রাজ্যকে মাছচাষে স্বনির্ভর করে তোলার জন্য রাজ্য সরকার নানা উদ্যোগ নিয়েছে : মৎস্যমন্ত্রী
নিজস্ব প্রতিবেদন
আগরতলা, জুলাই ১১, : রাজ্যকে মাছচাষে স্বনির্ভর করে তোলার জন্য রাজ্য সরকার নানা উদ্যোগ নিয়েছে। মাছচাষের জন্য পতিত জলাশয়গুলিকে যেমন কাজে লাগানো হচ্ছে তেমনি মাছচাষিদের উৎসাহিত করার জন্য নানা প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। ১০ জুলাই কল্যাণপুরের লোটাস কমিউনিটি হলে রাজ্যভিত্তিক জাতীয় মৎস্যচাষি দিবস অনুষ্ঠানের এবং লেম্বুছড়াস্থিত মৎস্য মহাবিদ্যালয়ে ২৫তম জাতীয় মৎস্যচাষি দিবসের উদ্বোধন করে মৎস্যমন্ত্রী সুধাংশু দাস একথা বলেন। পৃথকভাবে আয়োজিত দুটি অনুষ্ঠানে মৎস্যচাষ সম্প্রসারণে রাজ্য সরকারের বিভিন্ন পরিকল্পনার কথা তুলে ধরে মৎস্যমন্ত্রী বলেন, রাজ্যে বছরে ১ লক্ষ ১৭ হাজার মেট্রিকটন মাছের চাহিদা রয়েছে। বর্তমানে রাজ্যে মাছের উৎপাদন হচ্ছে ৮৬ হাজার মেট্রিকটন। ঘাটতি রয়েছে ৩১ হাজার মেট্রিকটনের। পার্শ্ববর্তী রাজ্য পশ্চিমবঙ্গ, অন্ধ্রপ্রদেশ এবং প্রতিবেশি রাষ্ট্র বাংলাদেশ থেকে মাছ এনে এই ঘাটতি পূরণ করা হয়। তিনি বলেন, আমাদের রাজ্যে মাছচাষের জায়গার সীমাবদ্ধতা রয়েছে। আধুনিক পদ্ধতিতে কীভাবে কম জায়গায় বেশি করে মাছের উৎপাদন করা যায় সে বিষয়ে মৎস্য বিজ্ঞানীদের আরও বেশি করে ভাবনাচিন্তা করতে হবে। তিনি বলেন, মুখ্যমন্ত্রী মৎস্য বিকাশ যোজনায় মৎস্যচাষিদের বছরে ৬ হাজার টাকা করে দেওয়া হচ্ছে। পুকুরে বিষ দিয়ে মাছ ধ্বংস করার যে প্রবণতা মাঝেমধ্যে দেখা যায় তা রোধ করার জন্য ক্ষতিপূরণ হিসেবে মাছচাষিদের সর্বোচ্চ ২০ হাজার টাকা প্রদান করার ব্যবস্থা চালু করা হয়েছে। তিনি বলেন, গ্রামীণ অর্থনীতি শক্তিশালী করার ক্ষেত্রে মাছচাষ এক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়ে থাকে। আন্তরিকতার সঙ্গে মাছচাষে এগিয়ে আসার জন্য সংশ্লিষ্টদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, তুলনামূলকভাবে কম খরচে মাছচাষে বেশি আয় করা যায়। রাজ্য সরকারও নানা প্রকল্পে মাছচাষিদের সহায়তা করছে। এই সুবিধাগুলিকে কাজে লাগিয়ে অর্থনৈতিকভাবে স্বয়ম্ভর হয়ে উঠার জন্য তিনি মৎস্যচাষিদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।
কল্যাণপুরের অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখতে গিয়ে রাজ্য বিধানসভায় সরকার পক্ষের মুখ্য সচেতক বিধায়ক কল্যাণী সাহা রায় বিজ্ঞানসম্মত মৎস্যচাষ করে গ্রামীণ অর্থনীতি সমৃদ্ধ করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেওয়ার জন্য মৎস্যচাষিদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। বিধায়ক পিনাকী দাস চৌধুরী বলেন, রাজ্যে মাছের উৎপাদন বৃদ্ধি করতে সরকার গুরুত্ব দিয়ে কাজ করছে। অনুষ্ঠানে অন্যান্য অতিথিদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বিধায়ক নির্মল বিশ্বাস। স্বাগত বক্তব্য রাখেন মৎস্য দপ্তরের অধিকর্তা সন্তোষ দাস। সভাপতিত্ব করেন কল্যাণপুর পঞ্চায়েত সমিতির চেয়ারম্যান সৌমেন গোপ।
অনুষ্ঠানে রাজ্যের বিভিন্ন জেলায় মাছের পোনা উৎপাদন, প্রযুক্তিগত মাছচাষ, রঙিন মাছ উৎপাদন ইত্যাদি ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেওয়ার জন্য প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্থানাধিকারীদের পুরস্কৃত করা হয়। মৎস্যমন্ত্রী সুধাংশু দাস সহ অতিথিগণ তাদের হাতে সম্মাননা ও পুরস্কার তুলে দেন। রাজ্যভিত্তিক এই অনুষ্ঠানে রাজ্যের বিভিন্ন জেলা থেকে ৪০৩ জন মৎস্যচাষি অংশগ্রহণ করেন।
লেম্বুছড়াস্থিত মৎস্য মহাবিদ্যালয়ে অনুষ্ঠিত অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন নাবার্ডের জেনারেল ম্যানেজার অনিল এস. কুমুইর কটমায়ার, আই.সি.এ.আর.-এর প্রাক্তন অধিকর্তা ড. এস. দামরায়, রাজ্য মৎস্য দপ্তরের অধিকর্তা সন্তোষ দাস, কেন্দ্রীয় কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিরেক্টর অব ইনস্ট্রাকশন অধ্যাপক ইন্দিরা সরাংথেং। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন মৎস্য মহাবিদ্যালয়ের ডিন অধ্যাপক এ. বি. প্যাটেল। ধন্যবাদসূচক বক্তব্য রাখেন মৎস্য মহাবিদ্যালয়ের অধ্যাপক গোসনেইড ওয়াইখম। অনুষ্ঠানে উত্তর পূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলির সেরা ৮ জন মৎস্যচাষিকে পুরস্কৃত করা হয় ৷
আরও পড়ুন...