উন্নয়নের পথে এগিয়ে চলতে রাজ্য সরকারের লক্ষ্য হলো উন্নত ও শ্রেষ্ঠ ত্রিপুরা গঠন করা : মুখ্যমন্ত্রী
নিজস্ব প্রতিবেদন
আগরতলা, আগষ্ট ২৩, : ২০৪৭ সালে ভারতবর্ষের স্বাধীনতার ১০০ বছর পূর্ণ হবে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এই সময়কালের মধ্যে দেশকে একটি উন্নয়নশীল রাষ্ট্রে পরিণত করার জন্য বিকশিত ভারত- ২০৪৭ কর্মসূচির সূচনা করেছেন। এই কর্মসূচিতে দেশের মানুষের অর্থনৈতিক উন্নয়ন, ক্ষমতায়ন এবং টেকসই জীবনমান নিশ্চিত করাই প্রধান লক্ষ্য। এই দিশাতে বর্তমান সরকার রাজ্যের সামগ্রিক বিকাশে সচেষ্ট রয়েছে। এক্ষেত্রে রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব, সাধারণ মানুষ সহ প্রশাসনিক স্তরে আধিকারিকদের একজোট হয়ে কাজ করতে হবে। ২২ আগস্ট প্রজ্ঞাভবনে ‘বিকশিত ত্রিপুরা-২০৪৭' এর ডকুমেন্টের আবরণ উন্মোচন করে একথা বলেন মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর (ডা.) মানিক সাহা। অনুষ্ঠানে ‘বিকশিত ত্রিপুরা-২০৪৭' সম্পর্কিত একটি তথ্যচিত্র প্রদর্শন করা হয়।
অনুষ্ঠানে আলোচনা করতে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ত্রিপুরা উত্তর-পূর্বাঞ্চলের মধ্যে প্রথম রাজ্য যেখানে বিকশিত ভারত-২০৪৭ উদ্যোগের অধীনে একটি ডকুমেন্ট প্রস্তুত করেছে। উন্নয়নের পথে এগিয়ে চলতে রাজ্য সরকারের লক্ষ্য হলো উন্নত ও শ্রেষ্ঠ ত্রিপুরা গঠন করা। যেখানে থাকবে সাধারণ নাগরিকদের জন্য সমৃদ্ধ, নিরাপদ, সুস্বাস্থ্য সম্মত ভবিষ্যৎ। যা প্রকৃতি ও পরিবেশের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ হবে। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ভারতবর্ষে অ্যাক্ট ইস্ট পলিসির ক্ষেত্রে ত্রিপুরা রাজ্য গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল করে আছে। এই পলিসির মূল লক্ষ্য হলো এশিয়া প্যাসিফিক অঞ্চলের দেশগুলির সঙ্গে অর্থনৈতিক সহযোগিতা, সাংস্কৃতিক বিনিময় এবং কৌশলগত অংশীদারিত্বের উন্নয়ন। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির দিশা নির্দেশে রাজ্য সরকারও কৃষক, মহিলা, যুবা এবং দরিদ্র শ্রেণির মানুষের উন্নয়নে একনিষ্ঠভাবে কাজ করে চলেছে। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, বিকশিত ভারত কিংবা বিকশিত ত্রিপুরা গঠনের মূল উৎস হলো স্বনির্ভরতা। এক্ষেত্রে স্থানীয় সামগ্রীর সর্বাধিক ব্যবহার, উদ্ভাবনী চিন্তাভাবনা, নাগরিক জীবনের সুসংহতকরণ ও স্বশক্তিকরণের উপর সর্বাধিক জোর দিতে হবে।
মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর (ডা.) মানিক সাহা বলেন, রাজ্য কৃষকদের ক্ষমতায়ন, স্বাস্থ্য সেবার অগ্রগতি, ডিজিটাল প্রশাসন এবং শিল্পোন্নয়নের ক্ষেত্রে অসাধারণ সাফল্য অর্জন করছে। যা বিনিয়োগের ক্ষেত্রে নতুন মানদণ্ড স্থাপন করছে। ত্রিপুরার প্রাকৃতিক সম্পদ যেমন বাঁশ, রাবার ও বনজ সম্পদের সদ্ব্যবহার করে টেকসই শিল্পের বিকাশ ঘটেছে এবং হাজার হাজার মানুষের জীবিকা নিশ্চিত হয়েছে।
গ্রামীণ বিদ্যুতায়ন, সৌরশক্তি এবং বিশুদ্ধ পানীয়জল পৌছে দেওয়ার উদ্যোগে জনগণের জীবনমান উল্লেখযোগ্যভাবে উন্নত হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী জন আরোগ্য যোজনা চালুর মাধ্যমে প্রায় ৪.২৬ লক্ষ সুবিধাভোগী আয়ুষ্মান কার্ড পেয়েছেন। ইতিমধ্যে ৮,০০০-র ও বেশি রোগী নগদহীন চিকিৎসা লাভ করেছেন। ই-অফিস প্ল্যাটফর্ম সফলভাবে পঞ্চায়েত / ভিলেজকমিটি পর্যন্ত বাস্তবায়িত হয়েছে। ই-অফিস প্ল্যাটফর্ম চালু করার ক্ষেত্রে ত্রিপুরা দেশের মধ্যে প্রথম স্থান অধিকার করেছে। যা তৃণমূলস্তরে প্রশাসনিক দক্ষতা, স্বচ্ছতা এবং জবাবদিহিতার ক্ষেত্রে নতুন যুগের সূচনা করেছে। ইতিমধ্যে ইউনিফাইড ফার্মার ডাটাবেস তৈরি করা হয়েছে। যাতে ভূমি রেকর্ড ও রিয়েল টাইম ফসল সমীক্ষাযুক্ত থাকবে। ত্রিপুরা আই.টি. স্টার্ট আপ স্কিম, ২০১৯, ত্রিপুরা ডেটা সেন্টার পলিসি, ২০২১, ত্রিপুরা আগর উড পলিসি, ২০২১ এর মতো বিভিন্ন পলিসির মাধ্যমে রাজ্যের শিল্প উন্নয়নে বিশেষ নজর দেওয়া হয়েছে। এরফলে রাজ্যে উল্লেখযোগ্য বেসরকারি বিনিয়োগ এসেছে, যা রাজ্যের উন্নয়নের গতিকে আরও ত্বরান্বিত করেছে।
আলোচনায় অর্থমন্ত্রী প্রণজিৎ সিংহরায় বলেন, “বিকশিত ত্রিপুরা-২০৪৭’ ডকুমেন্টের মাধ্যমে রাজ্যের নাগরিকদের জীবনমানের কৌশলগত পরিবর্তন সুনিশ্চিত হবে। এর মূল লক্ষ্য হলো দরিদ্র মুক্ত রাজ্য গঠন, উচ্চমানের স্বাস্থ্য পরিষেবা, উচ্চশিক্ষার ব্যবস্থা সহ নাগরিক পরিষেবার মৌলিক বিষয়গুলি সুনিশ্চিত করা।
অনুষ্ঠানে আলোচনা করতে গিয়ে মুখ্যসচিব জে. কে. সিনহা বলেন, গত কয়েক বছরে রাজ্যের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি দেশের অনেক বড় রাজ্যের তুলনায় বেশি। এছাড়াও আলোচনা করেন নীতি আয়োগের প্রোগ্রাম ডাইরেক্টর রাজীব কুমার সেন, পরিকল্পনা দপ্তরের সচিব এল. টি. ডার্লং। আজকের এই অনুষ্ঠানে রাজ্য মন্ত্রিসভার সকল সদস্য / সদস্যা, পুলিশ মহানির্দেশক অনুরাগ উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানে রাজ্যের সবক'টি দপ্তরের বিশেষ সচিব, সচিব, অধিকর্তাগণ উপস্থিত ছিলেন।
আরও পড়ুন...