Hare to Whatsapp
স্বেচ্ছা অবসরে যেতে চান আরও এক সিনিয়র আই এ এস ও আই পি এস অফিসার
By Our Correspondent
আগরতলা, জুন ১০, : প্রাক্তন মুখ্যসচিব এল কে গুপ্তা ও সিনিয়র আই এ এস অফিসার ওয়াই কুমার-এর পর ত্রিপুরা ক্যাডারের আরও একজন সিনিয়র আই এ এস অফিসার চাকুরী ছাড়তে চেয়ে মুখ্যসচিব মনোজ কুমার এর কাছে স্বেচ্ছা অবসরে যেতে চেয়ে আবেদন করেছেন। এর আগে রাজ্যে পুলিশের এক সিনিয়র আই পি এস অফিসার জয়দীপ নায়েকও স্বেচ্ছা অবসরে যেতে চেয়ে আবেদন করে রেখেছেন। নতুন করে যিনি ক’দিন আগে স্বেচ্ছা অবসরে যেতে চেয়ে মুখ্যসচিব-এর কাছে আবেদন করেছেন উনার নাম এস কে রাকেশ। তিনি বর্তমানে রাজ্য প্রশাসনের দুই নম্বর আমলা। অতিরিক্ত মুখ্যসচিব পদে স্বাস্থ্য, কৃষি, পশুপালন ও ফিসারিজের এর মতো গুরুত্বপূর্ন দপ্তরের দায়িত্ব রয়েছে শ্রী এস কে রাকেশ-এর হাতে। কিন্তু হঠাৎ করে করোনার কঠিন পরিস্থিতিতে শ্রী রাকেশ কেন স্বেচ্ছা অবসরে যেতে চেয়ে দরখাস্ত করে বসলেন এব্যাপারে প্রশাসনিক স্তরে কোন কিছু জানা যায়নি। তবে শ্রী রাকেশ যে আজ থেকে দশদিন আগেই স্বেচ্ছা অবসরে যেতে চেয়ে আবেদনপত্র জমা দিয়েছেন এটা সচিবালয়ে মুখ্যসচিব-এর অফিস থেকে স্পস্টতই জানা গেছে। তবে এখনো এস কে রাকেশ ও জয়দীপ নায়েক-এর স্বেচ্ছা অবসরে যেতে চেয়ে করা দরখাস্ত বা আবেদনপত্রের মঞ্জুরি মিলেনি।
প্রসঙ্গত, ক’দিন আগে এস বসু নামে এক আই এ এস (অবসরপ্রাপ্ত) অফিসার স্বাস্থ্য সচিব-এর পদ থেকে স্বেচ্ছা অবসরে চলে যান। তিনি অবশ্য চাকুরী শেষে চুক্তিবদ্ধ আমলা হিসাবে কাজ করছিলেন। এবং তার বিরুদ্ধে করোনা মহামারীর চিকিৎসা সামগ্রী ক্রয়ে অনিয়মের অভিযোগ উঠায় তাকে সাময়িক পদচ্যুত করা হয়েছিল। এর পর তিনি প্রথমে একমাসের ছুটিতে ও পরে স্বেচ্ছা অবসরে চলে যান।
অভিযোগ উঠেছে, বিজেপি-আইপিএফটি সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকে রাজ্য প্রশাসনে অফিসারদের মধ্যে একটা চরম অস্থিরতা বিরাজ করছে। প্রশাসনের প্রতিটি স্তরে নির্দেশ পালন করতে গিয়ে সৎ ও বিবেকবান একাংশ অফিসার হাঁপিয়ে পড়েছেন। বহুক্ষেত্রে প্রশাসনিক নিয়ম বিধির বাইরে গিয়েও অফিসার আমলাদের কাজ করতে নির্দেশ আসছে। কিছু কিছু অফিসার আমলা মানিয়ে নিয়ে কাজ করার চেষ্টা করলেও অনেক ক্ষেত্রেই অফিসাররা এসব সহ্য করতে পারেননা। আর এধরনের পরিস্থিতির কারনে এল কে গুপ্তা নামে এক সৎ সিনিয়র আই এ এস অফিসার স্বেচ্ছা অবসরে চলে যান। এর আগে ওয়াই কুমার নামে এক আই এ এস অফিসার চাকুরী থেকে স্বেচ্ছা অবসর নিয়ে রাজ্যান্তরিত হয়েছেন। গত দুই বছরে ওয়াই কুমার এবং এল কে গুপ্তা ছাড়াও নীচু ও মাঝারী স্তরের বহু অফিসার, ইঞ্জিনিয়ার ও চিকিৎসক নয়া প্রশাসনের সাথে খাপ খাওয়াতে না পেরে স্বেচ্ছা অবসরে চলে গেছেন। এই সংখ্যাটা ঠিক কত স্পস্ট করে কেউ এটা বলতে চান না। কিন্তু কোন ভাবেই এই সংখ্যাটা অর্ধশতর কম হবে না বলে সচিবালয় সূত্রে প্রকাশ। তাছাড়া বেশ কিছু সিনিয়র অফিসার আমলা রাজ্যান্তরীত হয়ে গেছেন। তারা ফিরে আসতে চাইছেন না। উদ্ভত অবস্থার প্রেক্ষিতে সিনিয়রিটির দিক দিয়ে এই মুহূর্তে সাত নম্বর আই এ এস অফিসার মনোজ কুমারকে রাজ্যের মুখ্যসচিব বানাতে হয়েছে।
সচিবালয় সূত্রের খবর অনুযায়ী, মনোজ কুমার-এর সিনিয়র যেসব আই এ এস অফিসার এই মুহূর্তের বহিঃরাজ্যে রয়েছেন তারা হলেন সঞ্জীব রঞ্জন, ডঃ জি এস জি আয়েঙ্গার, সুশীল কুমার, ডঃ রাকেশ সারওয়াল, ডঃ কে রাজেশ্বর রাও ও লোক রঞ্জন। মনোজ কুমারকে মুখ্য সচিব পদে বসানোর আগে বহিঃ রাজ্যে ডেপুটেশনে কর্মরত উল্লেখিত অফিসারদের মধ্যে অনেককেই মুখ্যসচিব পদে বসানোর চেষ্টা করতে গিয়ে ফিরে আসার অনুরোধ জানানো হয়েছিল। কিন্তু কেউই ফিরে আসতে রাজী হয়নি। অগত্যা মনোজ কুমারকেই মুখ্যসচিব পদে বসানো হয়েছে।
এছাড়া, অন্তত এক ডজন সিনিয়র আই এ এস অফিসার এই মুহূর্তে বহিঃ রাজ্যে ডেপুটেশনে রয়েছেন। রাজ্যে আই এ এস অফিসারদের সঙ্কট রয়েছে। এসব সিনিয়র অফিসাররা চলে এলে প্রশাসনিক কাজে আরও গতি আসতো। কিন্তু অনেকেই নাকি ফিরে আসেতে চান না। পারলে অনেকেই ফিরে যেতে চান। এই অবস্থা শুধু সিভিল প্রশাসনেই নয়। পুলিশ ও বন প্রশাসনেও একই অবস্থা। পুলিশ প্রশাসনের সিনিয়র মোস্ট অফিসার ভি এস যাদবকে সচিবালয়ে সচিব পদে বসিয়ে রাখা হয়েছে। এতে তিনি ক্ষুব্ধ। খবরে প্রকাশ, তিনিও নাকি কিছুদিনের মধ্যেই স্বেচ্ছা অবসরে যেতে চেয়ে আবেদন করতে পারেন। রাজ্য পুলিশ প্রশাসনের এই মুহূর্তে তৃতীয় সিনিয়র আই পি এস অফিসার জয়দীপ নায়েক ইতিমধ্যেই স্বেচ্ছা অবসরে যেতে চেয়ে আবেদন পত্র মুখ্যসচিব-এর কাছে জমা দিয়ে রেখেছেন। কেন ক’দিন বাদে বাদে এভাবে সিনিয়র আমলারা স্বেচ্ছা অবসরে যেতে চেয়ে আবেদন করে চলেছেন এ ব্যাপারে কেউই মুখ খুলতে নারাজ। তবে ইতিমধ্যে রাজ্যান্তরীত হয়েছেন এমন একাধিক আমলা অফিসারদের মতে, ত্রিপুরা প্রশাসনে এক্ষনে আর আগের মতো অবস্থা নেই। বিভিন্ন পোস্টিং প্রদান কিংবা দপ্তর বন্টনে যেমন সিনিয়র জুনিয়র মানা হচ্ছেনা, পাশাপাশি নিয়ম মেনে কাজ করাও অনেকক্ষেত্রে সমস্যা হচ্ছে। তার উপর ওয়াই পি সিং ইস্যুটি তো রয়েছেই। ওয়াই পি সিং কে যে ইস্যুতে যেভাবে চাকরি থেকে অবসর গ্রহনের তিন বছর পর একটি টেন্ডার কেলেঙ্কারীতে জড়িত থাকার অভিযোগকে সামনে রেখে জেলে পুড়া হয়েছে এর পর থেকেই রাজ্য প্রশাসনের অফিসার আমলাদের মধ্যে ভয় ঢুকে গেছে ভবিস্যতে না তাদের সাথেও পরে অন্য দলের সরকার ক্ষমতায় এসে এমনটা করেন। তাই নিয়মের বাইরে গিয়ে কেউ কোন সিদ্ধান্ত নিতে চান না।