শিক্ষক সমাজই হল ছাত্রছাত্রীদের জীবনের চলার পথে পথপ্রদর্শক এবং জীবন গড়ার মূল কারিগর : মুখ্যমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদন

আগরতলা, সেপ্টেম্বর ৬, : শিক্ষক সমাজই হল ছাত্রছাত্রীদের জীবনের চলার পথে পথপ্রদর্শক, ও উপদেষ্টা এবং জীবন গড়ার মূল কারিগর। প্রত্যেকের জীবনেই পিতামাতার পর শিক্ষকদের অবস্থান। শিক্ষকরাই পারেন তাদের ছাত্রছাত্রীদের নীতিশিক্ষা, শিষ্টাচার ও ন্যায়বোধের শিক্ষায় শিক্ষিত করে একজনকে প্রকৃত মানুষ হিসাবে গড়ে তুলতে। যে আগামীদিনে হবে এই রাজ্য ও দেশ পরিচালনার মূল কারিগর। ৫ সেপ্টেম্বর রবীন্দ্র শতবার্ষিকী ভবনে ৬৪তম রাজ্যস্তরীয় শিক্ষক দিবস উদযাপন অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করে মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর (ডা.) মানিক সাহা এ কথা বলেন। তিনি বলেন, ভারতবর্ষের দ্বিতীয় রাষ্ট্রপতি ড. সর্বপল্লী রাধাকৃষ্ণান হলেন এক মহান দার্শনিক ও বিশ্ববন্দিত শিক্ষক। যিনি নিজেকে সর্বদা একজন শিক্ষক হিসাবে পরিচয় দিতেই গর্ববোধ করতেন। তাঁর কর্মজীবন নিয়ে অধ্যায়ন করলেই শিক্ষকতার মত মহান পেশার এক সম্যক ধারণা লাভ করা যায়। তিনি বলেন, ভবিষ্যৎ প্রজন্মের প্রতি দায়বদ্ধতা থেকেই প্রত্যেকে এই শিক্ষকতার পেশার সঙ্গে যুক্ত হন। অনুষ্ঠানের আলোচনায় মুখ্যমন্ত্রী বলেন, শিক্ষক শিক্ষিকাদের ছাত্রছাত্রীদেরকে বন্ধুত্বপূর্ণ পরিবেশে মানসিক ও আবেগগত ভাবে যুক্ত হয়ে শিক্ষিত করে তোলার প্রয়াস নিতে হবে। শিক্ষক সমাজকে ছাত্রছাত্রীদের সর্বদা ভাল কাজে উৎসাহিত ও সমর্থন করতে হবে। তবেই তারা আগামী দিনে সাহসিকতার সাথে জীবনের উত্থান ও পতনের সময়কে একজন ব্যক্তিত্ব হিসাবে সামলাতে পারবে এবং সমাজকে পথ দেখাবে। অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী আরও বলেন, পুঁথিগত বিদ্যার বাইরেও যে সকল শিক্ষক শিক্ষিকা ছাত্রছাত্রীদের শিক্ষিত করে তোলেন তারাই প্রকৃত শিক্ষক। এই শিক্ষাদান হল মহৎ পেশা। এই পেশার সাথে অন্য কোন পেশার তুলনাই হয় না। কারণ শিক্ষকরাই গড়ে তোলেন ভবিষ্যৎ প্রজন্ম৷ যা নির্নয় করে একটি সমগ্র জাতির ভবিষ্যৎ। তাই শিক্ষকদের সবসময় সমর্পনের ভাবনা নিয়ে কাজ করতে হবে। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, শিক্ষাদানের পেশায় মানসিক জোর এবং পেশার প্রতি ভাললাগা একান্ত প্রয়োজনীয়। যারাই এই পেশার সাথে যুক্ত রয়েছেন, তারা নিজ নিজ ক্ষেত্রে সবসময়ই তাদের সেরাটা দেওয়ার প্রচেষ্টা করেন বলে আশা প্রকাশ করেন মুখ্যমন্ত্রী।

এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করে বিদ্যালয় শিক্ষা দপ্তর। দপ্তরের পক্ষ থেকে এবছরের পন্ডিত ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর পুরস্কার বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ড. অতুল দেববর্মাকে, মহারানী তুলসীবতি পুরস্কার ডি সি পাড়া হেমন্ত স্মৃতি বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা প্রণতী দেববর্মাকে এবং ড. শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জি পুরস্কার বিশিষ্ট শিক্ষক ও শিক্ষাবিদ সমীর চক্রবর্তীকে প্রদান করা হয়। তাছাড়া রাজ্যের বিভিন্ন উচ্চ ও বিদ্যালয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ৩৬ জন শিক্ষক শিক্ষিকাকে “শিক্ষক সম্মাননা’ ২০২৫ প্রদান করা হয়। মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর (ডা.) মানিক সাহা সকল পুরস্কার প্রাপকদের হাতে পুরস্কার তুলে দেন।

অনুষ্ঠানে আলোচনায় মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর (ডা.) মানিক সাহা বলেন, শিক্ষক শিক্ষিকারা হলেন ছাত্রছাত্রীদের রোল মডেল। শিক্ষক সমাজ হচ্ছে একটি বৃক্ষের শিকড়ের মত। যার কাজ তাদের সমস্ত নির্যাস দিয়ে এই সমাজকে গড়ে তোলা৷ মুখ্যমন্ত্রী বলেন প্রাচীকালে ভারতবর্ষ ছিল জ্ঞান, শিক্ষা ও বিজ্ঞানের পীঠস্থান। সময়ের কালে তা ফুরিয়ে গিয়েছিল।

কিন্তু প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় দেশের শিক্ষা ব্যবস্থার পরিবর্তনের জন্য লাগু করা হয়েছে জাতীয় শিক্ষানীতি যা আগামী দিনে দেশের শিক্ষা ব্যবস্থার আমূল পরিবর্তন ঘটাবে। মুখ্যমন্ত্রী রাজ্যের শিক্ষা পরিকাঠামোর উন্নয়নের বাস্তবচিত্র আলোচনা করতে গিয়ে বলেন, বর্তমানে রাজ্যে সরকারি ও বেসরকারিস্তরে অনেকগুলি বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে। আগামীদিনে মহিলা বিশ্ববিদ্যালয় চালু করার বিষয়টিও অনেকটা এগিয়ে গেছে। বর্তমানে রাজ্যেই এম বি বি এস, ডেন্টাল, বি এস সি নার্সিং, এ এন এম, জি এন এম সহ, ইঞ্জিনিয়ারিং- এ পড়ার বিপুল সুযোগ রয়েছে। রাজ্যসরকার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর পরিকাঠামো উন্নয়নেও ব্যাপক জোর দিয়েছে। এরফলে টি আই টি এবং ন্যাশনাল ল ইউনিভার্সিসটির নতুন ভবন নির্মাণ করা হচ্ছে। ৩৮৭ টি বিদ্যালয়ের পরিকাঠামোগত উন্নয়ন করা হয়েছে। আরও ২৯২টির করা হবে। মুখ্যমন্ত্রী কন্যা আত্মনির্ভর যোজনায় ১৪০ জনকে স্কুটি প্রদান করা হয়েছে। নবম শ্রেণীর ১,২২,৫০৯ জন ছাত্রীদের বিনামূল্যে বাইসাইকেল দেওয়া হয়েছে। ২০২৪-২৫ অর্থবছরে ১২টি বিদ্যালয়কে উচ্চ বিদ্যালয়ে এবং ৫টি বিদ্যালয়কে উচ্চতর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে উন্নীত করা হয়েছে। এছাড়াও তিনি নিপুন ত্রিপুরা, মুকুল, বিদ্যাসেতু, মহর্ষ, পি এম পোষণ, সুপার ৩০ প্রভৃতি শিক্ষা দপ্তরের বিভিন্ন কর্মসূচি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেন। শিক্ষকদের আন্তরিক প্রচেষ্ঠাতেই এবছর বিদ্যাজ্যোতি বিদ্যালয়গুলির ফলাফল ভাল হয়েছে বলে মুখ্যমন্ত্রী মনে করেন। তিনি আশা প্রকাশ করেন ছাত্রছাত্রীদের চরিত্র ও মেধাকে ক্ষুরধার করতে আগামি দিনে শিক্ষক সমাজ তাদের দায়িত্ব পালন করে যাবেন।

অনুষ্ঠানে আলোচনায় বিদ্যালয় শিক্ষা দপ্তরের বিশেষ সচিব রাভেল হেমেন্দ্র কুমার বলেন, শিক্ষা প্রদানের বাইরেও ছাত্রছাত্রীদের জীবন গঠনে শিক্ষকদের ভূমিকা রয়েছে। বিজ্ঞানভিত্তিক, উদ্ভাবনী, কারিগরি বিদ্যার বর্তমান সময়ে সবচেয়ে জোর দেওয়া হচ্ছে। তাই শিক্ষকদেরও শিক্ষা প্রদানের ক্ষেত্রে নিজেদের আপডেট রাখতে হবে।

অনুষ্ঠানে সকল অতিথিগন ড. সর্বপল্লী রাধাকৃষ্ণানের প্রতিকৃতিতে মাল্যদান করে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। অনুষ্ঠানে তাঁর দর্শন এবং রাজ্যের শিক্ষা ব্যবস্থার হালহকিফৎ নিয়ে একটি স্বল্প দৈর্ঘ্যে তথ্য চিত্র প্রদর্শিত হয়। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন বিদ্যালয় শিক্ষা দপ্তরের অধিকর্তা এন সি শর্মা।

আরও পড়ুন...


Post Your Comments Below

নিচে আপনি আপনার মন্তব্য বাংলাতেও লিখতে পারেন।

বিঃ দ্রঃ
আপনার মন্তব্য বা কমেন্ট ইংরেজি ও বাংলা উভয় ভাষাতেই লিখতে পারেন। বাংলায় কোন মন্তব্য লিখতে হলে কোন ইউনিকোড বাংলা ফন্টেই লিখতে হবে যেমন আমার বাংলা কিংবা অভ্রো কী-বোর্ড (Avro Keyboard)। আমার বাংলা কিংবা অভ্রো কী-বোর্ডের সাহায্যে মাক্রোসফট্ ওয়ার্ডে (Microsoft Word) টাইপ করে সেখান থেকে কপি করে কমেন্ট বা মন্তব্য বক্সে পেস্ট করতে পারেন। আপনার কম্পিউটারে আমার বাংলা কিংবা অভ্রো কী-বোর্ড বাংলা সফ্টওয়ার না থাকলে নিম্নে দেয়া লিঙ্কে (Link) ক্লিক করে ফ্রিতে ডাওনলোড করে নিতে পারেন।

Free Download Avro Keyboard

Fields with * are mandatory





Posted comments

Till now no approved comments is available.