Hare to Whatsapp
উপজাতি সমাজপতিদের সঙ্গে বৈঠক মুখ্যমন্ত্রীর, ২০০০ টাকা করে ভাতা প্রদানের ঘোষণা
By Our Correspondent
আগরতলা, জুন ২০, : জনজাতি সমাজপতিদের ২০০০ টাকা করে প্রদানের সিদ্ধান্ত নিয়েছে রাজ্য সরকার। এ রাজ্যের গণতান্ত্রিক ইতিহাসে প্রথমবারের মত সমাজ পতিদের নিয়ে করা দীর্ঘ বৈঠকে, এই সিদ্ধান্তের কথা ঘোষণা করেন মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব। মহারাজা বীর বিক্রম কিশোর মানিক্য বাহাদুরের পরে এই প্রথম সম্মানের সঙ্গে ডাক পেয়ে এবং রাজ্যের বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর সমাজপতিদের সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রীর এই বৈঠকে উপস্থিত হতে পেরে তাঁরা সন্তোষ ব্যক্ত করেন। এর আগে রাজ্যের কোনো সরকার বা মুখ্যমন্ত্রী এই ধরনের উদ্যোগ গ্রহণ করেননি।
মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেবের সভাপতিত্বে জনজাতি সমাজের আর্থিক ও সাংস্কৃতিক উন্নয়নে সমাজপতিদের সাথে এক চিন্তন বৈঠক আজ রাজ্য অতিথিশালার সভাকক্ষে অনুষ্ঠিত হয় । উপমুখ্যমন্ত্রী জিষ্ণু দেববর্মা , সাংসদ রেবতি মােহন ত্রিপুরা , সমাজকল্যাণ ও সমাজশিক্ষা মন্ত্রী সান্তনা চাকমা , বিধায়ক রামপদ জমাতিয়া এবং বিধায়ক ডা . অতুল দেববর্মা উপস্থিত ছিলেন । রাজ্যের প্রায় সবকটি জনজাতি সমাজের সমাজপতিরা এই চিন্তন বৈঠকে অংশ নেন । তারা রাজ্য সরকারের এই উদ্যোগকে স্বাগত জানান এবং ভবিষ্যতেও এই ধরণের বৈঠকের আয়ােজন করার জন্য মুখ্যমন্ত্রীর নিকট আবেদন রাখেন । আজকের চিন্তন বৈঠকে বিভিন্ন জনজাতি সমাজের কাস্টমারি ল , নিজেদের কৃষ্টি সংস্কৃতি , এডিসিকে শক্তিশালী করা , বিভিন্ন জনজাতি অধ্যুষিত এলাকায় রাস্তাঘাট , পানীয় জলের সমস্যা ইত্যাদি বিষয় নিয়ে উপস্থিত সমস্ত জনগােষ্ঠীর সমাজপতিরা খােলামেলা মত বিনিময় করেন ।
চিন্তন বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব বলেন , রাজ্যকে এগিয়ে নিয়ে যেতে এবং শ্রেষ্ঠ ত্রিপুরা গড়ে তােলার জন্য জনজাতি সমাজের সমাজপতিদের দায়িত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে । এই দায়িত্ব পালনে তাদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানান মুখ্যমন্ত্রী । মুখ্যমন্ত্রী বলেন , আমরা সকলেই সমান । ব্যক্তিগত চিন্তাভাবনা না করে সার্বজনীন বিষয়গুলিকে গুরুত্ব দিতে হবে । তিনি বলেন , প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মােদিজীর নীতিকে লাগু করে আমরা কম সময়ের মধ্যে এগিয়ে যেতে চাই । মুখ্যমন্ত্রী বলেন , সমাজপতিরা হচ্ছেন সমাজের প্রতিবিম্ব । সরকার তাদেরকে সম্মান জানায় , গুরুত্ব দিতে চায় । সমাজে অপরাধ প্রবণতা হ্রাস করার বিষয়ে মুখ্যমন্ত্রী সমাজপতিদের সাথে পুলিশের সম্পর্ক নিবিড় করার উপর গুরুত্ব আরােপ করেন ।
জনজাতি সমাজের পক্ষ থেকে উত্থাপিত বিভিন্ন বিষয়গুলি সম্পর্কে মুখ্যমন্ত্রী প্রতিটি বিষয়ের সমাধান এবং সরকারের গৃহিত পদক্ষেপসমূহ তুলে ধরে বিশ্লেষণাত্মক আলােচনা করেন । জনজাতিসহ সকল জাতিগােষ্ঠীর জন্য কালচারাল হাব গড়ে তােলার প্রসঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী শ্রীদেব বলেন , প্রায় ২০০ কোটি টাকা ব্যয়ে কালচারাল হাব গড়ে তােলার লক্ষ্যে পঞ্চদশ অর্থ কমিশনের কাছে প্রস্তাব পাঠানাে হয়েছে । যেখানে ত্রিপুরাসহ উত্তর - পূর্বাঞ্চলের অন্যান্য রাজ্যের সংস্কৃতিকে তুলে ধরা হবে । মুখ্যমন্ত্রী বলেন , উত্তর - পূর্বাঞ্চলের সংস্কৃতি অত্যন্ত শক্তিশালী । রাজ্যগুলি ছােট হতে পারে কিন্তু প্রত্যেকটি রাজ্যের সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে অগ্রণী ভুমিকা রয়েছে ।
নাগরিকত্ব সংশােধনী আইন সম্পর্কে মুখ্যমন্ত্রী বলেন , এ সম্পর্কে অপপ্রচার বন্ধ করতে হবে । এরজন্য সমাজপতিদের নজর দিতে তিনি আহ্বান জানান ।
মুখ্যমন্ত্রী বলেন , উন্নয়নের বড় মন্ত্রই হচ্ছে শান্তি । করােনা পরিস্থিতির মধ্যেও রাজ্যে উন্নয়নমূলক কাজ চলছে । এ প্রসঙ্গে তিনি দাউদকান্দি থেকে সােনামুড়া পর্যন্ত জলপথ চালুর বিষয়ে সােনামুড়ায় জেটি নির্মাণের বিষয়টি উল্লেখ করেন । তিনি আশা প্রকাশ করেন আগামী ৩ মাসের মধ্যে জেটি নির্মাণের কাজ শেষ হবে ।
উত্তর - পূর্বাঞ্চলের অন্যান্য রাজ্যের মতাে ত্রিপুরাতেও বিভিন্ন জনজাতিগােষ্ঠীর সমাজপতিদের ভাতা প্রদানের বিষয়টি আজকের বৈঠকে উত্থাপিত হলে মুখ্যমন্ত্রী রাজ্যের প্রত্যেক জনজাতিগােষ্ঠীর প্রধান সমাজপতিদের ২০০০ টাকা করে ভাতা প্রদানের কথা ঘােষণা করেন । গ্রামাঞ্চলে পানীয় জলের সমস্যা সম্পর্কে আলােচনা করতে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেন , আগামী ২০২২ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে রাজ্যের প্রত্যেক বাড়িতে বিনামূল্যে বিশুদ্ধ পানীয় জলের সংযােগ প্রদানের লক্ষমাত্রা নিয়ে রাজ্য সরকার কাজ করছে । গত বছর প্রথম পর্যায়ে ৬৮ হাজার পরিবারে পানীয় জলের সংযােগ দেওয়া হয়েছে ।
এবছর ৩ লক্ষ পরিবারে জলের সংযােগ দেওয়ার লক্ষমাত্রা নেওয়া হয়েছে । গ্রামীণ বিদ্যুতায়ণ প্রসঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী জানান , এ ডি সি’র অর্থানুকুল্যে রাজ্যে ১৬০০ কোটি টাকার একটি প্রকল্প রূপায়িত হচ্ছে । আগামী ২ বছরের মধ্যে ট্রান্সফরমার সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে এবং আধুনিক বিদ্যুৎ ব্যবস্থা সম্প্রসারিত হবে । কাস্টমারি ল , গড়িয়া পূজার ছুটি তিনদিন করা , ত্রিপুরাসুন্দরী মন্দিরে জমাতিয়াদের জন্য একদিন পূজার সুযােগ দেওয়া , ডুম্বুর লেকের মন্দির ঘাটের ওয়াল নির্মাণ , ব্রু শরনার্থীদের পুনর্বাসন দেওয়া , তৈবান্দালে মুড়াসিং সমাজের মেলাকে রাজ্যস্তরে স্বীকৃতি দেওয়া , পাট্টাল্যান্ড প্রদান , সাঁওতাল জনজাতিদের সিধু কানহু ও বিরসা মুন্ডার মুর্তি স্থাপন ইত্যাদি বিষয়ে জনজাতি সমাজের পক্ষ থেকে দাবি উত্থাপিত হলে মুখ্যমন্ত্রী এই বিষয়ে আইনানুসারে এবং মন্ত্রিসভার সাথে আলােচনা করে যা যা করা সম্ভব সে বিষয়ে আন্তরিক উদ্যোগ নেবেন বলে জানান ।
আজকের বৈঠকের শুরুতে উপমুখ্যমন্ত্রী জিষ্ণু দেববর্মন বলেন , সমাজকে বাদ দিয়ে কোনাে জাতিরই উন্নতি হতে পারেনা । তাই রাজ্য সরকার জনজাতিদের ভাষা , সংস্কৃতি , শিক্ষাসহ সার্বিক উন্নয়ণে গুরুত্ব দিয়ে কাজ করছে । রাজ্যের ১২ টি অ্যাসপিরিশনাল ব্লকের অন্তর্গত জনজাতিদের উন্নয়নে গুচ্ছ পরিকল্পনা নিয়েছে রাজ্য সরকার । এছাড়াও রাজ্য সরকার জনজাতি সমাজের পরিকাঠামাের উন্নয়ণে বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছে । কারণ যে সমাজে উন্নত পরিকাঠামাে নেই সেই সমাজও কখনাে উন্নতি করতে পারেনা ।
উপমুখ্যমন্ত্রী আরােও বলেন , বর্তমানে রাজ্যে যে রেগার কাজ হচ্ছে তার ৭৫ শতাংশ কাজই হচ্ছে এডিসি এলাকায় । ফলে এডিসি এলাকায় স্থায়ী সম্পদও সৃষ্টি হচ্ছে বেশী পরিমানে । তিনি আরােও বলেন , বর্তমান রাজ্য সরকার এডিসি এলাকার উন্নয়নকে ত্বরান্বিত করার পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করছে । কারণ বহুদিন যাবৎ এডিসি এলাকা উন্নয়ন বঞ্চিত ছিল । ফলে এডিসি এলাকা দীর্ঘদিন ধরে পিছিয়ে পড়েছিল । তাই এডিসি এলাকার জনজাতিদের সুরক্ষা , উন্নয়ন এবং স্বয়ংসম্পূর্ণ করার দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে বিভিন্ন পরিকল্পনা ও সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে রাজ্য সরকার কাজ করছে । এই কাজকে সফল ভাবে বাস্তবায়নের লক্ষ্যে জনজাতি সমাজের সমাজপতিদের এগিয়ে এসে সরকারকে সহযােগিতা করা একান্ত আবশ্যক । সেই উদ্দেশ্যেই আজ রাজ্যের ইতিহাসে প্রথমবারের মতাে জনজাতি সমাজের সমাজপতিদের সাথে মুখ্যমন্ত্রীর মতবিনিময় সভার আয়ােজন করা হয়েছে । জনজাতি এলাকার সামগ্রিক বিকাশে আগামী দিনে সমাজপতিরা আরও ইতিবাচক ভূমিকা গ্রহন করবেন বলে এদিন আশ্বস্ত করেন।