বহিরাজ্য থেকে পণ্য আমদানির পরিমাণ কমিয়ে আনার লক্ষ্যে রাজ্যের অভ্যন্তরীণ কৃষিজাত পণ্য সামগ্রীর উৎপাদন বাড়াতে হবে : কৃষিমন্ত্রী
নিজস্ব প্রতিবেদন
আগরতলা, আগষ্ট ৯, : বহির্রাজ্য থেকে পণ্য আমদানির পরিমাণ কমিয়ে আনার লক্ষ্যে রাজ্যের অভ্যন্তরীণ কৃষিজাত পণ্য সামগ্রীর উৎপাদন বাড়াতে হবে। প্রয়োজনে ত্রিপুরা থেকে বিভিন্ন কৃষিজাত পণ্য সামগ্রী অন্য রাজ্য বা বিদেশে রপ্তানি করা যায় কিনা সেই বিষয়ের উপর বিশেষ নজর দিতে হবে। ৮ আগস্ট পশ্চিম ত্রিপুরা জেলা প্রশাসন কার্যালয়ের কনফারেন্স হলে অনুষ্ঠিত পশ্চিম ত্রিপুরা জিলা পরিষদের সাধারণ সভায় কৃষি ও কৃষক কল্যাণমন্ত্রী রতনলাল নাথ একথা বলেন। তিনি বলেন, সমগ্র রাজ্যের সাথে পশ্চিম জেলাকেও খাদ্য উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণ হতে হবে। এজন্য জেলার এক ইঞ্চি জমিও যেন খালি না থাকে সেদিকে নজর দিতে হবে। সরকারি ও বেসরকারি সমস্ত চাষযোগ্য জমিতেই যেন কিছু না কিছু চাষ হয় সেদিকে কৃষি দপ্তরের আধিকারিকদের বিশেষভাবে নজর রাখতে হবে। পতিত জমি উদ্ধার করে সেই জমিকে চাষযোগ্য করার জন্য তিনি কৃষি দপ্তরের আধিকারিকদের পরামর্শ দেন। আদা, গোলমরিচ, লবঙ্গ, তেজপাতা, এলাচ, জিরা, ধনিয়ার মতো মশলা জাতীয় পণ্য সামগ্রীর উৎপাদনে বিশেষভাবে নজর রাখার জন্য তিনি হর্টিকালচার দপ্তরের আধিকারিকদের নির্দেশ দিয়েছেন।
কৃষিমন্ত্রী বলেন, কৃষিকাজের পাশাপাশি মাছচাষ, প্রাণীপালনের মাধ্যমেও মানুষকে স্বয়ংসম্পূর্ণ হতে হবে। এক কথায় প্রতিটি পরিবারের সদস্যদের মধ্যে অর্থনৈতিক দিক দিয়ে স্বয়ম্ভর হওয়ার মানসিকতা গড়ে তুলতে হবে। তাহলেই ত্রিপুরা তথা পশ্চিম জেলা উন্নয়নের মানচিত্রে এক উল্লেখযোগ্য স্থান নিতে পারবে। এই লক্ষ্যে পৌঁছাতে হলে জনপ্রতিনিধি এবং সরকারি কর্মচারিদের হাতে হাত মিলিয়ে কাজ করতে হবে। প্রত্যেক ব্লকগুলিতে উন্নয়নমূলক কাজকর্ম ঠিকভাবে বাস্তবায়িত হচ্ছে কিনা তা খতিয়ে দেখার জন্য তিনি নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের পরামর্শ দিয়েছেন। উন্নয়নমূলক কাজের মধ্যে কোনও ত্রুটি থাকলে সেগুলিও সংশ্লিষ্ট দপ্তরের নজরে আনার জন্য তিনি পরামর্শ দেন।
সভায় কৃষি ও কৃষক কল্যাণ দপ্তরের প্রতিনিধি জানান, এই মুহূর্তে জেলার ৩টি মহকুমার ৫টি স্থানে কৃষকদের কাছ থেকে ধান ক্রয় করা হচ্ছে। গত ৫ আগস্ট থেকে এই ধান কেনার কাজ শুরু হয়েছে। কাজ চলবে ১৮ আগস্ট পর্যন্ত। এবছর ১৩২৭.৫ মেট্রিকটন ধান কেনার লক্ষ্যমাত্রা নেওয়া হয়েছে। তিনি জানান, এবছর প্রধানমন্ত্রী কৃষি সিঞ্চাই যোজনায় জেলার ৮০টি নতুন পুকুরের সংস্কার এবং ৪০টি নতুন পুকুর খনন করা হবে। ১০০টি বৈদ্যুতিক পাম্পসেট এবং ১৫০টি পেট্রোল ও ডিজেলচালিত পাম্পসেট বিতরণ করা হবে।
সভায় বিদ্যুৎ নিগমের প্রতিনিধি জানান, এখন পর্যন্ত পশ্চিম জেলায় ৫১৫টি বাড়িতে প্রধানমন্ত্রী সূর্যঘর বিজলি যোজনায় সোলার প্ল্যান্ট বসানো হয়েছে। মৎস্য দপ্তরের প্রতিনিধি জানান, এবছর মুখ্যমন্ত্রী মৎস্য বিকাশ যোজনায় জেলার ২০৯ জন মৎস্যজীবীকে বিভিন্ন ধরনের মাছের পোনা দেওয়া হয়েছে। এছাড়া এই জেলায় ১২৬ জনকে মাছ ধরার জাল, ৫০ জনকে মাছ রাখার আইস বক্স দেওয়া হয়েছে। ডুকলি পঞ্চায়েত সমিতির চেয়ারম্যান সভায় জানান, এবছর পঞ্চায়েত সমিতির উদ্যোগে ডুকলি ব্লক এলাকায় ১ লক্ষ গাছের চারা রোপণ করা হয়েছে। এছাড়া মোহনপুরে ৫০ হাজার, জিরানীয়ায় ৭০ হাজার এবং পুরাতন আগরতলায় ৬০ হাজার গাছের চারা রোপণ করা হয়েছে বলেও সংশ্লিষ্ট পঞ্চায়েত সমিতির চেয়ারম্যানগণ সভায় জানিয়েছেন।
সভায় সভাপতিত্ব করেন পশ্চিম ত্রিপুরা জিলা পরিষদের ভারপ্রাপ্ত সভাধিপতি বিশ্বজিৎ শীল। সভায় অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বিধায়ক মিনারাণী সরকার বিধায়ক স্বপ্না দেববর্মা, জেলার বিভিন্ন পঞ্চায়েত সমিতির চেয়ারম্যানগণ, পশ্চিম ত্রিপুরা জেলার জেলাশাসক ও সমাহর্তা ডা. বিশাল কুমার, বিভিন্ন ব্লকের বিডিওগণ এবং বিভিন্ন দপ্তরের আধিকারিকগণ।
আরও পড়ুন...