Hare to Whatsapp
পুলিশ সুশান্তকে ঠান্ডা মাথায় খুন করেছে এবং খুনের পর ফাঁসির গল্প সাজিয়েছেঃ টি এইচ আর ও
By Our Correspondent
আগরতলা, জানুয়ারি ১৪, : পশ্চিম থানার হাজতে গত শনিবার গভীর রাতে মৃত সুশান্ত ঘোষের পরিবার- পরিজনদের সাথে আজ ত্রিপুরা হিউম্যান রাইটস অর্গানাইজেশনর এক প্রতিনিধিদল দেখা করেছেন । ন্যায় বিচার পাওয়ার লড়াইয়ে পরিবারটির পাশে থাকার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে টি এইচ আর ও।
টি এইচ আর ও-এর তরফে বলা হয়েছে, মৃত সুশান্ত ঘোষের বোন , বাবা, মা স্ত্রী ও দুই নাবালক ছেলে এখনো রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসের বিভীষিকা থেকে মুক্ত হতে পারেননি । এক দুঃস্বপ্নের রাত্রের মধ্যে তারা রয়েছেন । তাদের কল্পনার বাইরে ছিল যে তাদের পরিবারের একজন সদস্যকে এই ভাবে পুলিশ ঠান্ডা মাথায় খুন করে ফাঁসির গল্প সাজাবে । সুশান্ত ঘোষের বিরুদ্ধে এলাকার কারো কোন অভিযোগ নেই । অত্যন্ত নির্বিবাদী, দায়িত্ব সম্পন্ন পিতা, স্বামী ও পুত্রের ভূমিকা সুশান্ত পালন করে আসছিলেন নিষ্ঠা সহকারে । গত এক সপ্তাহ ধরে বিনা কারণে শর্মিষ্ঠা চক্রবর্তী নামে পুলিশের এক আধিকারিক ও অন্যান্যরা সুশান্ত কে যখন-তখন থানায় ডেকে পাঠাতো এবং জিজ্ঞাসাবাদের নামে তার কাছ থেকে জোর করে স্বীকারোক্তি আদায়ের চেষ্টা করত। সুশান্ত পরিবারকে বলেছিল, আমি কোন অন্যায় করিনি, কোন অপরাধ করিনি, তাই আমি কেন ভয় করব । শুক্রবার দিন সুশান্ত কে গ্রেপ্তার করে শনিবার দিন আদালতে তোলে পুলিশ এবং আদালতে পুলিশ যে ফরওয়ার্ডিং রিপোর্ট পাঠায় তাতে সুশান্ত বিরুদ্ধে আদৌ কোন কিছু ছিল না। কিন্তু তারপরও অদ্ভুতভাবে নিম্ন আদালতের বিচারক পুলিশের কথায় এবং সরকারি আইনজীবীদের আবেদনে সাড়া দিয়ে সুশান্তকে দুদিনের পুলিশ হেফাজতে পাঠায় । শনিবার দিন সারা দিন সুশান্তের বাবা ও প্রতিবেশীরা আদালতে ছিলেন । আদালত থেকে যখন সুশান্তকে গাড়ি করে পুলিশ রওয়ানা হয় তখন গাড়ির পেছনে পেছনে তারাও বাইকে করে যান। কিন্তু সুশান্তকে আদালত থেকে থানায় নিয়ে যাওয়া হয় নি। পরিবারের লোকজন রাত্রি ১ টা অব্দি পশ্চিম আগরতলা থানায় ছিলেন কিন্তু তখনো অব্দি সুশান্ত কে থানায় নিয়ে আসা হয়নি। আজ টি এইচ আর ওর প্রতিনিধিদলকে পরিবারের সদস্যরা বলেছেন যে এলাকাবাসী জানিয়েছে শনিবার দিন গভীর রাতে পুলিশের গাড়ি এসেছিল এবং শানমুড়া ব্রিজের নিচে সুশান্তকে নামাতে তারা দেখেছে। কিছুক্ষণ পরে পুলিশের গাড়ি চলে যায়। এলাকাবাসী ভয়ে কিছু বলেনি। কিন্তু দূর থেকে দেখেছে । শনিবার দিন শেষ রাতে পশ্চিম থানা সুশান্তর বাড়িতে দুজন কনস্টেবল দিয়ে খবর দেয় , অবিলম্বে থানায় যাওয়ার জন্য । খবর পেয়ে সুশান্তের বোন ও অন্যরা থানায় গিয়ে দেখে থানার মধ্যে থানা পুলিশে পুলিশে ছয়লাপ । শর্মিষ্ঠা চক্রবর্তী সহ পুলিশের উচ্চ পুলিশ আধিকারিকদের ভীড়। এটা দেখেই সুশান্তের বোনের বুক মুচড়ে উঠে এক অজানা আশঙ্কায়। থানায় গিয়ে জিজ্ঞাসা করেন সুশান্ত কোথায়? ভাই কোথায় ? থানার দারোগাবাবু্রা জানান সুশান্ত হাসপাতালে। সুশান্ত ফাঁসি দিয়ে আত্মহত্যা করেছে।
সুশান্ত-র পরিবারের অভিযোগ, পুলিশ সুশান্তকে নির্যাতন করে ঠান্ডা মাথায় খুন করেছে এবং খুনের পর ফাঁসির গল্প সাজিয়েছে। টি এইচ আর ও-র অভিমত , পুলিশ ঠান্ডা মাথায় সুশান্তকে খুন করে ফাঁসির গল্প বানিয়েছে এবং এটা পুলিশের বরাবরের পদ্ধতি।
টি এইচ আর ও-র অভিজুগ, এর আগেও বিচারাধীন বন্দীদের খুন করে ফাঁসির গল্প বাজারে ছেড়েছে পুলিশ। ৩-৪ বছর পূর্বে বিশালগর থানায় একই ভাবে হানিফ মিয়ার হত্যা হয়েছিল। হানিফকে খুন করা হয়েছিল থানায় পিটিয়ে। খুন করার পর পুলিশ ফাঁসির গল্প সাজিয়েছিল। একই ঘটনা ঘটেছিল কয়েক বছর পূর্বে কমলপুর থানায়। নির্যাতন করে খুন করে ফাঁসির গল্প বানানো হয়েছিল। কয়েক মাস আগে রাধাকিশোরপুর থানায় এক যুবককে অত্যাচার করে পুলিশ খুন করেছিল, তারপর বলা হয়েছিল সে হাসপাতালে মারা গেছে ।
টি এইচ আর ও-র অভিমত, রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসে সুশান্তের মৃত্যু হয়েছে। এটা একটা বর্বর হাজত হত্যা। এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদে সবাইকে শামিল হতে হবে। গভীর পরিকল্পনা করে সুশান্ত কে খুন করেছে পুলিশ এবং খুন করার পূর্বে সুশান্তকে হেনস্থা করেছে শর্মিষ্ঠা চক্রবর্তীর নেতৃত্বে পুলিশের আধিকারিকরা ।
টি এইচ আর ও-র মতে, সুশান্তের বিরুদ্ধে অভিযোগ যদি থাকে তবে তার বিচার করবে আদালত। পুলিশ বললেই কেউ অপরাধী হয়ে যায় না। পুলিশ সব সময় উদোর পিন্ডি বুধোর ঘাড়ে চাপায়। পুলিশ অপরাধের তদন্তের নামে শতকরা ৯৫ ভাগ ক্ষেত্রে নিরীহ নাগরিকদের গ্রেফতার করে তাদের কাছ থেকে অত্যাচার করে জোর করে স্বীকারোক্তি আদায় করে। পুলিশ সাফল্যের ঢাক পেটায়। কেন সুশান্ত পুলিশের নজরে পড়লো এটা তদন্ত করে বের করতে হবে। কিন্তু এটা স্পষ্ট যে সুশান্তকে খুন করা হয়েছে ।
টি এইচ আর ও-র দাবি, সুশান্তকে থানার বাইরে কোথাও নিয়ে খুন করা হয়েছে । প্রশাসনিক তদন্তে সত্য প্রকাশিত হবে না। সরকার তদন্তের নামে সত্যকে ধামাচাপা দিতে চাইছে। তার জন্যই তড়িঘড়ি করে ম্যাজিস্ট্রেট এনকোয়ারির কথা বলা হয়েছে ।
টি এইচ আর ও-র অভিমত, আমাদের রাজ্যে প্রশাসনের আমলাদের ও পুলিশের আধিকারিকদের মেরুদন্ড নেই । তারা সরকারের মুখের দিকে তাকিয়ে থাকে । যে সরকার ক্ষমতায় থাকে সেই সরকারের তালে তারা নাচে। তাদের নৈতিকতা, তাদের বিবেক গঙ্গায় বিসর্জন দিয়ে এসেছে। ব্যতিক্রমিরা ব্যতিক্রম। টি এইচ আর ও-র দাবি, হাইকোর্টের কর্মরত অথবা অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতিকে দিয়ে সুশান্ত হত্যার তদন্ত করে যে সমস্ত পুলিশ আধিকারিক পরোক্ষভাবে ও প্রত্যক্ষভাবে যুক্ত ছিলেন তাদেরকে চিহ্নিত করে তাদের সাজার ব্যবস্থা করতে হবে । একইভাবে সুশান্ত ঘোষের পরিবার পশ্চিম থানার আধিকারিকদের বিরুদ্ধে যে খুনের মামলা দায়ের করেছেন সেই খুনের মামলার তদন্ত অন্য থানাকে দিয়ে করানো যাবে না। সিবিআই তদন্ত দাবি না করলেও এই মুহূর্তে টি এইচ আর ও-র দাবি সুশান্ত ঘোষ খুনের মামলার তদন্ত রাজ্য সিআইডির হাতে দিতে হবে এবং পরবর্তী সময়ে উচ্চ আদালতে দরখাস্ত করে উচ্চ আদালতে নজরদারিতে তদন্তের ব্যবস্থা করতে হবে। টি এইচ আর ও সুশান্তের পরিবারের পাশে থাকার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।
টি এইচ আর ও নিম্ন আদালতের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে।টি এইচ আর ও-র অভিমত, যেখানে সুশান্ত-এর গ্রেফতার এর পক্ষে পুলিশ যুক্তি দেখাতে পারেনি সেখানে নিম্ন আদালত কি করে পুলিশ রিমান্ড দেয়। দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য , নিম্ন আদালতের বিচারকরা অনেক ক্ষেত্রে তাদের সঠিক দায়িত্ব পালন করতে পারেন না। টি এইচ আর ও প্রতিনিধিদলে ছিলেন পুরুষোত্তম রায় বর্মণ ও মৃন্ময় চক্রবর্তী ।