শুধুমাত্র পুথিগত বিদ্যায় শিক্ষিত হলেই চলবে না, সমাজের কথা তথা দেশের কথা মাথায় রেখে এগিয়ে যেতে হবে : মুখ্যমন্ত্রী
নিজস্ব প্রতিবেদন
আগরতলা, জুলাই ২২, : একটি বিদ্যালয়ের সাফল্য নির্ভর করে বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী, শিক্ষক-শিক্ষিকা এবং সামগ্রিক শিক্ষা পরিবেশের উপর। যে বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীরা গুণগত শিক্ষালাভ করে এবং তাদের প্রতিভা বিকাশে উৎসাহ পায় তাকেই সফল বিদ্যালয় বলা যায়। রাজ্যের বর্তমান সরকার সুস্থ শিক্ষার পরিবেশ তৈরি এবং প্রত্যেক ছাত্রছাত্রীর জন্য গুণমানসম্পন্ন শিক্ষা ব্যবস্থার প্রসারে বিভিন্ন পদক্ষেপ রূপায়ণ করছে। ২১ জুলাই রবীন্দ্র শতবার্ষিকী ভবনে বিদ্যালয় শিক্ষা দপ্তরের উদ্যোগে আয়োজিত ১০০ শতাংশ সাফল্যের রাজ্যভিত্তিক সম্মাননা সমারোহের উদ্বোধন করে মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর (ডা.) মানিক সাহা একথা বলেন। উল্লেখ্য, ২০২৫ সালের মাধ্যমিক এবং উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষায় ১০০ শতাংশ ছাত্রছাত্রী পাশের জন্য টি.বি.এস.ই. অনুমোদিত সরকারি ও সরকারি সাহায্যপ্রাপ্ত এবং সি.বি.এস.ই. অনুমোদিত বিদ্যাজ্যোতি স্কুলগুলিকে আজ রবীন্দ্র শতবার্ষিকী ভবনে সম্মানিত করা হয়। রাজ্যের ৩১৬টি স্কুলের ছাত্রছাত্রীরা ১০০ শতাংশ পাশ করেছে। এই ৩১৬টি স্কুলের মধ্যে আজকের অনুষ্ঠানে ৫০টি স্কুলকে প্রতীকী হিসাবে সম্মান জ্ঞাপন করা হয়। মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর (ডা.) মানিক সাহা সংশ্লিষ্ট বিদ্যালয়ের প্রতিনিধির হাতে স্মারক ও অভিজ্ঞানপত্র তুলে দেন। এছাড়াও অনুষ্ঠানে বিদ্যালয় শিক্ষা দপ্তরের সাফল্য সম্বলিত একটি পুস্তিকার আবরণ উন্মোচন করেন মুখ্যমন্ত্রী সহ উপস্থিত অতিথিগণ।
অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, বিদ্যালয়ের সফলতার অধিকাংশ নির্ভর করে সংশ্লিষ্ট বিদ্যালয়ের শিক্ষক শিক্ষিকাগণের উপর। ছাত্রছাত্রীদের জীবন গড়ার ক্ষেত্রে তাঁদের বিরাট ভূমিকা রয়েছে। শিক্ষকরাই প্রকৃত মানুষ গড়ার কারিগর। ছাত্রছাত্রীদের বিভিন্ন খামতি এবং সমস্যাগুলি বিদ্যালয়ের শিক্ষকরাই পূরণ করতে পারেন। ছাত্রছাত্রীদের সফল করে তুলতে শিক্ষক সমাজের দায়িত্ব অপরিসীম। পাশাপাশি ছাত্রছাত্রীদেরও পড়াশুনার প্রতি আরও মনোযোগী হতে হবে। লক্ষ্য স্থির রেখে এগিয়ে চলতে হবে। মুখ্যমন্ত্রী আরও বলেন, শুধুমাত্র পুথিঁগত বিদ্যায় শিক্ষিত হলেই চলবে না, সমাজের কথা তথা দেশের কথা মাথায় রেখে এগিয়ে যেতে হবে। সমাজ পরিবর্তনে এগিয়ে আসতে হবে। তবেই প্রকৃত শিক্ষার সার্থকতা আসবে। শিক্ষক, অভিভাবক এবং শিক্ষার্থীদের মধ্যে নিবিড় সম্পর্ক গড়ে তুলতে হবে। তবেই রাজ্য সরকার তথা কেন্দ্রীয় সরকারের মূল লক্ষ্য গুণগত শিক্ষার প্রসার ঘটবে। মুখ্যমন্ত্রী উপস্থিত শিক্ষক-শিক্ষিকদের উদ্দেশ্যে বলেন, যেসব বিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীরা ১০০ শতাংশ পাশের সফলতা অর্জন করেছে তাদের আত্মতুষ্টির কোনও স্থান নেই। এর ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে হবে।
বিদ্যালয়কে সমস্ত ক্ষেত্রে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। রাজ্যের ছাত্রছাত্রীরা দেশের অন্যান্য রাজ্যের ছাত্রছাত্রীদের তুলনায় মেধার দিকে কোনও অংশে কম নয়। শুধু চাই সঠিক পরিচর্যা ও অবিচল লক্ষ্য। রাজ্য সরকার সেই লক্ষ্য পূরণে ছাত্রছাত্রীদের শিক্ষার বিকাশে কাজ করে চলছে। অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী রাজ্যে শিক্ষা ব্যবস্থার উন্নতিকল্পে বর্তমান সরকারের বিভিন্ন উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ সমূহের কথা তুলে ধরেন। এই প্রসঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী টি-স্কয়ার শিক্ষা পদ্ধতি চালুর কথা বলেন। এতে বিদ্যালয়গুলির উৎকর্ষতার মান বৃদ্ধি পাচ্ছে বলে তিনি জানান। এছাড়াও তিনি শিক্ষা দপ্তরের উদ্যোগে বছর বাঁচাও পরীক্ষা পদ্ধতি চালু, ধীরগতির শিক্ষার্থীদের জন্য নিয়মিতভাবে রেমিডিয়েল ক্লাস চালু, শিক্ষা ক্ষেত্রে সুপার-৩০ প্রকল্প চালু, মুখ্যমন্ত্রী মেধা পুরস্কার, নবম শ্রেণির ছাত্রীদের মধ্যে বিনামূল্যে বাইসাইকেল বিতরণ, প্রি-প্রাইমারি ক্লাস চালু, বৃত্তিমূলক শিক্ষা, অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রের শিশুদের জন্য মিশন মুকুল প্রকল্প চালু, পি.এম. শ্রী প্রকল্প চালু, অভিন্ন প্রশ্নপত্রে পরীক্ষা পদ্ধতি, মুখ্যমন্ত্রী কন্যা আত্মনির্ভর যোজনায় দ্বাদশমান পরীক্ষায় উত্তীর্ণ ১৪০ জন মেধাবী ছাত্রীদের মধ্যে বিনামূল্যে স্কুটি প্রদান, ২০২৪-২৫ অর্থবছরে ৩৭৮টি বিদ্যালয়ের জন্য টিচিং লার্নিং মেটেরিয়ালস ক্রয়, সি.এম.-সাথ অ্যাওয়ার্ড চালু, লক্ষ্য প্রকল্প চালু, বন্দে ত্রিপুরা ই-বিদ্যা চ্যানেল চালু ইত্যাদির কথা তুলে ধরেন। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, শিক্ষক-শিক্ষিকাদের দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য বিভিন্ন প্রশিক্ষণ কর্মসূচিরও ব্যবস্থা করা হচ্ছে। শিক্ষায় রাজ্য এখন এগিয়ে। এর প্রকৃষ্ট উদাহরণ হল সম্প্রতি ত্রিপুরাকে পূর্ণ সাক্ষর রাজ্য হিসাবে ঘোষণা করা হয়েছে। ত্রিপুরা দেশের তৃতীয় রাজ্য হিসাবে মিজোরাম ও গোয়ার পর পূর্ণ সাক্ষরতার মর্যাদায় ভূষিত হয়েছে।
মুখ্যমন্ত্রী আরও বলেন, রাজ্য সরকার শিক্ষা পরিকাঠামোর উন্নয়নেও সমান গুরুত্ব দিয়েছে। ২০২৪-২৫ সালে শিক্ষা দপ্তরের অধীনে ১৫৩ কোটি টাকা ব্যয়ে ৪৪টি বিদ্যালয়ে নতুন ভবন নির্মাণ করা হয়েছে। ২০২৪-২৫ সালে শিক্ষা দপ্তরের অধীনে ৮০ কোটি ৮৭ লক্ষ টাকা ব্যয়ে রাজ্যের মোট ৩৪৬টি বিদ্যালয়ের পরিকাঠামো সংস্কার করা হয়েছে। এছাড়াও ২০২৫-২৬ অর্থবছরে ২৬৪ কোটি টাকা ব্যয়ে মোট ৩০টি বিদ্যালয়ে নতুন ভবন নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে এবং ১৫১ কোটি ২১ লক্ষ টাকা ব্যয়ে ১২৩টি বিদ্যালয়ের পরিকাঠামো সংস্কারের পরিকল্পনা রয়েছে। অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর (ডা.) মানিক সাহা আরও বলেন, ত্রিপুরা বর্তমানে অনেকগুলি প্যারামিটারে সফলতার দিক দিয়ে দেশের অনেক রাজ্য থেকে এগিয়ে রয়েছে। রাজ্যের এই সাফল্য অব্যাহত রাখা আগামী দিনে ছাত্রছাত্রীদের উপরই ন্যাস্ত থাকবে। তাদের উপরই নির্ভর করবে ভবিষ্যতের ত্রিপুরা। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন শিক্ষা দপ্তরের অধিকর্তা এন. সি. শর্মা। বক্তব্য রাখেন শিক্ষা দপ্তরের বিশেষ সচিব রাভাল হেমেন্দ্র কুমার। এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন এস.সি.ই.আর.টি. ত্রিপুরার অধিকর্তা লালনুন্নেমি ডারলং।
আরও পড়ুন...