১০ টাকা করা হয়েছে। তাছাড়াও তিনি বলেন, মোবাইল বিল বাবদ এককালীন ২ হাজার টাকা এবং অঙ্গনওয়াড়ি কর্মীদের শাড়ি বাবদ ১ হাজার টাকা দুর্গাপূজার পূর্বেই যার যার একাউন্টে প্রদান করা হবে।
অনুষ্ঠানে দপ্তরের বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজ নিয়ে স্বল্প দৈর্ঘ্যের একটি তথ্যচিত্রও পরিবেশিত হয়। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন সংশ্লিষ্ট দপ্তরের সচিব তাপস রায় এবং ধন্যবাদসূচক বক্তব্য রাখেন অধিকর্তা তপন কুমার দাস।
আরও পড়ুন...