Hare to Whatsapp
অনলাইন চেস ট্যূর্নামেন্টে ব্যাপক উৎসাহ দেখে খুশি রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব ও অন্যান্য মন্ত্রিগণ৷
By Our Correspondent
আগরতলা, জুন ১৩, : রাজ্যে সরকারের পূর্তদপ্তরের বাস্তুকার এবং দাবারু নির্মল দাস করোনা সন্ত্রাসে উদ্ভূত অভূতপূর্ব ভয়াবহ বাতাবরণ থেকে দাবারুদের জন্য এনে দেন সোনালী সুযোগ৷ যে দাবা মানে অসীম ধৈর্য আর অধ্যবসায়ের পরীক্ষা৷ রুদ্ধশ্বাস স্নায়ু যুদ্ধ৷ ঘরের মাঝে ছোট্ট ৬৪ ঘরেই চলে মেধা ও মননের এই আশ্চর্য লড়াই৷ বাঁধন হারা উচ্ছ্বাস আর উদ্দীপনাতে শ্রীদাস সংগঠিত করেন একশ দিনের ম্যারাথন দাবা ট্যূর্ণাম্যান্ট। শ্রীদাসের ধারাবাহিক প্রচেষ্টাতে খুশি ছিলেন রাজ্যের বিভিন্ন অংশের দাবারু ও দাবা অভিভাবক ও ক্রীড়া মহল৷ তাইতো খেলার বিভিন্ন পর্যায়ে বর্ষিত হয়েছে শুভেচ্ছা৷ ৯ই জুনের শততম ট্যূর্নামেন্ট উপলক্ষে তাকে শুভেচ্ছা ট্যূইট করেন মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব থেকে মন্ত্রি শ্রীরতনলাল নাথ, শ্রী মনোজ কান্তি দেব সাংসদ শ্রীমতি প্রতিমা ভৌমিক, ত্রিপুরা স্পোর্টস্ কাউন্সিলের সম্পাদক শ্রী অমিত রক্ষিত ও সারা ভারত দাবা ফেডারেশনের সম্পাদক শ্রী বিজয় দেশপান্ডে থেকে বিশ্বের ও দেশের অজস্র দাবা ব্যাক্তিত্ব সংগঠনের পদাধিকারীরা উদ্যোক্তা নির্মল দাস কে শুভেচ্ছা বার্তা পাঠিয়েছেন। শ্রীদাসকে শুভেচ্ছা বার্তা পাঠিয়েছিলেন দেশের গর্ব দাবারু গ্র্যান্ডমাস্টার বিশ্বনাথন আনন্দ ও দিব্যেন্দু বরুয়ার মতো দাবারুরাও৷ সকলে তাকে ধন্যবাদ জানান তার এরূপ দৃষ্টান্তমূলক বলিষ্ট প্রচেষ্টার৷ এদেশের তথা বিশ্বের বিভিন্ন দেশের দাবারু দাবা সংগঠনের পদাধিকারীরা শততম ম্যাচের সার্বিক সফলতা কামনা করেছিলেন৷ মানব সভ্যতার ইতিহাসে এই করোনাকালের এই অভূতপূর্ব দুর্যোগের ঘটনার উল্লেখ নেই। বিশ্বের বিরাট সংখ্যক জনগোষ্ঠীর সঙ্গে বোধহয় এই প্রথম পরিচয় ঘটে লকডাউন নামক শব্দটির। করোনা ভাইরাসের সংক্রমন ঠেকাতে ২৪ মার্চ ভারতেও ঘোষিত হয়েছিল সম্পূর্ণ লকডাউন। তো ২৫ মার্চ থেকে দেশব্যাপী সিংহভাগ জনগণের শুরু বন্দী যাপন৷ জীবদ্দশায় এই প্রথম এক কঠিন বাস্তবের মুখোমুখি হয় হাল প্রজন্ম। বিশ্বের সাত বিলিয়নের জনগোষ্ঠীর পক্ষে সময় কাটানো অত্যন্ত কঠিন হয়ে দাঁড়ায়। করোনাত্রাসে উদ্বেগ আর উৎকন্ঠা নায়ে যাপন হয়ে পড়েছিল এক কঠিনতম কাজ। কিন্তু প্রশাসনিক ও স্বাস্থ্য নির্দেশিকা তো মানতেই হবে। তাই খেলাধূলো ও শরীরচর্চার অনস্বীকার্য প্রয়োজনেও ঘরের বাঁধন ছিঁড়ে বেড় হওয়া ছিল অসম্ভব৷ তখনই প্রযূক্তিনির্ভর অনলাইন দাবা যেন বিরাট সুযোগ এনে দেয় দাবারুদের। ২৮ মার্চ থেকেই নির্মল দাস সূচনা করেন তার অনলাইন দাবা৷ তো আনন্দে আত্মহারা হয়ে পড়ে দাবারুরা। যাদের দীর্ঘদিন প্রথমে তেমন যোগাযোগ ছিলনা দাবার সঙ্গে তারাও সেদিন প্রবল উৎসাহে বসে পড়েন মোবাইল হাতে কিংবা নিজস্ব কম্পিউটারের সামনে৷ মনোনিবেশ করেন অনলাইন দাবায়। কারণ দাবা মানেই তো ঠান্ডা লড়াই৷ কেবলই উত্তেজনা৷ স্নায়ু যুদ্ধ৷ আত্মতুষ্টির প্রশান্ত পারাবার। প্রযুক্তির হাত ধরে ধারাবাহিক রক্তপাতহীন স্নায়ু যুদ্ধে ক্রমশ বাড়তে থাকে অংশগ্রহনকারী দাবারুর সংখ্যা৷ চলতে থাকল বুদ্ধি বিকাশের ধারাবাহিক পর্ব৷ মনোবিদরাও বলেন মানুষ মাত্রেরই জীবনে সফলতা হাসিল করতেই এই দাবা খেলাও কিনা বিরাট ভূমিকা নিতে পারে। রাজ্যান্তরিত হয়ে এই অনলাইন বিপুল জনপ্রিয়তা লাভ করতে থাকে ধীরে ধীরে৷ দেশ দেশান্তরে ছড়িয়ে পড়ে খ্যাতি৷ দ্রুত বাড়তে লাগল অংশগ্রহনকারীদের সংখ্যা৷ অংশ নেয় অজস্র স্বনামধন্য বিশ্বমানের দাবারু৷ যদিও শুরুতে উত্তর পূর্বাঞ্চলের দাবারুদের মধ্যেই প্রতিযোগিতা সীমাবদ্ধ ছিল কিন্তু পরবর্তী সময়ে বিশ্বের বহু দেশেই বেশ জনপ্রিয়তা পায় শ্রীদাসের এই অনলাইন দাবা৷ নেপাল বাংলাদেশ শ্রীলংকা জার্মানী দক্ষিন করোনা, ওমান, ব্রাজিল, ফিলিপাইনস্, ইউ এ ই, সূইডেন ও কাতার উজবেকিস্তান এভাবে একে ৭১টিরও বেশি বিভিন্ন দেশের দাবারু৷ শুধুমাত্র ১০০তম ম্যাচেই অংশ নেয় ২২২৬ এর উপর দাবারু৷ যেখানে যোগদান করেছিল বিশ্বের নতুন আরও ১৮টি দেশের দাবারুরা। চমকের বিষয় ৯ জুনের শততম ম্যাচে বিশ্বের স্বনামধন্য ৫ জন গ্র্যান্ডমাস্টার, ৭ জন ইন্টারন্যাশনাল মাস্টার, ১ জন উইম্যান ইন্টারন্যাশনাল মাস্টার, ১৪ জন ফিডে মাস্টার, ৩ জন ন্যাশনাল মাস্টার ও ২ জন কেন্ডিডেট মাস্টার সহ বিশ্বের নানান দেশের ৩২ জন স্বনামধন্য দাবারুও৷ যাদের মধ্যে উল্লেখ্য ভারতের ভারত সুব্রহ্ম্রনম্ হরিশংকরণ আর্মেনিয়ার গ্র্যান্ডমাস্টার জিভর্গ হারুতিজুনয়ান রাশিয়ার উইম্যান ইন্টারন্যাশনাল মাস্টার ওলেগা কারেভিয়া প্রমূখ৷ শ্রীদাস জানিয়েছেন আগামী ১৭ জুন এই শততম ম্যাচের ফলাফল ঘোষণা ও পুরস্কার বিতরণ করা হবে৷ উল্লেখ্য ইতিপূর্বে এই অনলাইন ট্যূর্নামেন্টে অংশ নিয়েছেন রাজ্যের খ্যাতনামা দাবারু ফিডে মাস্টার প্রসেনজিৎ দত্ত গ্র্যান্ডমাস্টার দীপ্তায়ন ঘোষ, ইন্টারন্যাশনাল মাস্টার নীরাজ কুমার মিশ্র ও কাতারের বিখ্যাত দাবারু সিডি বাইডিয়ার মতো দাবারুরা৷ শুরু থেকে ধরে সর্বমোট প্রায় ৩৫৭৫ জন দেশ বিদেশের দাবারু এই অনলাইন ট্যূর্ণাম্যান্টে অংশ নিয়েছেন৷ ট্যূর্ণাম্যান্টে অংশ নিয়েছেন৷ শ্রীদাস আরও জানিয়েছেন তিনি এখন থেকে প্রতি রবিবারেই শুধু তার ট্যূর্নামেন্ট চালিয়ে যাবেন৷ শ্রীদাসের এই বিশেষ আয়োজন রাজ্যে দাবাকে বিশেষ ভাবে সমৃদ্ধ করেছে৷ কথাটা বোধহয় মোটেই অপ্রাসঙ্গিক হবেনা যে, দীপা কর্মকার কিংবা আর্শিয়া দাসের মতো ক্রীড়া তারকারা যেমনটি বিশ্বের ক্রীড়া মানচিত্রে রাজ্যের সুনাম বৃদ্ধি করেছেন তেমনি শ্রী দাসের লকডাউন ওপেন অনলাইন ইল্টারন্যাশনাল চেস্ ট্যূর্নামেন্টও ছোট্ট হীরা পার্বতীকে বিশ্ববাসীর কাছে উজ্জ্বল পরিচিতি এনে দিয়েছে৷ সকলের বিশ্বাস শ্রী দাসের এই অনলাইন দাবায় লাগাতর খেলার অভিজ্ঞতা পুষ্ট রাজ্যের দাবারুরা আগাীদিনে আরও বিরাট সুনাম কুড়িয়ে আনতে সক্ষম হবে রাজ্যের জন্য৷