গ্রামের আর্থসামাজিক অবস্থার উন্নয়নের উপর নির্ভর করে একটা রাজ্যের ও দেশের উন্নয়ন : মুখ্যমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদন

আগরতলা, সেপ্টেম্বর ২, : ত্রিস্তর পঞ্চায়েত ব্যবস্থা হলো রাজ্য ও দেশের সার্বিক বিকাশের মূল ভিত্তি। দেশের ৬০ থেকে ৭০ শতাংশ যেমন গ্রাম, তেমনি ত্রিপুরারও এক তৃতীয়াংশ গ্রামাঞ্চল। গ্রামকে বাদ দিয়ে কোনও দিন সার্বিক বিকাশ সম্ভব নয়। ১লা সেপ্টেম্বর আগরতলার অরুন্ধতীনগরস্থিত স্টেট পঞ্চায়েত রিসোর্স সেন্টারে গ্রামোন্নয়ন (পঞ্চায়েত) দপ্তরের এবং ভারত ইনেশিয়েটিভ ফাউন্ডেশনের যৌথ উদ্যোগে দু'দিনব্যাপী পঞ্চায়েতরাজ সক্ষমতা বৃদ্ধি কর্মসূচির উদ্বোধন করে মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর (ডা.) মানিক সাহা একথা বলেন। তিনি বলেন, গ্রামীণ এলাকা শক্তিশালী হলে রাজ্যও শক্তিশালী হবে। পঞ্চায়েত স্তরের, জিলা পরিষদ স্তরের জনপ্রতিনিধিগণ জনগণ দ্বারা নির্বাচিত। তাই তাদের গ্রামের মানুষের জন্য স্বচ্ছতা বজায় রেখে কাজ করার দায়বদ্ধতাও বেশি। গ্রাম বা পঞ্চায়েত স্তরে প্রতিটি প্রকল্প মানুষকে পাশে নিয়ে রূপায়ণ করতে হবে। মনে রাখতে হবে স্বচ্ছতা হলো মাথা উঁচু করে বাঁচার শক্তি। ত্রিস্তরীয় পঞ্চায়েত ব্যবস্থা ভারতের সংবিধান দ্বারা স্বীকৃত। গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় ত্রিস্তর পঞ্চায়েত ব্যবস্থা একটা অমূল্য স্তম্ভ।

দু'দিনব্যাপী এই কর্মসূচির উদ্বোধন করে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ত্রিস্তর পঞ্চায়েতের অর্থ হলো নীচের দিক থেকে উপরের দিকে যাওয়া। উন্নয়ন গ্রামস্তর থেকেই শুরু হয়। বর্তমানে ত্রিপুরায় পঞ্চায়েত স্তরে সার্বিক বিকাশে একটা স্বচ্ছতা এসেছে। কোনও রাজনৈতিক রঙ দেখে কাজ হয় না অতীতের মতো। মনে রাখতে হবে সাধারণ মানুষের দ্বারা আমরা নির্বাচিত তাই দায়বদ্ধতাও বেশি। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, গ্রামের আর্থসামাজিক অবস্থার উন্নয়নের উপর নির্ভর করে একটা রাজ্যের ও দেশের উন্নয়ন। সরকার চায় প্রতিটি গ্রামের অর্থনৈতিক, সামাজিক সাংস্কৃতিক বিকাশ। গ্রামের উন্নয়ন শুধু বেনিফিসিয়ারি সিলেকশন আর প্রকল্পের জিনিস প্রদান করাই নয়৷ পঞ্চায়েতের সার্বিকভাবে উন্নয়ন হচ্ছে কিনা তা লক্ষ্য রেখে কাজ করে যেতে হবে।

মুখ্যমন্ত্রী বলেন, দেশের স্বাধীনতার পর শুধু শহরভিত্তিক উন্নয়ন পরিকল্পনা ছিলো৷ ২০১৪ সালে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি দেশের গ্রামীণ এলাকার আর্থসামাজিক উন্নয়নে সর্বাধিক গুরুত্ব দেওয়া শুরু করেন। ত্রিস্তর পঞ্চায়েত ব্যবস্থার লক্ষ্যও তাই। গ্রামের উন্নয়ন হলে স্বাভাবিকভাবে শহরেরও উন্নয়ন ঘটবে। গ্রামীণ এলাকায় উন্নয়নের ক্ষেত্রে শান্তি সম্প্রীতি ও নিরাপত্তা বজায় রাখার ক্ষেত্রেও গুরুত্ব দিতে হবে। বর্তমানে রাজ্যের বাইরে থেকে মানুষ এসেও ত্রিপুরার প্রশংসা করছেন। শুধু শহর এলাকায় শান্তি সম্প্রীতির প্রতি লক্ষ্য রাখলেই হবে না। উন্নয়নের প্রশ্নে গ্রামীণ এলাকায় শান্তি সম্প্রীতি বজায় রাখার উপরও সর্বাধিক গুরুত্ব দিতে হবে। ১৯৬৯ সালে ২ অক্টোবর রাজস্থানের নাগর জেলাতে এই ত্রিস্তর পঞ্চায়েত ব্যবস্থা প্ৰথম চালু হয়।

মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ত্রিপুরায় ২০১৮ সাল থেকে সরকার জোর দিয়েছে রাজ্যে ত্রিস্তর পঞ্চায়েত ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করার। রাজ্যে ২০১৮ সালের পুরো ভারতের প্রথম রাজ্য হিসেবে ত্রিস্তরীয় পঞ্চায়েত পর্যন্ত ই-অফিস চালু করা হয়েছে। স্বচ্ছতার সঙ্গে মানুষের কাজ করা, পঞ্চায়েত স্তরে উল্লেখযোগ্যভাবে উন্নয়নমূলক কাজ করার জন্য ত্রিপুরা জাতীয় স্তরে বিগত কয়েক বছরে ৭টি পুরস্কার অর্জন করেছে। দেশের আড়াই লক্ষ পঞ্চায়েতের সাথে প্রতিযোগিতা করে কাজের জন্য জাতীয় স্তরে প্রথম হয়েছে রাজ্যের একটি পঞ্চায়েত। রাজ্য সরকার মানুষের কল্যাণে কাজ করছে বলেই তা সম্ভব হচ্ছে। তিনি বলেন, পঞ্চায়েত ডেভোলিউশন ইনডেক্সের ক্ষেত্রে দেশের মধ্যে প্রথম দশটি রাজ্যের মধ্যে ত্রিপুরা সপ্তম স্থানে চলে এসেছে। সেটা ২০১৫- তে ছিলো ১৩তম স্থানে। তা থেকে বোঝা যায় বিগত মাত্র কয়েক বছরে রাজ্যে উন্নয়নমূলক কাজের রূপায়ণ দ্রুত হচ্ছে। সেক্ষেত্রে আত্মতুষ্টিতে ভুগলে চলবে না। কাজের গতি ঠিক রাখতে হবে। ত্রিপুরাকে প্রথম স্থানে নিয়ে যেতে হবে। উন্নয়নের প্যারামিটারে ত্রিপুরা দেশের মধ্যে উল্লেখযোগ্য স্থানে আছে। সেটা সম্ভব হচ্ছে ত্রিস্তর পঞ্চায়েত স্তরে ভালো কাজের জন্য। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, পঞ্চায়েত অ্যাডভান্সমেন্ট ইনডেক্সে কাজের ক্ষেত্রে ত্রিপুরার ৪২টি পঞ্চায়েত গ্রেড-এ পেয়েছে। মাথাপিছু আয়ের ক্ষেত্রে উত্তর পূর্বাঞ্চলে ত্রিপুরা দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে। জি.এস.ডি.পি. বৃদ্ধির ক্ষেত্রেও ত্রিপুরা উত্তর পূর্বাঞ্চলে আসামের পর দ্বিতীয় রাজ্য। তিনি বলেন, গত কয়েক বছরে ত্রিপুরাতে ১ লক্ষ ৮ হাজার লাখপতি দিদি হয়েছেন। তা সম্ভব হচ্ছে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির উন্নয়নের আত্মনির্ভরতার যে দিশা দেখিয়েছেন সে দিশায় কাজ করার জন্য। ডিজিটাল ইন্ডিয়ার কর্মসূচিতেও ত্রিপুরার অগ্রগতি হয়েছে। সরকার কাজের ক্ষেত্রে স্বচ্ছতাকে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে দেখে। কাজের ক্ষেত্রে স্বচ্ছতাই মূল লক্ষ্য হতে হবে।

অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন ভারত ইনেশিয়েটিভ ফাউন্ডেশনের অধিকর্তা এন. কে. গিলানি। স্বাগত বক্তব্য রাখেন গ্রামোন্নয়ন (পঞ্চায়েত) দপ্তরের সচিব অভিষেক সিং। ধন্যবাদসূচক বক্তব্য রাখেন গ্রামোন্নয়ন (পঞ্চায়েত) দপ্তরের যুগ্ম অধিকর্তা অনুরাগ সেন। দু'দিনব্যাপী এই কর্মসূচিতে রাজ্যের প্রতিটি জিলা পরিষদের সভাধিপতি, সহ-সভাধিপতি, পঞ্চায়েত সমিতির চেয়ারম্যান সহ পঞ্চায়েত স্তরের প্রতিনিধিরা গ্রামীণ অর্থনীতি, যুব ও কর্মসংস্থান, সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য, পরিবেশ ও উন্নয়নে এবং প্রশাসন ও প্রযুক্তি বিষয়ে দক্ষতা অর্জন করবেন রিসোর্স পার্সনদের কাজ থেকে।

আরও পড়ুন...


Post Your Comments Below

নিচে আপনি আপনার মন্তব্য বাংলাতেও লিখতে পারেন।

বিঃ দ্রঃ
আপনার মন্তব্য বা কমেন্ট ইংরেজি ও বাংলা উভয় ভাষাতেই লিখতে পারেন। বাংলায় কোন মন্তব্য লিখতে হলে কোন ইউনিকোড বাংলা ফন্টেই লিখতে হবে যেমন আমার বাংলা কিংবা অভ্রো কী-বোর্ড (Avro Keyboard)। আমার বাংলা কিংবা অভ্রো কী-বোর্ডের সাহায্যে মাক্রোসফট্ ওয়ার্ডে (Microsoft Word) টাইপ করে সেখান থেকে কপি করে কমেন্ট বা মন্তব্য বক্সে পেস্ট করতে পারেন। আপনার কম্পিউটারে আমার বাংলা কিংবা অভ্রো কী-বোর্ড বাংলা সফ্টওয়ার না থাকলে নিম্নে দেয়া লিঙ্কে (Link) ক্লিক করে ফ্রিতে ডাওনলোড করে নিতে পারেন।

Free Download Avro Keyboard

Fields with * are mandatory





Posted comments

Till now no approved comments is available.