আগামীদিনে এই রাজ্য এডুকেশন হাবে পরিণত হবে : মুখ্যমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদন

আগরতলা, আগষ্ট ১৪, : শিক্ষা অন্তহীন। এর কোনও বিকল্প নেই। জ্ঞান ও অজ্ঞানের মধ্যে সেতুবন্ধন করে প্রকৃত শিক্ষা। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হলো যে কোনও শিক্ষার্থীর পীঠস্থান। কিন্তু কেবলমাত্র পুঁথিগত বিদ্যাতেই শিক্ষিত না হয়ে দেশ ও সমাজের জন্য সকল ছাত্রছাত্রীকে এগিয়ে আসতে হবে। তবেই আগামীদিনে সুন্দর ভবিষ্যৎ গড়া সম্ভব। ১৩ আগস্ট বড়দোয়ালি উচ্চমাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ৭৫বছর পূর্তি অনুষ্ঠান এবং পূর্তি অনুষ্ঠান এবং কৃষ্টি ভবনের দ্বারোদঘাটন অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করে একথা বলেন মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর (ডা.) মানিক সাহা। অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী সহ অন্যান্য অতিথিগণ ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষে বিদ্যালয়ের মেধাবী ছাত্রছাত্রীদের পুরস্কার বিতরণ করেন। অনুষ্ঠানে বিদ্যালয়ের ইতিহাস সম্বলিত একটি তথ্যচিত্রও প্রদর্শিত হয়। বিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে মুখ্যমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিলের জন্য অর্থরাশি দান করা হয়।

এই অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখতে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর (ডা.) মানিক সাহা বলেন, ১৫ আগস্ট, ১৯৫০ সালে যাত্রা শুরু করা বড়দোয়ালি উচ্চমাধ্যমিক বিদ্যালয় ত্রিপুরা রাজ্যের অন্যতম বনেদি বিদ্যালয়। প্রতি বছরই এই বিদ্যালয়ের ফলাফল ভালো হয়। এক্ষেত্রে ছাত্রছাত্রী সহ তাদের অভিভাবক ও শিক্ষক শিক্ষিকাদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। শুধু পড়ালেখাতেই নয়, বিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীরা সাংস্কৃতিক অঙ্গনে এবং ক্রীড়াক্ষেত্রেও বিশেষ সাফল্যের নজির রাখছে। তিনি এবছরের মাধ্যমিক পরীক্ষায় ১০০ শতাংশ সাফল্য লাভ করার জন্য বিদ্যালয়ের সঙ্গে যুক্ত সকলকে অভিনন্দিত করেন। মুখ্যমন্ত্রী পুরোনো স্মৃতিকে বজায় রেখে বর্তমানের চেতনাকে একত্রিত করে বিদ্যালয়ের শিখন পদ্ধতিকে আরও উন্নত করার উপর জোর দেন। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, বর্তমান সরকার রাজ্যে মূল্যবোধের মাধ্যমে পূর্ণাঙ্গ শিক্ষার বিকাশে জোর দিয়েছে। প্রাচীন সময়ে ভারতবর্ষ ছিল সমস্ত পৃথিবীর নিকট জ্ঞান লাভের অন্যতম গন্তব্য। কিন্তু বিদেশি শক্তির প্রভাবে তা বিনষ্ট হয়েছিল। যা আজ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বে পুনরুদ্ধারের সদর্থক প্রচেষ্টা জারি রয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী রাজ্যের শিক্ষা ব্যবস্থার উন্নয়নে গৃহীত জাতীয় শিক্ষানীতি, নিপুণ ত্রিপুরা, সহর্ষ কর্মসূচি, টিস্কোয়াফ, বিদ্যাজ্যোতি বিদ্যালয়, মুখ্যমন্ত্ৰী মেধা পুরস্কার, সুপার ৩০, প্রি-প্রাইমারি পঠন পাঠন কর্মসূচি চালু, প্রয়াস কর্মসূচি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেন। মুখ্যমন্ত্রী কন্যা আত্মনির্ভর যোজনায় ১৪০ জন ছাত্রীকে স্কুটি প্রদান, ৪২৬টি বিদ্যালয়ে বৃত্তিমূলক শিক্ষা চালু, নবম শ্রেণিতে পাঠরত ছাত্রীদের জন্য বিনামূল্যে প্রায় ১ লক্ষ ২২ হাজার বাইসাইকেল প্রদান, রাজ্যের ৮৫৪টি বিদ্যালয়ে স্মার্ট ক্লাস চালু করা হয়েছে বলে জানান।

মুখ্যমন্ত্রী বলেন, রাজ্যের শিক্ষা পরিকাঠামোর উন্নয়নে ২০২৪-২৫ অর্থবছরে ৪০টি বিদ্যালয়ের জন্য ১৫৩ কোটি টাকা ব্যয় করা হয়েছিল। তাছাড়া বিদ্যালয় সংস্কারের জন্য ৮০ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছিল। ২০২৫-২৬ অর্থবছরে একই কর্মসূচির জন্য যথাক্রমে ২৬৪ কোটি টাকা এবং ১৫১ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, প্রকৃত শিক্ষায় শিক্ষিত হলে নিজের সাথে সাথে সমাজের বিভিন্ন সমস্যা সমাধানের সুবিধা হয়। প্রকৃত শিক্ষাই পারে মনকে শক্তিশালী করতে। আর শক্তিশালী মনই ড্রাগস মুক্ত সমাজ গঠন করতে পারে এবং এইচ.আই.ভি. এইডসের মতো রোগকে সমাজ থেকে মুছে দিতে পারে। মুখ্যমন্ত্রী সরকারি সহায়তা প্রাপ্ত যে সকল বিদ্যালয়ে শিক্ষকের সমস্যা রয়েছে তা আগামীদিনে দূর করার জন্য রাজ্য সরকার প্রচেষ্টা চালাচ্ছে বলে জানান। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, বর্তমান সময়ে রাজ্যেই উচ্চশিক্ষা লাভের প্রচুর সুযোগ রয়েছে। বর্তমানে রাজ্যে এম.বি.বি.এস., ডেন্টাল সহ বিভিন্ন উচ্চশিক্ষা লাভের জন্য প্রচুর শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। যার মাধ্যমে আগামীদিনে এই রাজ্য এডুকেশন হাবে পরিণত হবে। রাজ্যের ছাত্রছাত্রীদের মেধার কোনও ঘাটতি নেই। বর্তমানে জাতীয় ক্ষেত্রেও এই মেধার স্ফূরণ সর্বত্র লক্ষ্য করা যাচ্ছে। তিনি আশা প্রকাশ করেন বর্তমানে ছাত্রছাত্রীরা শুধু নিজের জন্য না চিন্তা করে দেশ ও সমাজ গড়ার কাজেও নিজেকে নিয়োজিত করবে।

অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখতে গিয়ে ত্রিপুরা বিধানসভার উপাধ্যক্ষ রামপ্রসাদ পাল বলেন, এই বিদ্যালয়ের খ্যাতি রাজ্যজুড়ে রয়েছে। এই বিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীরা বর্তমানে রাজ্য ও দেশের বিভিন্ন প্রান্তে সুনামের সঙ্গে কাজ করছেন। অনুষ্ঠানে এছাড়াও বক্তব্য রাখেন বিদ্যালয় পরিচালন কমিটির সম্পাদক জয়ন্ত চৌধুরী এবং সভাপতি মানিক দত্ত। অনুষ্ঠানে এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন আগরতলা পুরনিগমের মেয়র তথা বিধায়ক দীপক মজুমদার, ৪০ নং ওয়ার্ডের কর্পোরেটর সম্পা সরকার চৌধুরী, বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষিকা টুটু বণিক। অনুষ্ঠান উপলক্ষ্যে এই বিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষক শিক্ষিকা ও ছাত্রছাত্রীগণও উপস্থিত ছিলেন।

আরও পড়ুন...


Post Your Comments Below

নিচে আপনি আপনার মন্তব্য বাংলাতেও লিখতে পারেন।

বিঃ দ্রঃ
আপনার মন্তব্য বা কমেন্ট ইংরেজি ও বাংলা উভয় ভাষাতেই লিখতে পারেন। বাংলায় কোন মন্তব্য লিখতে হলে কোন ইউনিকোড বাংলা ফন্টেই লিখতে হবে যেমন আমার বাংলা কিংবা অভ্রো কী-বোর্ড (Avro Keyboard)। আমার বাংলা কিংবা অভ্রো কী-বোর্ডের সাহায্যে মাক্রোসফট্ ওয়ার্ডে (Microsoft Word) টাইপ করে সেখান থেকে কপি করে কমেন্ট বা মন্তব্য বক্সে পেস্ট করতে পারেন। আপনার কম্পিউটারে আমার বাংলা কিংবা অভ্রো কী-বোর্ড বাংলা সফ্টওয়ার না থাকলে নিম্নে দেয়া লিঙ্কে (Link) ক্লিক করে ফ্রিতে ডাওনলোড করে নিতে পারেন।

Free Download Avro Keyboard

Fields with * are mandatory





Posted comments

Till now no approved comments is available.