Hare to Whatsapp
ত্রিপুরা জুড়ে সংক্রমন যদি এভাবে বল্গাহীন গতিতে বাড়তেই থাকে তাহলে নুতন করে কঠোরভাবে লকডাউন বিধি বলবৎ করা ছাড়া আর বিকল্প কিছু রাজ্যের কাছে থাকছেই না
By Our Correspondent
আগরতলা, জুন ২, : বাড়ছেই উদ্বেগ। বাড়ছেই করোনা সংক্রমন। অথচ ছোট্ট রাজ্য ত্রিপুরা। লোকসংখ্যাও মাত্র চল্লিশের কাছাকাছি। এ রাজ্যের যারা বাইরে কর্মরত ছিল এবং রাজ্যে ফিরে এসেছে এদের মধ্যেই করোনা সনাক্ত হচ্ছে বেশী। এঁরা রাজ্যেরই ছেলে মেয়ে, বহিরাজ্যে ছিল, তাঁরা কেন এত বেশি বেশি আক্রান্ত , এটাই মূল চিন্তা। রাজ্য সরকারও গভীর ভাবে চিন্তিত ও উদ্বিগ্ন। রাজ্য সরকার বা প্রশাসনের চিন্তা সংক্রমনের বিস্তার নিয়ে।
বাংলাদেশ, মহারাষ্ট্র, তামিলনাডু, কলকাতা ও পশ্চিমবঙ্গ থেকে যারা এসেছে তাদের একটি অংশ আমাদের উদ্বেগ বাড়িয়ে দিচ্ছে। অন্যথায় রাজ্যে তো সংক্রমন প্রায় ছিলই না। প্রথমে এক ভদ্রমহিলা, পরে এক টিএস আর ও বহিরাজ্যের এক চালকের মধ্যে করোনা সনাক্ত হয়। সংক্রমন বিস্তার রোধে রাজ্য সরকার যুদ্ধকালীন তৎপরতায় কাজ শুরু করে। নেয়া হয় প্রতিরোধাত্মক ব্যবস্হা। এর ফলে সংক্রমন বিস্তার লাভ করতে পারেনি।
এতে রাজ্য সরকার যেমন স্বস্তিতে ছিল তেমনি জনসাধারণও। কিন্তু সেই স্বস্তি উধাও হয়ে গেছে।
যতটুকু খবর ,এই উদ্বেগ, উৎকণ্ঠা আগামী দিনে অবধারিত ভাবে বাড়বেই। কেননা রাজ্যে এখনও অনেক আসার বাকী। রাজ্যে ফিরে আসার জন্য প্রায় ৪০,০০০ জন অনলাইন রেজিস্ট্রেশন করেছেন। জানিয়েছেন শিক্ষা ও মুখ্যমন্ত্রী নিজেই। সোমবার প্রভাতি সাংবাদিক সম্মেলনে মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব বলেন প্রায় পনেরো হাজার ফিরেছেন।আবেদন করেছেন চল্লিশ হাজার। এঁরা রাজ্যের, তো বাড়ীতে ফিরবেন এটা তো স্বাভাবিক ও প্রত্যাশিত। যত সমস্যা ওখানেই।রেলে, বাসে ওঠার আগে ওদের পরীক্ষা হয়েছে, থার্মাল চেকিং হয়েছে। তারপর ওরা রেল,বাসে করে দুদিনে নিজ রাজ্যে এসেছে।আসতে না আসতেই এদের একটা অংশের মধ্যে করোনা সনাক্ত হয়ে গেল।এ কেমন কথা? অনেক চিকিৎসক বলছেন ওখানে পরীক্ষা যথাযথ হয়নি। যথাযথ পরীক্ষা হলে দুদিনের মাথায় এরা সংক্রমিত বলে সনাক্ত হত না।
ঠিকই বলেছেন এরা। তবে বহিঃরাজের পরীক্ষা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
রাজধানী আগরতলার এজিএমসি, ভগৎ সিং যুব আবাসে হাসপাতাল রয়েছে। ওখানে চিকিৎসিত হচ্ছেন আক্রান্তরা। এদিকে রাজ্য সরকার চাইছেন হাপানিয়া আন্তর্জাতিক মেলা প্রাঙ্গণে করোনা হাসপাতালে রুপান্তরিত করতে। খোদ মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব সোমবার নিজেই সরকারের এই অভিপ্রায় ব্যক্ত করেছেন।করোনার গতিপ্রকৃতি যেদিকে যাচ্ছে তাতে মনে হচ্ছে সহসাই এটি করোনা হাসপাতাল হবে। শুধু কি তাই সদর পূর্বাঞ্চলের দুটি স্কুলকেও করোনা হাসপাতাল করার প্রাক প্রস্তূতি নেয়া হয়েছে। বাড়বে হাসপাতালের সংখ্যা জেলা ও মহকুমা স্তরেও। পরিস্থিতি যেদিকে যাচ্ছে তাতে মনে করা হচ্ছে রাজ্যের সব হাসপাতাল করোনা হাসপাতালে উন্নীত করা হবে। অর্থের অভাব নেই, তাই অন্তরায় নেই।
সব চেয়ে বড় বিষয় যদি ক্রমান্বয়ে হাসপাতাল গুলি করোনা হাসপাতালে রুপান্তরিত করা হয় তাহলে অন্যান্য রোগাক্রান্তরা যাবে কোথায় বা তাদের চিকিৎসাই কোথায় হবে? এমনিতেই এখন অন্যান্য রোগাক্রান্ত যারা তাঁরা চিকিৎসা ফ্যাসাদে পড়েছেন।
জিবি তে এমনিতেই রোগীর সংখ্যা হৃস পাচ্ছে করোনা ভাইরাস সংক্রমণ বিস্তারের পর। রোগীরা ভিত্তিহীন আতন্কে জিবির দিকে পা মারাচ্ছেন না কেউ। বিভিন্ন বিভাগের চিকিৎসকদের এখন বসে বসে মাছি তাড়ানোর অবস্হা। ওদিকে চিকিৎসকদের চেম্বারেও তেমন রোগী আসছেই না। কতিপয় চিকিৎসক রোগী দেখছেন সতর্কতা অবলম্বনের মাধ্যমে।টিএমসিতে তো আরো অভাবিত অবস্হা। চিকিৎসক ও রোগীকে মাঝখানে গ্লাস সেপারেটার এ বসে চিকিৎসা নিতে হয়। রোগী মাইক্রোফোনে তার সমস্যা জানান চিকিৎসককে। স্পীকারে তা শুনে চিকিৎসক ব্যবস্হাপত্র বলেন বা নিদান দিয়ে থাকেন। অভূতপূর্ব ব্যবস্হা। বিশ্ব জুড়ে এমন অভাবিত সিস্টেম নেই। কিন্তু পান্ডব বর্জিত রাজ্যে আছে।
আসলে এরাজ্যের কতিপয় চিকিৎসক ছাড়া অন্যরা চিকিৎসা পরিষেবা অভাবনীয় ভাবে প্রদান করে থাকেন বলে প্রকাশ বা অভিযোগ। এমনিতেই কোন রোগীকে এঁরা যদি মনে করেন অল্পবিস্তর জটিল তাহলে রকেট গতিতে এদের রেফার করে দেন অন্যত্র। এদিকে গতকাল বিশাল সংখ্যক রোগী সনাক্ত হওয়াতে রাজ্য সরকার কঠোরভাবে বিধিনিষেধ অবলম্বন করার পরামর্শ দিয়েছেন।তবে সংক্রমন যদি বল্গাহীন গতিতে বাড়তেই থাকে তাহলে নুতন করে কঠোরভাবে লকডাউন বিধি বলবৎ করা ছাড়া আর বিকল্প কিছু রাজ্যের কাছে থাকছেই না।